Ajker Patrika

ব্রিটেনের বিজ্ঞান জাদুঘরে আদানির ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান নিয়ে বিতর্কের ঝড়

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ৪৬
লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামে ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন গৌতম আদানি। ছবি: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সৌজন্যে
লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামে ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন গৌতম আদানি। ছবি: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সৌজন্যে

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়াম তথা বিজ্ঞান জাদুঘরের সবুজ জ্বালানি বিভাগ গঠনের জন্য আদানি গ্রুপের নবায়নযোগ্য জ্বালানি শাখা ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছে। বিতর্কিত এই সহযোগিতার ফলে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়েছে ব্রিটেনে। একই সঙ্গে আদানি গ্রুপের ব্যাপক কয়লা ব্যবসার ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের নথিপত্রে প্রথমবারের মতো এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে সায়েন্স মিউজিয়ামের বিরুদ্ধে ‘গ্রিনওয়াশিং’—এর পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আদানির কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানটির দুই ট্রাস্টি পদত্যাগও করেছেন। গ্রিনওয়াশিং হলো এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীন বা অপ্রমাণিত দাবি উপস্থাপন করে, যাতে তাদের পণ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে যতটা পরিবেশবান্ধব বা পরিবেশের জন্য ইতিবাচক, তার চেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব বলে মনে হয়।

অধিকার গোষ্ঠী ‘কালচার আনস্টেইন্ড’ যুক্তরাজ্যের তথ্যপ্রাপ্তির স্বাধীনতার আওতায় সরকারের কাছ থেকে বের করে এনে তা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানায়।

আদানি গ্রুপের ব্যবসায় বন্দর থেকে শুরু করে গণমাধ্যম পর্যন্ত বিস্তৃত। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে গোষ্ঠীটি ভারতের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারী সংস্থা হয়ে উঠেছে। আবার একই সঙ্গে এটি দেশটির অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি কয়লা খনি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ’ করপোরেট প্রতারণার অভিযোগ তোলে। আদানি এসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। এরপর গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন বিচার বিভাগ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি ও অন্যান্য নির্বাহীদের বিরুদ্ধে একটি ভারতীয় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযোগ গঠন করে। এই অভিযোগে বলা হয়, এই প্রকল্পের জন্য আদানি ও তাঁর সহযোগীরা ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছিল। তবে আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে।

সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী স্যার ইয়ান ব্ল্যাচফোর্ড অতীতেও তেল ও গ্যাস কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। তবে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। বিশেষ করে, মার্কিন আদালতে অভিযুক্ত হওয়ার পরও আদানির অনুদান গ্রহণের নৈতিক মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ব্ল্যাচফোর্ড।

আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীদের অভিযোগের অন্ত নেই। গত বছর আদানির নবায়নযোগ্য শক্তি প্রদর্শনী ‘এনার্জি রেভলিউশন: দ্য আদানি গ্রিন এনার্জি গ্যালারি’ও ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে।

তবে কেবল লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়াম নয়, যুক্তরাজ্যের অন্যান্য জাদুঘরও জীবাশ্ম জ্বালানি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য সমালোচিত হয়েছে। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের দেশটির পেট্রোলিয়াম কোম্পানি বিপির কাছ থেকে ৫০০ কোটি পাউন্ড গ্রহণ করে।

আদানি গ্রুপ সায়েন্স মিউজিয়ামকে মাত্র ৪০ লাখ পাউন্ড দিলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রতিষ্ঠানটি ১২৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান পেয়েছে। সায়েন্স মিউজিয়াম জানিয়েছে, তারা বাণিজ্যিক সংবেদনশীলতার কারণে কোনো নির্দিষ্ট পৃষ্ঠপোষকতার চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে না। তবে তারা জানিয়েছে যে, তাদের অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।

মিউজিয়াম আরও জানিয়েছে, তারা তাদের এনার্জি রেভলিউশন গ্যালারিতে পাঁচ লাখেরও বেশি দর্শনার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে। আর ‘আদানি গ্রিন এনার্জির উদার পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আদানি গ্রিন এনার্জি একটি প্রধান নবায়নযোগ্য শক্তি কোম্পানি।’

ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের নথি থেকে আরও দেখা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে আদানি গ্রুপের সদর দপ্তরে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে এক বৈঠকে গৌতম আদানি প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদারত্ব ও যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন, তিনি ব্রিটিশ অ্যারোস্পেসের আদলে ভারতেরও অ্যারোস্পেস কোম্পানি গড়ে তুলতে চান।

ভারতের প্রতিরক্ষা খাত বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়ার ফলে আদানি গ্রুপসহ একাধিক শক্তিশালী ভারতীয় কনগ্লোমারেট এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আহমেদাবাদের বৈঠকে জনসন উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য প্রতিরক্ষা প্রকল্প যেমন ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম ও নৌবাহিনীর প্রপালশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ভারতের সঙ্গে অংশীদার হতে চায়।

বৈঠকের নথিতে উল্লেখ করা হয় যে, আদানি বলেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল ভারতের নিজস্ব অ্যারোস্পেস কোম্পানি গড়ে তোলা। যেখানে গোয়েন্দা, নজরদারি ও সাইবার নিরাপত্তা; বিমান প্রতিরক্ষা; চালকবিহীন প্ল্যাটফর্ম এবং পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নির্মাণ করা হবে। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টিকে স্বাগত জানান জনসন।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, সে সময় আদানি গ্রুপ হাইড্রোজেন উৎপাদনে বিনিয়োগ করছিল এবং মনে করেছিল, এটি রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ভারতের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠবে। এক পৃথক নথিতে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ তখন শেফিল্ডভিত্তিক সবুজ হাইড্রোজেন প্রযুক্তি কোম্পানি আইটিএম পাওয়ারের সঙ্গে রপ্তানির বিষয়ে আলোচনাও করেছিল।

আদানির সঙ্গে ২০২১ সালের অক্টোবর ও ২০২২ সালের এপ্রিলে জনসনের বৈঠক হয়। সেই দুই বৈঠকের সারসংক্ষেপেও উঠে এসেছে যে, সে সময় মার্কিন কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেছিলেন—গৌতম আদানি ভারতের একটি সৌরশক্তি প্রকল্পে ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। একই সময়ে, নথিতে উল্লেখ রয়েছে যে—আদানির কনগ্লোমারেট লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে একটি ব্যবসা তালিকাভুক্ত করার কাজ ‘চূড়ান্ত করছিল’। তবে সেই প্রচেষ্টা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

২০২১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট সামিটে গৌতম আদানির সঙ্গে জনসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই ‘সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের’ প্রস্তুতির জন্য একটি সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আদানি এই বৈঠকে সায়েন্স মিউজিয়ামের ব্ল্যাচফোর্ড ও তখনকার চেয়ার ডেম মেরি আর্চারের সঙ্গে কথা বলবেন।

এই নোটে জনসনকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তিনি ‘সবুজ বিনিয়োগের পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে আদানির দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইতে পারেন এবং জানতে পারেন, ব্রিটিশ সরকার এ ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে। বিশেষ করে বন্দর, সরবরাহ ব্যবস্থা, হাইড্রোজেন ও ডেটা সেন্টারের ক্ষেত্রে।’

এতে আরও বলা হয়, আদানি গ্রুপ কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে একটি প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন যাতে তারা তাদের নেট-জিরো পরিকল্পনার ঘোষণা দিতে পারে। কিন্তু, পরিহাসের বিষয় হলো, আদানি গ্রুপের ব্যবসায় একটি বড় অংশই জৈব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।

সায়েন্স মিউজিয়ামে আদানির পৃষ্ঠপোষকতায় চালু হওয়া সবুজ জ্বালানি শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। তবে তাঁর মূল মনোযোগ ভারতের ‘বিশাল বাজারের’ দিকেই থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজায় খেয়াল–খুশি মতো গুলি করেছে ইসরায়েলিরা, ফিলিস্তিনিদেরই বানাত মানবঢাল: সেনাদের স্বীকারোক্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় ইসরায়েলি সেনারা চাইলেই যে কাউকে খেয়াল–খুশি মতো গুলি করতে পারত। ছবি: এএফপি
গাজায় ইসরায়েলি সেনারা চাইলেই যে কাউকে খেয়াল–খুশি মতো গুলি করতে পারত। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ চলাকালে সেনাদের মধ্যে নিয়মকানুন, নৈতিকতা ও আইনি সীমা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার বিষয়টি অনেক সময় নির্ভর করেছে কেবল একজন মাত্র অফিসারের খেয়ালের ওপর। এই তথ্য উঠে এসেছে ব্রিটিশ টিভি চ্যানেল আইটিভিতে সম্প্রচার হতে যাওয়া প্রামাণ্যচিত্র ‘ব্রেকিং র‍্যাংকস: ইনসাইড ইসরায়েলস ওয়ার।’

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) একটি ট্যাংক ইউনিটের কমান্ডার ড্যানিয়েল বলেন, ‘যদি কেউ বিনা বাধায় গুলি চালাতে চাইত, সেটা সে পারত। কেউ আটকাত না।’

প্রামাণ্যচিত্রটিতে অংশ নেওয়া সেনাদের কেউ কেউ পরিচয় গোপন রেখেছেন, কেউ আবার খোলাখুলিই কথা বলেছেন। সবাই বলেছেন—গাজায় নাগরিকদের বিষয়ে আইডিএফের আনুষ্ঠানিক আচরণবিধি কার্যত বিলীন হয়ে গেছে। তারা নিশ্চিত করেছেন যে, আইডিএফ নিয়মিতভাবেই গাজার মানুষদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। সৈন্যরা আরও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে বেসামরিক লোকজন বিনা উসকানিতে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

আইডিএফ আর্মার্ড ইউনিটের অফিসার ক্যাপ্টেন ইয়োতাম ভিল্ক বলেন, ‘প্রশিক্ষণে আমাদের শেখানো হয়—কেবল তখনই গুলি চালানো যাবে, যখন টার্গেট বা লক্ষ্যবস্তু ক্ষমতা, হামলার অভিপ্রায় ও সামর্থ্য দেখাবে।’ কিন্তু গাজায় সেই নীতি আর টিকে ছিল না। ভিল্ক বলেন, ‘এখানে কেউ ক্ষমতা, অভিপ্রায় ও সামর্থ্য নিয়ে ভাবে না। শুধু সন্দেহ করাই (হত্যা করার জন্য) যথেষ্ট।’

ইলি ছদ্মনামে এক সেনা বলেন, ‘জীবন-মৃত্যুর সিদ্ধান্ত কোনো নিয়মে নয়, মাঠের কমান্ডারের বিবেকেই নির্ভর করে।’ তিনি জানান, ‘এখানে (গাজায়) কে শত্রু আর কে না—তা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গেছে। কেউ খুব দ্রুত হাঁটলে সে সন্দেহভাজন, খুব ধীরে হাঁটলেও সন্দেহভাজন। তিনজন হাঁটছে, একজন পেছনে—তাও সামরিক ফরমেশন!’ এমনটাই ভাবত ইসরায়েলি কমান্ডার ও সেনারা।

ইলি একটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এক কর্মকর্তা এমন এক ভবনে ট্যাংকের গোলা ছোড়ার নির্দেশ দেন, যেটি ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। তিনি বলেন, হামলা নির্দেশ দেওয়ার সময় সেই ভবনে ‘একজন মানুষ ছাদে কাপড় শুকোচ্ছিলেন। অফিসার বললেন, লোকটা নিশ্চয়ই স্পটার। অথচ, সে কেবল কাপড় শুকোচ্ছিল। কোনো দুরবিন নেই, অস্ত্রও নেই। নিকটতম সামরিক ঘাঁটি ৬০০-৭০০ মিটার দূরে। তাহলে সে কীভাবে স্পটার হবে? তবে তারপরও ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়া হয়, ভবনের অর্ধেক ভেঙে পড়ে, অনেকেই মারা যায় ও আহত হয়।’

দ্য গার্ডিয়ানের আগস্ট মাসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গাজায় নিহতদের ৮৩ শতাংশই সাধারণ নাগরিক। আইডিএফের নিজেদের তথ্যেও দেখা গেছে এই তথ্য। এটি আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে বেসামরিক মৃত্যুর সর্বোচ্চ হার। তবে আইডিএফ এই বিশ্লেষণ অস্বীকার করেছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এক মাস আগে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে। লিখিত বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ‘আইডিএফ আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। হামাস বেসামরিক স্থাপনায় আশ্রয় নেওয়ায় ও সেগুলো সামরিক কাজে ব্যবহারের কারণে জটিলতা তৈরি হলেও আমরা নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে থেকেই কাজ করি।’

প্রামাণ্যচিত্রে কিছু সৈন্য বলেছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েলি রাজনীতিক ও ধর্মীয় নেতাদের কথাবার্তা তাদের মনোভাব বদলে দেয়। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছিলেন। অনেক নেতা বলেছিলেন, প্রতিটি ফিলিস্তিনিই এখন বৈধ টার্গেট।

জাতিসংঘের একটি কমিশন সেপ্টেম্বরে জানায়, গাজায় ইসরায়েল ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে। কমিশন বলেছে, ইসরায়েলি নেতাদের ভাষণ থেকেই সেই ‘উদ্দেশ্য’ স্পষ্ট। যেমন, প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ ৭ অক্টোবরের হামলার পর বলেছিলেন, ‘পুরো (ফিলিস্তিনি) জাতি দায়ী। নাগরিকেরা জানত না, তারা এতে জড়িত নয়—এই গল্প মিথ্যা।’

ট্যাংক কমান্ডার ড্যানিয়েল বলেন, ‘এ ধরনের কথাবার্তা আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। বারবার শুনে শেষে বিশ্বাস করে ফেলি যে গাজায় কোনো নিরপরাধ মানুষ নেই।’ হেরজগের মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন, তিনি সব সময় মানবিক মূল্যবোধ ও নিরপরাধদের সুরক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

প্রামাণ্যচিত্রে দেখা গেছে, কিছু ইহুদি ধর্মগুরু বা র‍্যাবাইও সৈন্যদের মাঝে প্রতিশোধের মনোভাব ছড়িয়েছেন। মেজর নেতা কাসপিন বলেন, ‘একবার আমাদের ব্রিগেডের র‍্যাবাই এসে আধঘণ্টা ধরে বলেছিলেন, আমাদেরও ৭ অক্টোবরের মতো প্রতিশোধ নিতে হবে—সবার ওপর, এমনকি বেসামরিকদের ওপরও।’

চরমপন্থী রাব্বি আভরাহাম জারবিভ প্রামাণ্যচিত্রে বলেন, ‘ওখানকার সবকিছুই সন্ত্রাসের অবকাঠামো।’ তিনি কেবল ধর্মীয় অনুমোদনই দেননি, নিজেও ‘বুলডোজার চালিয়ে’ ফিলিস্তিনি পাড়া-মহল্লা ধ্বংস করেছেন। তিনি বলেন, ‘আইডিএফ এখন গাজা ধ্বংস করতে লাখ লাখ শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) বিনিয়োগ করছে। আমরা পুরো সেনাবাহিনীর ধারা বদলে দিয়েছি।’

প্রামাণ্যচিত্রে সৈন্যরা নিশ্চিত করেছেন, যুদ্ধ চলাকালে ‘ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষকে মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি সত্য। এটি সেনাদের ভাষায় পরিচিত ‘মশা প্রোটোকল’ নামে। ড্যানিয়েল বলেন, ‘আপনি কোনো এক বেসামরিক লোককে টানেলে পাঠাও। তার জামায় আইফোন বাঁধা থাকে। সে হাঁটতে হাঁটতে টানেলের মানচিত্র সেনাদের কাছে পাঠায়। এই কৌশলটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিটি ইউনিট নিজের মশা ব্যবহার শুরু করে।’

আইডিএফ এ বিষয়ে জানায়, ‘মানবঢাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অভিযোগ পাওয়া গেলে তা গভীরভাবে তদন্ত করা হয়। কিছু ঘটনার তদন্ত সামরিক পুলিশ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন করছে।’ প্রামাণ্যচিত্রে স্যাম নামে এক ঠিকাদার বলেন, তিনি জিএইচএফের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে কাজ করতেন এবং দেখেছেন—ইসরায়েলি সৈন্যরা নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে।

তিনি বলেন, ‘দুই তরুণ খাদ্য নিতে দৌড়াচ্ছিল। হঠাৎ দেখি দুই সৈন্য হাঁটু গেড়ে বসে গুলি করল। দুজনের মাথা পেছনে হেলে পড়ে গেল।’ আরেক ঘটনায়, এক আইডিএফ ট্যাংক খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ানো একটি সাধারণ গাড়িতে গুলি চালায়। ভেতরে ছিল চারজন সাধারণ মানুষ।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, শুধু খাদ্যসহায়তা নিতে গিয়ে অন্তত ৯৪৪ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তবে জিএইচএফ ও আইডিএফ উভয়ই দাবি করেছে, তারা কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি। আইডিএফ বলেছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চেষ্টা করে।

তবে এ ধরনের ঘটনাগুলোর অভ্যন্তরীণ তদন্তে এখনো পর্যন্ত প্রায় কোনো শাস্তি বা জবাবদিহি হয়নি। প্রামাণ্যচিত্রে গাজায় থাকা অনেক ইসরায়েলি সৈন্যের মানসিক বিপর্যয়ের কথাও উঠে এসেছে। ড্যানিয়েল বলেন, ‘তারা (ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ) আমার মধ্যে ইসরায়েলি হিসেবে, আইডিএফ অফিসার হিসেবে যে গর্ব ছিল—সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন শুধু লজ্জাই অবশিষ্ট রয়ে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত সুহার্তো এখন ইন্দোনেশিয়ার ‘জাতীয় বীর’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সুহার্তোর পুত্র–কণ্যার কাছে জাতীয় বীরের পদক তুলে দিচ্ছেন সুবিয়ান্তো। ছবি: এএফপি
সুহার্তোর পুত্র–কণ্যার কাছে জাতীয় বীরের পদক তুলে দিচ্ছেন সুবিয়ান্তো। ছবি: এএফপি

সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোকে জাতীয় বীর ঘোষণা করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। তবে সুহার্তোর শাসনামলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। স্থানীয় সময় আজ সোমবার জাতীয় বীর দিবসের অনুষ্ঠানে আরও নয়জনের সঙ্গে সুহার্তোর নামও ঘোষণা করা হয়।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রাবো সুবিয়ান্তো। তিনি একসময় সুহার্তোর জামাতা ছিলেন। মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষাবিদদের অনেকেই এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, তিন দশকের শাসনামলে সুহার্তো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করেছেন।

এই পুরস্কারে মনোনীত করায় সুহার্তোর নাম যুক্ত হলো ইন্দোনেশিয়ার ২ শতাধিক জাতীয় বীরের তালিকায়, যেখানে রয়েছেন দেশটির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি সুকর্নও। প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব বলেন, ‘মধ্য জাভা প্রদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক, জেনারেল সুহার্তো স্বাধীনতার সময় থেকেই নেতৃত্বে উজ্জ্বল ছিলেন।’ প্রাবো ওই অনুষ্ঠানে পুরস্কারটি সুহার্তোর কন্যা সিতি হারদিয়ানতি রুকমানা ও পুত্র বামবাং ত্রিহাতমোজোর হাতে তুলে দেন।

প্রতি বছর ইন্দোনেশিয়ায় দেশের উন্নয়ন ও গৌরবে বিশেষ অবদান রাখা নাগরিকদের জাতীয় বীর উপাধি দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান সুহার্তো। ১৯৬৭ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি সুকর্নর কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেন এবং তিন দশক দেশ শাসন করেন।

এর আগে, ইন্দোনেশিয়া ১৯৪৫ সালে নেদারল্যান্ডস ও জাপানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। সুহার্তো সামরিক শক্তি ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন করেন এবং নাগরিক প্রশাসনের ওপর সেনাবাহিনীর আধিপত্য কায়েম করেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের দুর্নীতি, পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগও ওঠে।

তবে তিনিই ইন্দোনেশিয়াকে দীর্ঘ সময় স্থিতিশীলতা ও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৯৭-৯৮ সালের এশীয় আর্থিক সংকটে দেশটি বিশৃঙ্খলায় পড়ে, আর তাতেই তাঁর শাসনের পতন ঘটে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অসুস্থতার কারণে কখনো আদালতের মুখোমুখি হননি তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারত সরকারকে কেন ‘চামড়া মোটা করার’ পরামর্শ দিলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইতালীয় গবেষক অরসিনিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শশী থারুর। ছবি: সংগৃহীত
ইতালীয় গবেষক অরসিনিকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শশী থারুর। ছবি: সংগৃহীত

হিন্দি ভাষার ইতালীয় গবেষক ফ্রান্সেসকা অরসিনিকে ভিসা শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে দিল্লি থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর। অরসিনিকে ফেরত পাঠানোর এক সপ্তাহ পর কংগ্রেসের এই জ্যেষ্ঠ নেতা ভারতের সরকারি মহলের লোকজনে ‘চামড়া আরেকটু মোটা’ করা অর্থাৎ সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতের সরকারি মহলের উচিত ‘আরও সহনশীল মন, প্রশস্ত চিন্তা ও বিশাল হৃদয়’ গড়ে তোলা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বিজেপির এমপি স্বপন দাশগুপ্তের এক কলামের প্রতিক্রিয়ায় এই কথা বলেন শশী থারুর। দাশগুপ্ত লিখেছিলেন, রাষ্ট্রের উচিত আইন মেনে চলা নিশ্চিত করা, তবে কোনো অধ্যাপকের গবেষণার মান যাচাই করা তার কাজ নয়। তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের সতর্ক থাকতে হবে যেন এমন ধারণা না তৈরি হয় যে দেশটি বিদেশি গবেষকদের জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।’

স্বপন দাশগুপ্তের লেখা শেয়ার করে থারুর এক্সে লিখেছেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে একমত। তুচ্ছ ভিসা লঙ্ঘনের কারণে বিদেশি গবেষক ও শিক্ষাবিদদের বিমানবন্দরে অবাঞ্ছিত চিহ্ন দেখিয়ে ফেরত পাঠানো আমাদের দেশের, সংস্কৃতির ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য অনেক বড় ক্ষতি করছে, যা কোনো সমালোচনামূলক একাডেমিক প্রবন্ধের চেয়ে অনেক বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি ভারতের এখন দরকার মোটা চামড়া, প্রশস্ত মন আর বড় হৃদয়।’

ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (এসওএএস) ইমেরিটাস অধ্যাপক অরসিনিকে গত ২১ অক্টোবর দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। হংকং থেকে ভারতে পৌঁছানোর পর তাঁকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সরকারি কর্মকর্তারা জানান, তিনি পর্যটক ভিসায় এসেছিলেন এবং ভিসা শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্চ মাসে তাঁর নাম কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এক সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ‘বিশ্বব্যাপী প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কেউ যদি ভিসা শর্ত ভঙ্গ করেন, তাহলে তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করা যায়।’

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকদের অবশ্যই ভিসা আবেদন করার সময় যে উদ্দেশ্যে সফরের কথা উল্লেখ করেন, তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। ইতালির নাগরিক ফ্রান্সেসকা অরসিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে যোগ দেন। তিনি হিন্দি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বহু গবেষণা করেছেন। তার বিখ্যাত বই ‘The Hindi Public Sphere 1920–1940: Language and Literature in the Age of Nationalism’ ভারতীয় ভাষা ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে স্বীকৃত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিবিসির ডিজিকে কেন পদত্যাগ করতে হলো, ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে এডিট করার দায় নিয়ে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে এডিট করার দায় নিয়ে বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ বা বার্তা বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক ভাষণ সম্পাদনা করে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে বিবিসির ‘প্যানোরামা’ অনুষ্ঠান নিয়ে সমালোচনার পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। ওই বক্তৃতায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিলে) দাঙ্গার আগের ঘটনা নিয়ে তৈরি বিবিসির একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়েছিল।

বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও বিবিসি নিউজের প্রধান নির্বাহী ডেবোরা টারনেস হঠাৎই পদত্যাগ করেন। আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের ফাঁস করা অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে জানা গেছে, বিবিসির প্যানোরামা অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণের দুটি অংশ কেটে একত্র করা হয়। ফলে মনে হয়, ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছিলেন।

ডেভি গত পাঁচ বছর ধরে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নানা বিতর্ক ও পক্ষপাতের অভিযোগের মুখে পড়েছিলেন। বিবিসির ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে টিম ডেভি বলেন, ‘সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো বিবিসিও নিখুঁত নয়। আমাদের সব সময় উন্মুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক থাকতে হবে। বর্তমান বিতর্কই আমার পদত্যাগের একমাত্র কারণ নয়, তবে তা সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। বিবিসি সামগ্রিকভাবে ভালো করছে, কিন্তু কিছু ভুল হয়েছে, যার দায় আমাকে নিতেই হবে।’

গত সপ্তাহে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানায়, গত গ্রীষ্মে বিবিসির সম্পাদনা মানদণ্ড কমিটির পরামর্শক মাইকেল প্রেসকট এক অভ্যন্তরীণ নোটে বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। নোটটি থেকেই ফাঁস হয় বিতর্কিত সম্পাদনার অভিযোগ। সাবেক সাংবাদিক প্রেসকট দাবি করেন, ‘Trump: A Second Chance?’ নামের বিবিসির একটি প্রামাণ্যচিত্রে ট্রাম্পের দুটি বক্তব্য একত্রে দেখানো হয়। এই বক্তব্য দুটি প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এতে বোঝানো হয়, ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে ক্যাপিটলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন—‘পুরোদমে লড়াই করো।’

কিন্তু আসল বক্তব্যে ট্রাম্প কেবল বলেন, ‘আমরা আমাদের সাহসী সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের উৎসাহ দিতে যাচ্ছি।’ সে সময় ট্রাম্প তখনও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী জয়ের বিরোধিতা করছিলেন। প্রেসকট আরও অভিযোগ করেন, বিবিসি ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রান্সজেন্ডার অধিকার নিয়ে বিতর্কিত কিছু বিষয় এড়িয়ে গেছে এবং বিবিসি অ্যারাবিক এমন এক সাংবাদিককে প্রচারের সুযোগ দিয়েছে যিনি ইহুদিবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন।

বিশ্বজুড়ে ২১ হাজার কর্মী নিয়ে বিবিসি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পাবলিক সার্ভিস সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান। এটি মূলত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের প্রদত্ত টিভি লাইসেন্স ফি থেকে পরিচালিত হয়, সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক আয়ও রয়েছে। সংবাদ থেকে শুরু করে বিনোদন—সব ধরনের বিষয়েই তাদের আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে।

টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন প্রকাশের পর হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বিবিসিকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ’ বলে সমালোচনা করেন। ট্রাম্পও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সাংবাদিকরা এবার ধরা পড়েছে। তারা নির্বাচনের ফল পাল্টাতে চেয়েছিল, তারা অত্যন্ত অসৎ মানুষ।’

এদিকে, যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়ামন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি বলেন, এই অভিযোগগুলো ‘অত্যন্ত গুরুতর।’ বিবিসির প্যানোরামা প্রোগ্রামের ঘটনাই শুধু নয়, পুরো সংবাদ সংস্থার সম্পাদকীয় মানদণ্ড নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বিবিসি টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এখানে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—বিবিসির প্রতিবেদনে হয়তো একটি পদ্ধতিগত পক্ষপাত আছে।’

ন্যান্ডি আরও বলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন যে—বিবিসির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভাষা ও মানদণ্ড অনেক সময় একরকম থাকে না—চাই সেটা ইসরায়েল-গাজা প্রসঙ্গ হোক, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু হোক বা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্পর্কিত বিষয়ই হোক।

এর আগেও এ বছর বিবিসি ‘Gaza: How To Survive A Warzone’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্রের ‘গুরুতর ত্রুটি’ স্বীকার করে ক্ষমা চায়। অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে শাস্তি পায়। কারণ, তাদের আরেকটি প্রোগ্রামকে ‘গুরুতরভাবে বিভ্রান্তিকর’ বলা হয়েছিল। পরে জানা যায়, সেই প্রামাণ্যচিত্রে যে শিশুর কণ্ঠ ব্যবহার করা হয়েছিল, তা ছিল হামাসের সাবেক উপ-কৃষিমন্ত্রীর সন্তানের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

আজকের রাশিফল: প্রপোজের জন্য বিপজ্জনক দিন, গ্রহরা একগুঁয়েমিটা ছাড়তে বলছে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত