Ajker Patrika

ব্রিটেনের বিজ্ঞান জাদুঘরে আদানির ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান নিয়ে বিতর্কের ঝড়

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ৪৬
লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামে ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন গৌতম আদানি। ছবি: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সৌজন্যে
লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়ামে ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন গৌতম আদানি। ছবি: ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সৌজন্যে

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়াম তথা বিজ্ঞান জাদুঘরের সবুজ জ্বালানি বিভাগ গঠনের জন্য আদানি গ্রুপের নবায়নযোগ্য জ্বালানি শাখা ৪০ লাখ পাউন্ড অনুদান দিয়েছে। বিতর্কিত এই সহযোগিতার ফলে ব্যাপক প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়েছে ব্রিটেনে। একই সঙ্গে আদানি গ্রুপের ব্যাপক কয়লা ব্যবসার ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের নথিপত্রে প্রথমবারের মতো এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে সায়েন্স মিউজিয়ামের বিরুদ্ধে ‘গ্রিনওয়াশিং’—এর পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আদানির কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানটির দুই ট্রাস্টি পদত্যাগও করেছেন। গ্রিনওয়াশিং হলো এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীন বা অপ্রমাণিত দাবি উপস্থাপন করে, যাতে তাদের পণ্যগুলো প্রকৃতপক্ষে যতটা পরিবেশবান্ধব বা পরিবেশের জন্য ইতিবাচক, তার চেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব বলে মনে হয়।

অধিকার গোষ্ঠী ‘কালচার আনস্টেইন্ড’ যুক্তরাজ্যের তথ্যপ্রাপ্তির স্বাধীনতার আওতায় সরকারের কাছ থেকে বের করে এনে তা ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানায়।

আদানি গ্রুপের ব্যবসায় বন্দর থেকে শুরু করে গণমাধ্যম পর্যন্ত বিস্তৃত। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে গোষ্ঠীটি ভারতের বৃহত্তম নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারী সংস্থা হয়ে উঠেছে। আবার একই সঙ্গে এটি দেশটির অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি কয়লা খনি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ‘নির্লজ্জ’ করপোরেট প্রতারণার অভিযোগ তোলে। আদানি এসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। এরপর গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন বিচার বিভাগ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি ও অন্যান্য নির্বাহীদের বিরুদ্ধে একটি ভারতীয় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ঘুষ কেলেঙ্কারির মামলায় অভিযোগ গঠন করে। এই অভিযোগে বলা হয়, এই প্রকল্পের জন্য আদানি ও তাঁর সহযোগীরা ২৬৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছিল। তবে আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে।

সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী স্যার ইয়ান ব্ল্যাচফোর্ড অতীতেও তেল ও গ্যাস কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। তবে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। বিশেষ করে, মার্কিন আদালতে অভিযুক্ত হওয়ার পরও আদানির অনুদান গ্রহণের নৈতিক মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ব্ল্যাচফোর্ড।

আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীদের অভিযোগের অন্ত নেই। গত বছর আদানির নবায়নযোগ্য শক্তি প্রদর্শনী ‘এনার্জি রেভলিউশন: দ্য আদানি গ্রিন এনার্জি গ্যালারি’ও ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে।

তবে কেবল লন্ডন সায়েন্স মিউজিয়াম নয়, যুক্তরাজ্যের অন্যান্য জাদুঘরও জীবাশ্ম জ্বালানি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্য সমালোচিত হয়েছে। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের দেশটির পেট্রোলিয়াম কোম্পানি বিপির কাছ থেকে ৫০০ কোটি পাউন্ড গ্রহণ করে।

আদানি গ্রুপ সায়েন্স মিউজিয়ামকে মাত্র ৪০ লাখ পাউন্ড দিলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই প্রতিষ্ঠানটি ১২৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ড অনুদান পেয়েছে। সায়েন্স মিউজিয়াম জানিয়েছে, তারা বাণিজ্যিক সংবেদনশীলতার কারণে কোনো নির্দিষ্ট পৃষ্ঠপোষকতার চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে না। তবে তারা জানিয়েছে যে, তাদের অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।

মিউজিয়াম আরও জানিয়েছে, তারা তাদের এনার্জি রেভলিউশন গ্যালারিতে পাঁচ লাখেরও বেশি দর্শনার্থীকে স্বাগত জানিয়েছে। আর ‘আদানি গ্রিন এনার্জির উদার পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। আদানি গ্রিন এনার্জি একটি প্রধান নবায়নযোগ্য শক্তি কোম্পানি।’

ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা কার্যালয়ের নথি থেকে আরও দেখা গেছে, ২০২২ সালের এপ্রিলে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের আহমেদাবাদে আদানি গ্রুপের সদর দপ্তরে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে এক বৈঠকে গৌতম আদানি প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদারত্ব ও যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন, তিনি ব্রিটিশ অ্যারোস্পেসের আদলে ভারতেরও অ্যারোস্পেস কোম্পানি গড়ে তুলতে চান।

ভারতের প্রতিরক্ষা খাত বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য উন্মুক্ত হওয়ার ফলে আদানি গ্রুপসহ একাধিক শক্তিশালী ভারতীয় কনগ্লোমারেট এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আহমেদাবাদের বৈঠকে জনসন উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য প্রতিরক্ষা প্রকল্প যেমন ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম ও নৌবাহিনীর প্রপালশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ভারতের সঙ্গে অংশীদার হতে চায়।

বৈঠকের নথিতে উল্লেখ করা হয় যে, আদানি বলেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল ভারতের নিজস্ব অ্যারোস্পেস কোম্পানি গড়ে তোলা। যেখানে গোয়েন্দা, নজরদারি ও সাইবার নিরাপত্তা; বিমান প্রতিরক্ষা; চালকবিহীন প্ল্যাটফর্ম এবং পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নির্মাণ করা হবে। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টিকে স্বাগত জানান জনসন।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, সে সময় আদানি গ্রুপ হাইড্রোজেন উৎপাদনে বিনিয়োগ করছিল এবং মনে করেছিল, এটি রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ভারতের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠবে। এক পৃথক নথিতে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ তখন শেফিল্ডভিত্তিক সবুজ হাইড্রোজেন প্রযুক্তি কোম্পানি আইটিএম পাওয়ারের সঙ্গে রপ্তানির বিষয়ে আলোচনাও করেছিল।

আদানির সঙ্গে ২০২১ সালের অক্টোবর ও ২০২২ সালের এপ্রিলে জনসনের বৈঠক হয়। সেই দুই বৈঠকের সারসংক্ষেপেও উঠে এসেছে যে, সে সময় মার্কিন কৌঁসুলিরা অভিযোগ করেছিলেন—গৌতম আদানি ভারতের একটি সৌরশক্তি প্রকল্পে ঘুষ দেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। একই সময়ে, নথিতে উল্লেখ রয়েছে যে—আদানির কনগ্লোমারেট লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে একটি ব্যবসা তালিকাভুক্ত করার কাজ ‘চূড়ান্ত করছিল’। তবে সেই প্রচেষ্টা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

২০২১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাজ্যের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট সামিটে গৌতম আদানির সঙ্গে জনসনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই ‘সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের’ প্রস্তুতির জন্য একটি সংক্ষিপ্ত নোট তৈরি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আদানি এই বৈঠকে সায়েন্স মিউজিয়ামের ব্ল্যাচফোর্ড ও তখনকার চেয়ার ডেম মেরি আর্চারের সঙ্গে কথা বলবেন।

এই নোটে জনসনকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তিনি ‘সবুজ বিনিয়োগের পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে আদানির দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইতে পারেন এবং জানতে পারেন, ব্রিটিশ সরকার এ ক্ষেত্রে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে। বিশেষ করে বন্দর, সরবরাহ ব্যবস্থা, হাইড্রোজেন ও ডেটা সেন্টারের ক্ষেত্রে।’

এতে আরও বলা হয়, আদানি গ্রুপ কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে একটি প্ল্যাটফর্ম খুঁজছিলেন যাতে তারা তাদের নেট-জিরো পরিকল্পনার ঘোষণা দিতে পারে। কিন্তু, পরিহাসের বিষয় হলো, আদানি গ্রুপের ব্যবসায় একটি বড় অংশই জৈব জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল।

সায়েন্স মিউজিয়ামে আদানির পৃষ্ঠপোষকতায় চালু হওয়া সবুজ জ্বালানি শাখার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছেন। তবে তাঁর মূল মনোযোগ ভারতের ‘বিশাল বাজারের’ দিকেই থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত