Ajker Patrika

শেভিং ফোমে নবীনবরণ

ফয়সাল হাসান, ঢাকা
শেভিং ফোমে নবীনবরণ

বহু সংস্কৃতির ধারক আমাদের এই পৃথিবী। দেশ, জাতি, ধর্ম ভেদে সারা বছরই বৈচিত্র্যময় নানা উৎসবে মেতে থাকে বিশ্ব। আবার অনেক উৎসব পার হয়ে যায় ধর্ম, সম্প্রদায় কিংবা জাতীয় সীমার গণ্ডি। এর মধ্যে কিছু আমাদের পরিচিত, কিছু হয়তো একেবারেই অজানা। স্পেনের সবচেয়ে মজার উৎসব কোনটি? এমন প্রশ্ন করা হলে যে কেউই বলে দেবে ‘লা টমাটিনা’ উৎসবের কথা, যেখানে টমেটো গলিয়ে একে অন্যের দিকে ছুড়ে মারাই রীতি। একইভাবে বলা যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্নিং ম্যান’ কানাডার ‘হেয়ার ফ্রিজিং ডে’ কিংবা ইন্দোনেশিয়ার ‘ডে অব সাইলেন্স’ উৎসবের নাম। তবে এসবের বাইরেও অদ্ভুত এক উৎসব হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে স্কটল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠান, যেখানে পুরো শরীরে শেভিং ফোম মেখে আনন্দে মাতেন শিক্ষার্থীরা।

সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়, ১৪১৩ সালে স্কটল্যান্ডের ফাইফ শহরে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের ইংরেজি ভাষাভাষীর তৃতীয়-প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের পাশাপাশি কিছু উদ্ভট এবং অস্বাভাবিক ঐতিহ্যও রয়েছে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের, যার মধ্যে অন্যতম ফোম মেখে নবীনবরণের উৎসব।

এই উৎসব বা ‘রেজিন উইকেন্ড’র জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘একাডেমিক পরিবারগুলো’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিস্তারিত জানার আগে এ বিষয়গুলো বোধগম্য হওয়া জরুরি। আপনি যদি সেন্ট অ্যান্ড্রুজের কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তখন যদি তাঁদের মা-বাবার বিষয়ে কথা বলা শুরু করে; ঠিক সেসময়ই সতর্ক হয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ তাঁরা হয়তো আপনাকে তাঁদের প্রকৃত মা-বাবা নয়, ‘একাডেমিক বাবা-মায়ের’ কথা বলছে!

আপনি হয়তো ভাবছেন একাডেমিক মা-বাবা আবার কী! এমন শব্দ তো আগে শুনিনি। হ্যাঁ, আপনার-আমার মতো অনেকের কাছেই বিষয়টি অপরিচিতই। তবে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে সেটি মোটেও অপরিচিত বা অস্বাভাবিক কিছু না।

ঐতিহ্যগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ফ্রেশার বা নবীন শিক্ষার্থীরা পরিচিতি পায় ‘বেজান্ট’ এবং ‘বেজান্টাইন’ নামে। আর তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাঁদের দত্তক নেয়, ফলে নতুন শিক্ষার্থীরা হয়ে যায় তাঁদের ‘একাডেমিক সন্তান’। সেন্ট অ্যান্ড্রুজে নিজেকে মানিয়ে নিতে এবং পরের বছরগুলোয় নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে নবীন শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসব একাডেমিক পিতামাতা।

মা-বাবা নির্ধারণ হয়ে যাওয়ার পরই আয়োজন করা হয় নবীনবরণ উৎসবের। যেখানে উদ্ভট সব পোশাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। এরপরই শুরু হয় শেভিং ফোম মাখা। প্রথমে নবীন শিক্ষার্থীদের ফোম মাখানো হয়। পরে উৎসবে যোগ দেন তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সবাই মিলে মাতে আনন্দ উৎসবে, ধুম পড়ে ছবি তোলার। এর পাশাপাশি থাকে আরও নানা আয়োজন। জানা যায়, শত বছর ধরেই সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসছে এই রীতি।

তবে প্রাচীন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আয়োজন নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনাও। এ ধরনের উদ্ভট উৎসবের কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যদের থেকে অনেকটা ‘বিচ্ছিন্ন’ ও ‘ভিন্ন আচরণে’ অভ্যস্ত হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করে থাকেন অনেকে। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, এসব উৎসব শুধুমাত্র মজা এবং নতুন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে সাহায্য করার একটি ভালো উপায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ছাত্রদল কর্মী ইপ্সিতার, ধর্ষণের অভিযোগ আসে ৯৯৯ থেকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত