Ajker Patrika

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাজ্য—ঘোষণা দিলেন স্টারমার

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ২১: ৪২
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমস

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার আজ সোমবার ঘোষণা দিয়েছেন, বিশ্বে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে দেশকে ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত অবস্থায়’ নিয়ে যেতে হবে। নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে তিনি ১২টি আক্রমণাত্মক সাবমেরিন নির্মাণের পরিকল্পনা ছাড়াও পারমাণবিক ও অন্যান্য অস্ত্রের ক্ষেত্রে বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন।

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে স্টারমার বলেন, ‘আমরা এখন যে হুমকির মুখে আছি, তা স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ, তাৎক্ষণিক ও অনিশ্চিত। ইউরোপে যুদ্ধ, নতুন পারমাণবিক ঝুঁকি, প্রতিদিন সাইবার আক্রমণ এবং ব্রিটিশ জলসীমা ও আকাশে রাশিয়ার আগ্রাসন এর প্রমাণ।’

স্টারমার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সংঘাত প্রতিরোধের সেরা উপায় হলো—তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।’

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টারমারের এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইউক্রেন যুদ্ধ তীব্রতর হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে কিছুটা সরে আসছে এবং বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার ভেতরে চারটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই স্টারমার তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কৌশল পর্যালোচনার দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক ন্যাটো মহাসচিব জর্জ রবার্টসন। এই পর্যালোচনায় রয়েছে দূরপাল্লার ৭ হাজার ব্রিটিশ অস্ত্র সংগ্রহ, নতুন সাইবার কমান্ড গঠন এবং ১ বিলিয়ন পাউন্ডের ডিজিটাল সক্ষমতায় বিনিয়োগ।

এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ড্রোন নির্মাণ ও গোলাবারুদ মজুত বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে। আরও ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করা হবে সেনাসদস্যদের আবাসন উন্নয়নে, যাতে নতুন সেনা নিয়োগ ও ধরে রাখার হার বাড়ে। বর্তমানে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে জনবল নেপোলিয়নের সময়ের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে।

স্টারমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে, যা আংশিকভাবে বিদেশি সাহায্যের খরচ কমিয়ে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে তিনি জানিয়েছেন, ৩ শতাংশে পৌঁছাতে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ‘এইউকেইউএস’ জোটের অংশ হিসেবে নতুন সাবমেরিন নির্মাণ করা হবে, যা চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে। সরকার এটিকে ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলে ‘বড় ধরনের প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা কৌশলের পরিবর্তন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এ ছাড়া স্টারমার ন্যাটো ও ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কের প্রতি যুক্তরাজ্যের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তবে পর্যালোচনায় পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব রয়েছে, যা আমেরিকান পারমাণবিক ছায়ার ওপর থেকে ব্রিটিশনির্ভরতা কমাতে পারে।

যুক্তরাজ্যের লিবারেল ডেমোক্র্যাট এমপি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মাইক মার্টিন মন্তব্য করেছেন, এই কৌশল দেখায় যে যুক্তরাজ্য আর পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করতে পারছে না। তাঁর মতে, পারমাণবিক বোমাবাহী যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব এই সন্দেহকে আরও জোরদার করছে।

প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাজ্য এক দশক পরপর প্রতিরক্ষা কৌশল পর্যালোচনা করে আসছে। শেষবার তা হয়েছিল ২০২১ সালে, যা ২০২৩ সালে হালনাগাদ হয়। এবার স্টারমারের দল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের নীতির অংশ হিসেবে এই নতুন কৌশল নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত