Ajker Patrika

লন্ডন বোমা হামলার ২০ বছর ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের বিবর্তন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০০৫ সালের ৭ জুলাই লন্ডনে বোমা হামলায় ৫২ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
২০০৫ সালের ৭ জুলাই লন্ডনে বোমা হামলায় ৫২ জন মানুষ প্রাণ হারায়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

২০ বছর আগে জুলাইয়ের ৭ তারিখে লন্ডনে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটনা। গোয়েন্দা ব্যর্থতায় সেই হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। হামলাকারী মোহাম্মদ সিদ্দিক খানকে ২০০১ সালে আল-কায়েদা প্রশিক্ষণ শিবিরে দেখা গেলেও, ২০০৪ সালে অন্যান্য সন্দেহভাজনদের সঙ্গে বৈঠকের পরও তদন্তে তাঁকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। এই ব্যর্থতার কারণে ৫২ জন সাধারণ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার সেই ব্যর্থতার দায় স্বীকারও করেন।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে বর্তমানে ব্রিটেনের উন্নত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, ২০০৫ সালের চেয়ে বর্তমান হুমকিগুলো অনেক বেশি জটিল। কারণে এখন ইন্টারনেটে বিচিত্র সহিংস কনটেন্ট থেকে অনুপ্রাণিত হয়েও হামলার ঘটনা ঘটছে। অনেক হামলার পেছনে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা আদর্শ থাকে না। ফলে এসব হুমকি আগেভাগে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

২০০৫ সালের ৭ / ৭ হামলা যুক্তরাজ্যের সেকেলে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা ছিল। উত্তর আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির (আইআরএ) বিরুদ্ধে সামরিক ধাঁচের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে পুরোপুরি কার্যকর ছিল না। গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ৫ এবং পুলিশ বুঝতে পারে যে আল-কায়েদার সেলগুলোতে অনুপ্রবেশ করতে তাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হবে এবং গোয়েন্দা তথ্য দ্রুত ও ব্যাপকভাবে শেয়ার করতে হবে।

তৎকালীন সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশের প্রধান পিটার ক্লার্ক, এই হামলাকে ‘অবশ্যই একটি ব্যর্থতা’ বলে স্বীকার করেন। এমআই৫-এর প্রাক্তন প্রধান লর্ড জোনাথন ইভান্স জানান, সেই সময় গোয়েন্দা টিমগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ ছিল এবং সব হুমকি তদন্ত করা সম্ভব ছিল না, তাই অগ্রাধিকার নির্ধারণে ভুল হয়েছিল। হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় সিদ্দিক খানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

২০০৫ সালের হামলার পর, কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে যে তদন্তের অগ্রাধিকার নির্ধারণে পরিবর্তন আনা জরুরি। সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করা হয় এবং এমআই ৫ ও পুলিশ একটি উন্নত ‘ট্রায়াজ’ সিস্টেম তৈরি করে। এর ফলে পুলিশ দ্রুত প্রমাণ জব্দ করে অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হয়।

৭ / ৭ এর এক বছর পর সংঘটিত ‘অপারেশন ওভার্ট’-এর সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই অভিযানে আল-কায়েদার ‘তরল বোমা’ তৈরির পরিকল্পনা ব্যর্থ করা হয়, যে বোমা আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া উড়োজাহাজ উড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হতে পারত। এমআই ৫ রিয়েল-টাইমে তথ্য শেয়ার করে এবং পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে। এই সাফল্য প্রমাণ করে, এ ধরনের সন্ত্রাসী পরিকল্পনা দ্রুত ব্যর্থ করে দেওয়া সম্ভব।

লর্ড ইভান্স আরও উল্লেখ করেন, হুমকি কেবল লন্ডন-ভিত্তিক নয়, বরং জাতীয় হওয়ায় আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা হয়। ২০০৬ সালে, পার্লামেন্ট সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে নতুন আইন তৈরি করে, যা পুলিশকে হামলাকারীর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা দেয়।

২০১৪ সাল থেকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়। যারা সিরিয়া ও ইরাকে যেতে পারেনি, তাদের নিজ দেশে কমান্ডারের নির্দেশনা ছাড়াই হামলা চালানোর নির্দেশ দেয় আইএস। এর ফলে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ জুড়ে ‘ডিআইওয়াই’ (Do-It-Yourself) বা স্ব-উদ্যোগে হামলার ঢেউ শুরু হয়। সরকার সন্দেহভাজনদের পাসপোর্ট বাতিল বা নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেয়।

২০১৭ সালে ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজ ও পার্লামেন্টে হামলা এবং ম্যানচেস্টার এরেনা হামলা (যেখানে ২২ জন নিহত হয়) এই নতুন ধরনের হুমকির উদাহরণ। ম্যানচেস্টার হামলায় এমআই৫-এর ব্যর্থতায় পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি জনসমাবেশে শিথিল নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। ফিগেন মুরে, যার ছেলে এই হামলায় নিহত হন, তাঁর প্রচেষ্টায় ‘মার্টিন’স ল’ তৈরি হয়, যা জনসমাগমস্থলে নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাধ্যতামূলক করে।

উগ্র-ডানপন্থী চরমপন্থীরাও এই ‘ডিআইওয়াই’ সহিংসতা থেকে শিখেছে। ২০১৫ সালে শিখ-বংশোদ্ভূত এক দন্ত্য চিকিৎসকের ওপর হামলা এবং লেবার এমপি জো কক্স হত্যায় এর প্রমাণ মেলে। এই হামলাগুলো ছিল ইন্টারনেট থেকে চরমপন্থী কনটেন্ট থেকে অনুপ্রাণিত। ব্রিটেনের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো এখন ‘অনলাইন রোল-প্লেয়ার’ দল তৈরি করেছে, যারা অনলাইন চ্যাট গ্রুপে চরমপন্থী নিয়োগকারীর ছদ্মবেশে সম্ভাব্য হামলাকারীদের চিহ্নিত করে।

‘প্রিভেন্ট’ (Prevent) সিস্টেম, সম্ভাব্য চরমপন্থীদের চিহ্নিত করা, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা থেকে বিরত রাখার জন্য তৈরি করা হয়। এটি জনসমর্থন আদায়ে বেগ পেলেও সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। ২০১৫ সাল থেকে প্রায় ৫ হাজার তরুণকে চরমপন্থার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে কর্তৃপক্ষ।

সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশের বর্তমান প্রধান ভিকি ইভান্স বলেন, বর্তমানে সন্দেহভাজনরা সাধারণত বেশ কম বয়সী হয় এবং ইন্টারনেটে থাকা সহিংস কনটেন্ট এতে ভূমিকা রাখছে। কিছু ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আদর্শে অনুপ্রাণিত না হয়েও চরম সহিংসতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের নিয়ে কী করা যেতে পারে তা নিয়ে কাজ করছে পুলিশ।

সম্প্রতি সাউথপোর্টে স্কুলে হামলার ঘটনা ইন্টারনেট থেকে অনুপ্রাণিত সহিংসতা নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। সাউথপোর্টে একটি নাচের ক্লাসে ১৮ বছর বয়সী অ্যালেক্স রুডাকুবানা ছুরি নিয়ে হামলা করে তিন বালিকাকে হত্যা করে। আদালত তার ৫২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

সর্ব সম্প্রতি ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসবাদ আইনের অধীনে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার। এই পদক্ষেপ সন্ত্রাসবিরোধী নেটওয়ার্কের হুমকি মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় কৌশল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে।

যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী নেটওয়ার্ক এখন অনেক বেশি ক্ষমতাশালী এবং সুসংগঠিত বলে মনে করা হয়। কিন্তু হুমকি আগের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়। পুলিশ বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ১৫টি অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে এবং ৪৩টি পরিকল্পনা শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন মামদানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৩
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন জোহরান মামদানি। ভোট শেষে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পরপরই বার্তা সংস্থা এপি তাঁর বিজয়ের খবর নিশ্চিত করে। বিশ্বের দৃষ্টি কেড়ে নেওয়া উত্তেজনাপূর্ণ এ নির্বাচনে তার জয় ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ৮৪ লাখের বেশি মানুষের এই শহর অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বৈশ্বিক শক্তিকেন্দ্র। সেই শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া নেতা হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখালেন মামদানি।

বহুধর্মী ও বহুজাতির এই মহানগরের ভোটারেরা মামদানির জয়কে ঐতিহাসিক অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তবে তাঁর নিবেদিত সমর্থকেরা বলছেন, এটি কেবল ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের জয় নয়—এটি জীবনের ব্যয় সামাল দেওয়ার বাস্তব সমস্যায় তার তীক্ষ্ণ ও স্পষ্ট অবস্থানের প্রতিফলন।

এই নির্বাচন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিকনির্দেশক হিসেবেও দেখা হচ্ছে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো অনেকের কাছে পুরোনো ধনবান দাতানির্ভর রাজনীতির প্রতীক। আর নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া মামদানি দলটির জন্য নতুন এক পথের সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।

মঙ্গলবার ভোট দেওয়ার সময় কুমো বলেন, এটি ‘ডেমোক্রেটিক পার্টির ভেতরের এক গৃহযুদ্ধ, যা বহুদিন ধরে জ্বলছিল।’ তিনি বলেন, ‘চরমপন্থী বামপন্থীরা, যারা নিজেদের সমাজতন্ত্রী বলে, তারা মাঝারি ডেমোক্র্যাটদের চ্যালেঞ্জ করছে। তোমরা যেটা এখানে দেখছো, সেটাই সেই সংঘর্ষ।’

তবে ব্রংক্সের মোট হ্যাভেন এলাকার সমাজকর্মী জোশুয়া উইলসন মামদানীকে ভোট দিয়েছেন। তাঁর মতে, কুয়োমো যা বলেছেন তা আংশিক সত্য। তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে এখন সবার নজর নিউইয়র্কে, নজর যুক্তরাষ্ট্রে। সব কিছু রাজনীতিকরণ হয়ে গেছে, ঘৃণা আর তিক্ততা বেড়ে গেছে।’ ৩৩ বছর বয়সী উইলসন বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের কণ্ঠ আসছে, এটা অনেককে ভয় দেখাচ্ছে। তারা পুরোনো অবস্থা ধরে রাখতে চায়, যেন কিছুই না বদলায়।’

একই এলাকার ৬৮ বছর বয়সী লুসি করদেরো বললেন, ‘আমরা কুয়োমোকে চিনি, তিনি খুব ভালো মানুষ নন। আমি মামদানীকে বেছে নিয়েছি, কারণ তিনি নতুন, তরতাজা। হয়তো তিনি পরিবর্তন আনতে পারবেন, যা এখন ভীষণ দরকার।’

নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প কুয়োমোকে সমর্থন দিয়েছিলেন, যাতে রক্ষণশীল ভোটারদের উজ্জীবিত করা যায়। কিন্তু সেটি উল্টো ফল দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কুয়োমোর সাবেক সমর্থকরাও মামদানীর প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়েছেন। ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ইফতিখার খান বলেন, মামদানী মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ভোটারদের এক বিশাল ঐক্য গড়ে তুলেছেন। অনেকেই মনে করছেন, তার এই বিজয় নিউইয়র্কের মুসলিমদের জন্য নতুন রাজনৈতিক জাগরণের সূচনা। কারণ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মুসলিমরা এই শহরে বৈষম্যের কঠিন সময় পার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচন: ভোট গণনা শেষ, ‘জিততে যাচ্ছেন মামদানি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৮
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি
জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গণনাও শুরু হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নির্বাচনে অন্তত ২০ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন। নির্বাচনী তথ্য সংগ্রহকারী প্ল্যাটফর্ম ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ জানিয়েছে, জোহরান মামদানিই জিতবেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ভোট গণনা সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশের আশা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের সমর্থকেরা ফলাফলের অপেক্ষায় নানা স্থানে আয়োজন করেছে ওয়াচ পার্টি।

মামদানির নির্বাচনী অনুষ্ঠান হচ্ছে ডাউনটাউন ব্রুকলিনের ঐতিহাসিক কনসার্ট ভেন্যু ব্রুকলিন প্যারামাউন্টে। অন্যদিকে, কুমো তাঁর নির্বাচনী আয়োজন করেছেন ম্যানহাটনের মিডটাউনের জিগফেল্ড থিয়েটারে। রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়া তাঁর নির্বাচনী পার্টির আয়োজন করেছেন ম্যানহাটনের আপার ওয়েস্ট সাইডের একটি রেস্তোরাঁয়, যেটি মূলত ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশন জানিয়েছে, ১৯৮৯ সালের পর এবারই প্রথম ভোটার উপস্থিতি ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। স্থানীয় সময় রাত ৯টায় ভোটকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার আগেই বোর্ড এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানায়।

এদিকে, নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে জোহরান মামদানির প্রচারশিবিরের প্রেস সেক্রেটারি ডোরা পেকেক আল–জাজিরাকে বলেন, ‘আজ যা দেখছি, তা এক বছরের পরিশ্রম আর এক বছরের আন্দোলনের ফল। ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি আমাদের জন্য সত্যিই ভালো খবর। প্রাইমারিতেও এটি আমাদের পক্ষে গিয়েছিল, এবারও সেটি আমাদের পক্ষে যাবে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা নতুন মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করছি।’

অপরদিকে, নির্বাচনে নিয়ে কাজ করা স্বাধীন সংস্থা ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ ইতোমধ্যেই মামদানিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত কেবল এই সংস্থাটিই এমন ঘোষণা দিয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, ‘ডিসিশন ডেস্ক এইচকিউ জানাচ্ছে যে, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানিই জিততে যাচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাদ্দাফির পুত্রকে মুক্ত করতে লেবাননে গেল লিবিয়ার প্রতিনিধিদল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৫
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত
মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল। ছবি: সংগৃহীত

মুয়াম্মার গাদ্দাফির পঞ্চম পুত্র হানিবাল গাদ্দাফিকে মুক্ত করতে লেবাননের বৈরুতে পৌঁছেছে লিবিয়ার একটি প্রতিনিধিদল। সম্প্রতি হানিবালের মুক্তির জন্য ১১ মিলিয়ন ডলারের জামিন দাবি করেছিল লেবাননের আদালত। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৩৪ কোটি টাকা।

লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পুত্র হানিবাল ২০১৫ সাল থেকে কোনো বিচার ছাড়াই লেবাননের কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লেবাননের প্রভাবশালী শিয়া ধর্মীয় নেতা মুসা আল সদরের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য লুকিয়ে রেখেছেন।

মুসা আল সদর ১৯৭৮ সালে গাদ্দাফির আমন্ত্রণে লিবিয়ায় সফরে যান এবং সেখান থেকেই তিনি নিখোঁজ হন। সদর যখন নিখোঁজ হন, হানিবাল তখন মাত্র দুই বছরের শিশু। তাই এই বিষয়ে কোনো তথ্য গোপনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, গত মাসে (অক্টোবর) লেবাননের আদালত হানিবালকে ১১ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে হানিবালের আইনজীবীরা তখন দাবি করেন, বিপুল এই অর্থ পরিশোধে তিনি সক্ষম নন। এ ছাড়া আদালতের আদেশ অনুযায়ী, হানিবালকে মুক্তি দেওয়া হলেও লেবানন ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অতীতে তিনি বন্দী অবস্থায় অনশন ধর্মঘটও পালন করেছিলেন।

এদিকে হানিবালের দেশ লিবিয়ান এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হানিবাল হয়তো লেবানন ও লিবিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে ছাড়পত্র পেতে পারেন।

লিবিয়ার প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইব্রাহিম দবাইবাহ। তিনি ত্রিপোলির জাতীয় একতা সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবদুল হামিদ দবাইবাহর ভাগনে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিবারের সঙ্গে দবাইবাহ পরিবারের একসময় শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল।

প্রতিনিধিদলটি লেবাননের প্রেসিডেন্ট সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য ও ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারের যোগাযোগ ও রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়ালিদ এল লাফি সরাসরি হানিবালের মামলার উল্লেখ না করে জানান, তাঁরা দুই দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও বিচারিক সম্পর্ক আবারও চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যা সমাধানে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত এবং আশা করি এই সফর শিগগির দৃশ্যমান ফলাফল দেবে।’

তিনি জানান, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে লেবাননের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সাড়া পাওয়া গেছে। লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউনসহ দেশটির সংসদের স্পিকার নাবিহ বের্রি এই আলোচনার প্রতি ইতিবাচক মনোভব দেখিয়েছেন।

উল্লেখ্য, নাবিহ বেররি হলেন ‘আমাল আন্দোলন’ এর নেতা। বহু বছর আগে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ মুসা আল সদরই এই আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সদরের নিখোঁজ হওয়া এখনো লেবাননে গভীর অনুভূতি জাগায়। সদরের সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী, শেখ মুহাম্মদ ইয়াকুব ও সাংবাদিক আব্বাস বাদরেদ্দিনও নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাই হানিবালের মুক্তির বিষয়ে সব ধরনের সমাধান ও চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে ইয়াকুবের পরিবার।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের সময় লিবিয়া ত্যাগ করেছিলেন হানিবাল। পরে তিনি তাঁর লেবানিজ স্ত্রী আলিন স্কাফ ও সন্তানদের নিয়ে সিরিয়ায় বসবাস করছিলেন। কিন্তু স্থানীয় একটি সশস্ত্র গ্রুপ তাঁকে অপহরণ করে লেবানন কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়। তখন থেকেই তিনি লেবাননের কারাগারে আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মামদানিকে ভোট না দিতে নিউইয়র্কের ইহুদিদের প্রতি ট্রাম্পের আহ্বান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্থানীয় ইহুদিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন মামদানিকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। ট্রাম্পের মতে, মামদানিকে ভোট দেওয়া মানে ‘বোকামি’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘জোহরান মামদানি একজন ইহুদিবিদ্বেষী। এটা জেনেও কোনো ইহুদি ব্যক্তি যদি তাকে ভোট দেয়, তাহলে সে স্বঘোষিত ও প্রমাণিত ইহুদিবিদ্বেষী। সেই সঙ্গে সে একজন বোকা মানুষ!!!’

এর আগে গত রোববার (২ নভেস্বর) মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএসের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি নিউইয়র্কে একজন কমিউনিস্ট মেয়র হয়, তাহলে ওখানে অর্থ পাঠানো মানে সেই অর্থের অপচয় করা। তাই প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউইয়র্কে অনেক অর্থ দেওয়া আমার জন্য কঠিন হবে।’

ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি বিল দে ব্লাসিওকে দেখেছি—কতটা খারাপ মেয়র ছিলেন তিনি। কিন্তু মামদানি দে ব্লাসিওর চেয়ে খারাপ।’

ট্রাম্প নিজে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় বেড়ে উঠেছেন। যদিও তিনি একজন রিপাবলিকান, সাক্ষাৎকারে কার্যত তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকেই সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি কুমোর ভক্ত নই, তবে যদি খারাপ এক ডেমোক্র্যাট আর এক কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’

৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি নিজেকে ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কমিউনিস্ট হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘আমি মূলত এক স্ক্যান্ডিনেভীয় রাজনীতিকের মতো; শুধু একটু গা-চামড়ায় বাদামি।’

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৩৪ বছর বয়সী মামদানি নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত