Ajker Patrika

অনলাইনে বিড়ালকে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও, টাকা দিয়ে দেখছে মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিড়াল ও বিড়ালছানাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও আদান-প্রদানের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে বিবিসি। এই নেটওয়ার্কের হাজার হাজার সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই নেটওয়ার্কের এত বিপুলসংখ্যক সদস্য বিড়ালকে আহত করা এবং হত্যা করার সহিংস ভিডিও ও ছবি অনলাইনে পোস্ট করে, শেয়ার করে এবং বিক্রি করে। একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপের গ্রুপে বিবিসি প্রমাণ পেয়েছে, যুক্তরাজ্যের কিছু সদস্য আরএসপিসিএ (দ্য রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন ক্রুয়েলটি টু অ্যানিমেল) থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিয়ে সেগুলোকে নির্যাতন করার পরামর্শ দিচ্ছে।

এই অনুসন্ধানের পর যুক্তরাজ্যের উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের রুইসলিপ পার্কে মে মাসে দুটি বিড়ালছানাকে নির্যাতন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত দুই কিশোর-কিশোরী তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। আজ সোমবার তাদের সাজা ঘোষণার কথা রয়েছে।

১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী এবং ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর, যাদের নাম আইনগত কারণে প্রকাশ করা হয়নি, তারা এই নৃশংস অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। তারা বিড়ালছানা দুটিকে কেটে ঝুলিয়ে রেখেছিল। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ছুরি, ব্লোটর্চ ও কাঁচি উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিড়াল নির্যাতনকারীদের ওই নেটওয়ার্কের সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনেই জন্ম এই নেটওয়ার্কের। পরে এটি পুরো বিশ্বে বিস্তৃত হয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে এই নেটওয়ার্কের সদস্যদের শনাক্ত করেছে বিবিসি। প্রাণী অধিকারবিষয়ক সংগঠন ‘ফেলিন গার্ডিয়ান্স’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রতি ১৪ ঘণ্টায় গড়ে একটি করে বিড়াল নির্যাতন কিংবা হত্যার নতুন ভিডিও আপলোড করা হয়েছে এই নেটওয়ার্কে। এই বছর এ ধরনের অন্তত ২৪টি সক্রিয় গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে ফেলিন গার্ডিয়ান্স, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রুপের সদস্যসংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। গ্রুপের সবচেয়ে সক্রিয় সদস্য ২০০টিরও বেশি বিড়ালকে নির্যাতন ও হত্যার ভিডিও ওই নেটওয়ার্কে আপলোড করেছে।

বিবিসি বলছে, যুক্তরাজ্যের কিছু অ্যাকাউন্ট বিড়াল সংগ্রহ করে সেগুলোকে কীভাবে নির্যাতন করা যায়, তা নিয়ে ওই সব গ্রুপে নিয়েমিত আলোচনা করে। কীভাবে আরএসপিসিএ থেকে বিড়ালছানা দত্তক নিতে হয়, আবেদন করতে হয় তা-ও ওই সব গ্রুপে পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে বিবিসি দেখেছে, যুক্তরাজ্যের বিড়াল বিক্রির একটি বিজ্ঞাপন শেয়ার করে একজন লিখেছে, ‘সে এদের খুব বাজেভাবে নির্যাতন করতে চায়।’

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ফেলিন গার্ডিয়ান্সের স্বেচ্ছাসেবক লারা (নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি) দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় গোপন রেখে এই নেটওয়ার্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘ওদের পোস্ট করা ভিডিও-ছবি, ওদের কথোপকথন প্রতি মুহূর্তে আমার হৃদয় ভেঙে যায়। এমন একটি দিনও নেই যেদিন আমার বুকটা ভার হয়ে যায় না।’ এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে শয়তানি কার্যকলাপের চরম রূপ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘নির্যাতনকারীরা বিড়ালগুলোকে যেকোনো মাত্রার কষ্ট দিতে প্রস্তুত।’

বিবিসি বলছে, ওই নেটওয়ার্কে প্রকাশিত ভিডিওগুলো খুবই বীভৎস ও ভয়ংকর। পানিতে ডুবিয়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হত্যা, খাঁচার মধ্যে বন্দী করে খাবার না দিয়ে অনাহারে হত্যার মতো বীভৎস ভিডিও দেওয়া হয় ওই নেটওয়ার্কে। মৃতপ্রায় বিড়ালকে কীভাবে শক দিয়ে জীবিত করে আবার নির্যাতন করা হয়—এমন নির্দয় ও অমানবিক বিবরণও দিয়েছে কোনো কোনো নির্যাতনকারী।

নতুন সদস্যদের নির্যাতন করে ভিডিও পোস্ট করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে নেটওয়ার্ক আরও বড় হয়। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, এসব নির্যাতনকারীর অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। বিবিসি বলছে, অনুসন্ধানে তারা একটি পোস্ট দেখেছে যাতে লেখা ছিল, ‘আমার বয়স ১০ এবং আমি বিড়াল নির্যাতন করতে ভালোবাসি।’

বিড়াল নির্যাতনের একটি গ্রুপে ‘১০০ বিড়াল হত্যা’ নামে একটি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেছিল!

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ধারণা করা হয়, ২০২৩ সালে চীন থেকে এই নেটওয়ার্কের সৃষ্টি। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে চীনের ওয়াং চাওই নামে এক চীনা ব্যক্তি বিড়াল নির্যাতনের দুটি গ্রাফিক ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিও দুটি চীনা ও পশ্চিমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে, এর জেরে ওয়াংকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। ১৫ দিন বন্দী থাকতে হয় তাঁকে। পরে একটি অনুতাপপত্র লিখে মুক্ত হন তিনি।

মূলত ওয়াংয়ের ওই ভিডিওগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই অনেকে নতুন করে একই ধরনের নির্যাতনের কনটেন্ট তৈরি করতে শুরু করে। একাধিক এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপে গড়ে ওঠে চক্রভিত্তিক গ্রুপ। একটি ওয়েবসাইট নিজেদের ‘ক্যাট লাভার্স কমিউনিটি’ বলে দাবি করলেও সেখানে প্রবেশাধিকার পেতে হলে ব্যবহারকারীদের বিড়াল নির্যাতনের প্রমাণ দিতে হয়।

এই নেটওয়ার্কে ‘লিটল উইনি’ নামটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। এতে প্রোফাইল ছবিতে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের একটি ব্যঙ্গচিত্র থাকে, যেখানে তাঁকে কার্টুন চরিত্র উইনি দ্য পুহের সঙ্গে তুলনা করা হয়। এমন অ্যাকাউন্ট একাধিক চক্রে প্রশাসক হিসেবেও যুক্ত।

প্রাণী অধিকার সংগঠন ফেলিন গার্ডিয়ান্সের পরিচালক লারা ছদ্মবেশে এই চক্রে প্রবেশ করেন। তিনি জানান, ‘লিটল উইনি’ নামের একটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তিনি গ্রুপে ঢোকার সুযোগ পান। এরপর সেখানে তিনি একের পর এক নির্যাতনের ভিডিও দেখেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে একপ্রকার অনুভূতিহীন করে রেখেছিলাম, নইলে এই ভিডিওগুলো দেখা সম্ভব ছিল না।’

কয়েক সপ্তাহ পর ওই কর্মী অভিযুক্তের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন। তদন্তে জানা যায়, তিনি জাপানের টোকিওতে বসবাসরত ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তবে বিবিসির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ওই ব্যক্তি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং ভিডিও তৈরিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন।

সংগঠনটির পরিচালক লারা বলেন, ‘এই ধরনের চক্র যদি এখনই রোধ না করা হয়, তাহলে এটি আরও বিস্তৃত হবে এবং ভয়ংকর রূপ নেবে।’ তিনি জানান, লন্ডনে চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে বেইজিংয়ের প্রতি কড়া আইন প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। লারা বলেন, ‘চীনে প্রাণী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর কোনো আইন নেই। শাস্তির ভয় না থাকায় এমন জঘন্য কাজ চালিয়ে যেতে পারছে অপরাধীরা। একবার এসব ভিডিও অনলাইনে এলে তা শুধু চীনা সীমায় থাকে না, তখন এটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়।’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই ভিডিওগুলো শিশুদের কাছেও সহজেই পৌঁছাচ্ছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।’

ব্রিটিশ প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা আরএসপিসিএর বিশেষ অভিযান ইউনিটের প্রধান ইয়ান ব্রিগস বলেন, ‘প্রাণীদের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ একটি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যেখানে অধিকাংশ মানুষ প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল, সেখানে এ ধরনের সহিংসতা গভীর উদ্বেগের বিষয়।’

ব্রিটিশ সংসদের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অন ক্যাটসের চেয়ারপারসন এমপি জোহানা ব্যাক্সটার বলেন, ‘এই চক্রগুলো তরুণদের মধ্যে এক উদ্বেগজনক প্রবণতা তৈরি করছে। প্রাণী নির্যাতন ভবিষ্যতের মানবিক সহিংসতারই পূর্বাভাস।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

সরকারি ছুটি ২৮ দিন, ১১ দিনই শুক্র-শনিবার

বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি: জামায়াত নেতা তাহের

জাহানারার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিসিবি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কোয়াড প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত সুদানের আরএসএফ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) কর্তৃক প্রকাশিত এ ছবিতে সুদানের দারফুর অঞ্চলের তাওইলায় বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি শিবির। ছবি: এনআরসি
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) কর্তৃক প্রকাশিত এ ছবিতে সুদানের দারফুর অঞ্চলের তাওইলায় বাস্তুচ্যুত শিশুদের একটি শিবির। ছবি: এনআরসি

সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত মধ্যস্থতাকারী জোট ‘কোয়াড’ প্রস্তাবিত মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আরএসএফের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, তারা শুধু যুদ্ধবিরতিতে নয়, বরং সুদানে শত্রুতার অবসান ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিমালা নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।

আরএসএফের বিবৃতিতে বলা হয়, র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এই চুক্তি বাস্তবায়ন ও অবিলম্বে আলোচনায় বসার অপেক্ষায় আছে, যাতে সুদানের সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধান হয় এবং জনগণের দুর্ভোগের ইতি ঘটে। এ ঘোষণা এমন এক সময় এসেছে, যখন আরএসএফ সম্প্রতি দখল নিয়েছে এল-ফাশের শহরের, যা গত দেড় বছর ধরে অবরুদ্ধ ছিল এবং পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সুদানি সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল।

তবে সুদানি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী তখনই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে, যদি আরএসএফ সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক এলাকা থেকে সরে যায় এবং পূর্ববর্তী শান্তিচুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র সমর্পণ করে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকাবিষয়ক উপদেষ্টা মাসাদ বোলস জানান, যুক্তরাষ্ট্র সুদানি সেনাবাহিনী ও আরএসএফ—উভয় পক্ষের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে দ্রুত একটি মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা গত প্রায় ১০ দিন ধরে দুই পক্ষের সঙ্গে কাজ করছি, বিস্তারিত চূড়ান্ত করার আশায়।’ বোলসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে তিন মাসের মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, এরপর নয় মাসের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এই উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সৌদি আরব, মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও যুক্ত আছে। এই চার দেশকে সম্মিলিতভাবে ‘কোয়াড’ বলা হয়।

দেশটিতে নতুন করে বাস্তুচ্যুত মানুষের ঢল নামায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক ও ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, অতিরিক্ত মানুষের আগমনে আশ্রয়শিবিরগুলো ভয়াবহ চাপের মুখে পড়েছে।

আজ আন্তর্জাতিক সংস্থা ইসলামিক রিলিফ এক বিবৃতিতে জানায়, যেসব কমিউনিটি রান্নাঘর ক্ষুধার্ত পরিবারগুলোর শেষ ভরসা, সেগুলো এখন ধসে পড়ার পথে। সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, সুদানের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের ৮৩ শতাংশ পরিবার এখন পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না।

এদিকে গতকাল বুধবার সুদানের ডাক্তার্স নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, এল-ফাশেরের পশ্চিমের বাস্তুচ্যুত শিবিরগুলো—বিশেষত তাওইলা, কুরমা ও গলো এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ এসব এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, এল-ফাশের দখলের পর আরএসএফ ওই অঞ্চলের একটি হাসপাতালে হামলা চালায়, যাতে ৪৫০ জনের বেশি নিহত হয়। এ ছাড়া আরএসএফ বাহিনী ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ড ও যৌন সহিংসতার ঘটনাও ঘটিয়েছে।

সুদানি সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় ২০২৩ সালে। দুপক্ষই মূলত একসময় মিত্র ছিল, যারা ২০১৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশটির গণতান্ত্রিক রূপান্তরপ্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে ছিল। কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, এ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। তবে ত্রাণ সংস্থাগুলোর দাবি, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এরচেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তথ্যমতে, বর্তমানে ২ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, শুধু এক সপ্তাহেই এল-ফাশের থেকে ৭০ হাজার মানুষ পালিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে পৌঁছেছে নর্দান স্টেটের আল-আফফাদ বাস্তুচ্যুত শিবিরে, যা রাজধানী খার্তুম থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে।

পালিয়ে আসা শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী ওসমান মোহাম্মদ বলেন, ‘এল-ফাশের ছাড়ার পথে রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। অনেকে ক্লান্তিতে ও নির্যাতনে মারা গেছেন।’

আরও একজন বাস্তুচ্যুত নারী রাওদা মোহাম্মদ বলেন, এল-ফাশেরে আকাশে সারাক্ষণ ড্রোন ঘোরে। কখন যে হামলা হয়, বুঝতেই পারা যায় না। খাবার বলতে কিছুই ছিল না—মানুষ শুধু বাদাম তেলের অবশিষ্ট অংশ খেয়ে বেঁচে ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

সরকারি ছুটি ২৮ দিন, ১১ দিনই শুক্র-শনিবার

বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি: জামায়াত নেতা তাহের

জাহানারার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিসিবি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ভাষণ ছিঁড়ে ফেলা সেই ন্যান্সি পেলোসি অবসরে যাচ্ছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: এএফপি
ন্যান্সি পেলোসি। ছবি: এএফপি

২০২০ সালে স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ডায়াসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন স্পিকারের আসনে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী শক্ত মুখে সেই ভাষণের কপি ছিঁড়ে ফেলেন। দৃশ্যত এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ঘটনাটি রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে জায়গা করে নেয়।

ট্রাম্পের ভাষণ ছিঁড়ে ফেলা সেই ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন কংগ্রেসের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার। আজ এই ডেমোক্র্যাট নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। চার দশকের বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবন শেষে তিনি কংগ্রেস থেকে বিদায় নিচ্ছেন বলে এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন।

৮৫ বছর বয়সী পেলোসি জানিয়েছেন, তাঁর বর্তমান মেয়াদ (২০২৭ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত) শেষ হলে তিনি আর নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির এক ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটছে।

ভিডিওবার্তায় পেলোসি বলেন, ‘আমরা ইতিহাস গড়েছি, অগ্রগতি অর্জন করেছি। আমরা সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছি আর এখন আমাদের গণতন্ত্রের সক্রিয় অংশীদার হয়ে থাকতে হবে এবং আমেরিকান আদর্শ রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

পেলোসির উত্থান ও ক্ষমতা

১৯৮৭ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো থেকে পেলোসি প্রথমবার কংগ্রেসে নির্বাচিত হন এবং দ্রুতই তিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির শীর্ষ সারিতে উঠে আসেন।

২০০৭ সালে পেলোসি ইতিহাস গড়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে প্রতিনিধি পরিষদের দায়িত্ব পান। তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। পরে দল পুনরায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে ২০১৯ সালে পেলোসি আবারও স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ২০২৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, ভাইস প্রেসিডেন্টের পর প্রেসিডেন্টের উত্তরাধিকারক্রমে স্পিকার তৃতীয় স্থানে থাকেন। এ পদে থেকেই পেলোসি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিক প্রেসিডেন্টের নীতি-কার্যক্রম এগিয়ে নিতে কিংবা বাধা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ বা স্বাস্থ্যসেবা আইন পাসে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময় পেলোসি পরিকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিল পাসেও বড় ভূমিকা রাখেন।

তবে পেলোসি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে। ২০২০ সালে ট্রাম্পের স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ শেষে পেলোসি প্রকাশ্যে সেই ভাষণের কপি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। এ ঘটনা আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে এক প্রতীকী মুহূর্ত হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুই দফা অভিশংসনপ্রক্রিয়া (ইমপিচমেন্ট) পরিচালনায়ও পেলোসি ছিলেন অগ্রভাগে। প্রথমবার ২০১৯ সালে ইউক্রেনকে চাপ দেওয়া ও সামরিক সহায়তাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে। দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবনে দাঙ্গা উসকে দেওয়ার অভিযোগে। তবে প্রতিবারই রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ট্রাম্প রক্ষা পান।

বাইডেনের শাসনামলে পেলোসি সংখ্যাগরিষ্ঠ না হয়েও ডেমোক্র্যাটদের বেশ কয়েকটি বড় আইন পাস করাতে সক্ষম হন। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিনিধি পরিষদ দুই বছরের কম সময়ে কোভিড-১৯ ত্রাণ প্যাকেজ, অবকাঠামো খাতে দ্বিদলীয় ব্যয় বিল, বহু ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু ও সামাজিক খরচ কর্মসূচি এবং সমকামী বিবাহ সুরক্ষা আইন পাস করে।

২০২২ সালে নিউইয়র্কের প্রতিনিধি হাকিম জেফ্রিস পেলোসির স্থলাভিষিক্ত হয়ে ডেমোক্র্যাট দলের হাউস নেতা হন। পেলোসি কংগ্রেসের বাইরেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘প্রপোজিশন-৫০’-এর পক্ষে কাজ করেছেন। এর লক্ষ্য ছিল ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে অন্তত পাঁচটি আসন পুনরুদ্ধার করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

সরকারি ছুটি ২৮ দিন, ১১ দিনই শুক্র-শনিবার

বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি: জামায়াত নেতা তাহের

জাহানারার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিসিবি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিপাইনে ১১৪ প্রাণ কেড়ে নিয়ে ভিয়েতনামে আঘাত হানল টাইফুন ‘কালমায়েগি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফিলিপাইনে ১১৪ প্রাণ কেড়ে নিয়ে ভিয়েতনামে আঘাত হানল টাইফুন ‘কালমায়েগি’

ভয়াবহ টাইফুন ‘কালমায়েগি’ ভিয়েতনামে আঘাত হেনেছে। এর আগে ফিলিপাইনে দুই দিন তাণ্ডব চালিয়ে অন্তত ১১৪ জনের প্রাণ কেড়েছে এই টাইফুন।

ভিয়েতনামের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার কালমায়েগির বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১৪৯ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) পর্যন্ত পৌঁছায়। ঝড়ে অসংখ্য ঘরের ছাদ উড়ে গেছে এবং গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ১০ মিটার (৩০ ফুট) উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই টাইফুনের কারণে ভিয়েতনাম সরকার ইতিমধ্যে ছয়টি বিমানবন্দর বন্ধ করে দিয়েছে এবং গিয়া লাই প্রদেশে ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। এটি চলতি বছরে ভিয়েতনামে আঘাত হানা ১৩তম টাইফুন এবং সবচেয়ে শক্তিশালীগুলোর একটি।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি সেনাসদস্য উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সরকার নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে। মধ্যাঞ্চলের উচ্চভূমি অঞ্চলগুলো—বিশেষ করে, কফি উৎপাদনের জন্য পরিচিত সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডস—সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

প্রবল ঝড়ের আগমনে পর্যটননগরী হোই আনের কুয়া দাই সৈকতের হোটেল ও ঘরবাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে উপকূলীয় শহর হুয়ের আশপাশের কৃষকেরা এখনো আগের বন্যা থেকে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। ওই অঞ্চলে চলতি সপ্তাহেই বন্যায় ৪৭ জনের মৃত্যু হয়।

স্থানীয় কৃষক নগুয়েন ভ্যান রিন (৪২) বলেন, ‘গত বন্যায় আমার গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি সব মারা গেছে। কালমায়েগি এবার চতুর্থবারের মতো বন্যা আনবে—আমি ভীষণ ভয় পাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ঘর থেকে নৌকা বেয়ে বের হতে হচ্ছে আর রাস্তায় গাড়িগুলো ধীরে ধীরে পানির ভেতর দিয়ে চলাচল করছে।

এদিকে ভিয়েতনামে প্রবেশের আগে ফিলিপাইনের সেবু প্রদেশে ভয়াবহ তাণ্ডব চালায় কালমায়েগি। বন্যার পানি নামার পর আজ ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র স্পষ্ট হয়—অগণিত ঘরবাড়ি মাটিতে মিশে গেছে, গাড়ি উল্টে গেছে, রাস্তাজুড়ে ধ্বংসস্তূপ।

দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানায়, এখনো ১২৭ জন নিখোঁজ। ত্রাণ কার্যক্রম ও মরদেহ উদ্ধারে বাধা সৃষ্টি করছে বিশাল ধ্বংসস্তূপ।

দেশটির জ্যেষ্ঠ বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা র‍্যাফি আলেজান্দ্রো রয়টার্সকে বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন ধ্বংসস্তূপ সরানো। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে এগুলো দ্রুত পরিষ্কার করা জরুরি।

সেবুতে এক মাস আগে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে শখানেক মানুষ মারা যায় ও হাজারো গৃহহীন হয়। এর ঠিক এক মাস পর আবারও এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে।

ফিলিপাইনের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপের পূর্ব দিকে নতুন একটি ঝড় তৈরি হচ্ছে, যা আগামী সপ্তাহের শুরুতে টাইফুনে পরিণত হয়ে আবারও দেশটিতে আঘাত হানতে পারে।

আজ সেবুর অনেক বাসিন্দা ঘরে ফিরে দেখেন, তাঁদের সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। কেউ কেউ মাটি ও কাদা সরিয়ে ঘর পরিষ্কারে ব্যস্ত। তালিসাই শহরের বাসিন্দা লিজা বেকুস বলেন, ‘আমার সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে, শুধু মেঝেটা টিকে আছে। আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’

লিজা বেকুস ধ্বংসস্তূপ থেকে ধাতব পাত ও লোহার টুকরো কুড়িয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করছিলেন, যেন সাত সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য কিছু চাল কেনা যায়। লিজা বলেন, ‘আমার বাচ্চাদের কিছুই নেই—তাদের ইউনিফর্ম, ব্যাগ, পোশাক সব ভেসে গেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

সরকারি ছুটি ২৮ দিন, ১১ দিনই শুক্র-শনিবার

বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি: জামায়াত নেতা তাহের

জাহানারার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিসিবি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তালেবানের নিষেধাজ্ঞার পর আফগানিস্তানে আফিম চাষ কমেছে: জাতিসংঘ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আগে আফগানিস্তান বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি আফিম উৎপাদন করত। ছবি: এএফপি
২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আগে আফগানিস্তান বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি আফিম উৎপাদন করত। ছবি: এএফপি

তালেবান সরকার ২০২২ সালে আফগানিস্তানে আফিম চাষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে দেশটিতে আফিমের চাষ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত অফিস (ইউএনওডিসি) একটি জরিপে বলেছে, আফিম চাষের জন্য ব্যবহৃত মোট জমির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কমেছে এবং একই সময়ে আফিমের চাষ কমেছে ৩২ শতাংশ।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগে আফগানিস্তান বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি আফিম উৎপাদন করত এবং আফগান আফিম থেকে তৈরি হেরোইন ইউরোপের বাজারের ৯৫ শতাংশ পূরণ করত। তবে ২০২২ সালের এপ্রিলে তালেবান সরকার ক্ষমতা দখলের পর আফিমকে ক্ষতিকারক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে এর চাষ নিষিদ্ধ করে। ইউএনওডিসির তথ্য বলছে, ‘গুরুতর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ’ সত্ত্বেও বেশির ভাগ কৃষক এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছেন।

ইউএনওডিসি জানিয়েছে, আফগান কৃষকেরা এখন শস্য চাষ করছেন, তবে পপি—যা থেকে হেরোইনের প্রধান উপাদান আফিম পাওয়া যায়, সেটি এখনো বৈধ ফসলের চেয়ে ‘অনেক বেশি লাভজনক’। সংস্থাটি আরও উল্লেখ করেছে, লাভজনক বিকল্পের অভাব, সীমিত কৃষি উৎপাদন ও প্রতিকূল জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে ৪০ শতাংশের বেশি আবাদযোগ্য জমি পতিত থেকে গেছে।

আফগানিস্তানের বৃহত্তম হেলমান্দ প্রদেশের একজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি পশতুকে বলেন, ‘আমরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে আমাদের জেল হয়। মেনে চললে আমরা দারিদ্র্যের শিকার হই। কিন্তু আমার কাছে যদি টাকা না থাকে, তাহলে আমি আবার পপি চাষ করব।’

অন্য একজন কৃষক তাঁর বাড়ির সামনের একটি ছোট পপিখেত দেখিয়ে বলেন, ‘আমি কী করব? আমি এটা করতে বাধ্য—আমার আর কিছুই করার নেই। আমি আমার পরিবারের জন্য খাবারও জোগাড় করতে পারি না।’

চলতি বছর আফগানিস্তানে আফিম চাষের জমির পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১০ হাজার ২০০ হেক্টর, যার বেশির ভাগ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের। এর মধ্যে বাদাখশান প্রদেশে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হয়েছে। ২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার আগে আফগানিস্তানে ২ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে আফিম চাষ হতো।

ইউএনওডিসি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে আফিম চাষ হওয়া চারটি প্রদেশকে (বাল্খ, ফারাহ, লাগমান ও উরুজগান) ২০২৫ সালে আফিমমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। জরিপে বলা হয়েছে, ঐতিহ্যবাহী শক্ত ঘাঁটিগুলো থেকে আফিম চাষ নির্মূল হওয়া নিষেধাজ্ঞার মাত্রা ও স্থায়িত্ব তুলে ধরে।

তবে ইউএনওডিসি জানিয়েছে, তালেবানের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গার কৃষকেরা সহিংস প্রতিরোধ তৈরি করেছেন, বিশেষ করে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। বাদাখশানের কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষের সময় হতাহতের খবরও পাওয়া গেছে। তা সত্ত্বেও বেশির ভাগ আফগান কৃষক তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলছেন।

ইউএনওডিসি জানিয়েছে, আফিমের চাষ কমলেও নিষেধাজ্ঞার পর থেকে মেথামফেটামিনের মতো সিনথেটিক ড্রাগের পাচার বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে ও এর আশপাশে এ ধরনের মাদক জব্দের হার গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি ছিল। ইউএনওডিসি বলছে, সংঘবদ্ধ অপরাধী গোষ্ঠীগুলো সিনথেটিক ড্রাগকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ, এগুলো উৎপাদন করা সহজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি তেমন প্রভাব ফেলে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’—হুমকির ৩ দিন পরেই বাবলাকে হত্যা

‘চিটাংঅর মইদ্যে সরোয়াইজ্জা মরিব’— ফোনে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের চেলা রায়হানের হুমকি

সরকারি ছুটি ২৮ দিন, ১১ দিনই শুক্র-শনিবার

বিএনপি মহাসচিবকে ফোন করে বলেছিলাম, আমরা একটু আলোচনায় বসি: জামায়াত নেতা তাহের

জাহানারার যৌন নিপীড়নের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে বিসিবি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত