Ajker Patrika

ঐক্যবদ্ধভাবে এগোবে চীন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ঐক্যবদ্ধভাবে এগোবে চীন

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) শতবর্ষ উদ্‌যাপন (১৯২১–২০২১) অনুষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার এক ঘণ্টার বেশি বক্তৃতা করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট ও পার্টিপ্রধান শি জিনপিং। বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে জাতীয়–আন্তর্জাতিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন শি, যা চীনের আগামীর পথচলা সম্পর্কে খানিকটা ধারণা দেয়।

জনগণের সম্মিলিত সংগ্রামের পাশাপাশি পার্টির দূরদর্শী নির্ভীক নেতৃত্বের কারণে চীন আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে জানিয়ে শি জিনপিং বলেন, চীনের সফলতা পার্টির কনুইয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই জনগণ ও পার্টির মধ্যে কোনো ধরনের ফাটল সৃষ্টির অপচেষ্টা নিজ থেকেই ব্যর্থ হতে বাধ্য।

শি জিনপিংয়ের এ মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পরোক্ষ ইঙ্গিত আছে বলে মনে করেন সিপিসির মুখপাত্র স্টাডি টাইমসের সাবেক সম্পাদক ডেন ইউয়েন। তিনি বলেন, মার্কিন রাজনীতিবিদেরা চীনা জনগণের বদলে সিপিসিকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। তাই তাদের উদ্দেশেই এ মন্তব্য।

সিপিসির ৭২ বছরের শাসনের অন্যতম অর্জন জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশকে দারিদ্র্যের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া ও শিক্ষার বিস্তার। এ দুই কারণে আজকের চীনা সমাজ গত ৪০ বছরের তুলনায় অনেক বেশি সচ্ছল।

অতীতের সঙ্গে তুলনা টেনে শি জিনপিং বলেন, ‘ক্ষমতার উত্থান–পতন থেকে শিক্ষা নিয়ে ১০০ বছরে আমরা আজকের অবস্থায় এসে পৌঁছেছি। পার্টির প্রতিষ্ঠানকালীন মূলনীতিকে বাস্তবে রূপ দিয়ে একটি সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হয়েছে চীন। সুখী, সমৃদ্ধ জাতি গঠনই আমাদের স্বপ্ন।’

বেইজিংয়ের এক দেশ, দুই নীতির অধীনে হংকং ও ম্যাকাও চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের মর্যাদা মেনে নিলেও তাইওয়ান নিজেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র মনে করে। তিব্বত সমস্যা অনেকটা মীমাংসিত হলেও তাইওয়ান ও জিনজিয়াং নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কিছুটা সংকটে আছে চীন।

সি চিন পিংএসব প্রসঙ্গে গণমুক্তি বাহিনীর (পিএলএ) প্রধান শি জিনপিং বলেন, ‘হংকং ও ম্যাকাওয়ে আমরা ইতিমধ্যে একীভূত বিচারব্যবস্থা জারি করেছি। এসব উদ্যোগ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য আবশ্যক।’

তাইওয়ানের স্বাধীনতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে পিএলওপ্রধান বলেন, ‘তাইওয়ানসহ চীনের সর্বসাধারণের প্রতি আমার আকুল আবেদন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে, জাতীয় সংহতি রক্ষা করতে তাইওয়ানের স্বাধীনতার সব ধরনের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়াতে হবে।’

আন্তর্জাতিক শক্তি, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে শির পরোক্ষ বক্তব্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বেশ হইচই হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি ও বৃহত্তম সামরিক শক্তির প্রধান হিসেবে প্রতিযোগীদের উদ্দেশে শি অনেক সংযত বক্তব্য রেখেছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

শি বলেছেন, ‘চীনারা বিদেশিদের কখনো জ্বালাতন, নিপীড়ন করেনি বা দাস বানায়নি। এ ধরনের কাজ আমরা অতীতে করিনি, এখনো করছি না এবং ভবিষ্যতেও করব না। অন্যদিকে চীনারাও কোনো রাষ্ট্রের থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করে না।’

তাই কোনো দেশ সিপিসির মধ্যে ভাঙন বা চীনাদের সঙ্গে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করতে চেষ্টা করলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে জানান শি। মাও সে–তুংয়ের এ উত্তরাধিকারী বলেন, ভ্রমবশত যারাই এ ধরনের চেষ্টা করবে, মহাপ্রাচীরে আছাড় দিয়ে তাদের মাথা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, চীনের ১৪০ কোটি জনগণের সহায়তায় তাদের রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া হবে।

তবে কপটতা ছাড়া যেকোনো ধরনের সুপরামর্শ বেইজিং সাদরে গ্রহণ করবে। তা ছাড়া, সব ধরনের সহযোগিতা, খোলামেলা আলোচনা, বিবাদ এড়িয়ে পরস্পর লাভবান হওয়ার বিষয়ে কাজ করতে সিপিসি সব সময় প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। নিজেদের স্বপ্নের প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) বাস্তবায়নে শি এ ধরনের উদার মনোভাব দেখিয়েছেন বলে জানান সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলফ্রেড উ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত