পরাগ মাঝি, ঢাকা

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই। ময়নাতদন্ত করা প্যাথলজিস্ট জানালেন, মেয়েটির মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, আর ছেলেটিকে শ্বাসরোধ। আর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সময়ও তাঁরা জীবিতই ছিলেন।
১৯৭৬ সালের ৩ মার্চ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ওই মর্গের স্মৃতি এখনো স্পষ্ট মনে আছে ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের। ৩০ বছরের চাকরি জীবনে এমন বিভীষিকাময় দৃশ্য তিনি আর কখনোই দেখেননি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে বিচারের মুখোমুখি করতে পরবর্তী এক দশকেরও বেশি সময় কেটে যায় তাঁর। কারণ, ছেলে-মেয়ে দুটি তাঁর দেশ নেদারল্যান্ড থেকেই থাইল্যান্ডে ঘুরতে এসেছিলেন। মাসখানেক আগেই নেদারল্যান্ডস থেকে চিঠি লিখে তাঁদের খোঁজ জানতে চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি।
চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, এশিয়ায় ভ্রমণরত শ্যালিকা ও তাঁর প্রেমিক প্রতি সপ্তাহেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নিজেদের পরিবারের কাছে অন্তত দুটি করে চিঠি লিখতেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁরা দুজনই চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি ছয় সপ্তাহ কেটে গেলেও তাঁদের লেখা কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকক থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে আয়ুথায়ার কাছাকাছি একটি রাস্তায় ডাচ ব্যাকপেকার হেনরিকাস ও কর্নেলিয়ার পুড়ে যাওয়া লাশ দুটি পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমে তাঁদের নিখোঁজ হয়ে থাকা এক অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি ভেবেছিল সবাই। যদিও অস্ট্রেলিয়ান ওই দম্পতিকে পরে জীবিতই পাওয়া গিয়েছিল। এক দন্তচিকিৎসকের সহযোগিতায় দাঁতের চিহ্ন মিলিয়ে লাশ দুটি শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের নিখোঁজ দুই ব্যাকপেকারের বলেই নিশ্চিত হয়েছিলেন ডাচ কূটনীতিক নিপেনবার্গ। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি এটাও নিশ্চিত হয়েছিলেন, নৃশংস এই খুনের পেছনে যিনি ছিলেন তাঁর নাম চার্লস শোভরাজ!
১৯৭০-এর দশকে আজকের দিনের মতো গগনচুম্বী অট্টালিকার নগরী ছিল না ব্যাংকক। ছিল না পাতাল রেল, স্কাই-ট্রেনের মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থাও। তবু প্রাচ্যে অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে বেড়ানো পশ্চিমা তারুণ্যের কাছে থাইল্যান্ড ছিল এক স্বপ্নের জগৎ। ব্যাংককের উষ্ণ, আর্দ্র রাস্তাগুলোতে তখনো উপচে পড়ছিল পর্যটক আর ভ্রমণকারীরা। সেই আমলের মন্থর যোগাযোগব্যবস্থায় শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় পৌঁছাতে লেগে যেত কয়েক ঘণ্টা।
কোনো স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াও না থাকায় সেই সময়টিতে ভ্রমণকারীদের কেউ নিখোঁজ হয়ে গেলে তা অজানা থেকে যেত সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা মাস। এমন একটি শহরের কোলাহলপূর্ণ বাজার আর শান্ত মন্দিরগুলো লুকিয়ে রেখেছিল শোভরাজের মতো এক ধুরন্ধর শিকারিকেও। রঙিন চকমকে জীবনের খোলসে অনায়াসে তিনি মিশে গিয়েছিলেন শহরের প্রাণবন্ত আড্ডা, হাসি, তামাশায়। সুযোগ পেলেই ছোবল মারা ছিল তাঁর স্বভাব। সর্প স্বভাবের এই মানুষটিই পরবর্তীকালে হতে যাচ্ছিলেন বিংশ শতকের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং অধরা সিরিয়াল কিলারদের একজন।
থাইল্যান্ডে শোভরাজ নিজেও ছিলেন বিদেশি। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের সূত্রে ফরাসি নাগরিক হলেও তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয়, আর মা ছিলেন ভিয়েতনামি। শোভরাজের জন্মও ভিয়েতনামে, ১৯৪৪ সালে। ভিয়েতনাম ও ভারতের সংমিশ্রণ তাঁর চেহারাকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছিল। এই বৈশিষ্ট্যই তাঁকে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সমাজের মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে, নারীদের সঙ্গে ভাব জমাতে পটু ছিলেন তিনি।
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে একজন সুচতুর ঠগবাজ হিসেবে আবির্ভূত হন শোভরাজ। চুরি করা অসংখ্য পাসপোর্ট আর ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি তখন ঘুরে বেড়াতেন আজ এই দেশ তো কাল ওই দেশ। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে তাঁর আনাগোনা ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই সময়টিতে পশ্চিম থেকে প্রাচ্য আবিষ্কার করতে আসা ব্যাকপেকার তরুণ-তরুণীরাই ছিলেন তাঁর প্রধান শিকার। ভ্রমণরত মানুষের বিশ্বাস এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। ব্যাকপেকারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ গাইড কিংবা সহযাত্রী হয়ে সহজেই মিশে যেতেন তিনি। একবার তাঁর পাল্লায় পড়ে গেলে পর্যটকদের তিনি মাদকে ডুবিয়ে দিতেন। পরে সুযোগ বুঝে টাকাপয়সা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিতেন। এটা করতে গিয়ে প্রয়োজন হলে তিনি খুনের পথও বেছে নিতেন।
শোভরাজের সবচেয়ে কুখ্যাত ছদ্মনামটি ছিল অ্যালাইন গোতিয়ার। এই নামের আড়ালেই তিনি তাঁর প্রেমিকা মেরি আন্দ্রে ল্যাক্লার্ক ওরফে মনিককে নিয়ে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে একের পর এক অপারেশন চালাতেন। থাইল্যান্ডে থাকা অবস্থায় প্রায় সময়ই ব্যাংককের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে তাঁরা শিকারকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যেতেন, কিংবা কোনো আড্ডায় আমন্ত্রণ জানাতেন। পরে শিকারের পানীয়তে মিশিয়ে দিতেন মাদকের ওভারডোজ। লুণ্ঠনের প্রমাণ মুছে দিতে শিকারকে প্রায়ই তাঁরা খুন করে গুম করে ফেলতেন। এই কাজে সহযোগিতার জন্য অজয় চৌধুরী নামে এক ভারতীয়কেও দলভুক্ত করেছিলেন শোভরাজ।
জীবনীকারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে অন্তত ১২টি খুনের কথা শোভরাজ নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। তাঁর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তেরেসা নোল্টন ও কনি জো ব্রোঞ্জিচ নামে দুই মার্কিন নারী ব্যাকপেকারও। বিকিনি পরা অবস্থায় তেরেসার মরদেহটি ভাসছিল থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্র উপকূলে। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, হয়তো সাঁতার কাটতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন তেরেসা। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে শোভরাজই তাঁকে নেশাগ্রস্ত করে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। আরেক আমেরিকান ব্যাকপেকার কনি জো ব্রোঞ্জিচের পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উপকণ্ঠে। এই দুটি ছাড়াও শারমাইন ক্যারো নামে আরও এক ফরাসি নারীর হত্যাকাণ্ড ‘বিকিনি কিলার’ হিসেবে পরিচিতি দেয় শোভরাজকে। তিনি শারামাইনের আগে তাঁর তুর্কি প্রেমিককেও খুন করেছিলেন। প্রেমিকের খোঁজে থাইল্যান্ডে এসে শারমাইন নিজেও শোভরাজের শিকারে পরিণত হন। তেরেসার মতো বিকিনি পরা অবস্থায় শারমাইনের লাশটিও সমুদ্রের পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
শুধু থাইল্যান্ড আর নেপাল নয়, ভারতেও দুই পর্যটককে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন শোভরাজ। তাঁর প্রতারণার জাল বিস্তৃত ছিল মালয়েশিয়া, তুরস্ক, গ্রিস ও আফগানিস্তানেও। তবে তাঁর অহংকার এবং কুখ্যাতির আকাঙ্ক্ষা শেষ পর্যন্ত তাঁকে পতনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ১৯৭৬ সালে শুরু করা ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের তদন্তই ঠান্ডা মাথার ওই খুনিকে শনাক্ত করে। তবে অকাট্য প্রমাণ হাতে আসার পরও কর্তৃপক্ষের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন শোভরাজ। থাইল্যান্ডে ধরা পড়ার আগেই প্রেমিকা মনিককে নিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং যথারীতি সেখানেও নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে নয়াদিল্লিতে ফরাসি শিক্ষার্থীদের একটি দলকে মাদকে অচেতন করে সর্বস্ব লুট করতে চেয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে বিষপান ও ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভারতের পুলিশ। পরে তিহার জেলে তাঁর ১২ বছরের সাজা হয়।
কারাগারের ভেতরেও নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন কুখ্যাত এই বিকিনি কিলার। তিহার জেলে সেই সময় সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন সুনীল গুপ্ত। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একটি বইয়ে সুনীল জানিয়েছেন, কারাগারের ভেতর শোভরাজ এমন সব বিশেষ সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতেন, সাধারণ কর্মীদের কাছে যা ছিল অকল্পনীয়। পছন্দ অনুযায়ী খাবার তো বটেই, আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতেন তিনি। কয়েদি হিসেবে ওয়ার্ডে থাকার কথা থাকলেও জেলের ভেতর তিনি অবাধে ঘুরে বেড়াতেন।
গুপ্তের মতে, কারাগারে থাকা ধনী কয়েদিদের সঙ্গে সখ্য এবং আইনি পরামর্শ দিয়ে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিতেন শোভরাজ। আর এসব অর্থ রক্ষীদের ঘুষ হিসেবে দিয়ে কারাগারকে নিজের বাড়িতে পরিণত করেছিলেন তিনি। সুনীল লিখেছেন সবাই তাঁকে ভয় পেত, সমীহ করত।
১৯৮৬ সালে একবার তিনি জেল থেকেও পালাতে সক্ষম হন। তবে তা কিছু সময়ের জন্য। নিজের ইচ্ছায়ই পরে আবার ধরা পড়েছিলেন। ধুরন্ধর শোভরাজ এভাবে মূলত নিজের সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে চাইছিলেন। কারণ, ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গেলে থাইল্যান্ডে প্রত্যর্পণ হওয়ার আশঙ্কা ছিল তাঁর। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল মৃত্যুদণ্ড। পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সফলও হয়। জেল পালানোর অপরাধে ভারতে তাঁর সাজার মেয়াদ আরও ১০ বছর বেড়ে যায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের জেলেই ছিলেন। তত দিনে সংবিধান অনুযায়ী থাইল্যান্ডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড তামাদি হয়ে গিয়েছিল।
ভারতে মুক্তির পর তাই নিজের দেশ ফ্রান্সে ফিরে যান শোভরাজ। অবাক করা বিষয় হলো, ফ্রান্সে তিনি খোলাখুলিভাবেই থাকতেন এবং অর্থের বিনিময়ে নিজের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াতেন। তবে তাঁর সেই স্বাধীনতা খুব বেশি দিন টেকেনি। কারণ, ২০০৩ সালে তিনি ভুল করে আবারও নেপালে পা রেখেছিলেন, যেখানে তিনি অন্তত দুজন পর্যটককে খুনের দায়ে ওয়ান্টেড ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি নজর এড়ায়নি নেপাল কর্তৃপক্ষের। ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ এবং বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২২ সালে নেপালের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে আরও এক নজির গড়েন তিনি। ২০০৮ সালে নেপালের কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ৬৪ বছর বয়সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজের আইনজীবীর ২০ বছর বয়সী কন্যা নিহিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন তিনি। নেপালের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় শোভরাজের অপরাধের দুনিয়ায় বিমোহিত হয়ে যায় পুরো বিশ্ব। তাঁর প্রতারণা ও খুনের গল্প নিয়ে রচিত হতে থাকে বই, তথ্যচিত্র, এমনকি পরবর্তী সময়ে ‘দ্য সার্পেন্ট’ নামে একটি হিট টিভি সিরিয়ালও নির্মিত হয় তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণায়।
ইতিহাসের কুখ্যাত এই খুনি এখনো ফ্রান্সের মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এমনকি তাঁর জীবনী লিখতে চাওয়া এক লেখককে অনুমতি দিতে সম্প্রতি দেড় মিলিয়ন ডলারও দাবি করেছেন।

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই। ময়নাতদন্ত করা প্যাথলজিস্ট জানালেন, মেয়েটির মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, আর ছেলেটিকে শ্বাসরোধ। আর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সময়ও তাঁরা জীবিতই ছিলেন।
১৯৭৬ সালের ৩ মার্চ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ওই মর্গের স্মৃতি এখনো স্পষ্ট মনে আছে ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের। ৩০ বছরের চাকরি জীবনে এমন বিভীষিকাময় দৃশ্য তিনি আর কখনোই দেখেননি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে বিচারের মুখোমুখি করতে পরবর্তী এক দশকেরও বেশি সময় কেটে যায় তাঁর। কারণ, ছেলে-মেয়ে দুটি তাঁর দেশ নেদারল্যান্ড থেকেই থাইল্যান্ডে ঘুরতে এসেছিলেন। মাসখানেক আগেই নেদারল্যান্ডস থেকে চিঠি লিখে তাঁদের খোঁজ জানতে চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি।
চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, এশিয়ায় ভ্রমণরত শ্যালিকা ও তাঁর প্রেমিক প্রতি সপ্তাহেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নিজেদের পরিবারের কাছে অন্তত দুটি করে চিঠি লিখতেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁরা দুজনই চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি ছয় সপ্তাহ কেটে গেলেও তাঁদের লেখা কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকক থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে আয়ুথায়ার কাছাকাছি একটি রাস্তায় ডাচ ব্যাকপেকার হেনরিকাস ও কর্নেলিয়ার পুড়ে যাওয়া লাশ দুটি পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমে তাঁদের নিখোঁজ হয়ে থাকা এক অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি ভেবেছিল সবাই। যদিও অস্ট্রেলিয়ান ওই দম্পতিকে পরে জীবিতই পাওয়া গিয়েছিল। এক দন্তচিকিৎসকের সহযোগিতায় দাঁতের চিহ্ন মিলিয়ে লাশ দুটি শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের নিখোঁজ দুই ব্যাকপেকারের বলেই নিশ্চিত হয়েছিলেন ডাচ কূটনীতিক নিপেনবার্গ। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি এটাও নিশ্চিত হয়েছিলেন, নৃশংস এই খুনের পেছনে যিনি ছিলেন তাঁর নাম চার্লস শোভরাজ!
১৯৭০-এর দশকে আজকের দিনের মতো গগনচুম্বী অট্টালিকার নগরী ছিল না ব্যাংকক। ছিল না পাতাল রেল, স্কাই-ট্রেনের মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থাও। তবু প্রাচ্যে অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে বেড়ানো পশ্চিমা তারুণ্যের কাছে থাইল্যান্ড ছিল এক স্বপ্নের জগৎ। ব্যাংককের উষ্ণ, আর্দ্র রাস্তাগুলোতে তখনো উপচে পড়ছিল পর্যটক আর ভ্রমণকারীরা। সেই আমলের মন্থর যোগাযোগব্যবস্থায় শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় পৌঁছাতে লেগে যেত কয়েক ঘণ্টা।
কোনো স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াও না থাকায় সেই সময়টিতে ভ্রমণকারীদের কেউ নিখোঁজ হয়ে গেলে তা অজানা থেকে যেত সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা মাস। এমন একটি শহরের কোলাহলপূর্ণ বাজার আর শান্ত মন্দিরগুলো লুকিয়ে রেখেছিল শোভরাজের মতো এক ধুরন্ধর শিকারিকেও। রঙিন চকমকে জীবনের খোলসে অনায়াসে তিনি মিশে গিয়েছিলেন শহরের প্রাণবন্ত আড্ডা, হাসি, তামাশায়। সুযোগ পেলেই ছোবল মারা ছিল তাঁর স্বভাব। সর্প স্বভাবের এই মানুষটিই পরবর্তীকালে হতে যাচ্ছিলেন বিংশ শতকের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং অধরা সিরিয়াল কিলারদের একজন।
থাইল্যান্ডে শোভরাজ নিজেও ছিলেন বিদেশি। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের সূত্রে ফরাসি নাগরিক হলেও তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয়, আর মা ছিলেন ভিয়েতনামি। শোভরাজের জন্মও ভিয়েতনামে, ১৯৪৪ সালে। ভিয়েতনাম ও ভারতের সংমিশ্রণ তাঁর চেহারাকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছিল। এই বৈশিষ্ট্যই তাঁকে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সমাজের মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে, নারীদের সঙ্গে ভাব জমাতে পটু ছিলেন তিনি।
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে একজন সুচতুর ঠগবাজ হিসেবে আবির্ভূত হন শোভরাজ। চুরি করা অসংখ্য পাসপোর্ট আর ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি তখন ঘুরে বেড়াতেন আজ এই দেশ তো কাল ওই দেশ। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে তাঁর আনাগোনা ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই সময়টিতে পশ্চিম থেকে প্রাচ্য আবিষ্কার করতে আসা ব্যাকপেকার তরুণ-তরুণীরাই ছিলেন তাঁর প্রধান শিকার। ভ্রমণরত মানুষের বিশ্বাস এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। ব্যাকপেকারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ গাইড কিংবা সহযাত্রী হয়ে সহজেই মিশে যেতেন তিনি। একবার তাঁর পাল্লায় পড়ে গেলে পর্যটকদের তিনি মাদকে ডুবিয়ে দিতেন। পরে সুযোগ বুঝে টাকাপয়সা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিতেন। এটা করতে গিয়ে প্রয়োজন হলে তিনি খুনের পথও বেছে নিতেন।
শোভরাজের সবচেয়ে কুখ্যাত ছদ্মনামটি ছিল অ্যালাইন গোতিয়ার। এই নামের আড়ালেই তিনি তাঁর প্রেমিকা মেরি আন্দ্রে ল্যাক্লার্ক ওরফে মনিককে নিয়ে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে একের পর এক অপারেশন চালাতেন। থাইল্যান্ডে থাকা অবস্থায় প্রায় সময়ই ব্যাংককের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে তাঁরা শিকারকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যেতেন, কিংবা কোনো আড্ডায় আমন্ত্রণ জানাতেন। পরে শিকারের পানীয়তে মিশিয়ে দিতেন মাদকের ওভারডোজ। লুণ্ঠনের প্রমাণ মুছে দিতে শিকারকে প্রায়ই তাঁরা খুন করে গুম করে ফেলতেন। এই কাজে সহযোগিতার জন্য অজয় চৌধুরী নামে এক ভারতীয়কেও দলভুক্ত করেছিলেন শোভরাজ।
জীবনীকারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে অন্তত ১২টি খুনের কথা শোভরাজ নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। তাঁর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তেরেসা নোল্টন ও কনি জো ব্রোঞ্জিচ নামে দুই মার্কিন নারী ব্যাকপেকারও। বিকিনি পরা অবস্থায় তেরেসার মরদেহটি ভাসছিল থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্র উপকূলে। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, হয়তো সাঁতার কাটতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন তেরেসা। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে শোভরাজই তাঁকে নেশাগ্রস্ত করে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। আরেক আমেরিকান ব্যাকপেকার কনি জো ব্রোঞ্জিচের পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উপকণ্ঠে। এই দুটি ছাড়াও শারমাইন ক্যারো নামে আরও এক ফরাসি নারীর হত্যাকাণ্ড ‘বিকিনি কিলার’ হিসেবে পরিচিতি দেয় শোভরাজকে। তিনি শারামাইনের আগে তাঁর তুর্কি প্রেমিককেও খুন করেছিলেন। প্রেমিকের খোঁজে থাইল্যান্ডে এসে শারমাইন নিজেও শোভরাজের শিকারে পরিণত হন। তেরেসার মতো বিকিনি পরা অবস্থায় শারমাইনের লাশটিও সমুদ্রের পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
শুধু থাইল্যান্ড আর নেপাল নয়, ভারতেও দুই পর্যটককে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন শোভরাজ। তাঁর প্রতারণার জাল বিস্তৃত ছিল মালয়েশিয়া, তুরস্ক, গ্রিস ও আফগানিস্তানেও। তবে তাঁর অহংকার এবং কুখ্যাতির আকাঙ্ক্ষা শেষ পর্যন্ত তাঁকে পতনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ১৯৭৬ সালে শুরু করা ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের তদন্তই ঠান্ডা মাথার ওই খুনিকে শনাক্ত করে। তবে অকাট্য প্রমাণ হাতে আসার পরও কর্তৃপক্ষের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন শোভরাজ। থাইল্যান্ডে ধরা পড়ার আগেই প্রেমিকা মনিককে নিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং যথারীতি সেখানেও নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে নয়াদিল্লিতে ফরাসি শিক্ষার্থীদের একটি দলকে মাদকে অচেতন করে সর্বস্ব লুট করতে চেয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে বিষপান ও ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভারতের পুলিশ। পরে তিহার জেলে তাঁর ১২ বছরের সাজা হয়।
কারাগারের ভেতরেও নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন কুখ্যাত এই বিকিনি কিলার। তিহার জেলে সেই সময় সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন সুনীল গুপ্ত। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একটি বইয়ে সুনীল জানিয়েছেন, কারাগারের ভেতর শোভরাজ এমন সব বিশেষ সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতেন, সাধারণ কর্মীদের কাছে যা ছিল অকল্পনীয়। পছন্দ অনুযায়ী খাবার তো বটেই, আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতেন তিনি। কয়েদি হিসেবে ওয়ার্ডে থাকার কথা থাকলেও জেলের ভেতর তিনি অবাধে ঘুরে বেড়াতেন।
গুপ্তের মতে, কারাগারে থাকা ধনী কয়েদিদের সঙ্গে সখ্য এবং আইনি পরামর্শ দিয়ে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিতেন শোভরাজ। আর এসব অর্থ রক্ষীদের ঘুষ হিসেবে দিয়ে কারাগারকে নিজের বাড়িতে পরিণত করেছিলেন তিনি। সুনীল লিখেছেন সবাই তাঁকে ভয় পেত, সমীহ করত।
১৯৮৬ সালে একবার তিনি জেল থেকেও পালাতে সক্ষম হন। তবে তা কিছু সময়ের জন্য। নিজের ইচ্ছায়ই পরে আবার ধরা পড়েছিলেন। ধুরন্ধর শোভরাজ এভাবে মূলত নিজের সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে চাইছিলেন। কারণ, ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গেলে থাইল্যান্ডে প্রত্যর্পণ হওয়ার আশঙ্কা ছিল তাঁর। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল মৃত্যুদণ্ড। পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সফলও হয়। জেল পালানোর অপরাধে ভারতে তাঁর সাজার মেয়াদ আরও ১০ বছর বেড়ে যায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের জেলেই ছিলেন। তত দিনে সংবিধান অনুযায়ী থাইল্যান্ডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড তামাদি হয়ে গিয়েছিল।
ভারতে মুক্তির পর তাই নিজের দেশ ফ্রান্সে ফিরে যান শোভরাজ। অবাক করা বিষয় হলো, ফ্রান্সে তিনি খোলাখুলিভাবেই থাকতেন এবং অর্থের বিনিময়ে নিজের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াতেন। তবে তাঁর সেই স্বাধীনতা খুব বেশি দিন টেকেনি। কারণ, ২০০৩ সালে তিনি ভুল করে আবারও নেপালে পা রেখেছিলেন, যেখানে তিনি অন্তত দুজন পর্যটককে খুনের দায়ে ওয়ান্টেড ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি নজর এড়ায়নি নেপাল কর্তৃপক্ষের। ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ এবং বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২২ সালে নেপালের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে আরও এক নজির গড়েন তিনি। ২০০৮ সালে নেপালের কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ৬৪ বছর বয়সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজের আইনজীবীর ২০ বছর বয়সী কন্যা নিহিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন তিনি। নেপালের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় শোভরাজের অপরাধের দুনিয়ায় বিমোহিত হয়ে যায় পুরো বিশ্ব। তাঁর প্রতারণা ও খুনের গল্প নিয়ে রচিত হতে থাকে বই, তথ্যচিত্র, এমনকি পরবর্তী সময়ে ‘দ্য সার্পেন্ট’ নামে একটি হিট টিভি সিরিয়ালও নির্মিত হয় তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণায়।
ইতিহাসের কুখ্যাত এই খুনি এখনো ফ্রান্সের মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এমনকি তাঁর জীবনী লিখতে চাওয়া এক লেখককে অনুমতি দিতে সম্প্রতি দেড় মিলিয়ন ডলারও দাবি করেছেন।
পরাগ মাঝি, ঢাকা

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই। ময়নাতদন্ত করা প্যাথলজিস্ট জানালেন, মেয়েটির মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, আর ছেলেটিকে শ্বাসরোধ। আর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সময়ও তাঁরা জীবিতই ছিলেন।
১৯৭৬ সালের ৩ মার্চ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ওই মর্গের স্মৃতি এখনো স্পষ্ট মনে আছে ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের। ৩০ বছরের চাকরি জীবনে এমন বিভীষিকাময় দৃশ্য তিনি আর কখনোই দেখেননি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে বিচারের মুখোমুখি করতে পরবর্তী এক দশকেরও বেশি সময় কেটে যায় তাঁর। কারণ, ছেলে-মেয়ে দুটি তাঁর দেশ নেদারল্যান্ড থেকেই থাইল্যান্ডে ঘুরতে এসেছিলেন। মাসখানেক আগেই নেদারল্যান্ডস থেকে চিঠি লিখে তাঁদের খোঁজ জানতে চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি।
চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, এশিয়ায় ভ্রমণরত শ্যালিকা ও তাঁর প্রেমিক প্রতি সপ্তাহেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নিজেদের পরিবারের কাছে অন্তত দুটি করে চিঠি লিখতেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁরা দুজনই চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি ছয় সপ্তাহ কেটে গেলেও তাঁদের লেখা কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকক থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে আয়ুথায়ার কাছাকাছি একটি রাস্তায় ডাচ ব্যাকপেকার হেনরিকাস ও কর্নেলিয়ার পুড়ে যাওয়া লাশ দুটি পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমে তাঁদের নিখোঁজ হয়ে থাকা এক অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি ভেবেছিল সবাই। যদিও অস্ট্রেলিয়ান ওই দম্পতিকে পরে জীবিতই পাওয়া গিয়েছিল। এক দন্তচিকিৎসকের সহযোগিতায় দাঁতের চিহ্ন মিলিয়ে লাশ দুটি শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের নিখোঁজ দুই ব্যাকপেকারের বলেই নিশ্চিত হয়েছিলেন ডাচ কূটনীতিক নিপেনবার্গ। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি এটাও নিশ্চিত হয়েছিলেন, নৃশংস এই খুনের পেছনে যিনি ছিলেন তাঁর নাম চার্লস শোভরাজ!
১৯৭০-এর দশকে আজকের দিনের মতো গগনচুম্বী অট্টালিকার নগরী ছিল না ব্যাংকক। ছিল না পাতাল রেল, স্কাই-ট্রেনের মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থাও। তবু প্রাচ্যে অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে বেড়ানো পশ্চিমা তারুণ্যের কাছে থাইল্যান্ড ছিল এক স্বপ্নের জগৎ। ব্যাংককের উষ্ণ, আর্দ্র রাস্তাগুলোতে তখনো উপচে পড়ছিল পর্যটক আর ভ্রমণকারীরা। সেই আমলের মন্থর যোগাযোগব্যবস্থায় শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় পৌঁছাতে লেগে যেত কয়েক ঘণ্টা।
কোনো স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াও না থাকায় সেই সময়টিতে ভ্রমণকারীদের কেউ নিখোঁজ হয়ে গেলে তা অজানা থেকে যেত সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা মাস। এমন একটি শহরের কোলাহলপূর্ণ বাজার আর শান্ত মন্দিরগুলো লুকিয়ে রেখেছিল শোভরাজের মতো এক ধুরন্ধর শিকারিকেও। রঙিন চকমকে জীবনের খোলসে অনায়াসে তিনি মিশে গিয়েছিলেন শহরের প্রাণবন্ত আড্ডা, হাসি, তামাশায়। সুযোগ পেলেই ছোবল মারা ছিল তাঁর স্বভাব। সর্প স্বভাবের এই মানুষটিই পরবর্তীকালে হতে যাচ্ছিলেন বিংশ শতকের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং অধরা সিরিয়াল কিলারদের একজন।
থাইল্যান্ডে শোভরাজ নিজেও ছিলেন বিদেশি। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের সূত্রে ফরাসি নাগরিক হলেও তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয়, আর মা ছিলেন ভিয়েতনামি। শোভরাজের জন্মও ভিয়েতনামে, ১৯৪৪ সালে। ভিয়েতনাম ও ভারতের সংমিশ্রণ তাঁর চেহারাকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছিল। এই বৈশিষ্ট্যই তাঁকে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সমাজের মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে, নারীদের সঙ্গে ভাব জমাতে পটু ছিলেন তিনি।
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে একজন সুচতুর ঠগবাজ হিসেবে আবির্ভূত হন শোভরাজ। চুরি করা অসংখ্য পাসপোর্ট আর ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি তখন ঘুরে বেড়াতেন আজ এই দেশ তো কাল ওই দেশ। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে তাঁর আনাগোনা ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই সময়টিতে পশ্চিম থেকে প্রাচ্য আবিষ্কার করতে আসা ব্যাকপেকার তরুণ-তরুণীরাই ছিলেন তাঁর প্রধান শিকার। ভ্রমণরত মানুষের বিশ্বাস এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। ব্যাকপেকারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ গাইড কিংবা সহযাত্রী হয়ে সহজেই মিশে যেতেন তিনি। একবার তাঁর পাল্লায় পড়ে গেলে পর্যটকদের তিনি মাদকে ডুবিয়ে দিতেন। পরে সুযোগ বুঝে টাকাপয়সা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিতেন। এটা করতে গিয়ে প্রয়োজন হলে তিনি খুনের পথও বেছে নিতেন।
শোভরাজের সবচেয়ে কুখ্যাত ছদ্মনামটি ছিল অ্যালাইন গোতিয়ার। এই নামের আড়ালেই তিনি তাঁর প্রেমিকা মেরি আন্দ্রে ল্যাক্লার্ক ওরফে মনিককে নিয়ে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে একের পর এক অপারেশন চালাতেন। থাইল্যান্ডে থাকা অবস্থায় প্রায় সময়ই ব্যাংককের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে তাঁরা শিকারকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যেতেন, কিংবা কোনো আড্ডায় আমন্ত্রণ জানাতেন। পরে শিকারের পানীয়তে মিশিয়ে দিতেন মাদকের ওভারডোজ। লুণ্ঠনের প্রমাণ মুছে দিতে শিকারকে প্রায়ই তাঁরা খুন করে গুম করে ফেলতেন। এই কাজে সহযোগিতার জন্য অজয় চৌধুরী নামে এক ভারতীয়কেও দলভুক্ত করেছিলেন শোভরাজ।
জীবনীকারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে অন্তত ১২টি খুনের কথা শোভরাজ নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। তাঁর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তেরেসা নোল্টন ও কনি জো ব্রোঞ্জিচ নামে দুই মার্কিন নারী ব্যাকপেকারও। বিকিনি পরা অবস্থায় তেরেসার মরদেহটি ভাসছিল থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্র উপকূলে। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, হয়তো সাঁতার কাটতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন তেরেসা। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে শোভরাজই তাঁকে নেশাগ্রস্ত করে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। আরেক আমেরিকান ব্যাকপেকার কনি জো ব্রোঞ্জিচের পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উপকণ্ঠে। এই দুটি ছাড়াও শারমাইন ক্যারো নামে আরও এক ফরাসি নারীর হত্যাকাণ্ড ‘বিকিনি কিলার’ হিসেবে পরিচিতি দেয় শোভরাজকে। তিনি শারামাইনের আগে তাঁর তুর্কি প্রেমিককেও খুন করেছিলেন। প্রেমিকের খোঁজে থাইল্যান্ডে এসে শারমাইন নিজেও শোভরাজের শিকারে পরিণত হন। তেরেসার মতো বিকিনি পরা অবস্থায় শারমাইনের লাশটিও সমুদ্রের পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
শুধু থাইল্যান্ড আর নেপাল নয়, ভারতেও দুই পর্যটককে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন শোভরাজ। তাঁর প্রতারণার জাল বিস্তৃত ছিল মালয়েশিয়া, তুরস্ক, গ্রিস ও আফগানিস্তানেও। তবে তাঁর অহংকার এবং কুখ্যাতির আকাঙ্ক্ষা শেষ পর্যন্ত তাঁকে পতনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ১৯৭৬ সালে শুরু করা ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের তদন্তই ঠান্ডা মাথার ওই খুনিকে শনাক্ত করে। তবে অকাট্য প্রমাণ হাতে আসার পরও কর্তৃপক্ষের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন শোভরাজ। থাইল্যান্ডে ধরা পড়ার আগেই প্রেমিকা মনিককে নিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং যথারীতি সেখানেও নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে নয়াদিল্লিতে ফরাসি শিক্ষার্থীদের একটি দলকে মাদকে অচেতন করে সর্বস্ব লুট করতে চেয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে বিষপান ও ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভারতের পুলিশ। পরে তিহার জেলে তাঁর ১২ বছরের সাজা হয়।
কারাগারের ভেতরেও নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন কুখ্যাত এই বিকিনি কিলার। তিহার জেলে সেই সময় সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন সুনীল গুপ্ত। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একটি বইয়ে সুনীল জানিয়েছেন, কারাগারের ভেতর শোভরাজ এমন সব বিশেষ সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতেন, সাধারণ কর্মীদের কাছে যা ছিল অকল্পনীয়। পছন্দ অনুযায়ী খাবার তো বটেই, আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতেন তিনি। কয়েদি হিসেবে ওয়ার্ডে থাকার কথা থাকলেও জেলের ভেতর তিনি অবাধে ঘুরে বেড়াতেন।
গুপ্তের মতে, কারাগারে থাকা ধনী কয়েদিদের সঙ্গে সখ্য এবং আইনি পরামর্শ দিয়ে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিতেন শোভরাজ। আর এসব অর্থ রক্ষীদের ঘুষ হিসেবে দিয়ে কারাগারকে নিজের বাড়িতে পরিণত করেছিলেন তিনি। সুনীল লিখেছেন সবাই তাঁকে ভয় পেত, সমীহ করত।
১৯৮৬ সালে একবার তিনি জেল থেকেও পালাতে সক্ষম হন। তবে তা কিছু সময়ের জন্য। নিজের ইচ্ছায়ই পরে আবার ধরা পড়েছিলেন। ধুরন্ধর শোভরাজ এভাবে মূলত নিজের সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে চাইছিলেন। কারণ, ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গেলে থাইল্যান্ডে প্রত্যর্পণ হওয়ার আশঙ্কা ছিল তাঁর। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল মৃত্যুদণ্ড। পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সফলও হয়। জেল পালানোর অপরাধে ভারতে তাঁর সাজার মেয়াদ আরও ১০ বছর বেড়ে যায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের জেলেই ছিলেন। তত দিনে সংবিধান অনুযায়ী থাইল্যান্ডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড তামাদি হয়ে গিয়েছিল।
ভারতে মুক্তির পর তাই নিজের দেশ ফ্রান্সে ফিরে যান শোভরাজ। অবাক করা বিষয় হলো, ফ্রান্সে তিনি খোলাখুলিভাবেই থাকতেন এবং অর্থের বিনিময়ে নিজের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াতেন। তবে তাঁর সেই স্বাধীনতা খুব বেশি দিন টেকেনি। কারণ, ২০০৩ সালে তিনি ভুল করে আবারও নেপালে পা রেখেছিলেন, যেখানে তিনি অন্তত দুজন পর্যটককে খুনের দায়ে ওয়ান্টেড ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি নজর এড়ায়নি নেপাল কর্তৃপক্ষের। ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ এবং বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২২ সালে নেপালের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে আরও এক নজির গড়েন তিনি। ২০০৮ সালে নেপালের কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ৬৪ বছর বয়সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজের আইনজীবীর ২০ বছর বয়সী কন্যা নিহিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন তিনি। নেপালের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় শোভরাজের অপরাধের দুনিয়ায় বিমোহিত হয়ে যায় পুরো বিশ্ব। তাঁর প্রতারণা ও খুনের গল্প নিয়ে রচিত হতে থাকে বই, তথ্যচিত্র, এমনকি পরবর্তী সময়ে ‘দ্য সার্পেন্ট’ নামে একটি হিট টিভি সিরিয়ালও নির্মিত হয় তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণায়।
ইতিহাসের কুখ্যাত এই খুনি এখনো ফ্রান্সের মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এমনকি তাঁর জীবনী লিখতে চাওয়া এক লেখককে অনুমতি দিতে সম্প্রতি দেড় মিলিয়ন ডলারও দাবি করেছেন।

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই। ময়নাতদন্ত করা প্যাথলজিস্ট জানালেন, মেয়েটির মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল, আর ছেলেটিকে শ্বাসরোধ। আর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সময়ও তাঁরা জীবিতই ছিলেন।
১৯৭৬ সালের ৩ মার্চ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের ওই মর্গের স্মৃতি এখনো স্পষ্ট মনে আছে ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের। ৩০ বছরের চাকরি জীবনে এমন বিভীষিকাময় দৃশ্য তিনি আর কখনোই দেখেননি। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে বিচারের মুখোমুখি করতে পরবর্তী এক দশকেরও বেশি সময় কেটে যায় তাঁর। কারণ, ছেলে-মেয়ে দুটি তাঁর দেশ নেদারল্যান্ড থেকেই থাইল্যান্ডে ঘুরতে এসেছিলেন। মাসখানেক আগেই নেদারল্যান্ডস থেকে চিঠি লিখে তাঁদের খোঁজ জানতে চেয়েছিলেন এক ব্যক্তি।
চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, এশিয়ায় ভ্রমণরত শ্যালিকা ও তাঁর প্রেমিক প্রতি সপ্তাহেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নিজেদের পরিবারের কাছে অন্তত দুটি করে চিঠি লিখতেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁরা দুজনই চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি ছয় সপ্তাহ কেটে গেলেও তাঁদের লেখা কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।
ব্যাংকক থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে আয়ুথায়ার কাছাকাছি একটি রাস্তায় ডাচ ব্যাকপেকার হেনরিকাস ও কর্নেলিয়ার পুড়ে যাওয়া লাশ দুটি পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমে তাঁদের নিখোঁজ হয়ে থাকা এক অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি ভেবেছিল সবাই। যদিও অস্ট্রেলিয়ান ওই দম্পতিকে পরে জীবিতই পাওয়া গিয়েছিল। এক দন্তচিকিৎসকের সহযোগিতায় দাঁতের চিহ্ন মিলিয়ে লাশ দুটি শেষ পর্যন্ত নিজ দেশের নিখোঁজ দুই ব্যাকপেকারের বলেই নিশ্চিত হয়েছিলেন ডাচ কূটনীতিক নিপেনবার্গ। দীর্ঘদিনের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তিনি এটাও নিশ্চিত হয়েছিলেন, নৃশংস এই খুনের পেছনে যিনি ছিলেন তাঁর নাম চার্লস শোভরাজ!
১৯৭০-এর দশকে আজকের দিনের মতো গগনচুম্বী অট্টালিকার নগরী ছিল না ব্যাংকক। ছিল না পাতাল রেল, স্কাই-ট্রেনের মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থাও। তবু প্রাচ্যে অ্যাডভেঞ্চার খুঁজে বেড়ানো পশ্চিমা তারুণ্যের কাছে থাইল্যান্ড ছিল এক স্বপ্নের জগৎ। ব্যাংককের উষ্ণ, আর্দ্র রাস্তাগুলোতে তখনো উপচে পড়ছিল পর্যটক আর ভ্রমণকারীরা। সেই আমলের মন্থর যোগাযোগব্যবস্থায় শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় পৌঁছাতে লেগে যেত কয়েক ঘণ্টা।
কোনো স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়াও না থাকায় সেই সময়টিতে ভ্রমণকারীদের কেউ নিখোঁজ হয়ে গেলে তা অজানা থেকে যেত সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা মাস। এমন একটি শহরের কোলাহলপূর্ণ বাজার আর শান্ত মন্দিরগুলো লুকিয়ে রেখেছিল শোভরাজের মতো এক ধুরন্ধর শিকারিকেও। রঙিন চকমকে জীবনের খোলসে অনায়াসে তিনি মিশে গিয়েছিলেন শহরের প্রাণবন্ত আড্ডা, হাসি, তামাশায়। সুযোগ পেলেই ছোবল মারা ছিল তাঁর স্বভাব। সর্প স্বভাবের এই মানুষটিই পরবর্তীকালে হতে যাচ্ছিলেন বিংশ শতকের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং অধরা সিরিয়াল কিলারদের একজন।
থাইল্যান্ডে শোভরাজ নিজেও ছিলেন বিদেশি। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের সূত্রে ফরাসি নাগরিক হলেও তাঁর বাবা ছিলেন ভারতীয়, আর মা ছিলেন ভিয়েতনামি। শোভরাজের জন্মও ভিয়েতনামে, ১৯৪৪ সালে। ভিয়েতনাম ও ভারতের সংমিশ্রণ তাঁর চেহারাকে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য দিয়েছিল। এই বৈশিষ্ট্যই তাঁকে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং সমাজের মধ্য দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে, নারীদের সঙ্গে ভাব জমাতে পটু ছিলেন তিনি।
১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে একজন সুচতুর ঠগবাজ হিসেবে আবির্ভূত হন শোভরাজ। চুরি করা অসংখ্য পাসপোর্ট আর ছদ্মনাম ব্যবহার করে তিনি তখন ঘুরে বেড়াতেন আজ এই দেশ তো কাল ওই দেশ। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে তাঁর আনাগোনা ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই সময়টিতে পশ্চিম থেকে প্রাচ্য আবিষ্কার করতে আসা ব্যাকপেকার তরুণ-তরুণীরাই ছিলেন তাঁর প্রধান শিকার। ভ্রমণরত মানুষের বিশ্বাস এবং সরলতার সুযোগ নিয়ে সর্বস্ব লুট করে নেওয়াই ছিল তাঁর কাজ। ব্যাকপেকারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ গাইড কিংবা সহযাত্রী হয়ে সহজেই মিশে যেতেন তিনি। একবার তাঁর পাল্লায় পড়ে গেলে পর্যটকদের তিনি মাদকে ডুবিয়ে দিতেন। পরে সুযোগ বুঝে টাকাপয়সা এবং মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিতেন। এটা করতে গিয়ে প্রয়োজন হলে তিনি খুনের পথও বেছে নিতেন।
শোভরাজের সবচেয়ে কুখ্যাত ছদ্মনামটি ছিল অ্যালাইন গোতিয়ার। এই নামের আড়ালেই তিনি তাঁর প্রেমিকা মেরি আন্দ্রে ল্যাক্লার্ক ওরফে মনিককে নিয়ে থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে একের পর এক অপারেশন চালাতেন। থাইল্যান্ডে থাকা অবস্থায় প্রায় সময়ই ব্যাংককের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে তাঁরা শিকারকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যেতেন, কিংবা কোনো আড্ডায় আমন্ত্রণ জানাতেন। পরে শিকারের পানীয়তে মিশিয়ে দিতেন মাদকের ওভারডোজ। লুণ্ঠনের প্রমাণ মুছে দিতে শিকারকে প্রায়ই তাঁরা খুন করে গুম করে ফেলতেন। এই কাজে সহযোগিতার জন্য অজয় চৌধুরী নামে এক ভারতীয়কেও দলভুক্ত করেছিলেন শোভরাজ।
জীবনীকারদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে অন্তত ১২টি খুনের কথা শোভরাজ নিজের মুখেই স্বীকার করেছেন। তাঁর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তেরেসা নোল্টন ও কনি জো ব্রোঞ্জিচ নামে দুই মার্কিন নারী ব্যাকপেকারও। বিকিনি পরা অবস্থায় তেরেসার মরদেহটি ভাসছিল থাইল্যান্ডের পাতায়া সমুদ্র উপকূলে। প্রথমে সবাই ভেবেছিল, হয়তো সাঁতার কাটতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন তেরেসা। কিন্তু তদন্তে বেরিয়ে আসে শোভরাজই তাঁকে নেশাগ্রস্ত করে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। আরেক আমেরিকান ব্যাকপেকার কনি জো ব্রোঞ্জিচের পুড়ে যাওয়া দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উপকণ্ঠে। এই দুটি ছাড়াও শারমাইন ক্যারো নামে আরও এক ফরাসি নারীর হত্যাকাণ্ড ‘বিকিনি কিলার’ হিসেবে পরিচিতি দেয় শোভরাজকে। তিনি শারামাইনের আগে তাঁর তুর্কি প্রেমিককেও খুন করেছিলেন। প্রেমিকের খোঁজে থাইল্যান্ডে এসে শারমাইন নিজেও শোভরাজের শিকারে পরিণত হন। তেরেসার মতো বিকিনি পরা অবস্থায় শারমাইনের লাশটিও সমুদ্রের পানিতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
শুধু থাইল্যান্ড আর নেপাল নয়, ভারতেও দুই পর্যটককে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন শোভরাজ। তাঁর প্রতারণার জাল বিস্তৃত ছিল মালয়েশিয়া, তুরস্ক, গ্রিস ও আফগানিস্তানেও। তবে তাঁর অহংকার এবং কুখ্যাতির আকাঙ্ক্ষা শেষ পর্যন্ত তাঁকে পতনের দিকে টেনে নিয়ে যায়। ১৯৭৬ সালে শুরু করা ডাচ কূটনীতিক হারম্যান নিপেনবার্গের তদন্তই ঠান্ডা মাথার ওই খুনিকে শনাক্ত করে। তবে অকাট্য প্রমাণ হাতে আসার পরও কর্তৃপক্ষের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ছিলেন শোভরাজ। থাইল্যান্ডে ধরা পড়ার আগেই প্রেমিকা মনিককে নিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং যথারীতি সেখানেও নিজের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১৯৭৬ সালের জুলাইয়ে নয়াদিল্লিতে ফরাসি শিক্ষার্থীদের একটি দলকে মাদকে অচেতন করে সর্বস্ব লুট করতে চেয়েছিলেন তিনি। পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলে বিষপান ও ডাকাতির চেষ্টার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ভারতের পুলিশ। পরে তিহার জেলে তাঁর ১২ বছরের সাজা হয়।
কারাগারের ভেতরেও নিজের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন কুখ্যাত এই বিকিনি কিলার। তিহার জেলে সেই সময় সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন সুনীল গুপ্ত। কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা একটি বইয়ে সুনীল জানিয়েছেন, কারাগারের ভেতর শোভরাজ এমন সব বিশেষ সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতেন, সাধারণ কর্মীদের কাছে যা ছিল অকল্পনীয়। পছন্দ অনুযায়ী খাবার তো বটেই, আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতেন তিনি। কয়েদি হিসেবে ওয়ার্ডে থাকার কথা থাকলেও জেলের ভেতর তিনি অবাধে ঘুরে বেড়াতেন।
গুপ্তের মতে, কারাগারে থাকা ধনী কয়েদিদের সঙ্গে সখ্য এবং আইনি পরামর্শ দিয়ে অনেক অর্থ হাতিয়ে নিতেন শোভরাজ। আর এসব অর্থ রক্ষীদের ঘুষ হিসেবে দিয়ে কারাগারকে নিজের বাড়িতে পরিণত করেছিলেন তিনি। সুনীল লিখেছেন সবাই তাঁকে ভয় পেত, সমীহ করত।
১৯৮৬ সালে একবার তিনি জেল থেকেও পালাতে সক্ষম হন। তবে তা কিছু সময়ের জন্য। নিজের ইচ্ছায়ই পরে আবার ধরা পড়েছিলেন। ধুরন্ধর শোভরাজ এভাবে মূলত নিজের সাজার মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে চাইছিলেন। কারণ, ভারতের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে গেলে থাইল্যান্ডে প্রত্যর্পণ হওয়ার আশঙ্কা ছিল তাঁর। সেখানে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল মৃত্যুদণ্ড। পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত সফলও হয়। জেল পালানোর অপরাধে ভারতে তাঁর সাজার মেয়াদ আরও ১০ বছর বেড়ে যায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের জেলেই ছিলেন। তত দিনে সংবিধান অনুযায়ী থাইল্যান্ডে তাঁর মৃত্যুদণ্ড তামাদি হয়ে গিয়েছিল।
ভারতে মুক্তির পর তাই নিজের দেশ ফ্রান্সে ফিরে যান শোভরাজ। অবাক করা বিষয় হলো, ফ্রান্সে তিনি খোলাখুলিভাবেই থাকতেন এবং অর্থের বিনিময়ে নিজের অপরাধের বর্ণনা দিয়ে নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিয়ে বেড়াতেন। তবে তাঁর সেই স্বাধীনতা খুব বেশি দিন টেকেনি। কারণ, ২০০৩ সালে তিনি ভুল করে আবারও নেপালে পা রেখেছিলেন, যেখানে তিনি অন্তত দুজন পর্যটককে খুনের দায়ে ওয়ান্টেড ছিলেন। তাঁর উপস্থিতি নজর এড়ায়নি নেপাল কর্তৃপক্ষের। ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ এবং বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২২ সালে নেপালের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আগে আরও এক নজির গড়েন তিনি। ২০০৮ সালে নেপালের কারাগারে থাকা অবস্থায়ই ৬৪ বছর বয়সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে নিজের আইনজীবীর ২০ বছর বয়সী কন্যা নিহিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করেন তিনি। নেপালের কারাগারে বন্দী থাকা অবস্থায় শোভরাজের অপরাধের দুনিয়ায় বিমোহিত হয়ে যায় পুরো বিশ্ব। তাঁর প্রতারণা ও খুনের গল্প নিয়ে রচিত হতে থাকে বই, তথ্যচিত্র, এমনকি পরবর্তী সময়ে ‘দ্য সার্পেন্ট’ নামে একটি হিট টিভি সিরিয়ালও নির্মিত হয় তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণায়।
ইতিহাসের কুখ্যাত এই খুনি এখনো ফ্রান্সের মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অর্থের বিনিময়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। এমনকি তাঁর জীবনী লিখতে চাওয়া এক লেখককে অনুমতি দিতে সম্প্রতি দেড় মিলিয়ন ডলারও দাবি করেছেন।

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৭ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৮ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৮ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।
বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।
ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?
তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।
অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।
বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।
বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।
ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?
তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।
অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই।
২৮ জুন ২০২৪
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৮ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৮ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।
নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।
তবে বড়দিন উদ্যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।
নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।
তবে বড়দিন উদ্যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।
রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই।
২৮ জুন ২০২৪
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৭ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৮ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।
পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’
তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’
একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।
দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।
পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’
তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’
একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।
দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।
এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই।
২৮ জুন ২০২৪
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৭ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৮ ঘণ্টা আগে
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ গত চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ে কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন
১০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।
এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।
তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।
এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’
উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

দুটি লাশই বিকৃত হয়ে গেছে। পাশাপাশি রাখা হয়েছে মর্গে। লাশের গন্ধ ঢাকতে যে ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তার গন্ধেও গা গুলিয়ে আসে। এর মাঝেই লাশ দুটির মুখের ওপর ঝুঁকে আছেন এক দন্তচিকিৎসক। মাথা উঁচিয়ে বললেন, হ্যাঁ, তাঁরা দুজনই।
২৮ জুন ২০২৪
মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি...
৭ ঘণ্টা আগে
ভারতে বড়দিন উদ্যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্র
৮ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক
৮ ঘণ্টা আগে