Ajker Patrika

বাশারকে আশ্রয় দেওয়া রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ‘নবসংজ্ঞায়ন’ চায় আল–শারার সিরিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল–শারা। ছবি: এএফপি
ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ আল–শারা। ছবি: এএফপি

সিরিয়ার সাবেক স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল রাশিয়া। তাঁর পতনের পর তাঁকে আশ্রয়ও দেয় রাশিয়া। তবে তারপরও দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ‘পুনরুদ্ধার ও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত’ করতে চায় আহমেদ আল–শারার নেতৃত্বাধীন সিরিয়া। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আহমেদ আল-শারা জানিয়েছেন, তিনি মস্কোর সঙ্গে দামেস্কের সম্পর্ক ‘পুনরুদ্ধার ও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত’ করতে চান। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন। রাশিয়া উৎখাত হওয়া সাবেক সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল।

বুধবার প্রথম সরকারি সফরে মস্কোয় গিয়ে ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সময় আল-শারা এ মন্তব্য করেন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যার আগে প্রায় ১০ মাস ধরে আসাদকে রাশিয়াই আশ্রয় দিচ্ছে।

আল-শারা বলেন, ‘আমরা এই সম্পর্কগুলো পুনর্গঠন করতে চাই এবং নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে চাই—যাতে সিরিয়া স্বাধীন ও সার্বভৌম থাকে, তার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।’ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করেন যে, দামেস্ক মস্কোর সঙ্গে আগের সব চুক্তি মেনে চলবে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে করা সব চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি সিরিয়ার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আল-শারা এই সফরে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বাশার আল-আসাদকে রাশিয়ার কাছ থেকে হস্তান্তরের অনুরোধ জানাবেন। যদিও সিরিয়ার ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে রাশিয়া ও আল-শারার গোষ্ঠী বিপরীত পক্ষে ছিল, নতুন সরকার এখন বাস্তববাদী কূটনৈতিক নীতি নিয়েছে। তারা শুধু রাশিয়ার সঙ্গেই নয়, অন্যান্য বিদেশি শক্তির সঙ্গেও সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে।

দামেস্কের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতেও রাশিয়ার সহায়তা চায়। এর আগে, মার্কিন টেলিভিশন সিবিএস–কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-শারা বলেছিলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তা রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্য খাতে, যেগুলোর জন্য সিরিয়া আংশিকভাবে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এর সঙ্গে কিছু পুরোনো কৌশলগত স্বার্থও আছে।’

অন্যদিকে রাশিয়া এখনো সিরিয়া উপকূলে তাদের বিমান ও নৌঘাঁটিতে অবস্থান ধরে রেখেছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, এই ঘাঁটিগুলো রাখার বিষয়ে তারা একটি চুক্তি করার আশায় আছে। এ ছাড়া রাশিয়া সিরিয়ায় তেল পাঠানো অব্যাহত রেখেছে বলেও জানা গেছে। তবে আল-শারার সংক্ষিপ্ত টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে আসাদ ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

আল-শারাকে স্বাগত জানিয়ে পুতিন বলেন, দুই দেশের মধ্যে ‘বিশেষ সম্পর্কের’ দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা সব সময় সিরিয়ার জনগণের স্বার্থে পরিচালিত হয়েছে। তিনি জানান, রাশিয়া এই সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণে আগ্রহী। পুতিন সিরিয়ার সাম্প্রতিক পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রশংসা করেন, যা আসাদের পতনের পর প্রথম নির্বাচন। তিনি বলেন, ‘এটি আপনার জন্য একটি বড় অর্জন, কারণ এটি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করবে। সিরিয়া বর্তমানে কঠিন সময় পার করলেও এই নির্বাচন দেশটির সব রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও দৃঢ় করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে হিমশিম হামাস, গাজার ‘বাস্তবতা বদলানোর’ হুমকি ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত একটি এলাকা। ছবি: আনাদোলু

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভাঙার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে, হামাস জানিয়েছ—বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া তারা আর কোনো নিহত ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিতে পারবে না। এরপরই এমন হুঁশিয়ারি দেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বুধবার রাতে হামাস আরও দুই ইসরায়েলির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট নয় নিহত জিম্মির মরদেহ ইসরায়েলের হাতে ফিরেছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাস যে আরও একটি মরদেহ ফেরত দিয়েছে, তা কোনো ইসরায়েলি জিম্মির নয়।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা থেকে মিসরের রাফা সীমান্ত পারাপারটি আজ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে ‘পরবর্তী কোনো সময়ে’ খোলা হবে। জাতিসংঘ ও মানবিক সংস্থাগুলো এই পথটিকে গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা কোগাতের এক মুখপাত্র জানান, রাফা ক্রসিং দিয়ে ভবিষ্যতেও কোনো মানবিক সহায়তা যেতে দেওয়া হবে না, তবে সীমিত ব্যক্তিগত পারাপার চলবে।

তিনি বলেন, ‘রাফা সীমান্ত দিয়ে কোনো মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে কখনো কোনো সমঝোতা হয়নি। গাজায় সাহায্য এখনো প্রবেশ করছে অন্য পথ দিয়ে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনায় গাজায় ‘সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তা’ নিশ্চিত করা ও সব জিম্মিকে—জীবিত বা মৃত—ফেরত আনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। আঞ্চলিক কূটনীতিকেরা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ট্রাম্প-সক্ষম যুদ্ধবিরতির প্রথম দিকের দিনগুলো ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ ও ‘সংবেদনশীল’ হবে। জিম্মিদের মরদেহ ফেরত ও সাহায্য প্রবেশের মতো বিষয়গুলোই প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার অনেক জটিল অংশ নিয়েই এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি।

ইসরায়েল ২৮ জন নিহত জিম্মির মরদেহ ফেরত পাওয়ার আশা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, হামাস এখনো বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বিষয়টিতে আস্থা রাখছে না ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, ‘যদি হামাস চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে ইসরায়েল আবার যুদ্ধ শুরু করবে এবং হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে গাজার বাস্তবতা পরিবর্তন করবে।’

অন্যদিকে, হামাসের সামরিক শাখা আল-ক্বাসাম ব্রিগেড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা আমাদের হেফাজতে থাকা সব জীবিত ইসরায়েলি বন্দী এবং যেসব মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল, সেগুলো ফেরত দিয়েছি। বাকি মরদেহগুলো উদ্ধারে বিশেষ সরঞ্জাম ও ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।’

চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনির মরদেহও ফেরত দিতে হবে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯০টি মরদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক মরদেহেই নির্যাতন ও গুলিবিদ্ধ অবস্থার চিহ্ন রয়েছে।

গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, ‘প্রায় সব মরদেহেই চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল, হাত বাঁধা ছিল এবং কপালে গুলি করা হয়েছে। প্রায় সবাইকে যেন সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’

জিম্মিদের মরদেহ ফেরত দেওয়া নিয়েই এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে নতুন করে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাস এখন পর্যন্ত ২০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৭০০ জন গাজা থেকে আটক হয়েছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই আনা হয়নি।

হামাসের ওপর চাপ বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, হামাস যদি চুক্তির শর্ত না মানে, তাহলে তিনি ইসরায়েলকে পুনরায় গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করার অনুমতি দিতে পারেন। ট্রাম্প সিএনএনকে ফোনে বলেন, ‘ইসরায়েল আমার নির্দেশ পেলেই আবার রাস্তায় নামবে। তারা চাইলে এক মুহূর্তেই হামাসকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে।’

কাৎজের হুমকির পর বুধবার রাতে এক মার্কিন উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, গাজা এখন এমনভাবে ‘ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে’ যে মরদেহ উদ্ধারে অনেক বাধা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু চারটি মরদেহ ফেরত আসায় অনেক ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছিল। তবু তারা পরের দিনই আরও মরদেহ ফেরত দিয়েছে, যত দ্রুত আমরা তাদের গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছি। আমরা এখন এমন একটি পরিকল্পনা বিবেচনা করছি, যেখানে মরদেহ উদ্ধারকারীদের পুরস্কৃত করা হবে।’

এদিকে, মধ্যস্থতাকারী দেশ তুরস্কের গাজায় মরদেহ উদ্ধারে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনা জে–১০সিসহ ১৩২ যুদ্ধবিমান কিনছে ইন্দোনেশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনের তৈরি জে–১০সি যুদ্ধবিমান। ছবি: সংগৃহীত
চীনের তৈরি জে–১০সি যুদ্ধবিমান। ছবি: সংগৃহীত

চীনের তৈরি ৪ দশমিক ৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে–১০সি কিনতে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী গতকাল বুধবার জানিয়েছেন, দেশটি চীন নির্মিত ৪২টি চেংদু জে-১০সি যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পশ্চিমা বিশ্বের বাইরের কোনো দেশের যুদ্ধবিমান কেনার পথে হাঁটছে জাকার্তা। এর বাইরে, দেশটি তুরস্ক ও ফ্রান্সের কাছ থেকে যথাক্রমে ৪২ ও ৪২টি যুদ্ধবিমান কিনবে। অর্থাৎ সবমিলিয়ে দেশটি স্বল্প সময়ের মধ্যে ১৩২টি যুদ্ধবিমান কিনবে।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী জাকার্তায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শাফরি শামসুদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। শামসুদ্দিন বলেন, ‘শিগগিরই এই বিমানগুলো জাকার্তার আকাশে উড়বে।’ তবে কেনা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা তৈরি করতে পারে এবং এর ভূরাজনৈতিক প্রভাবও থাকতে পারে। গত মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফ্রেগা ওয়েনাস প্রথমবার জে-১০ কেনার বিষয়টি প্রকাশ করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনী তখনো চীনা এই যুদ্ধবিমানগুলোর সক্ষমতা যাচাই করছিল, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এগুলো দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে শক্তিশালী করতে পারবে।

অর্থমন্ত্রী পুরবায়া ইউধি সদেও বুধবার নিশ্চিত করেছেন, চীন থেকে যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বরাদ্দ অনুমোদন করেছে তাঁর মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, ‘সবকিছু প্রস্তুত। তবে আমি আবার নিশ্চিত হয়ে নিতে চাই, কখন এই বিমানগুলো বেইজিং থেকে জাকার্তায় পৌঁছাবে।’

প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর নেতৃত্বে ইন্দোনেশিয়া সামরিক সরঞ্জাম আধুনিকীকরণ এবং প্রতিরক্ষাশিল্প শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পর থেকে সুবিয়ান্তো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন, নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা, নজরদারি এবং সীমান্ত প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে।

বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বিমানবাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের তৈরি যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই পুরোনো এবং আপগ্রেড বা বদলানোর প্রয়োজন আছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত জুনে ঘোষণা দেন, তুরস্ক ইন্দোনেশিয়ায় ৪৮টি কান যুদ্ধবিমান রপ্তানি করবে। এই বিমানগুলো তুরস্কেই তৈরি হবে এবং সেখান থেকেই ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হবে বলে জানান এরদোয়ান।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়া ফ্রান্সের দাসো কোম্পানির ৪২টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি সম্পন্ন করে। এই যুদ্ধবিমানগুলোর প্রথম চালান ২০২৬ সালের শুরুর দিকে পাওয়ার কথা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়া ফ্রান্সের তৈরি দুটি স্করপিন ইভলভড সাবমেরিন এবং ১৩টি থ্যালেস গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রাডার কেনার ঘোষণাও দিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বেনি সুকাদিস বলেন, রাজনৈতিকভাবে অনবদ্য অবস্থান নিলেও সরকারের উচিত এই সিদ্ধান্তের ভূরাজনৈতিক প্রভাব অবমূল্যায়ন না করা। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল থাকার পর বেইজিং থেকে বড় অস্ত্র কেনা ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও কূটনৈতিক প্রভাবের প্রেক্ষাপটে ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা অভিমুখে পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবেও পড়া যেতে পারে।’

সুকাদিস সতর্ক করে বলেন, ‘এই পদক্ষেপ দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যুতে আঞ্চলিক সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দিতে পারে, যেখানে চীনের প্রত্যক্ষ স্বার্থ জড়িত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে ভারত—ট্রাম্পের দাবির জবাবে যা বলল নয়াদিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল। ছবি: পিটিআই
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল। ছবি: পিটিআই

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে বলে তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ট্রাম্পের দাবির জবাবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, অস্থির জ্বালানি বাজারে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করাই সব সময় ভারতের প্রধান অগ্রাধিকার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারত তেল ও গ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমদানিকারক দেশ। অস্থির জ্বালানি পরিস্থিতিতে ভারতীয় ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করাই আমাদের ধারাবাহিক অগ্রাধিকার। আমাদের আমদানি নীতি সম্পূর্ণভাবে এই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্য ও নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের জ্বালানি নীতির দুটি প্রধান লক্ষ্য। এর মধ্যে রয়েছে—জ্বালানি উৎসের বৈচিত্র্য আনাসহ বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী জ্বালানি সংগ্রহের পরিসর বাড়ানো।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে, আমরা বহু বছর ধরে জ্বালানি ক্রয়ের ক্ষেত্রটি সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে আসছি। গত এক দশকে এই প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমান প্রশাসনও ভারতের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা গভীর করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা চলছে।’

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন যে—ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা হবে না। এটা সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব নয়, কিছুটা সময় লাগবে, কিন্তু প্রক্রিয়াটি শিগগিরই শেষ হবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে সমালোচনা করে আসছে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বারবার বলেছেন, ভারত কেবলমাত্র নিজেদের নাগরিকদের জন্য সবচেয়ে ভালো চুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি তিনি পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতারও সমালোচনা করে বলেন, ‘ইউরোপের সমস্যাই যেন বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের সমস্যাগুলো ইউরোপের সমস্যা নয়—এই মানসিকতা থেকে পশ্চিমা দেশগুলোকে বের হয়ে আসতে হবে।’

ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখাই ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় দিল্লির বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের অন্যতম কারণ ছিল।

এরই মধ্যে ট্রাম্পের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন বিরোধীরা। ভারতীয় পার্লামেন্ট লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ট্রাম্পকে ভয় পান।’

রাহুল গান্ধী এক্স পোস্টে লিখেন, ‘১. ট্রাম্পকেই সিদ্ধান্ত নিতে ও ঘোষণা করতে দেন যে—ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না,২. বারবার অপমানের পরও শুভেচ্ছা পাঠিয়ে যান, ৩. অর্থমন্ত্রীর আমেরিকা সফর বাতিল করেছেন, ৪. শারম আল শেখ সম্মেলনে যাননি এবং ৫. অপারেশন সিঁদুর ইস্যুতে ট্রাম্পের দাবির কোনো প্রতিবাদ করেননি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তান–আফগানিস্তান সংকট নিরসনে মধ্যস্থতায় আগ্রহী ইমরান খান, চান প্যারোল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খান। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতা করতে আগ্রহী। আর এ জন্য প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেছেন তিনি। গতকাল বুধবার তাঁর বোন নওরীন খান বিষয়টি জানিয়েছেন। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

রাওয়ালপিন্ডিতে আদিয়ালা কারাগারে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর নওরীন খান সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত সংঘর্ষে পিটিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা কষ্ট পেয়েছেন। বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক থেকে রাজনীতিকে পরিণত হওয়া ৭১ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।

ইমরান খানের এই প্রস্তাব এল এমন এক সময় যখন পাকিস্তানি বাহিনী সাম্প্রতিক কয়েক দিনে আফগান বাহিনী এবং তাদের সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র গ্রুপের হামলা প্রতিহত করেছে। পাকিস্তানি বাহিনী গত সপ্তাহে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। তার আগে, আফগান বাহিনী পাকিস্তান সীমান্তে গুলি চালায়।

তবে দুই পক্ষ ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ায় আপাতত সংঘাত বন্ধ আছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, পাকিস্তান ৪৮ ঘণ্টার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সম্মত হয়েছে, যা স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে কার্যকর হয়।

নওরীন খান গণমাধ্যমকে বলেন, পিটিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা আফগানিস্তানের সঙ্গে দেশের সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে তাঁকে এর জন্য প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘ইমরান খান আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে কষ্ট পেয়েছেন’ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

নওরীন বলেন, পিটিআই-এর প্রতিষ্ঠাতা আফগান নাগরিকদের পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত করার বিষয়েও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পিটিআই এবং ইমরান খান দীর্ঘদিন ধরে দেশব্যাপী হামলায় জড়িত নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য জোর দেওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি অভিযোগ করেছে যে, ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আফগানিস্তানভিত্তিক তেহরিক–ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সন্ত্রাসীদের দেশেই বসতি স্থাপনের সুযোগ দিয়েছিলেন। তাঁর সরকার পতনের পর এসব বসতি উচ্ছেদ করা হয় বলে দাবি এই দুই দলের।

পিটিআই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের নেতারা বলছেন, পরিকল্পনাটি শুধু আলোচনা সীমিত ছিল এবং বাস্তবায়িত হয়নি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিয়মিতভাবে তালিবান শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন যাতে আফগানিস্তানের মাটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ব্যবহার না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত