Ajker Patrika

ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যেই মিয়ানমারে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ৩২
ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। ছবি: সংগৃহীত
ক্রেমলিনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকলেও মিয়ানমারে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাবে রাশিয়া। এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রোসাটম রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে। এই নিশ্চায়ন এমন এক সময়ে এল, যার সপ্তাহ কয়েক আগেই মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত মার্চে একটি ছোট আকারের পারমাণবিক স্থাপনার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর তিন সপ্তাহ আগে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে দেশটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দেশটির ইতিহাসে বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে ৩ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়।

চুক্তিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক করপোরেশন রোসাটম নির্মিত দুটি ৫৫ মেগাওয়াটের চুল্লিসহ ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ছোট মডুলার চুল্লি (এসএমআর) নির্মাণে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। রোসাটমের জনসংযোগ বিভাগ এক ই-মেইলে জানিয়েছে, ‘সাম্প্রতিক ভূমিকম্প রোসাটমের মিয়ানমারে তাদের পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করেনি। রোসাটম সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা মান মেনে চলে, যার মধ্যে তীব্র ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত।’

গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও ভূমিকম্পের পর পারমাণবিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কোম্পানির এই উদ্দেশ্য আগে জানানো হয়নি। প্রস্তাবিত পারমাণবিক স্থাপনার অবস্থান বা নির্মাণের সময়সীমা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি রোসাটম। এটি আরআইটিএম-২০০ এন চুল্লি দিয়ে চালিত হবে। কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে বরফ ভাঙার জাহাজে ব্যবহারের জন্য এটি তৈরি করেছিল।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের এক মুখপাত্র কোনো উত্তর দেননি।

মিয়ানমারে পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য এই প্রচেষ্টা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এই অভ্যুত্থানে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

এরপর বিভিন্ন জাতিগত সেনাবাহিনী ও অভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মোকাবিলা করতে গিয়ে শাসক জান্তা দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। তারা রাশিয়াসহ অল্পসংখ্যক বিদেশি মিত্রের ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চীন সীমান্ত থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত এই সংঘাতের কারণে ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মিয়ানমারের প্রধানত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

মিয়ানমার বর্তমানে রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মিতব্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অর্থায়নের বিকল্পগুলো মূল্যায়ন করছে। রোসাটম বলেছে, ‘এতে নিজস্ব এবং ঋণ নেওয়া যৌথ তহবিল অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।’ বাংলাদেশ ও মিসরের মতো দেশে রাশিয়া স্বল্প সুদে ঋণের মাধ্যমে প্রচলিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করেছে।

প্রতিবেশী থাইল্যান্ড মিয়ানমারের পারমাণবিক উন্নয়নের ওপর নিবিড় নজর রাখছে। এক নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, তাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী, রাজধানী নেপিডোতে এই কেন্দ্রটি নির্মিত হতে পারে। থাই মূল্যায়ন অনুযায়ী, আরও দুটি সম্ভাব্য স্থান হলো মধ্য বাগো অঞ্চলের একটি স্থান এবং দক্ষিণ মিয়ানমারের দাওয়েই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে জান্তা ও রাশিয়া একটি বন্দর এবং একটি তেল শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত