Ajker Patrika

স্কুলছাত্রীর মৃত্যুতে স্তব্ধ মালয়েশিয়া, কাঠগড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ০২
মালয়েশিয়ার পুলিশ এ ঘটনার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেছে। ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার পুলিশ এ ঘটনার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেছে। ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় একটি হৃদয়বিদারক ঘটনায় দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির সেলাঙ্গর প্রদেশের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৪ বছর বয়সী এক ছাত্র তারই সহপাঠী ১৬ বছর বয়সী এক ছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। ঘটনাটির জন্য পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে দায়ী করেছে এবং সরকারও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মর্মান্তিক ওই ঘটনা ঘটেছে গতকাল মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে কুয়ালালামপুরের কাছাকাছি সেলাঙ্গরের এক স্কুলে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে এক শিক্ষক ছাত্রীটির চিৎকার শুনে ছুটে যান এবং টয়লেটের কাছে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

পুলিশ জানায়, মেয়েটির শরীরে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ঘটনার ৩০ মিনিটের মধ্যে সন্দেহভাজন কিশোরকে আটক করা হয় এবং ঘটনাস্থল থেকে দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

সেলাঙ্গর পুলিশের প্রধান শাজেলি কাহার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, মানসিক অস্থিরতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব—এই দুটি কারণ কিশোরের আচরণের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এখনো হত্যার স্পষ্ট উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা যায়নি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর কড়াকড়ি আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার জন্য অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারই অনেকাংশে দায়ী। অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের দায়িত্ব যেমন আছে, তেমনি সরকারেরও নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা জরুরি।

আনোয়ার ইব্রাহিম আরও জানান, আগামী মন্ত্রিসভা বৈঠকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে আলোচনা হবে।

ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, রক্তে ভেজা স্কুলড্রেস পরে এক কিশোর ছুরি হাতে বিদ্যালয়ের করিডরে হাঁটছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রী ও অভিযুক্ত কিশোরের মধ্যে আগে কোনো সম্পর্ক বা কথাবার্তাও হয়নি।

এদিকে অভিযুক্ত কিশোরের বাবা স্থানীয় গণমাধ্যম ‘চায়না প্রেস’কে বলেছেন, ‘আমি ভেঙে পড়েছি। আমার ছেলের এই কাজের কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমি জানি, যা-ই বলি না কেন, তাদের মেয়েকে আর ফিরিয়ে আনতে পারব না।’ তিনি জানান, ছেলে স্বভাবতই চুপচাপ ও অন্তর্মুখী ছিল এবং ঘটনার দিন সকালে তার আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেননি।

এ হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক নজরদারি ও অনলাইন সংস্কৃতির প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামি গ্রেপ্তারে র‍্যাবকে ভুল তথ্য, বগুড়া ডিবির ওসিসহ ৩ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

সব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ স্পষ্ট থাকবে জুলাই সনদে, সেটাই যাবে গণভোটে: সালাহউদ্দিন আহমদ

গণভোট আর নির্বাচন এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট: জামায়াত নেতা তাহের

ভল্ট থেকে উইন্ডো গ্রুপের কোটি টাকা চুরি, ডেপুটি ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইহুদি বিদ্বেষী স্লোগানের জন্য অক্সফোর্ডে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন উইলিয়ামস। ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া
সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন উইলিয়ামস। ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া

গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইহুদি বিদ্বেষী স্লোগান দেওয়া এক শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। স্যামুয়েল উইলিয়ামস নামের ওই ছাত্র দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি গাজার পক্ষে স্লোগান দিতে গিয়ে বলেন—‘গাজা, আমাদের গর্বিত করো, জায়নিস্টদের মাটির নিচে পাঠাও।’

বুধবার (১৫ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, ইংল্যান্ডে কেন্টের টানব্রিজ ওয়েলসে বাস করেন উইলিয়ামস। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন’ আয়োজিত ‘ন্যাশনাল ডেমোনস্ট্রেশন ফর প্যালেস্টাইন’-এ অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় গত ১১ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ কার্যকর হওয়ার পর।

সমাবেশে বক্তৃতা দিতে গিয়ে উইলিয়ামস বলেন, ‘ফিলিস্তিন ও গাজায় যে মহৎ প্রতিরোধ চলছে, সেটিকে আমরা সম্মান জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বেশি কথা বলব না, বরং একটি স্লোগান দেব—এটা আমরা অক্সফোর্ডে প্রস্তুত করেছি, তোমরাও যোগ দিতে পারো: ‘গাজা, আমাদের গর্বিত করো, জায়নিস্টদের মাটির নিচে পাঠাও।’

স্লোগানটি তিনি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করেন এবং আশপাশের কয়েকজন বিক্ষোভকারীও এতে সাড়া দেন। এই ঘটনার জের ধরে পরে উইলিয়ামসকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোনো ব্যক্তিগত বিষয়ে মন্তব্য করতে পারে না, তবে গুরুতর উদ্বেগের বিষয় উঠলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে, আমাদের কমিউনিটিতে ঘৃণা, ইহুদিবিদ্বেষ বা কোনো প্রকার বৈষম্যের স্থান নেই। আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় ব্যবস্থা নেব।’

অভিযোগ ওঠার পর থেকেই উইলিয়ামসের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং আপাতত তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম থেকে স্থগিত রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামি গ্রেপ্তারে র‍্যাবকে ভুল তথ্য, বগুড়া ডিবির ওসিসহ ৩ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

সব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ স্পষ্ট থাকবে জুলাই সনদে, সেটাই যাবে গণভোটে: সালাহউদ্দিন আহমদ

গণভোট আর নির্বাচন এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট: জামায়াত নেতা তাহের

ভল্ট থেকে উইন্ডো গ্রুপের কোটি টাকা চুরি, ডেপুটি ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেরি না করে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান মার্কিন বাহিনীর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হামাস যোদ্ধা। ছবি: এএফপি
হামাস যোদ্ধা। ছবি: এএফপি

গাজার বেসামরিক মানুষের ওপর সহিংসতা বন্ধ করে হামাসকে অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কমান্ড (সেন্টকম)। আজ বুধবার এক বিবৃতিতে সেন্টকমের প্রধান কমান্ডার ব্র্যাড কুপার বলেন, হামাস যেন দেরি না করে গাজার নিরপরাধ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো ও সহিংসতা বন্ধ করে।

ব্র্যাড কুপার আরও বলেন, ‘আমরা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। তাঁরা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন, যাতে শান্তিচুক্তি কার্যকর করা যায় এবং গাজার সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া যায়।’

সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর আগামী শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে গাজা উপত্যকার রাস্তায় ফের তাদের সদস্যদের মোতায়েন করছে হামাস। তবে সংগঠনটি এখনো প্রকাশ্যে নিরস্ত্রীকরণ বা ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, হামাস যোদ্ধারা আটজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়—মারধরে আহত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় আটজন পুরুষকে গাজার একটি রাস্তার মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসানো হয়েছে। এরপর তাঁদের প্রত্যেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। বন্ধুকধারীদের সবাই হামাসের সবুজ ব্যান্ড পরিহিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তে আশপাশের মানুষ ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দেন।

হামাস দাবি করেছে, নিহত ব্যক্তিরা ইসরায়েলের সহযোগী ও অপরাধী ছিলেন। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তারা প্রকাশ করেনি।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে গত সোমবার গাজা সিটিতে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৩০ জনের বেশি ব্যক্তিকে হত্যা করেছে হামাস। তবে ওই গোষ্ঠীটির পরিচয় জানা যায়নি। হামাস দাবি করছে, অপরাধ ও নিরাপত্তাজনিত কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কারণ যুদ্ধবিরতির পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উত্তর গাজায় ফিরে আসছে।

সেন্টকমের কমান্ডার কুপার বলেন, হামাসকে অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা মেনে চলতে হবে। তিনি হামাসকে শান্ত থেকে দ্রুত অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান।

তবে হামাসের এই দমন অভিযানের মধ্যে ট্রাম্পের বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘হামাস কিছু গ্যাং সদস্যকে হত্যা করেছে। আমি এতে চিন্তিত নই।’

ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনে হামাস থাকবে না। অঞ্চলটি নিরস্ত্রীকৃত থাকবে এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে একটি ফিলিস্তিনি কমিটি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে। সে সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক বিশেষায়িত বাহিনী পাঠানো হবে, যারা ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে।

এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সেন্টকমের নেতৃত্বে ইসরায়েলে প্রায় ২০০ মার্কিন সেনা পাঠাতে পারে, যারা গাজাসংক্রান্ত স্থিতিশীলতা কার্যক্রমে সহায়তা করবে। তবে কোনো মার্কিন সেনা সরাসরি গাজায় প্রবেশ করবে না বলে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামি গ্রেপ্তারে র‍্যাবকে ভুল তথ্য, বগুড়া ডিবির ওসিসহ ৩ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

সব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ স্পষ্ট থাকবে জুলাই সনদে, সেটাই যাবে গণভোটে: সালাহউদ্দিন আহমদ

গণভোট আর নির্বাচন এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট: জামায়াত নেতা তাহের

ভল্ট থেকে উইন্ডো গ্রুপের কোটি টাকা চুরি, ডেপুটি ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রয়টার্সের প্রতিবেদন /গণহত্যার আলামত ঢাকতে গোপনে গণকবর স্থানান্তর করেছিল আসাদ সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দামেস্কের উত্তরাঞ্চলীয় কুতাইফা এলাকার গণকবর থেকে মরদেহগুলো দুমাইরয়ের এই মরুভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
দামেস্কের উত্তরাঞ্চলীয় কুতাইফা এলাকার গণকবর থেকে মরদেহগুলো দুমাইরয়ের এই মরুভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার দুই বছর ধরে গোপনে একটি বিশাল গণকবর থেকে হাজার হাজার মরদেহ তুলে মরুভূমির আরেকটি গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।

রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দামেস্কের উত্তরাঞ্চলীয় কুতাইফা এলাকার গণকবর থেকে মরদেহগুলো ট্রাকে করে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত দুমাইরয়ের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পুরো অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন মুভ আর্থ’, যা চলে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত।

রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ সরকারের নির্দেশে দেশটির সেনাবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মুছে ফেলা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসাদের ভাবমূর্তির পুনর্গঠন করা।

এই বিশাল কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত জানতে রয়টার্স ১৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাঁরা সবাই অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া রয়টার্স সরকারি নথি পর্যালোচনা করেছে এবং কয়েক বছরের শত শত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রতি সপ্তাহে চার রাত ধরে ছয় থেকে আটটি ট্রাক মরদেহ ও মাটি মিশ্রিত অবশিষ্টাংশ নিয়ে কুতাইফা থেকে দুমাইর মরুভূমির দিকে যেত। আসাদের রিপাবলিকান গার্ডে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, কেউই আদেশ অমান্য করার সাহস করতেন না। যাঁরা কিছু বলতেন, তাঁরাও সেই গর্তের ভেতর শেষ হতো।

রয়টার্স জানিয়েছে, দুমাইর মরুভূমির এই নতুন গণকবরে অন্তত ৩৪টি বিশাল খাত বা ট্রেঞ্চ রয়েছে, যেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, এখানে ১০ হাজারের বেশি মানুষ কবর দেওয়া হয়েছে।

আসাদের সরকার ২০১২ সালের দিকে কুতাইফা এলাকায় মরদেহ দাফন শুরু করে। সেখানে সেনা, বন্দী ও কারাগারে নিহত ব্যক্তিদের লাশ ফেলা হতো। ২০১৪ সালে এক মানবাধিকারকর্মী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ছবি প্রকাশের মাধ্যমে ওই গণকবরের অস্তিত্ব প্রকাশ করেন। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরে ওই স্থান পুরোপুরি খালি করা হয়। ১৬টি ট্রেঞ্চের কোনোটিতেই এখন আর কোনো মরদেহ অবশিষ্ট নেই।

অভিযানে যুক্ত দুজন ট্রাকচালক ও সাবেক অফিসার জানান, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা তাঁদের বলেছিলেন, কুতাইফার গণকবর পরিষ্কার করে ফেলাই মূল লক্ষ্য, যাতে যুদ্ধাপরাধের কোনো প্রমাণ অবশিষ্ট না থাকে।

তাঁরা জানান, ২০১৮ সালের শেষ দিকে যখন আসাদ গৃহযুদ্ধে বিজয়ের কাছাকাছি ছিলেন, তখনই গণকবর সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নৃশংসতার অভিযোগে কোণঠাসা আসাদ বিশ্বে নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিলেন।

আসাদ সরকারের পতনের পর এখনো সিরিয়ার নতুন সরকার এ গণকবরগুলোর কোনো আনুষ্ঠানিক নথি প্রকাশ করেনি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, আসাদের শাসনামলে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ হন, যাঁদের অনেকে বিভিন্ন গণকবরে শায়িত বলে ধারণা করা হয়।

সিরিয়ার জরুরি ব্যবস্থাপনামন্ত্রী রায়েদ আল-সালেহ বলেন, প্রত্যেক মায়ের হৃদয়ে ততক্ষণ রক্তক্ষরণ চলবে, যতক্ষণ না তিনি তাঁর ছেলের কবর খুঁজে পান; প্রত্যেক স্ত্রী তাঁর স্বামীর কবর এবং প্রত্যেক শিশু তাঁর পিতার কবর খুঁজে পেতে চায়। তিনি জানান, সরকার একটি ডিএনএ ব্যাংক ও ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরির পরিকল্পনা করছে, যাতে পরিবারগুলো নিখোঁজ স্বজনদের শনাক্ত করতে পারে।

সিরিয়া জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি সেন্টারের প্রধান মোহাম্মদ আল-আবদাল্লাহ বলেন, এভাবে মরদেহ স্থানান্তর করার ফলে মৃত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। পরিবারের কাছে সম্পূর্ণ দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেওয়া অত্যন্ত জটিল হবে। তিনি নতুন সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বলেন, রাজনৈতিক ইচ্ছা আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত সম্পদ ও বিশেষজ্ঞের অভাব এখনো রয়ে গেছে।’

রয়টার্স জানিয়েছে, এই অনুসন্ধান এখনো চলমান এবং শিগগির তাদের বিশেষ প্রতিবেদনের পরবর্তী পর্ব প্রকাশ করা হবে। এখানে জানানো হবে, কীভাবে এই গোপন অভিযান পরিচালিত হয়েছিল এবং সাংবাদিকেরা কীভাবে এর খোঁজ পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামি গ্রেপ্তারে র‍্যাবকে ভুল তথ্য, বগুড়া ডিবির ওসিসহ ৩ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

সব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ স্পষ্ট থাকবে জুলাই সনদে, সেটাই যাবে গণভোটে: সালাহউদ্দিন আহমদ

গণভোট আর নির্বাচন এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট: জামায়াত নেতা তাহের

ভল্ট থেকে উইন্ডো গ্রুপের কোটি টাকা চুরি, ডেপুটি ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৪৫
ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া

ইসরায়েলি সেনা (আইডিএফ) গাজা থেকে সরে যাওয়ার পর সেখানে আবারও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছে হামাস। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা গাজার বিভিন্ন ‘গোত্র’ বা পারিবারিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, হামাস যোদ্ধারা গাজার অন্তত ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করছে।

ভিডিওটিতে দেখা যায়, মারধরে আহত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় আটজন পুরুষকে গাজার একটি রাস্তার মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসানো হয়েছে। এরপর তাদের প্রত্যেককে গুলি করে হত্যা করা হয়। বন্ধুকধারীদের সবাই হামাসের সবুজ ব্যান্ড পরিহিত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের মুহূর্তে আশপাশের মানুষ ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দেয়।

হামাস দাবি করেছে, নিহতরা ইসরায়েলের সহযোগী ও অপরাধী ছিল। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ তারা প্রকাশ করেনি। এনডিটিভিসহ আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যম ভিডিওটি প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, এটি দর্শকদের জন্য ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ হতে পারে।

সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী আবারও গাজার রাস্তায় সক্রিয় হয়েছে। তারা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে অনেককে হত্যা করেছে। হত্যার শিকার ব্যক্তিদের তারা ‘গ্যাং সদস্য’ বা ‘দুষ্কৃতকারী’ বলে আখ্যা দিচ্ছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত পুলিশের কালো মুখোশধারী সদস্যরা বর্তমানে উত্তর গাজায় টহল দিচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী সরে যাওয়ার পরই তারা পুনরায় রাস্তায় নেমে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হামাসের নিরাপত্তা বাহিনী কার্যত গায়েব হয়ে গিয়েছিল। কারণ, ইসরায়েলি হামলায় তাদের প্রায় ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে যায়। সেই শূন্যতায় বিভিন্ন পারিবারিক সশস্ত্র গোষ্ঠী ও অপরাধী চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে, যাদের অনেকে ইসরায়েলের সহায়তা পেয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এসব গোষ্ঠী গাজার মানুষদের জন্য পাঠানো ত্রাণ লুটপাট ও চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিল, যা গাজার খাদ্যসংকট আরও বাড়িয়ে দেয়।

গাজার বেসরকারি ট্রাক মালিক ইউনিয়নের সভাপতি নাহিদ শেহাইবার বলেছেন, এই গ্যাংগুলো ইসরায়েলি দখলের সুযোগে মানুষকে হত্যা করেছে ও ত্রাণ লুট করেছে। হামাস এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘হামাস কয়েকটি ভয়ংকর গ্যাংকে ধ্বংস করেছে, সেটি আমাকে খুব একটা বিরক্ত করেনি।’ তবে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘হামাসকে এখনই অস্ত্র জমা দিতে হবে। যদি তারা না দেয়, আমরা তাদের নিরস্ত্র করব; তা দ্রুত এবং প্রয়োজনে সহিংস উপায়ে ঘটবে।’

বর্তমানে যুদ্ধবিরতি টিকে থাকলেও বিশ্লেষকদের মতে, হামাসের এই কঠোর পদক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় হামাসকে নিরস্ত্র করে গাজার প্রশাসন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হামাস এখনো এই শর্তে পুরোপুরি রাজি হয়নি।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্পষ্ট জানিয়েছেন, হামাস সম্পূর্ণভাবে ভেঙে না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না। ফলে গাজার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামি গ্রেপ্তারে র‍্যাবকে ভুল তথ্য, বগুড়া ডিবির ওসিসহ ৩ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

সব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ স্পষ্ট থাকবে জুলাই সনদে, সেটাই যাবে গণভোটে: সালাহউদ্দিন আহমদ

গণভোট আর নির্বাচন এক দিনে করার প্রস্তাব উদ্ভট: জামায়াত নেতা তাহের

ভল্ট থেকে উইন্ডো গ্রুপের কোটি টাকা চুরি, ডেপুটি ম্যানেজারসহ গ্রেপ্তার ২

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত