Ajker Patrika

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ০৯
নেরতিতির চাষিরা প্রায় বিনা মূল্যে বেচে দিচ্ছেন কমলা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
নেরতিতির চাষিরা প্রায় বিনা মূল্যে বেচে দিচ্ছেন কমলা। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

সুদানের এমন একটি অঞ্চল আছে, যেখানে গেলে মনে হবে দেশে কোনো অশান্তি নেই, কোনো গৃহযুদ্ধ চলছে না। সে জায়গাটি হলো জেবেল মারা পর্বতমালা। দারফুর অঞ্চলের পশ্চিমে অবস্থিত এই সবুজ ভূখণ্ড দেশের বাকি অংশের সঙ্গে এক মর্মান্তিক বৈপরীত্য তুলে ধরে।

আড়াই বছরের সংঘাতে জর্জরিত সুদানের ২৫ মিলিয়ন মানুষ (জনসংখ্যার অর্ধেক) তীব্র খাদ্যের সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের মতে, ৬ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি দুর্ভিক্ষকবলিত। তখন জেবেল মারার কৃষকেরা অতিরিক্ত ফলন নিয়ে বিপাকে।

ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মতো অনুকূল জলবায়ু এবং অতি-উর্বর মাটির কারণে জেবেল মারা হলো ফলের স্বর্গ। প্রতিদিন সকালে নারীরা উজ্জ্বল পোশাকে, শিশুদের সঙ্গে নিয়ে গাধার পিঠে চড়ে ফসলের খেতে যান। সেখানে জন্মায় দেশের দুর্লভ ফসল—বাদাম, কমলা, আপেল ও স্ট্রবেরি। এই অঞ্চলের অরগানিক কমলা স্বাদের জন্য একসময় গোটা সুদানে প্রশংসিত ছিল।

কিন্তু এই প্রাচুর্যই এখন অভিশাপ। গলো শহরের একজন কমলা বিক্রেতা হাফিজ আলী হতাশা নিয়ে বলেন, ‘আমরা প্রায় বিনা মূল্যে কমলা বিক্রি করি, এমনকি কখনো কখনো পচে যাওয়ার ভয়ে বাজারে যাওয়ার পথেই ফেলে দিতে হয়।’

এ পার্বত্য অঞ্চলটি হলো সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ ভূখণ্ড। এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বর্তমান যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলেও ২০০৩ সালে দারফুর সংঘাতের সময় থেকেই তারা খার্তুম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো শান্তিচুক্তি সই করেনি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে তারা এখানকার ‘মুক্ত এলাকা’ নিয়ন্ত্রণ করছে।

সুদানের জেবেল মারাকে বলে সবুজ স্বর্গ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সুদানের জেবেল মারাকে বলে সবুজ স্বর্গ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বর্তমানে চারদিকে যুদ্ধ চলায় জেবেল মারা ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। পশ্চিম ও উত্তরে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং তাদের সহযোগী আরব মিলিশিয়ারা প্রধান রাস্তাগুলো অবরোধ করে রেখেছে। দক্ষিণে সুদান সেনাবাহিনী প্রায় প্রতি সপ্তাহে আরএসএফের অবস্থানে বোমা হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে বেসামরিক লোকেরাও প্রাণ হারাচ্ছে। আগে আরএসএফের নিয়ন্ত্রণ এখনো অক্ষত।

এর ফলে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা এল-ফাশের (১৩০ কিলোমিটার দূরে) বা চাদ সীমান্তের তিনের (২৭৫ কিলোমিটার দূরে) মতো জাতীয় বাজারগুলোতে পণ্য পৌঁছাতে পারছেন না।

পণ্য পরিবহনের এই দুঃস্বপ্ন নতুন নয়। তাভিলাতে ফল বিক্রেতা ইউসুফ তার অভিজ্ঞতা জানান: ‘মাত্র ১২ কিলোমিটার পথ পেরোতেও পাহাড় এবং কাদামাটির কারণে সারা দিন গাড়ি চালাতে হতো।’ এখন অনিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

সুদান লিবারেশন আর্মি—আবদুলওয়াহিদ গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ঠিক প্রান্তে অবস্থিত তাভিলা এখন একটি অস্থায়ী বাজারে পরিণত হয়েছে। আরএসএফের অবরোধ থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে ফলের দাম কম। কিছু সাহসী ব্যবসায়ী এই বাজার থেকে পণ্য কিনে চরম বিপজ্জনক পথে অবরুদ্ধ এল-ফাশের শহরে পাচারের চেষ্টা করেন।

মধ্য দারফুরে, প্রধান ফুর জাতিগোষ্ঠী এবং আরব যাযাবর নেতাদের মধ্যে সম্প্রতি একটি ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ায় কিছু এলাকায় সীমিত ব্যবসা শুরু হয়েছে। সুদান লিবারেশন আর্মি নিয়ন্ত্রিত নেরতিতি শহরে বাজার আবার চালু হয়েছে, সেখানে আরব নারীরা টক দই এবং ফুর কৃষকেরা ফল ও সবজি আনছেন।

তবে বাজারের একজন ব্যবসায়ী সতর্ক করে বলেন, ‘বাজার সপ্তাহে মাত্র একবার খোলে। চুক্তি হওয়ার পরেও রাস্তায় এখনো সশস্ত্র ডাকাতি হয়, ভ্রমণ এখনো বিপজ্জনক।’

প্রতি বৃহস্পতিবার, বাজার দিনে, নেরতিতি এবং আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত জালিঙ্গেইয়ের মধ্যে চেকপয়েন্টের সংখ্যা বেড়ে দুই ডজনের বেশি হয়। এই চেকপয়েন্টগুলো আরএসএফ যোদ্ধা, আরব মিলিশিয়া বা কখনো কখনো একজন সাদা পোশাকের সশস্ত্র ব্যক্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। যারা জোর করে চাঁদা দাবি করে। যাত্রীরা নীরব দর্শকের মতো তাকিয়ে থাকলেও চালকেরা দর-কষাকষি করার চেষ্টা করেন।

জেবেল মারা অঞ্চলে ফেরার পথে পাহাড়ের প্রতিটি রাস্তায় সুদান লিবারেশন আর্মির নিজস্ব চেকপয়েন্ট রয়েছে। সেখানেও সশস্ত্র লোকেরা চাঁদা দাবি করে এবং ব্যাগ তল্লাশি করে। সুদানের অন্যান্য অঞ্চলে বহুল ব্যবহৃত ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের মতো ‘নিষিদ্ধ’ জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়।

জেবেল মারা অঞ্চলে আপেক্ষিক শান্তি থাকলেও অন্য এলাকার সংঘাতের স্পষ্ট ছাপ এখানে বিদ্যমান। প্রতিদিন এল-ফাশেরসহ অন্যান্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এলাকা থেকে মানুষ বোঝাই লরি গলোর দিকে আসছে। মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো এতগুলো চেকপয়েন্ট পেরিয়ে আসতে না পারায় এই শরণার্থীরা স্কুল, ক্লিনিক এবং অন্যান্য পাবলিক স্পেসে আশ্রয় নিলেও খুব সামান্য বা কোনো সাহায্যই পাচ্ছে না।

সুদান লিবারেশন আর্মির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের কার্যত রাজধানী গলো শহরে, এল-ফাশের থেকে পালিয়ে আসা এক নারী তাঁর ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি এখন ২৫টি সদ্য আগত পরিবারের সঙ্গে একটি শ্রেণিকক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো আয়রোজগার নেই, কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি নার্স ছিলাম, আমি চাষাবাদও করতে পারি, কিন্তু এখানকার জমি সব ব্যক্তিগত। আমরা জানি না কী করব।’

যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন অসুস্থ, বয়স্করা মেঝেতে শুয়ে ছিলেন, শিশুরা ক্ষুধার যন্ত্রণায় চিৎকার করছিল। তবে কিছুটা স্বস্তি এই যে, গলো থেকে যে খাবার বের করা যায়নি, অর্থাৎ নিরাপত্তার কারণে খাদ্যপণ্য দূরবর্তী বাজারে না নিতে পারার কারণে যে বাড়তি সরবরাহ, তা অন্তত এই শরণার্থীদের কাজে আসবে।

এই হলো জেবেল মারা অঞ্চলের বাস্তবতা—এক সবুজ পাহাড়ের অদ্ভুত জগৎ! ঝরনার নদী, রসালো ফলের প্রাচুর্য, কিন্তু চারদিকে যুদ্ধ এবং আতঙ্কিত শরণার্থীদের ভিড়। এক ফল ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে বলেন, ‘আমরা এই দুই যুদ্ধরত পক্ষের ওপর থেকে সব আশা হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শুধু আমাদের কমলাগুলো বেচতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক শক্তিচালিত অপ্রতিরোধ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

পারমাণবিক শক্তিচালিত অনির্দিষ্ট পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’-এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির দাবি, এটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, খুব শিগগির ক্ষেপণাস্ত্রটি মোতায়েন করা হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক মহড়ায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। এর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে রাশিয়া। আর তা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া কোনোভাবেই নতি স্বীকার করবে না। বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, ঠিক সে সময় মস্কোর এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ পুতিনকে জানান, গত মঙ্গলবার পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮,৭০০ মাইল) উড়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা আকাশে ছিল। তিনি বলেন, এটি পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এবং এর উড্ডয়নের দূরত্ব কার্যত সীমাহীন।

রাশিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী, ৯ এম-৭৩০ বুরেভেস্তনিক (ন্যাটো নাম এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল) হলো এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যাকে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই আটকাতে পারবে না।

আজ রোববার সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন পুতিন। এ সময় পুতিন বলেন, এটি এক অনন্য অস্ত্র, যা আর কোনো দেশের কাছে নেই।

পুতিন ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দেন। তিনি একে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রতিরোধ হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ, ওয়াশিংটন ২০০১ সালে একতরফাভাবে ১৯৭২ সালের অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় এবং পরে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ শুরু করে।

পুতিন বলেন, রুশ বিশেষজ্ঞরা একসময় বলেছিলেন, এই অস্ত্র তৈরি সম্ভব নয়। কিন্তু এখন এটার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তিনি গেরাসিমভকে দ্রুত অস্ত্রটির শ্রেণিবিন্যাস ও মোতায়েনের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন।

পুতিনের এ ঘোষণার সময় ও প্রেক্ষাপটও তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে সামরিক পোশাক পরে এ ঘোষণা দিয়ে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সরাসরি বার্তা দিয়েছেন—বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশে। তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সম্প্রতি ট্রাম্প রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, মস্কো ইউক্রেনকে হারাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু পুতিনের আজকের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া এখনো বৈশ্বিক পারমাণবিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সঙ্গে আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, মস্কোর সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন করে আলোচনায় বসা উচিত।

রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ গেরাসিমভ জানান, বুরেভেস্তনিকের এ পরীক্ষা বিশেষ ছিল। কারণ, এটি পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমেই এত দীর্ঘ সময় আকাশে ছিল। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র যেকোনো অ্যান্টি মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘরে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনা নারীদের ‘এআই প্র্যাঙ্ক’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনের নারীরা তাঁদের পুরুষ সঙ্গীদের ভালোবাসা পরীক্ষা করতে এক নতুন ট্রেন্ড ‘এআই গৃহহীন ব্যক্তি প্র্যাঙ্ক’ ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্র্যাঙ্ক ভাইরাল হওয়ার পর তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ট্রেন্ডে অংশ নিতে ব্যবহারকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও তৈরি করেন। এসব ছবি বা ভিডিওতে অপরিচ্ছন্ন বেশভূষার এক গৃহহীন ব্যক্তিকে ব্যবহারকারীর বাড়ি বা কর্মস্থলে অবস্থান করতে দেখা যায়।

এরপর সেই ছবি বা ভিডিও ওই নারীরা তাঁদের স্বামী বা প্রেমিককে পাঠান। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সঙ্গীদের অনুভূতি ও দায়বদ্ধতা পরখ করে দেখেন।

এ ধরনের ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুগলের জেমিনি বা মাইএডিটের ‘এআই রিপ্লেস’-এর মতো টুল।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক আইনজীবীর পরিবার এমন এক ভাইরাল প্র্যাঙ্কের ঘটনায় পুলিশ ডাকার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছিল।

আরেক ঘটনায় চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে এক নারী তাঁর স্বামীকে ঘরে একজন ‘গৃহহীন ব্যক্তি ঢুকে পড়েছে’—এমন এআই দিয়ে বানানো ছবি পাঠান। সে সময় তাঁর স্বামী বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাচ্ছিলেন।

ছবি দেখে তিনি সেটিকে সত্যি ভেবে পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তারা বুঝতে পারে, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে ‘জনসাধারণের সম্পদের অপচয়’ বলে মন্তব্য করেন এবং ওই নারীকে ‘ভয় ছড়ানোর অপরাধে’ অভিযুক্ত করেন।

চীনের জননিরাপত্তা প্রশাসন শাস্তি আইন অনুযায়ী, এমন কাজের জন্য সর্বোচ্চ ১০ দিনের আটকাদেশ এবং প্রায় ৭০ ডলার জরিমানার বিধান আছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক চীনা পুরুষ এ ধরনের প্র্যাঙ্ক বা দুষ্টুমির তীব্র সমালোচনা করেছেন।

একজন লিখেছেন, ‘আপনারা কি সেই রাখাল ছেলের গল্প শোনেননি, যে নেকড়ে এসেছে বলে মিথ্যা চিৎকার দিত? যদি আপনারা বারবার মিথ্যা সতর্কতা দেন, তাহলে সত্যি সত্যি বিপদ হলেও কেউ আপনাদের বিশ্বাস করবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকজন লিখেছেন, ‘এআই আমাদের জীবনে সুবিধা এনেছে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি আস্থার সংকটও তৈরি করেছে। প্ল্যাটফর্মের উচিত, এআই কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেওয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সর্বোচ্চ গতির ট্রেনের পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন, ঘণ্টায় পাড়ি দিতে সক্ষম ৪৫০ কিমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া

বিশ্বের দ্রুততম উচ্চগতির ট্রেন সিআর-৪৫০ এর প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের রিং রেলওয়েতে এখনো এই ট্রেনটির পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে। ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। তবে ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচলের সময় এর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার।

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনটিকে ট্র্যাকে নামানো হয়। এটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ গতির চলমান সিআর–৪০০ ফুজিং ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। ফুজিং ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে।

china-2
china-2

ট্রেনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি করপোরেশন লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ফেং জানিয়েছেন, সিআর–৪৫০ উচ্চগতির ট্রেন প্রযুক্তিতে এক বিশাল অগ্রগতি এনেছে। তত্ত্ব, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, মানদণ্ড ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এই ট্রেন।

৪০০ কিলোমিটার গতির নজিরবিহীন গতি অর্জনের জন্য প্রকৌশলীরা ট্রেনটির ট্র্যাকশন পাওয়ার (ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা), ডাইনামিক পারফরম্যান্স বা গতিশীল অবস্থায় ট্রেনটিতে যাবতীয় পরিবর্তন পরিমাপ এবং প্যান্টোগ্রাফ সিস্টেম বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ট্রেনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তা উন্নত করেছেন।

ওয়াংয়ের ভাষায়, ট্রেনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াটার-কুলড পারমানেন্ট ম্যাগনেট ট্র্যাকশন সিস্টেম, নতুন প্রজন্মের উচ্চ-স্থিতিশীলতা বগি এবং একাধিক উদ্ভাবনী সিস্টেম। যার ফলে দীর্ঘ সময় উচ্চ গতিতে চলাচলেও এটি স্থিতিশীল থাকে। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সিআর–৪৫০ এক ধাপ এগিয়ে। এতে রয়েছে মাল্টিলেয়ার ইমারজেন্সি ব্রেক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং ৪ হাজারেরও বেশি অনবোর্ড মনিটরিং সেন্সর, যা চলমান অবস্থায় ট্রেনের গিয়ার, পুরো ট্রেন, হাই–ভোল্টেজ প্যান্টোগ্রাফ, ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা—সবকিছুই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া, ওভার-দ্য-হরাইজন শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে এতে। এই ব্যবস্থা ট্রেনের সামনে ট্র্যাকের জরুরি পরিস্থিতি আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

china-3
china-3

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব। বগির ‘স্ট্রিমলাইনড কাওলিং’ ধাঁচের নকশা বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ কমিয়েছে, আর নতুন হালকা উপকরণ ও প্রযুক্তি ট্রেনের মোট ওজন ১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে ট্র্যাকের সঙ্গে চাকার এবং সামগ্রিক ঘর্ষণ প্রতিরোধ ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।

ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও এসেছে অগ্রগতি। সাতটি নতুন প্রযুক্তি—যেমন সাউন্ড-অ্যাবসর্বিং উপকরণ ও উন্নত অ্যারোডাইনামিক নকশা ট্রেনের অভ্যন্তরীণ শব্দ ২ ডেসিবল কমিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও নিঃশব্দ ও আরামদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

তা ছাড়া, সিআর–৪৫০ এ যুক্ত হয়েছে একাধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফিচার, যা ট্রেনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং যাত্রীসেবা—সব দিক থেকেই একে আগের সব মডেলের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে জানান ওয়াং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১০
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহের ভিত্তি করে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট।

মুখপাত্র জানান, এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও ভাটিতে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত