Ajker Patrika

১২০ বছর পরও নেতার মাথার খুলি ফেরত চায় নান্দি উপজাতি

১২০ বছর পরও নেতার মাথার খুলি ফেরত চায় নান্দি উপজাতি

১৯০৫ সালে এক ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অফিসার কোইতালেল আরাপ সামোয়িকে হত্যা করেছিলেন। কোইতালেল ছিলেন কেনিয়ার নান্দি উপজাতির সর্বোচ্চ নেতা। মৌখিক ইতিহাস অনুযায়ী, হত্যার পর তাঁর মাথার খুলিটি যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত নেতার মাথার খুলি ফেরত পেতে এক দীর্ঘ অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ওই উপজাতি গোষ্ঠী। 

এ বিষয়ে আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে একসময় বিপুল প্রতিরোধ গড়েছিল নান্দি উপজাতি। আর সেই প্রতিরোধের গৌরবজনক প্রতীক হয়ে আছেন কোইতালেল। হত্যার পর তাঁর খুলি নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি নান্দি উপজাতির মানসিকতায় একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত রেখে গেছে। 

জানা যায়, ১৮৯০-এর দশকে কেনিয়া থেকে উগান্ডা পর্যন্ত রেলওয়ে নির্মাণের জের ধরে কোইতালেলের ভয়ংকর প্রতিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল। কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দর থেকে শুরু হওয়া এই রেলওয়ে নান্দিদের বসবাস অঞ্চলগুলোর মধ্য দিয়ে চলে গিয়েছিল। আর এই রেলওয়ের সূত্রেই এসব অঞ্চলে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসক এবং খ্রিষ্টান মিশনারিদের আনাগোনা ছিল। কেনিয়ার বৃহত্তর কালেনজিন উপজাতির উপগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত নান্দিরা রেললাইনের ওপর ওত পেতে ব্রিটিশ কর্মকর্তা এবং মিশনারিদের ওপর হামলা করে ঔপনিবেশিক-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। 

এই প্রতিরোধের জের ধরেই প্রায় ১২০ বছর আগে নিহত হয়েছিলেন কোইতালেল। তাঁর নাতনি অ্যান মাচি সামোই এখনো জীবিত। বর্তমানে অ্যান মাচির বয়স ৮৭ বছর। মুখে মুখে প্রচারিত নিজের পিতামহের বীরত্বগাথা তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করেন। বংশ পরম্পরায় মুখে মুখে বহন করা নান্দিদের প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী, কোইতালেলকে যে ব্রিটিশ কর্মকর্তা হত্যা করেছিলেন তাঁর নাম রিচার্ড মেইনার্টজহেগেন। পরে তাঁর নেতৃত্বেই কোইতালেলের খুলিসহ নান্দিদের অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। 

কোইতালেলকে হত্যার পরই নান্দিদের প্রতিরোধ ভেঙে পড়েছিল। কোইতালেলের সঙ্গে সেদিন তাঁর সঙ্গী আরও ২৫ নান্দি যোদ্ধাকেও হত্যা করেছিল ব্রিটিশ বাহিনী। পাশাপাশি ওই দিন নারী ও শিশুসহ নান্দি উপজাতির ২৫০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে নান্দিরা ব্রিটিশ বাহিনী কর্তৃক নিজেদের জমি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ সহ শোষণ এবং অন্যান্য নিষ্ঠুরতার শিকার হয়। 

নান্দি নেতা কোইতালেলের বংশ নিজ সম্প্রদায়ে তালাই বংশ হিসেবে পরিচিত। এই বংশ ওই উপজাতি সমাজে আধ্যাত্মিক এবং নেতৃত্বের ভূমিকার জন্য পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই বংশের নেতৃস্থানীয় মানুষেরাই তাদের নিজ গোষ্ঠীর মানুষের কাছে ঈশ্বরের বার্তা পৌঁছে দেন। তবে কোইতালেলেকে হত্যার পরের বছরগুলোতে তাঁর বংশের মানুষদের নান্দি অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ করে পুরো সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল ব্রিটিশ বাহিনী। 

১৯৬৭ সালে কোইতালেলের হত্যাকারী ব্রিটিশ কর্মকর্তা রিচার্ড মেইনার্টজহেগেন মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর স্মৃতি কথায় কোইতালেলেকে হত্যার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে নান্দি নেতার মাথাটি কোথায় রাখা হয়েছিল সেই বিষয়টি তিনি চেপে গিয়েছিলেন। 

কষ্ট ও নিপীড়ন সহ্য করেও নন্দী উপজাতি তাদের নেতাকে ভুলে যায়নি। হত্যাকাণ্ডের ১০০ বছর পর ২০০৫ সালে তাঁরা তাঁদের নেতার খুলি পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। কারণ সেই বছর এক কালেনজিন একাডেমিক মেইনার্টজহেগেনের বাড়িতে কোইতালেলের ব্যবহৃত তিনটি পবিত্র কাঠের দণ্ড খুঁজে পান। নান্দিরা বিশ্বাস করে, তাঁদের নেতার খুলিও কোনো ব্রিটিশ জাদুঘর কিংবা অন্য কোনো সংগ্রহশালায় রক্ষিত আছে। তবে ব্রিটিশ জাদুঘর পিট রিভারস মিউজিয়াম এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কোইতালেলের মাথার খুলির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে নান্দিদের প্রচেষ্টা অনেক জটিল হয়ে পড়ে। 

এদিকে মেইনার্টজহেগেনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা কোইতালেলের পবিত্র দণ্ডগুলো নান্দি সম্প্রদায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ওই ব্রিটিশ কর্মকর্তার ব্যাংকার ছেলে। দণ্ডগুলোর এই প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়ের নিয়ে আরও গর্বিত হয়ে উঠেছে নান্দি উপজাতির মানুষ। তাঁরা এখনো স্বপ্ন দেখছে, এভাবেই একদিন তাঁদের নেতার খুলিও স্বমহিমায় নান্দি পাহাড়গুলোতে ফিরে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত