Ajker Patrika

ঘুমের সমস্যায় সবচেয়ে কার্যকর ব্যায়াম কোনটি, জানালেন গবেষকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঘুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত যোগব্যায়াম (ইয়োগা) করা সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অন্যান্য যেকোনো ব্যায়ামের চেয়ে উচ্চ-তীব্রতার যোগব্যায়াম দীর্ঘ মেয়াদে ঘুমের মান উন্নত করতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

চীনের হারবিন স্পোর্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ৩০টি এলোমেলোভাবে বাছাই করা নিয়ন্ত্রিত গবেষণার (র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল) ফল বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা এ তথ্য দেন। বিশ্লেষণে যুক্ত পরীক্ষাগুলোয় বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের ঘুমে সমস্যা থাকা আড়াই হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে করা হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীরাও বিভিন্ন বয়সী ছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে দুবার ৩০ মিনিটের কম সময় ধরে উচ্চ-তীব্রতার যোগব্যায়াম করলে ঘুমের মান সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়। এর পরেই সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো হাঁটাহাঁটি। এরপর রয়েছে রেজিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ। এসব ব্যায়ামের মাধ্যমে মাত্র ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের মধ্যেই ইতিবাচক ফল দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, রেজিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ বলতে বোঝায় এমন ধরনের ব্যায়াম, যেখানে পেশিকে সংকোচন ও প্রসারণ করতে হয় এবং এর মাধ্যমে পেশিশক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে সাধারণত ওজন বা রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়, বা শরীরের নিজস্ব ওজন (যেমন পুশ আপ বা স্কোয়াট) ব্যবহার করেও করা হয়।

তবে এই গবেষণার ফলাফল ২০২৩ সালের আরেকটি বিশ্লেষণের সঙ্গে কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ওই বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, ঘুমের মান উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি সহায়ক সপ্তাহে তিনবার মাঝারি-তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম। যদিও ওই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আরেকটি গবেষণাপত্রে দেখা যায়, অন্য ব্যায়ামের তুলনায় যোগব্যায়াম ঘুমের ওপর আরও বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

গবেষকেরা বলছেন, যোগব্যায়ামকে স্পষ্টভাবে অ্যারোবিক বা অ্যানারোবিক হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা কঠিন। এর তীব্রতা নির্ভর করে ব্যবহৃত কৌশলের ওপর। হয়তো এ কারণেই বিভিন্ন গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন ফল এসেছে।

ঘুমের উন্নয়নে যোগব্যায়ামর বিশেষ উপকারিতার কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ তাঁরা গবেষণায় তুলে ধরেছেন। যোগব্যায়াম একদিকে যেমন হৃৎস্পন্দনের হারাতে বাড়াতে ও পেশিকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে, তেমনি শ্বাসনালির নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বাস-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যা বিশ্রাম ও হজমের জন্য জরুরি।

এ ছাড়া কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, যোগব্যায়াম মস্তিষ্কের তরঙ্গের গতিবিধিতে প্রভাব ফেলে, যা গভীর ঘুমে সহায়তা করতে পারে।

সাধারণভাবে ঘুমের মান উন্নত করে ব্যায়াম। তবে কোন ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর এবং তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী—তা নিয়ে এখনো গবেষণা প্রয়োজন।

হারবিন স্পোর্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, ‘ঘুমের সমস্যাসংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, এতে অন্তর্ভুক্ত গবেষণার সংখ্যা সীমিত এবং ঘুমের সমস্যায় ভোগা জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যও আলাদা।’

তবে এ কথা ঠিক, আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক একে অপরের থেকে আলাদা। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করার জন্য কোনো একক সমাধান সবার জন্য কার্যকর না-ও হতে পারে। যোগব্যায়াম এর মধ্যে একটি সম্ভাব্য কার্যকর উপায়।

গবেষণাটি ‘স্লিপ অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল রিদমস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত