Ajker Patrika

শীতে রোগব্যাধি এড়িয়ে চলুন

ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম
আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ৩১
শীতে রোগব্যাধি এড়িয়ে চলুন

শীত শুরু হয়েছে, দেশের কোথাও কোথাও এর তীব্রতাও বেশি। শীতের এই সময়টাতে বেশ কিছু রোগব্যাধির প্রকোপ বেশি থাকে; বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের এই সময়টাতে অনেক ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। এ সময় যেসব রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, সেসবের কারণ ও প্রতিকার জানাটা জরুরি।

শীতের রোগব্যাধি
শীতের এই সময়টায় ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেশি দেখা যায়। যেমন কাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, সাময়িক জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি ইত্যাদি। এ সময় বাতাসে ধুলোবালু বেশি থাকায় অনেকের অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়; বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের কাশি, কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা বেশি হয়। ঠিক সময়ে শনাক্ত করা না হলে অনেক সময় এসব রোগ নিউমোনিয়ায়ও রূপ নিতে পারে। ঠান্ডা সমস্যায় অনেকের টনসিল বেড়ে গিয়ে ব্যথারও সৃষ্টি হতে পারে।

মশাবাহিত রোগ হলে
শীতকালে মশাবাহিত ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগসহ বিভিন্ন ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ দেখা যায়। এ সময় অনেক জায়গায় মশার প্রকোপও বাড়ে। ডেঙ্গু বর্ষাকালীন রোগ হলেও আমাদের দেশে শীতকালেও এর বিস্তার দেখা যায়। তাই মশার কামড়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কাঁপুনি দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসা, বারবার জ্বর আসা, গিঁটে ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঠান্ডার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে
শীতে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেকের শরীর চট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। তাই অনেকের জ্বর হয়ে থাকে। শীত শেষ না হওয়া পর্যন্ত হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল বা হাত-মুখ ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

পাতলা পায়খানা হলে
হঠাৎ ঠান্ডার কারণে শিশু ও বড়দের পাতলা পায়খানা হতে দেখা যায়। এ সমস্যা এড়াতে বাইরের খাবার একেবারে না খাওয়া এবং খাবারের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। বয়স্ক ও শিশুদের গরম কাপড়ের পাশাপাশি সব সময় হাতমোজা ও পা-মোজা পরে থাকা জরুরি।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে
শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শরীরের ত্বকও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। অ্যালার্জির কারণে এমনটা হয়; বিশেষ করে যাদের ধুলাবালুতে অ্যালার্জি আছে। এ সময় নিয়মিত লোশন বা অলিভ অয়েল, নারকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে ত্বক স্বাভাবিক থাকবে। যাদের ধুলোবালুতে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের এ রকম চুলকানি দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, শীত তাদের জন্য বিশেষ সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ, এই সময়ে তাদের জটিলতা বাড়ে। অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রার মতো সমস্যাও তৈরি হয়। তাই এই রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন।

যা খেয়াল রাখবেন

শীতের ঠান্ডা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। গরম কাপড় পরতে হবে। কান ও হাত ঢেকে রাখতে হবে। গলায় মাফলার ব্যবহার করতে হবে।

গোসল বা হাত-মুখ ধোয়া থেকে শুরু করে সব সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা জরুরি।

খাওয়ার পানির ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি মিশিয়ে পান পারলে ভালো। এ সময় ঠান্ডা খাবার; যেমন আইসক্রিম, কোক ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত।

শীতের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। এ ছাড়া ভিটামিন সি রয়েছে এমন খাবার, যেমন জলপাই, কমলা, লেবু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এগুলো একধরনের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

শিশুরা অনেক সময় শরীরে গরম কাপড় রাখে না বা খুলে ফেলে। তাই তাদের দিকে সতর্ক নজর রাখা উচিত। শীতকালেও নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। তাহলেই এ সময় সুস্থ ও নিরাপদ থাকা যাবে।

ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক ও পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউট, শ্যামলী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত