Ajker Patrika

রোগীর সুস্থতায় হাসপাতালের দেয়ালে পেইন্টিং

ফিচার ডেস্ক
যুক্তরাজ্যের কুইন আলেকজেন্ড্রা হাসপাতাল। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
যুক্তরাজ্যের কুইন আলেকজেন্ড্রা হাসপাতাল। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

‘যব কই বাত বিগার যায়ে...’ বরেণ্য ভারতীয় সংগীতশিল্পী কুমার শানুর এই গান ক্যানসার রোগ উপশমের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে বাজানো হয়। মূলত রোগ উপশমের জন্য মিউজিক থেরাপি এখন পৃথিবীতে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। সংগীতের মতো শিল্পকর্মও মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি করে। অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে, এমন অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন রোগ সারাতে সক্ষম।

যুক্তরাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থা ন্যাশনাল হসপিটাল সার্ভিস, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় এনএইচএস। ১৯৫৯ সালে সংস্থাটির তত্ত্বাবধানে চালু হয় দাতব্য স্বাস্থ্য পরিষেবা ‘পেইন্টিং ইন হসপিটাল’। এর উদ্দেশ্য, মানসিকভাবে রোগীকে সুস্থ করে তুলতে প্রভাবিত করবে হাসপাতালগুলোর দেয়ালে সে রকম চিত্রকর্ম রাখা। এনএইচএসের গবেষণায় উঠে এসেছে, এই চর্চা ক্যানসার-আক্রান্ত রোগীদের শারীরিকভাবে সুস্থ করে তুলতে বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।

সম্প্রতি পেইন্টিং ইন হসপিটালের জন্য ৩ হাজার ৫০০ চিত্রকর্ম সংগ্রহ করা হয়। অ্যান্ডি ওয়ারহল, ম্যাগি হ্যাম্বলিং এবং ব্রিগেট রিলের মতো বরেণ্য চিত্রকরদের আঁকা ছবিও আছে সে সংগ্রহে। এ চিত্রকর্মগুলোকে একত্র করে ‘লিফিটিং দ্য ক্লাউড’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বইটিতে রোগী ও হাসপাতালের কর্মীদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা রয়েছে।

একজন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী তাঁর অভিজ্ঞতায় বলেছেন, ‘কেমো নিতে গিয়ে একটি রুমে অপেক্ষা করতে হতো। সেখানে একটি পেইন্টিংয়ের দিকে পুরোটা সময় তাকিয়ে থাকতাম। এটি আমাকে বাঁচার অনুপ্রেরণা জোগাত। সব সময় স্মরণ করিয়ে দিত ক্যানসারের পরে নতুন এক জীবনের কথা।’

লন্ডনের মানসিক হাসপাতালের এক রোগী তাঁর অভিজ্ঞতায় বলেছেন, ‘হাসপাতালের ওয়ার্ড যখন খুলে দিত, আমি লুকিয়ে ক্যাফেতে গিয়ে বসে থাকতাম। আর দেয়ালে টাঙানো পেইন্টিংগুলো দেখতাম। সেগুলো আমাকে এই চার দেয়াল থেকে বের হওয়ার জন্য উৎসাহ দিত। প্রবল ইচ্ছাশক্তি পেতাম সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার।’

মাদক নিরাময় কেন্দ্র কারডিফস লিভিং রুমের প্রধান নির্বাহী উইনফোর্ড এলিস ওয়েন বলেছেন, ‘জুন ফরস্টারের আঁকা উইন্টার ল্যান্ডস্কেপ ছবিটি রোগীদের থেরাপির ক্ষেত্রে বেশ কাজে দিল। পেইন্টিংয়ের

বিভিন্ন আকৃতি ও রঙের সঙ্গে মানুষ তার জীবনের সুখ-দুঃখকে মেলাতে পারছিল। এটি তাদের সুস্থ হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

পলিন ভিনসেন্টের আঁকা ছবি ‘অ্যানিমোন অ্যান্ড জগস’
পলিন ভিনসেন্টের আঁকা ছবি ‘অ্যানিমোন অ্যান্ড জগস’

যুক্তরাজ্যে শিল্পকর্মের জন্য জাতীয় দাতব্য সংস্থা আর্ট ফান্ড দুটি গবেষণা প্রকাশ করে। সেখানে পেইন্টিং কীভাবে মানুষের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এবং বিভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ করায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এ দুটি গবেষণার প্রথমটি করা হয় লন্ডনের কোর্টউল্ড গ্যালারিতে। সেখানে মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য দর্শনার্থীদের কানে হেডসেট দেওয়া হতো। এই নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, গ্যালারিতে রাখা ডাচ চিত্রকর ভ্যান গঘ ও ফরাসি চিত্রকর এদুয়ার মানের ল্যান্ডস্কেপ দর্শনার্থীদের আরামের অনুভূতি দেয়। অন্যদিকে এর বিপরীত অনুভূতি দেয় বিমূর্ত ছবিগুলো।

দ্বিতীয় গবেষণাটি হয় ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সঙ্গে জড়িত ৬ হাজার ৭০০ জনকে নিয়ে। অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল পঞ্চাশের ওপরে। তাঁদের নিয়ে একটি গ্যালারি পরিদর্শন করা হয়। এই গবেষণায় জানা যায়, রাগ ও হতাশা কমাতে পেইন্টিং অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

এস আলমের জামাতার পেটে ৩৭৪৫ কোটি টাকা

হেফাজতের সমাবেশে জুলাইয়ের নারীদের গালিগালাজের নিন্দা জানাই: রিফাত রশিদ

ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী নেই ১ শতাংশও

জামায়াতের ‘রোহিঙ্গা রাজ্যের প্রস্তাব’ প্রত্যাখ্যান করল মিয়ানমার সরকার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত