Ajker Patrika

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে

মো. ইকবাল হোসেন 
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১৯: ০৯
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে

‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’ ঈশ্বরী পাটনীর এই বাণী এখনো যেন সব মা-বাবার প্রার্থনা। দুধে ভিটামিন সি ছাড়া আমাদের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রায় সব উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে আছে। এতে সব ধরনের এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ, যেমন ক্যালসিয়াম, জিংক, কোবাল্ট, ফসফরাস আছে। দুধে পানির পরিমাণ ৮৬.৫ শতাংশ। এ ছাড়া এতে আছে শর্করা. প্রোটিন, চর্বি, আয়রন ইত্যাদি।

শিশুদের জন্য
শিশুর বয়স ১৮ মাস হলে তাকে গরুর দুধ খাওয়াতে পারবেন। তার আগে খাওয়াবেন না। কারণ গরুর দুধে সোডিয়ামসহ কিছু উপাদান একটু বেশি পরিমাণে থাকে, যেগুলো শিশুর কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

শিশুকে প্রথমবার গরুর দুধ খাওয়ানোর পর তাকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, দুধ খেয়ে তার পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা, শরীরে অ্যালার্জি, র‍্যাশ এগুলো হচ্ছে কি না। যদি হয় তাহলে দুধ খেতে না দিয়ে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

দুধ পানের উপকারিতা

  • দুধের ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতের ক্ষয়রোধ করে এবং সুরক্ষা দেয়।
  • ভিটামিন ও মিনারেল মানসিক চাপ কমিয়ে শারীরিক সক্ষমতা বাড়ায়। রাতে ঘুমানোর আগে একটু কুসুম গরম দুধ খেলে ভালো ঘুম হয়।
  • ঋতুকালীন ব্যথা, সারা দিনের কর্মক্লান্তি দূর করতে কুসুম গরম দুধ খুব উপকারী।
  • কম চর্বিযুক্ত দুধ রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • দুধের ৮৬ শতাংশই পানি বলে এটি শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে মুক্ত রাখে।
  • নিয়মিত দুধপানে শিশুদের মস্তিষ্ক ও পেশির গঠন ভালো হয়।
  • নিয়মিত দুধপানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • ত্বক ও চুলের যত্নে দুধ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত দুধ খেলে ত্বক নরম, কোমল ও মসৃণ হয়।
  • দুধের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম বলে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

দুধপানজনিত সমস্যা ও সমাধান

  • হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জটিলতা এড়াতে সর ছাড়া দুধ খেতে হবে।
  • যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, দুধ খেলে তাদের পেটব্যথাসহ পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে দুধের পরিবর্তে টক দই খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • ডায়াবেটিসের রোগীদের কম চর্বিযুক্ত দুধ খেতে হবে। নইলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
  • আইবিএস আক্রান্ত ব্যক্তিরা দুধ পান করলে পাতলা পায়খানাসহ পেটব্যথা হতে পারে। টক দই খেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাঁদের কম পরিমাণে সর ছাড়া দুধ খেতে হবে।

কাঁচা দুধ স্বাস্থ্যকর নয়
কাঁচা দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ আমাদের দেশের বেশির ভাগ দুধের খামারে দুধ দোহন পদ্ধতি শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সে ক্ষেত্রে দুধ দোহনের সময় কিছু অপদ্রব্য ও জীবাণু দুধের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। তাই কোনোভাবেই দুধ না ফুটিয়ে খাওয়া উচিত নয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

কখন দুধ খাবেন
যেকোনো সময় দুধ খাওয়া যায়। আমরা সাধারণত রাতের খাবারের পরে, ঘুমানোর আগে দুধ খেতে অভ্যস্ত। এটা ভালো অভ্যাস। তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা বিকেলে দুধ খাবেন। রাতে দুধ খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আপনি একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে, রাতের খাবারের পরিমাণ ঠিক রেখে রাতে দুধ খেতে পারেন। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্যও একই পরামর্শ থাকবে।

লেখক: সিনিয়র পুষ্টিবিদ, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আইসিডিডিআরবির গবেষণা: নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে প্রাণঘাতী ছত্রাক

  • হাসপাতালে সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যগত উদ্বেগ।
  • ৩৭৪টির মধ্যে ৩২ নবজাতকের শরীরে ক্যান্ডিডা অরিস ছত্রাক।
  • সিডিসি এই ছত্রাককে বড় হুমকি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ১৫
নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে সংক্রমণ এখন বিশ্বব্যাপী বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে সংক্রমণ এখন বিশ্বব্যাপী বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

দেশের হাসপাতালে নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ক্যান্ডিডা অরিস নামের একধরনের সম্ভাব্য প্রাণঘাতী ছত্রাক (ফাঙ্গাস) ছড়িয়ে পড়ছে বলে এক গবেষণায় জানা গেছে। ‘অরিস’ জাতের ছত্রাকটি একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় একে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা এবং পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে ঘটা সংক্রমণ (এইচএআই) এখন বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এসব সংক্রমণের জন্য দায়ী রোগজীবাণু বা পরজীবীর একটি হচ্ছে ক্যান্ডিডা অরিস নামের ছত্রাক। ‘ক্যান্ডিডা’ গণের আওতায় অরিসসহ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক রয়েছে। সাম্প্রতিককালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ছত্রাক সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে ক্যান্ডিডা অরিস।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যান্ডিডা অরিস দেশের নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। আইসিডিডিআরবি এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) যৌথ উদ্যোগে চালানো হয়েছে গবেষণাটি। এতে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় অরিস ছত্রাককে সিডিসিই ২০১৯ সালে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।

২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি থাকা ৩৭৪টি নবজাতকের ওপর ওপরের গবেষণাটি পরিচালিত হয়। দেখা যায়, ৩২টি (৯ শতাংশ) নবজাতক ত্বকে ক্যান্ডিডা অরিস বহন করছিল। একজনের রক্তেও সংক্রমণ প্রবেশ করে। এদের মধ্যে ১৪টি নবজাতক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময়ই ছত্রাকে আক্রান্ত ছিল। আর ১৮টি নবজাতক সংক্রমিত হয় ভর্তি হওয়ার পর। আক্রান্ত ৩২টি নবজাতকের মধ্যে রক্তে সংক্রমিতসহ ৭টি নবজাতকের মৃত্যু ঘটে। গবেষকেরা বলছেন, এই ফল ইঙ্গিত দেয়, এনআইসিইউর ভেতরেই প্রায়শ ছত্রাকটির সংক্রমণ ঘটছে।

আইসিডিডিআরবির আরেকটি সাম্প্রতিক গবেষণায়ও দেখা গেছে, এর আওতায় পর্যবেক্ষণ করা রোগীদের কেউই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে স্থানীয়ভাবে ক্যান্ডিডা অরিসে আক্রান্ত হয়নি।

নতুন গবেষণায় সংগৃহীত ছত্রাকের নমুনার ৮২ শতাংশই ফ্লুকোনাজোল নামের একটি ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এই ছত্রাকের চিকিৎসায় ওষুধটির কার্যকারিতা বিভিন্ন মাত্রায় কমে যেতে পারে। অথচ ক্যান্ডিডা অরিসের বিরুদ্ধে ফ্লুকোনাজোল প্রথম সারির ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমআরএসের মতো ‘সুপারবাগ’ (অতি প্রাণঘাতী জীবাণু) কোনো ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠার অর্থ দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধটি কার্যত পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়া। আর ক্যান্ডিডা অরিসকে আইসিডিডিআরবির বিশেষজ্ঞ ফাহমিদা চৌধুরী ‘সুপারবাগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমিত নবজাতকদের ৮১ শতাংশেরই জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। গবেষকদের মতে, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে ডেলিভারির পর নবজাতক তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে অবস্থান করায় এই ছত্রাকের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আইসিডিডিআরবি থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যান্ডিডা অরিস এমন এক ধরনের ছত্রাক, যা মানুষের ত্বকে কোনো লক্ষণ ছাড়াই অবস্থান করতে এবং দীর্ঘ সময় টিকে থাকতে পারে। প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অবস্থান সংক্রমণে রূপ নেয়; বিশেষ করে যখন এটি রক্তের মতো জীবাণুমুক্ত অংশে প্রবেশ করে এবং রোগটিকে অত্যন্ত প্রাণঘাতী করে তোলে।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশে ক্যান্ডিডা অরিসজনিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশ। দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, গুরুতর অসুস্থ রোগী এবং অপরিণত নবজাতকেরা এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।

আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ও সংক্রামক রোগ বিভাগের এএমআর গবেষণা শাখার প্রধান ফাহমিদা চৌধুরী বলেন, ‘এই গবেষণা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ বাচ্চাদের মধ্যে সুপারবাগ সংক্রমণের গুরুতর প্রমাণ দিয়েছে। প্রশাসনিক ও নীতিগতভাবে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার গবেষণাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রথম ধাপ।’

সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা সুপারিশ হিসেবে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার্য সামগ্রী ক্লোরিনভিত্তিক জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার অভ্যাস উন্নত করার তাগিদ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এনআইসিইউতে ক্যান্ডিডা অরিস সংক্রমণের ওপর ধারাবাহিকভাবে নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। এতে আক্রান্ত নবজাতকদের দ্রুত শনাক্ত এবং আলাদা করে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রশিক্ষণ আয়োজন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: সংগৃহীত

‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ সম্পন্ন করলেন ১৫ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে অংশগ্রহণকারী দলে আরও ছিলেন ৩ জন সহকারী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষকেরা এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সন্তানদের মায়েরা।

৭ নভেম্বর মিরপুরের ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেডের (বিএমআইএস) প্রশিক্ষণকক্ষে শুরু হওয়া এই প্রশিক্ষণ শেষ হয় ৯ নভেম্বর। এর আয়োজন করে প্যা‌লি‌য়ে‌টিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলা‌দেশ (পিসিএসবি) এর অঙ্গসংগঠন ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-বাংলাদেশ (আইপিসিবি)। পিসিএসবি-এর সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়ার পরিকল্পনায় আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে রিয়েল ভিউর প্রধান ব্যক্তিত্ব ফাহিমা খাতুন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করে রিয়েল ভিউ নামের এই সংগঠনটি।

প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইপিসিবির সদস্যসচিব অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া, পিসিএসবির কোষাধ্যক্ষ সালাহউদ্দীন আহমাদ, ডা. নূরজাহান বেগম, ডা. তাসনিম জেরিন, ডা. সীমা রানী সরকার, ডা. নাদিয়া ফারহীন, লেখক আসিফ নবী, খালিদ আরাফাত অব্যয়, ফারজানা মালা, শাহাদৎ রুমন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ডা. সানজিদা শাহরিয়া বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ মানবিক স্বাস্থ্যসেবায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারে যুক্ত করা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শিরোনামের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কয়কেজন। ছবি: সংগৃহীত
‘টোয়েন্টি আওয়ার ট্রেইনিং ফর কেয়ারার’ শিরোনামের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষদের কয়কেজন। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের অধ্যক্ষ গ্লোরিয়া চন্দ্রানী বাড়ৈ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন মানবিক প্রশিক্ষণের অংশ হতে পেরে গৌরব অনুভব করছি। এই উদ্যোগ শুধু অংশগ্রহণকারীদের নয়, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অনুপ্রেরণা, সহমর্মিতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৭ সালে রেভা. ভেরনিকা এন ক্যাম্পবেল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এই ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশের প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবাসিক সুবিধাও দেয়। এখান থেকে প্রথম ব্রেইল বইয়ের প্রচলন শুরু হয় বাংলাদেশে।’

ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়েটিভ কেয়ার-বাংলাদেশের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সত্যিই আজ আমি অভিভূত। বিশ্বে যেখানে কেউ এই বিশেষ সীমাবদ্ধ মানুষদের নিয়ে ভাবেনি, সেখানে আমরা এই বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ মানুষদের নিয়ে একটি বিশেষায়িত সেবার প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। এই সাফল্যের মূল কৃতিত্ব অবশ্যই প্রশিক্ষণার্থীদের। তাঁদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আশা করি, বাংলাদেশের এই ধারণা ভবিষ্যতে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিস্তার লাভ করবে।’

অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপ্টিস্ট মিশন ইন্টিগ্রেটেড স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৯৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় শিশুসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৯৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ রোববার (৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৫, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৭৮, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২২০, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১১৫, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৪, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৯, রাজশাহী বিভাগে ১১৩ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) নয়জন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ১০৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৭৪ হাজার ৮৯৩ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৪৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মারা যাওয়াদের মধ্যে ৫ বছরের ছেলে শিশু রয়েছে। এ ছাড়া তিনজন নারী ও বাকি দুজন পুরুষ। তাদের বয়স যথাক্রমে ৬৫, ৩২, ৭০, ৪৮ ও ৪০ বছর।

চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯, সেপ্টেম্বরে ৭৬ ও অক্টোবরে ৮০ জন মারা গেছে। মার্চে কারও মৃত্যু হয়নি। আর নভেম্বরে এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

মো. ইকবাল হোসেন
যেসব তথ্যে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না

ডায়াবেটিস রোগের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে ডায়েট বা খাবার ব্যবস্থাপনা। এটি একটি লাইফস্টাইল ডিজিজ। তাই এই রোগ হলে লাইফস্টাইলে নানা পরিবর্তন আনতে হয় সুস্থ থাকতে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবস্থাপনা এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে পারলে সুস্থ থাকা যায় ডায়াবেটিস থেকে।

ডায়াবেটিস ভালো হয় না—বিষয়টি রোগীদের বেশি চিন্তিত করে তোলে। এই দুশ্চিন্তা থেকে রোগীরা অনেক সময় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারেন না। সেই সঙ্গে রোগীরা খাওয়া নিয়েও অনেক ভুল ধারণা পোষণ করেন।

কিটো ডায়েটে ডায়াবেটিস ভালো হয়

কথাটি বহুল প্রচলিত। বেশির ভাগ ডায়াবেটিস রোগী কিটো ডায়েটে অভ্যস্ত হতে চেষ্টা করেন; কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর পেরে ওঠেন না। কিটো ডায়েটে রক্তের সুগার বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু একটা লম্বা সময় কিটো ডায়েট করলে আমাদের শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। ফলে শরীরের অন্য অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কিটো ডায়েটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। তাই এসব বিষয়ে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর সচেতন থাকতে হবে।

কিটো ডায়েটে ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তার মানে এই নয় যে আপনার ডায়াবেটিস সেরে যাবে। আপনি যখন কিটো ডায়েট ছেড়ে আবার স্বাভাবিক ডায়েটে আসবেন, তখন আপনার রক্তের সুগার আবারও বেড়ে যাবে।

মিষ্টিজাতীয় খাবার খেলে ডায়াবেটিস হয়

এই তথ্যও একেবারে সঠিক নয়। আপনার ডায়াবেটিস যদি হয়, তাহলে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। ডায়াবেটিস না থাকলে খাওয়া যেতে পারে মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিমিতভাবে। তবে অতিরিক্ত যদি খান, তাহলে অন্যান্য শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তি মিষ্টিজাতীয় তৈরি খাবার প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম খেতে পারেন।

ডাল ও বীজজাতীয় খাবার নয়

অনেকে বলে থাকেন, ডায়াবেটিস রোগীদের ডাল ও বিভিন্ন বীজজাতীয় খাবার নিষেধ। এটিও ভুল তথ্য। ডাল এবং বীজজাতীয় খাবার অবশ্যই পরিমিত খাওয়া যাবে। শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত যেকোনো খাবার ক্ষতিকর। তবে ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনির সমস্যা থাকলে ডাল ও বীজজাতীয় খাবার বন্ধ থাকবে।

মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতে হয়

বহুল প্রচলিত বাণী এটি। মাঝেমধ্যে মিষ্টি না খেলে ডায়াবেটিস নীল হয়ে যায়—এটা ভুল তথ্য। এতে ডায়াবেটিস বেড়ে রোগীর ক্ষতি হতে পারে। তবে রক্তের সুগার (হাইপোগ্লাইসিমিয়া) স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে কিছুটা মিষ্টিজাতীয় খাবার খেতে হয়। তবে রুটিনমাফিক খাবার খেলে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেলে রক্তের সুগার কমে যাওয়ার শঙ্কা খুব কম।

হাইপোগ্লাইসিমিয়া হলে, তখন ৩ চা-চামচ চিনি অথবা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে।

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে শিশু বুকের দুধ খেতে পারবে না

মায়ের ডায়াবেটিস থাকলেও তিনি শিশুকে নিশ্চিন্তে বুকের দুধ পান করাতে পারেন। বরং বুকের দুধ পান না করালেই শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে। তার সঠিক বৃদ্ধি হবে না। জন্মের প্রথম ৬ মাস শিশুর সব পুষ্টির চাহিদা শুধু মায়ের বুকের দুধ থেকে পূরণ হয়। অন্য কোনো উপায়ে তা পূরণ করা সম্ভব নয়।

ভুল ধারণা

ডায়াবেটিস সেরে যায়

ডায়াবেটিস রোগ কখনো সেরে যায় না। এই রোগীদের এ ধরনের দুর্বলতার সুযোগ অনেক অসাধু ব্যক্তি নিয়ে থাকে। ‘ডায়াবেটিস ভালো হয়’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায় বিভিন্ন জায়গায়। এতে রোগীরা আকৃষ্ট হন। সেসব জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার পর ডায়াবেটিস তো ভালো হয়ই না; উল্টো রোগীদের ডায়াবেটিসের অন্যান্য জটিলতা আও বেড়ে যায়।

অনেকে বলেন, হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি চিকিৎসায় ডায়াবেটিস ভালো হয়। এগুলোও ভুল তথ্য। ডায়াবেটিস ভালো করার কোনো ফর্মুলা যদি আবিষ্কৃত হয়, তাহলে সে খবর সবার আগে দেশের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও ডায়াবেটিস হাসপাতালগুলো জানবে। তাই এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে নিজের স্বাস্থ্য আর কষ্টার্জিত অর্থ নষ্ট করবেন না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপনার চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত