মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা। আর তা হলো আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে গিয়ে মৃত্যু।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি ‘প্রিভেলেন্স অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস ফর মর্টালিটি অ্যান্ড মোরবিডিটি ইন রিলেশন টু ন্যাশনাল হেলথ ইনজুরি সার্ভে অব বাংলাদেশ ২০২২-২৩’ শিরোনামে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গবেষণায় যেসব অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা উঠে এসেছে, তা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকলেও এসব সমস্যা রোধে প্রয়োজনীয় মনোযোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে এসব সমস্যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ যেমন সৃষ্টি করছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যয়। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক মানুষ চিরতরে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন এসব কারণে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সে হিসাবে দৈনিক ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ আঘাত পান। মারাত্মক আঘাতে বছরে প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা যান। অর্থাৎ দৈনিক মারা যান গড়ে ২৬৮ জন। একইভাবে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি এবং দৈনিক ৩৮০ জন আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন।
মারাত্মক আঘাতে প্রাণ হারানোদের মধ্যে প্রতিবছর সাড়ে ২০ হাজারই আত্মহত্যার কারণে মারা যান, যার দৈনিক গড় ৫৬ জন। এ ছাড়া পানিতে ডুবে মারা যান বছরে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ, দৈনিক গড়ে ৫০ জন। গাছ বা অন্যান্য উঁচু স্থান থেকে পড়ে বছরে সোয়া ১৪ হাজার এবং দিনে গড়ে ৩৯ জন মানুষ মারা যান। এ ছাড়া যন্ত্রপাতির আঘাত, ধারালো বস্তুতে কেটে যাওয়া, দুর্ঘটনার কারণে শ্বাসরোধ, দগ্ধ হওয়া, ভোঁতা বস্তুর আঘাত, প্রাণী বা কীটপতঙ্গের কামড়, সহিংসতা, বিদ্যুতায়িত হওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার কারণেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এই ১২ ধরনের আঘাতের কারণে দেশে প্রতিবছর মোট ৯৮ হাজার ৪২২ জন মানুষ মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিআইপিআরবির গবেষণায় উঠে আসা যে বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করার মতো তা হলো, আঘাতের কারণে দৈনিক মোট মৃত্যুর ৫৪ শতাংশেরই কারণ আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া। এই তিন কারণে সৃষ্ট আঘাতে দিনে গড়ে ১৪৫ জন মানুষ মারা যান। এসব বিষয়কে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে যাওয়া—এই তিনটি স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। তবে গবেষণা, নীতি ও অর্থায়নে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় এগুলোকে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এ ছাড়া থেলাসেমিয়া, কুষ্ঠরোগ, সাপের দংশনসহ বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগকেও এভাবে বিবেচনা করা হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে এবং পানিতে ডুবে মৃত্যু, আত্মহত্যা ইত্যাদির মতো সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে। এসব সমস্যায় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এখনো সীমিত। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ চলছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতাও নেওয়া হয়েছে।’
ডব্লিউএইচওর ২০১০, ২০২১ ও ২০২৩ সালের তিনটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সমস্যা এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। সংস্থাটির ভাষায়, অবহেলাজনিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হলো এমন সমস্যা, যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। কিন্তু বৈশ্বিক ও জাতীয় নীতি, গবেষণা, অর্থায়ন কিংবা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে তা যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। অনেক সময় এসব সমস্যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য আলোচনায়ও স্থান পায় না। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী সাধারণত দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির হওয়ায় তাদের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শোনা যায় না। তা ছাড়া সামাজিক কলঙ্ক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আত্মহত্যায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সোয়া ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এটি ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। তবে সামাজিক কলঙ্ক, আইনি জটিলতার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও নীতি-উদ্যোগ সীমিত থেকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতিবছর এ কারণে মারা যান ৩ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণও এটি। সাঁতার শেখানো কিংবা পানিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মতো কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নীতি পর্যায়ে এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। একইভাবে উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া বা ফ্যালস বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অনিচ্ছাকৃত আঘাতই মৃত্যুর কারণ। প্রতিবছর ৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ এ ধরনের আঘাতে প্রাণ হারান। বিশেষত বয়স্কদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি হলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও বিনিয়োগ এখনো সীমিত।
আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বড়সংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষাধিক মানুষ আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়াটা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, ‘অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে দেশে কাজ কম। এ বিষয়ে রেফারেন্স বা প্রমাণও সীমিত। ফলে সরকারের মনোযোগও কম। দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন খরচসাপেক্ষ এবং ফলও দ্রুত পাওয়া যায় না, তাই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মূলত চিকিৎসাকেন্দ্রিক। যাঁরা আঘাতপ্রাপ্ত বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ। ফলে তাঁদের সমস্যাকে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয় না।’
সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, আঘাতজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কমলেও, আত্মহত্যা বেড়েছে। এসব সমস্যা ‘অবহেলিত’ হিসেবে ধরা হয়, কারণ এ বিষয়ে যথেষ্ট আলোচনা বা কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, ‘সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে অন্য ক্ষেত্রগুলোতে তা হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রধানত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এসব আঘাত এবং মৃত্যু প্রায় অদৃশ্য বা ‘ইনভিজিবল ইনজুরি অ্যান্ড ডেথ’ হিসেবে রয়ে যাচ্ছে।’
ওই গবেষণাটিতে বহুধাপী ক্লাস্টার নমুনা গ্রহণ পদ্ধতি (মাল্টিস্টেজ ক্লাস্টার স্যাম্পলিং) ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামীণ ও শহরভিত্তিক স্তরীকরণ করা হয় এবং দেশের সব ৬৪ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জরিপে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক সদ্য উন্নত প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) ব্যবহার করা হয়েছে। এতে মোট ৪ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষের (প্রায় সোয়া এক লাখ পরিবার) তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ মানুষ ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় ১৫ শতাংশ, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ শতাংশ, জেলা হাসপাতালে ৯ শতাংশ, চিকিৎসকের চেম্বারে ৬ শতাংশ, বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে যায় মাত্র ১ শতাংশ।
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেকট) অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং উঁচু থেকে পড়ে যাওয়া নেগলেকটেড পাবলিক হেলথ ইস্যু, কারণ এগুলো সাধারণ মৃত্যুর তুলনায় ব্যতিক্রম এবং যথেষ্ট আলোচনায় আসে না। তথ্যও সঠিকভাবে রিপোর্ট হয় না। গবেষণার ফলে আমরা জানতে পেরেছি কত মানুষ আহত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা মারা যান। এখন এই গবেষণার ফল ব্যবহার করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা। আর তা হলো আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে গিয়ে মৃত্যু।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি ‘প্রিভেলেন্স অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস ফর মর্টালিটি অ্যান্ড মোরবিডিটি ইন রিলেশন টু ন্যাশনাল হেলথ ইনজুরি সার্ভে অব বাংলাদেশ ২০২২-২৩’ শিরোনামে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গবেষণায় যেসব অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা উঠে এসেছে, তা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকলেও এসব সমস্যা রোধে প্রয়োজনীয় মনোযোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে এসব সমস্যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ যেমন সৃষ্টি করছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যয়। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক মানুষ চিরতরে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন এসব কারণে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সে হিসাবে দৈনিক ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ আঘাত পান। মারাত্মক আঘাতে বছরে প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা যান। অর্থাৎ দৈনিক মারা যান গড়ে ২৬৮ জন। একইভাবে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি এবং দৈনিক ৩৮০ জন আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন।
মারাত্মক আঘাতে প্রাণ হারানোদের মধ্যে প্রতিবছর সাড়ে ২০ হাজারই আত্মহত্যার কারণে মারা যান, যার দৈনিক গড় ৫৬ জন। এ ছাড়া পানিতে ডুবে মারা যান বছরে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ, দৈনিক গড়ে ৫০ জন। গাছ বা অন্যান্য উঁচু স্থান থেকে পড়ে বছরে সোয়া ১৪ হাজার এবং দিনে গড়ে ৩৯ জন মানুষ মারা যান। এ ছাড়া যন্ত্রপাতির আঘাত, ধারালো বস্তুতে কেটে যাওয়া, দুর্ঘটনার কারণে শ্বাসরোধ, দগ্ধ হওয়া, ভোঁতা বস্তুর আঘাত, প্রাণী বা কীটপতঙ্গের কামড়, সহিংসতা, বিদ্যুতায়িত হওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার কারণেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এই ১২ ধরনের আঘাতের কারণে দেশে প্রতিবছর মোট ৯৮ হাজার ৪২২ জন মানুষ মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিআইপিআরবির গবেষণায় উঠে আসা যে বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করার মতো তা হলো, আঘাতের কারণে দৈনিক মোট মৃত্যুর ৫৪ শতাংশেরই কারণ আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া। এই তিন কারণে সৃষ্ট আঘাতে দিনে গড়ে ১৪৫ জন মানুষ মারা যান। এসব বিষয়কে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে যাওয়া—এই তিনটি স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। তবে গবেষণা, নীতি ও অর্থায়নে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় এগুলোকে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এ ছাড়া থেলাসেমিয়া, কুষ্ঠরোগ, সাপের দংশনসহ বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগকেও এভাবে বিবেচনা করা হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে এবং পানিতে ডুবে মৃত্যু, আত্মহত্যা ইত্যাদির মতো সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে। এসব সমস্যায় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এখনো সীমিত। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ চলছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতাও নেওয়া হয়েছে।’
ডব্লিউএইচওর ২০১০, ২০২১ ও ২০২৩ সালের তিনটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সমস্যা এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। সংস্থাটির ভাষায়, অবহেলাজনিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হলো এমন সমস্যা, যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। কিন্তু বৈশ্বিক ও জাতীয় নীতি, গবেষণা, অর্থায়ন কিংবা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে তা যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। অনেক সময় এসব সমস্যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য আলোচনায়ও স্থান পায় না। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী সাধারণত দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির হওয়ায় তাদের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শোনা যায় না। তা ছাড়া সামাজিক কলঙ্ক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আত্মহত্যায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সোয়া ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এটি ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। তবে সামাজিক কলঙ্ক, আইনি জটিলতার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও নীতি-উদ্যোগ সীমিত থেকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতিবছর এ কারণে মারা যান ৩ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণও এটি। সাঁতার শেখানো কিংবা পানিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মতো কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নীতি পর্যায়ে এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। একইভাবে উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া বা ফ্যালস বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অনিচ্ছাকৃত আঘাতই মৃত্যুর কারণ। প্রতিবছর ৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ এ ধরনের আঘাতে প্রাণ হারান। বিশেষত বয়স্কদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি হলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও বিনিয়োগ এখনো সীমিত।
আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বড়সংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষাধিক মানুষ আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়াটা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, ‘অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে দেশে কাজ কম। এ বিষয়ে রেফারেন্স বা প্রমাণও সীমিত। ফলে সরকারের মনোযোগও কম। দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন খরচসাপেক্ষ এবং ফলও দ্রুত পাওয়া যায় না, তাই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মূলত চিকিৎসাকেন্দ্রিক। যাঁরা আঘাতপ্রাপ্ত বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ। ফলে তাঁদের সমস্যাকে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয় না।’
সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, আঘাতজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কমলেও, আত্মহত্যা বেড়েছে। এসব সমস্যা ‘অবহেলিত’ হিসেবে ধরা হয়, কারণ এ বিষয়ে যথেষ্ট আলোচনা বা কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, ‘সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে অন্য ক্ষেত্রগুলোতে তা হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রধানত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এসব আঘাত এবং মৃত্যু প্রায় অদৃশ্য বা ‘ইনভিজিবল ইনজুরি অ্যান্ড ডেথ’ হিসেবে রয়ে যাচ্ছে।’
ওই গবেষণাটিতে বহুধাপী ক্লাস্টার নমুনা গ্রহণ পদ্ধতি (মাল্টিস্টেজ ক্লাস্টার স্যাম্পলিং) ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামীণ ও শহরভিত্তিক স্তরীকরণ করা হয় এবং দেশের সব ৬৪ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জরিপে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক সদ্য উন্নত প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) ব্যবহার করা হয়েছে। এতে মোট ৪ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষের (প্রায় সোয়া এক লাখ পরিবার) তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ মানুষ ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় ১৫ শতাংশ, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ শতাংশ, জেলা হাসপাতালে ৯ শতাংশ, চিকিৎসকের চেম্বারে ৬ শতাংশ, বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে যায় মাত্র ১ শতাংশ।
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেকট) অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং উঁচু থেকে পড়ে যাওয়া নেগলেকটেড পাবলিক হেলথ ইস্যু, কারণ এগুলো সাধারণ মৃত্যুর তুলনায় ব্যতিক্রম এবং যথেষ্ট আলোচনায় আসে না। তথ্যও সঠিকভাবে রিপোর্ট হয় না। গবেষণার ফলে আমরা জানতে পেরেছি কত মানুষ আহত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা মারা যান। এখন এই গবেষণার ফল ব্যবহার করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা। আর তা হলো আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে গিয়ে মৃত্যু।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি ‘প্রিভেলেন্স অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস ফর মর্টালিটি অ্যান্ড মোরবিডিটি ইন রিলেশন টু ন্যাশনাল হেলথ ইনজুরি সার্ভে অব বাংলাদেশ ২০২২-২৩’ শিরোনামে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গবেষণায় যেসব অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা উঠে এসেছে, তা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকলেও এসব সমস্যা রোধে প্রয়োজনীয় মনোযোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে এসব সমস্যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ যেমন সৃষ্টি করছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যয়। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক মানুষ চিরতরে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন এসব কারণে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সে হিসাবে দৈনিক ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ আঘাত পান। মারাত্মক আঘাতে বছরে প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা যান। অর্থাৎ দৈনিক মারা যান গড়ে ২৬৮ জন। একইভাবে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি এবং দৈনিক ৩৮০ জন আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন।
মারাত্মক আঘাতে প্রাণ হারানোদের মধ্যে প্রতিবছর সাড়ে ২০ হাজারই আত্মহত্যার কারণে মারা যান, যার দৈনিক গড় ৫৬ জন। এ ছাড়া পানিতে ডুবে মারা যান বছরে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ, দৈনিক গড়ে ৫০ জন। গাছ বা অন্যান্য উঁচু স্থান থেকে পড়ে বছরে সোয়া ১৪ হাজার এবং দিনে গড়ে ৩৯ জন মানুষ মারা যান। এ ছাড়া যন্ত্রপাতির আঘাত, ধারালো বস্তুতে কেটে যাওয়া, দুর্ঘটনার কারণে শ্বাসরোধ, দগ্ধ হওয়া, ভোঁতা বস্তুর আঘাত, প্রাণী বা কীটপতঙ্গের কামড়, সহিংসতা, বিদ্যুতায়িত হওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার কারণেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এই ১২ ধরনের আঘাতের কারণে দেশে প্রতিবছর মোট ৯৮ হাজার ৪২২ জন মানুষ মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিআইপিআরবির গবেষণায় উঠে আসা যে বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করার মতো তা হলো, আঘাতের কারণে দৈনিক মোট মৃত্যুর ৫৪ শতাংশেরই কারণ আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া। এই তিন কারণে সৃষ্ট আঘাতে দিনে গড়ে ১৪৫ জন মানুষ মারা যান। এসব বিষয়কে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে যাওয়া—এই তিনটি স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। তবে গবেষণা, নীতি ও অর্থায়নে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় এগুলোকে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এ ছাড়া থেলাসেমিয়া, কুষ্ঠরোগ, সাপের দংশনসহ বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগকেও এভাবে বিবেচনা করা হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে এবং পানিতে ডুবে মৃত্যু, আত্মহত্যা ইত্যাদির মতো সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে। এসব সমস্যায় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এখনো সীমিত। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ চলছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতাও নেওয়া হয়েছে।’
ডব্লিউএইচওর ২০১০, ২০২১ ও ২০২৩ সালের তিনটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সমস্যা এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। সংস্থাটির ভাষায়, অবহেলাজনিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হলো এমন সমস্যা, যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। কিন্তু বৈশ্বিক ও জাতীয় নীতি, গবেষণা, অর্থায়ন কিংবা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে তা যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। অনেক সময় এসব সমস্যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য আলোচনায়ও স্থান পায় না। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী সাধারণত দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির হওয়ায় তাদের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শোনা যায় না। তা ছাড়া সামাজিক কলঙ্ক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আত্মহত্যায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সোয়া ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এটি ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। তবে সামাজিক কলঙ্ক, আইনি জটিলতার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও নীতি-উদ্যোগ সীমিত থেকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতিবছর এ কারণে মারা যান ৩ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণও এটি। সাঁতার শেখানো কিংবা পানিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মতো কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নীতি পর্যায়ে এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। একইভাবে উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া বা ফ্যালস বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অনিচ্ছাকৃত আঘাতই মৃত্যুর কারণ। প্রতিবছর ৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ এ ধরনের আঘাতে প্রাণ হারান। বিশেষত বয়স্কদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি হলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও বিনিয়োগ এখনো সীমিত।
আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বড়সংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষাধিক মানুষ আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়াটা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, ‘অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে দেশে কাজ কম। এ বিষয়ে রেফারেন্স বা প্রমাণও সীমিত। ফলে সরকারের মনোযোগও কম। দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন খরচসাপেক্ষ এবং ফলও দ্রুত পাওয়া যায় না, তাই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মূলত চিকিৎসাকেন্দ্রিক। যাঁরা আঘাতপ্রাপ্ত বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ। ফলে তাঁদের সমস্যাকে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয় না।’
সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, আঘাতজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কমলেও, আত্মহত্যা বেড়েছে। এসব সমস্যা ‘অবহেলিত’ হিসেবে ধরা হয়, কারণ এ বিষয়ে যথেষ্ট আলোচনা বা কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, ‘সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে অন্য ক্ষেত্রগুলোতে তা হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রধানত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এসব আঘাত এবং মৃত্যু প্রায় অদৃশ্য বা ‘ইনভিজিবল ইনজুরি অ্যান্ড ডেথ’ হিসেবে রয়ে যাচ্ছে।’
ওই গবেষণাটিতে বহুধাপী ক্লাস্টার নমুনা গ্রহণ পদ্ধতি (মাল্টিস্টেজ ক্লাস্টার স্যাম্পলিং) ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামীণ ও শহরভিত্তিক স্তরীকরণ করা হয় এবং দেশের সব ৬৪ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জরিপে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক সদ্য উন্নত প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) ব্যবহার করা হয়েছে। এতে মোট ৪ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষের (প্রায় সোয়া এক লাখ পরিবার) তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ মানুষ ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় ১৫ শতাংশ, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ শতাংশ, জেলা হাসপাতালে ৯ শতাংশ, চিকিৎসকের চেম্বারে ৬ শতাংশ, বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে যায় মাত্র ১ শতাংশ।
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেকট) অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং উঁচু থেকে পড়ে যাওয়া নেগলেকটেড পাবলিক হেলথ ইস্যু, কারণ এগুলো সাধারণ মৃত্যুর তুলনায় ব্যতিক্রম এবং যথেষ্ট আলোচনায় আসে না। তথ্যও সঠিকভাবে রিপোর্ট হয় না। গবেষণার ফলে আমরা জানতে পেরেছি কত মানুষ আহত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা মারা যান। এখন এই গবেষণার ফল ব্যবহার করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা। আর তা হলো আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে গিয়ে মৃত্যু।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি ‘প্রিভেলেন্স অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস ফর মর্টালিটি অ্যান্ড মোরবিডিটি ইন রিলেশন টু ন্যাশনাল হেলথ ইনজুরি সার্ভে অব বাংলাদেশ ২০২২-২৩’ শিরোনামে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গবেষণায় যেসব অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা উঠে এসেছে, তা সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকলেও এসব সমস্যা রোধে প্রয়োজনীয় মনোযোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে এসব সমস্যা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ যেমন সৃষ্টি করছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যয়। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক মানুষ চিরতরে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন এসব কারণে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। সে হিসাবে দৈনিক ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ আঘাত পান। মারাত্মক আঘাতে বছরে প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা যান। অর্থাৎ দৈনিক মারা যান গড়ে ২৬৮ জন। একইভাবে প্রতিবছর ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি এবং দৈনিক ৩৮০ জন আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন।
মারাত্মক আঘাতে প্রাণ হারানোদের মধ্যে প্রতিবছর সাড়ে ২০ হাজারই আত্মহত্যার কারণে মারা যান, যার দৈনিক গড় ৫৬ জন। এ ছাড়া পানিতে ডুবে মারা যান বছরে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ, দৈনিক গড়ে ৫০ জন। গাছ বা অন্যান্য উঁচু স্থান থেকে পড়ে বছরে সোয়া ১৪ হাজার এবং দিনে গড়ে ৩৯ জন মানুষ মারা যান। এ ছাড়া যন্ত্রপাতির আঘাত, ধারালো বস্তুতে কেটে যাওয়া, দুর্ঘটনার কারণে শ্বাসরোধ, দগ্ধ হওয়া, ভোঁতা বস্তুর আঘাত, প্রাণী বা কীটপতঙ্গের কামড়, সহিংসতা, বিদ্যুতায়িত হওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার কারণেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে এই ১২ ধরনের আঘাতের কারণে দেশে প্রতিবছর মোট ৯৮ হাজার ৪২২ জন মানুষ মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিআইপিআরবির গবেষণায় উঠে আসা যে বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ করার মতো তা হলো, আঘাতের কারণে দৈনিক মোট মৃত্যুর ৫৪ শতাংশেরই কারণ আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে যাওয়া এবং উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া। এই তিন কারণে সৃষ্ট আঘাতে দিনে গড়ে ১৪৫ জন মানুষ মারা যান। এসব বিষয়কে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং পড়ে যাওয়া—এই তিনটি স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। তবে গবেষণা, নীতি ও অর্থায়নে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ায় এগুলোকে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। এ ছাড়া থেলাসেমিয়া, কুষ্ঠরোগ, সাপের দংশনসহ বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগকেও এভাবে বিবেচনা করা হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ ও অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সরকার ইতিমধ্যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিয়েছে এবং পানিতে ডুবে মৃত্যু, আত্মহত্যা ইত্যাদির মতো সমস্যাগুলো চিহ্নিত করছে। এসব সমস্যায় প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম এখনো সীমিত। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ চলছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতাও নেওয়া হয়েছে।’
ডব্লিউএইচওর ২০১০, ২০২১ ও ২০২৩ সালের তিনটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সমস্যা এখনো অবহেলিত রয়ে গেছে। সংস্থাটির ভাষায়, অবহেলাজনিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা হলো এমন সমস্যা, যা মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। কিন্তু বৈশ্বিক ও জাতীয় নীতি, গবেষণা, অর্থায়ন কিংবা প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপে তা যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। অনেক সময় এসব সমস্যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য আলোচনায়ও স্থান পায় না। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী সাধারণত দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির হওয়ায় তাদের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শোনা যায় না। তা ছাড়া সামাজিক কলঙ্ক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এগুলো প্রায়ই উপেক্ষিত থেকে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, আত্মহত্যায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর সোয়া ৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। এটি ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর একটি। তবে সামাজিক কলঙ্ক, আইনি জটিলতার কারণে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও নীতি-উদ্যোগ সীমিত থেকে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, পানিতে ডুবে মৃত্যু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। প্রতিবছর এ কারণে মারা যান ৩ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণও এটি। সাঁতার শেখানো কিংবা পানিতে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মতো কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও নীতি পর্যায়ে এ বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। একইভাবে উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া বা ফ্যালস বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান অনিচ্ছাকৃত আঘাতই মৃত্যুর কারণ। প্রতিবছর ৬ লাখ ৮৪ হাজার মানুষ এ ধরনের আঘাতে প্রাণ হারান। বিশেষত বয়স্কদের জন্য এটি বড় ঝুঁকি হলেও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও বিনিয়োগ এখনো সীমিত।
আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বড়সংখ্যক মানুষের মৃত্যু এবং লক্ষাধিক মানুষ আজীবনের জন্য পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়াটা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল বলেন, ‘অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলো নিয়ে দেশে কাজ কম। এ বিষয়ে রেফারেন্স বা প্রমাণও সীমিত। ফলে সরকারের মনোযোগও কম। দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন খরচসাপেক্ষ এবং ফলও দ্রুত পাওয়া যায় না, তাই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা মূলত চিকিৎসাকেন্দ্রিক। যাঁরা আঘাতপ্রাপ্ত বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ। ফলে তাঁদের সমস্যাকে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয় না।’
সিআইপিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন, আঘাতজনিত স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কমলেও, আত্মহত্যা বেড়েছে। এসব সমস্যা ‘অবহেলিত’ হিসেবে ধরা হয়, কারণ এ বিষয়ে যথেষ্ট আলোচনা বা কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, ‘সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে অন্য ক্ষেত্রগুলোতে তা হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়ছে প্রধানত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। এসব আঘাত এবং মৃত্যু প্রায় অদৃশ্য বা ‘ইনভিজিবল ইনজুরি অ্যান্ড ডেথ’ হিসেবে রয়ে যাচ্ছে।’
ওই গবেষণাটিতে বহুধাপী ক্লাস্টার নমুনা গ্রহণ পদ্ধতি (মাল্টিস্টেজ ক্লাস্টার স্যাম্পলিং) ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রামীণ ও শহরভিত্তিক স্তরীকরণ করা হয় এবং দেশের সব ৬৪ জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জরিপে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক সদ্য উন্নত প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) ব্যবহার করা হয়েছে। এতে মোট ৪ লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষের (প্রায় সোয়া এক লাখ পরিবার) তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ৫২ শতাংশ মানুষ ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় ১৫ শতাংশ, বেসরকারি হাসপাতালে ৯ শতাংশ, জেলা হাসপাতালে ৯ শতাংশ, চিকিৎসকের চেম্বারে ৬ শতাংশ, বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে যায় মাত্র ১ শতাংশ।
পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেকট) অধ্যাপক আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু এবং উঁচু থেকে পড়ে যাওয়া নেগলেকটেড পাবলিক হেলথ ইস্যু, কারণ এগুলো সাধারণ মৃত্যুর তুলনায় ব্যতিক্রম এবং যথেষ্ট আলোচনায় আসে না। তথ্যও সঠিকভাবে রিপোর্ট হয় না। গবেষণার ফলে আমরা জানতে পেরেছি কত মানুষ আহত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা মারা যান। এখন এই গবেষণার ফল ব্যবহার করে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বাংলাদেশে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছেন কিডনির শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশই করেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস...
২ দিন আগে
প্রথাগত চিকিৎসা বলতে এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেগুলোর উদ্ভব আধুনিক বায়োমেডিসিনের আগেই হয়েছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির ধরন নানাবিধ—ভেষজ চা থেকে শুরু করে ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত।
৪ দিন আগে
শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
৬ দিন আগে
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৬ দিন আগেমুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা

বাংলাদেশে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছেন কিডনির শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশই করেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার তিনি ২০০০তম কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করেছেন। ব্যয়বহুল এই শল্য-চিকিৎসায় নিজে কোনো পারিশ্রমিক নেন না ২০২২ সালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক।
কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে কিডনি রোগের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনির কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছেন। দেশে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কিডনি অকেজো হয়ে। কিডনি প্রতিস্থাপন সীমিত এবং ডায়ালাইসিস ব্যয়বহুল। ফলে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা নিলে ৬০ শতাংশ রোগীর জীবন রক্ষা সম্ভব।
কামরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৫ সালে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ডের মেধাতালিকায় যথাক্রমে ১৫তম ও ১০তম স্থান লাভ করেছিলেন তিনি। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজের মধ্যে সম্মিলিত এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক পান। এরপর ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস, ২০০০ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোলজিতে এমএস এবং ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ থেকে এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
ডা. কামরুলের কর্মজীবন শুরু ১৯৯৩ সালে, বিসিএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়ে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি এবং ২০০৭ সালে প্রথম সফল কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক পদে দায়িত্ব নেন। পরে ২০১৪ সালে নিজ উদ্যোগে রাজধানীর শ্যামলীতে সিকেডি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।
সিকেডি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ডা. কামরুলের নেতৃত্বে সপ্তাহে ছয়টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি দাতা ও গ্রহীতার জন্য একই সঙ্গে দুটি কক্ষে অস্ত্রোপচার চলে। প্রতিটি অস্ত্রোপচারে সাধারণত ১০-১২ জন চিকিৎসক অংশ নেন। যাঁদের মধ্যে থাকেন অবেদনবিদ, কিডনি বিশেষজ্ঞ, ইউরোলজির শল্যচিকিৎসকসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ, পাশাপাশি নার্স ও টেকনোলজিস্ট।
ডা. কামরুল বলেন, সিকেডিতে প্রতিদিন গড়ে একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। প্রতিটি অস্ত্রোপচারে ১০-১২ জন চিকিৎসক কাজ করেন। তিনি নিজে পারিশ্রমিক নেন না, তবে অস্ত্রোপচারে আনুষঙ্গিক খরচ থাকে। তাঁর হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্যাকেজ এখন ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে অস্ত্রোপচার, ওষুধ, আইসিইউ এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিডনি দাতা সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন এবং কিডনি গ্রহীতা ৭ থেকে ১০ দিন হাসপাতালে থাকেন।
হাসপাতালের অন্যান্য সার্জারি ও চিকিৎসাসেবার আয়ের অর্থে কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচের পুরো প্রক্রিয়া চালানো হয়। সেখানে প্রতিদিন ৭-১২টি কিডনি স্টোন সার্জারি, কিডনি ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসারসহ অন্যান্য সার্জারি করা হয়। হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা চার শতাধিক। আউটডোরে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ রোগী, ইনডোরে প্রায় ১০০ রোগী সেবা নেন। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে আরও ৫০ শয্যা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিকেডি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাসিন্দা মাইনুল রহমান। ৪৪ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ীর কিডনি অকেজো হয়ে গেলে স্ত্রীর দেওয়া কিডনি নিয়ে তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। ডা. কামরুল ইসলাম এই অস্ত্রোপচার করেন।
কিডনি প্রতিস্থাপনে সিকেডি হাসপাতাল সোয়া দুই লাখ টাকা নিয়েছে জানিয়ে মাইনুল রহমান গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিকেডি হাসপাতাল যদি অন্য হাসপাতালের মতো খরচ নিত, তাহলে আমরা তা বহন করতে পারতাম না। এখন প্রতি মাসে ফলোআপ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। সেখানে গেলে সবকিছু বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসকের ফি দিতে হয় না।’
এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে স্ত্রীর দেওয়া কিডনি নিজের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জের ৩৭ বছর বয়সী আবু বকর। তিনি বলেন, ‘ডা. কামরুল স্যার খুবই মানবিক। আমরা খরচের ভয়ে চিকিৎসায় যেতে চাইনি। তিনি কয়েকবার ফোন করে আমাদের খোঁজ নিয়েছেন, তিনি কিডনি বসিয়ে দিয়েছেন।’
ডা. কামরুল জানান, কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীরা বাসায় গেলে প্রথম এক থেকে দুই বছর অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়; বিশেষ করে ওষুধ ঠিকমতো না খাওয়া, সময়মতো ডোজ না নেওয়া এবং অনিয়মিত জীবনধারা ঝুঁকি বাড়ায়। আবার রোগীরা খরচের ভয়ে ফলোআপ চিকিৎসায় আসতে চান না। ফলে তাঁদের এসব চিকিৎসা আজীবন বিনা মূল্যে করেন তিনি।
ডা. কামরুলের স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। তিনি বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। তাঁদের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক, মেজ মেয়ে এমবিবিএস অধ্যয়ন করছেন।
নিজের প্রতিষ্ঠিত সিকেডি হাসপাতালকে ‘বড় গাছের মতো’ দেখেন ডা. কামরুল ইসলাম। যেখানে আয়ের একটি অংশ দরিদ্র রোগী ও কিডনি প্রতিস্থাপনে ব্যয় করা হয়। তিনি বলেন, ‘মানুষকে নিখুঁত চিকিৎসা দেওয়া আমার কর্তব্য। আমি কিডনি রোগীদের খরচ হাসপাতালের অন্যান্য আয়ের মাধ্যমে বহন করি। এটি যেকোনো হাসপাতালই করতে পারে এবং এর জন্য লোকসান হয়; তা কিন্তু নয়।’

বাংলাদেশে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছেন কিডনির শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশই করেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার তিনি ২০০০তম কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করেছেন। ব্যয়বহুল এই শল্য-চিকিৎসায় নিজে কোনো পারিশ্রমিক নেন না ২০২২ সালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক।
কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে কিডনি রোগের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রায় ২ কোটি মানুষ কিডনির কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছেন। দেশে প্রতি ঘণ্টায় প্রায় পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কিডনি অকেজো হয়ে। কিডনি প্রতিস্থাপন সীমিত এবং ডায়ালাইসিস ব্যয়বহুল। ফলে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত ও চিকিৎসা নিলে ৬০ শতাংশ রোগীর জীবন রক্ষা সম্ভব।
কামরুল ইসলামের জন্ম ১৯৬৫ সালে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ডের মেধাতালিকায় যথাক্রমে ১৫তম ও ১০তম স্থান লাভ করেছিলেন তিনি। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ১৯৯০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজের মধ্যে সম্মিলিত এমবিবিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক পান। এরপর ১৯৯৫ সালে এফসিপিএস, ২০০০ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোলজিতে এমএস এবং ২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ থেকে এফআরসিএস ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
ডা. কামরুলের কর্মজীবন শুরু ১৯৯৩ সালে, বিসিএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দিয়ে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি এবং ২০০৭ সালে প্রথম সফল কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে বেসরকারি একটি মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক পদে দায়িত্ব নেন। পরে ২০১৪ সালে নিজ উদ্যোগে রাজধানীর শ্যামলীতে সিকেডি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।
সিকেডি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ডা. কামরুলের নেতৃত্বে সপ্তাহে ছয়টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি দাতা ও গ্রহীতার জন্য একই সঙ্গে দুটি কক্ষে অস্ত্রোপচার চলে। প্রতিটি অস্ত্রোপচারে সাধারণত ১০-১২ জন চিকিৎসক অংশ নেন। যাঁদের মধ্যে থাকেন অবেদনবিদ, কিডনি বিশেষজ্ঞ, ইউরোলজির শল্যচিকিৎসকসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ, পাশাপাশি নার্স ও টেকনোলজিস্ট।
ডা. কামরুল বলেন, সিকেডিতে প্রতিদিন গড়ে একটি কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়। প্রতিটি অস্ত্রোপচারে ১০-১২ জন চিকিৎসক কাজ করেন। তিনি নিজে পারিশ্রমিক নেন না, তবে অস্ত্রোপচারে আনুষঙ্গিক খরচ থাকে। তাঁর হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্যাকেজ এখন ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে অস্ত্রোপচার, ওষুধ, আইসিইউ এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত। কিডনি দাতা সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন এবং কিডনি গ্রহীতা ৭ থেকে ১০ দিন হাসপাতালে থাকেন।
হাসপাতালের অন্যান্য সার্জারি ও চিকিৎসাসেবার আয়ের অর্থে কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচের পুরো প্রক্রিয়া চালানো হয়। সেখানে প্রতিদিন ৭-১২টি কিডনি স্টোন সার্জারি, কিডনি ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসারসহ অন্যান্য সার্জারি করা হয়। হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা চার শতাধিক। আউটডোরে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ রোগী, ইনডোরে প্রায় ১০০ রোগী সেবা নেন। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে আরও ৫০ শয্যা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিকেডি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাসিন্দা মাইনুল রহমান। ৪৪ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ীর কিডনি অকেজো হয়ে গেলে স্ত্রীর দেওয়া কিডনি নিয়ে তাঁর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। ডা. কামরুল ইসলাম এই অস্ত্রোপচার করেন।
কিডনি প্রতিস্থাপনে সিকেডি হাসপাতাল সোয়া দুই লাখ টাকা নিয়েছে জানিয়ে মাইনুল রহমান গতকাল সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিকেডি হাসপাতাল যদি অন্য হাসপাতালের মতো খরচ নিত, তাহলে আমরা তা বহন করতে পারতাম না। এখন প্রতি মাসে ফলোআপ চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। সেখানে গেলে সবকিছু বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসকের ফি দিতে হয় না।’
এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে স্ত্রীর দেওয়া কিডনি নিজের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জের ৩৭ বছর বয়সী আবু বকর। তিনি বলেন, ‘ডা. কামরুল স্যার খুবই মানবিক। আমরা খরচের ভয়ে চিকিৎসায় যেতে চাইনি। তিনি কয়েকবার ফোন করে আমাদের খোঁজ নিয়েছেন, তিনি কিডনি বসিয়ে দিয়েছেন।’
ডা. কামরুল জানান, কিডনি প্রতিস্থাপন করা রোগীরা বাসায় গেলে প্রথম এক থেকে দুই বছর অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়; বিশেষ করে ওষুধ ঠিকমতো না খাওয়া, সময়মতো ডোজ না নেওয়া এবং অনিয়মিত জীবনধারা ঝুঁকি বাড়ায়। আবার রোগীরা খরচের ভয়ে ফলোআপ চিকিৎসায় আসতে চান না। ফলে তাঁদের এসব চিকিৎসা আজীবন বিনা মূল্যে করেন তিনি।
ডা. কামরুলের স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। তিনি বর্তমানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। তাঁদের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক, মেজ মেয়ে এমবিবিএস অধ্যয়ন করছেন।
নিজের প্রতিষ্ঠিত সিকেডি হাসপাতালকে ‘বড় গাছের মতো’ দেখেন ডা. কামরুল ইসলাম। যেখানে আয়ের একটি অংশ দরিদ্র রোগী ও কিডনি প্রতিস্থাপনে ব্যয় করা হয়। তিনি বলেন, ‘মানুষকে নিখুঁত চিকিৎসা দেওয়া আমার কর্তব্য। আমি কিডনি রোগীদের খরচ হাসপাতালের অন্যান্য আয়ের মাধ্যমে বহন করি। এটি যেকোনো হাসপাতালই করতে পারে এবং এর জন্য লোকসান হয়; তা কিন্তু নয়।’

দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত...
০৪ অক্টোবর ২০২৫
প্রথাগত চিকিৎসা বলতে এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেগুলোর উদ্ভব আধুনিক বায়োমেডিসিনের আগেই হয়েছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির ধরন নানাবিধ—ভেষজ চা থেকে শুরু করে ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত।
৪ দিন আগে
শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
৬ দিন আগে
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৬ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আফ্রিকায় ভেষজ চিকিৎসকেরা ক্ষত বা ব্যথা উপশমে গাছগাছড়া সংগ্রহ করছেন; চীনে আকুপাংচার বিশেষজ্ঞরা সুচ ব্যবহার করে মাইগ্রেন সারাচ্ছেন; আবার ভারতে যোগীরা ধ্যানচর্চা করছেন—এ ধরনের প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো ক্রমেই কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে এবং এগুলো আরও বেশি মনোযোগ ও গবেষণার দাবি রাখে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক কর্মকর্তা।
ডব্লিউএইচওর গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন সেন্টারের প্রধান ডা. শ্যামা কুরুবিল্লার মতে, ঐতিহাসিকভাবে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের কারণে যেসব প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনেক সময় অবহেলা করা হয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বাড়লে সেই ধারণা বদলাতে পারে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন দেশ সম্মত হয়েছে যে আগামী এক দশকের জন্য ডব্লিউএইচও একটি নতুন বৈশ্বিক প্রথাগত চিকিৎসা কৌশল গ্রহণ করবে।
এই কৌশলের লক্ষ্য—প্রমাণভিত্তিকভাবে স্বাস্থ্য ও কল্যাণে প্রথাগত, পরিপূরক ও সমন্বিত চিকিৎসার সম্ভাবনাময় অবদানকে কাজে লাগানো।
এই কৌশলের আওতায় প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য শক্তিশালী প্রমাণভিত্তি তৈরি, চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এসব পদ্ধতিকে আধুনিক জৈব-চিকিৎসাভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুরুবিল্লা বলেন, ‘এটা ভীষণ রোমাঞ্চকর। আমি বলছি না, আমরা এখনই জানি—কোনটা কাজ করে আর কোনটা করে না। তবে এ মুহূর্তে বিষয়টি জানার বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
প্রথাগত চিকিৎসা বলতে এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেগুলোর উদ্ভব আধুনিক বায়োমেডিসিনের আগেই হয়েছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির ধরন নানাবিধ—ভেষজ চা থেকে শুরু করে ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত।
কুরুবিল্লা বলেন, শত শত বছর ধরে চলে আসা এসব পদ্ধতির মধ্যে অনেকগুলোরই বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জিনোমিক্স ও মস্তিষ্ক স্ক্যানসহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন সেগুলো নতুনভাবে অনুসন্ধান করা সম্ভব।
তাঁর মতে, প্রথাগত চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড ভালো উদাহরণ। দেশটিতে গবেষকেরা প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ ও নথিবদ্ধ করছেন এবং ভেষজ চিকিৎসাকে প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। গত মে মাসে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পেশির ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্যসহ কিছু রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আধুনিক ওষুধের বদলে প্রথাগত চিকিৎসা ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।

আফ্রিকায় ভেষজ চিকিৎসকেরা ক্ষত বা ব্যথা উপশমে গাছগাছড়া সংগ্রহ করছেন; চীনে আকুপাংচার বিশেষজ্ঞরা সুচ ব্যবহার করে মাইগ্রেন সারাচ্ছেন; আবার ভারতে যোগীরা ধ্যানচর্চা করছেন—এ ধরনের প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো ক্রমেই কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে এবং এগুলো আরও বেশি মনোযোগ ও গবেষণার দাবি রাখে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক কর্মকর্তা।
ডব্লিউএইচওর গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন সেন্টারের প্রধান ডা. শ্যামা কুরুবিল্লার মতে, ঐতিহাসিকভাবে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবের কারণে যেসব প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিকে অনেক সময় অবহেলা করা হয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বাড়লে সেই ধারণা বদলাতে পারে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন দেশ সম্মত হয়েছে যে আগামী এক দশকের জন্য ডব্লিউএইচও একটি নতুন বৈশ্বিক প্রথাগত চিকিৎসা কৌশল গ্রহণ করবে।
এই কৌশলের লক্ষ্য—প্রমাণভিত্তিকভাবে স্বাস্থ্য ও কল্যাণে প্রথাগত, পরিপূরক ও সমন্বিত চিকিৎসার সম্ভাবনাময় অবদানকে কাজে লাগানো।
এই কৌশলের আওতায় প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য শক্তিশালী প্রমাণভিত্তি তৈরি, চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো গড়ে তোলা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এসব পদ্ধতিকে আধুনিক জৈব-চিকিৎসাভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কুরুবিল্লা বলেন, ‘এটা ভীষণ রোমাঞ্চকর। আমি বলছি না, আমরা এখনই জানি—কোনটা কাজ করে আর কোনটা করে না। তবে এ মুহূর্তে বিষয়টি জানার বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
প্রথাগত চিকিৎসা বলতে এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেগুলোর উদ্ভব আধুনিক বায়োমেডিসিনের আগেই হয়েছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির ধরন নানাবিধ—ভেষজ চা থেকে শুরু করে ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত।
কুরুবিল্লা বলেন, শত শত বছর ধরে চলে আসা এসব পদ্ধতির মধ্যে অনেকগুলোরই বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জিনোমিক্স ও মস্তিষ্ক স্ক্যানসহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন সেগুলো নতুনভাবে অনুসন্ধান করা সম্ভব।
তাঁর মতে, প্রথাগত চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড ভালো উদাহরণ। দেশটিতে গবেষকেরা প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ ও নথিবদ্ধ করছেন এবং ভেষজ চিকিৎসাকে প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। গত মে মাসে থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পেশির ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্যসহ কিছু রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের আধুনিক ওষুধের বদলে প্রথাগত চিকিৎসা ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।

দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত...
০৪ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছেন কিডনির শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশই করেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস...
২ দিন আগে
শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
৬ দিন আগে
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৬ দিন আগেফিচার ডেস্ক

শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি শরীরে বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়ক। শীতকালীন ক্লান্তি দূর করতে এবং ঋতু পরিবর্তনের অসুস্থতা থেকে বাঁচতে খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার। এটি সহজে হজম হয়।
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, খিচুড়ির প্রতিটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা চাল থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত শর্করা ও শক্তি। ডাল জোগায় প্রোটিন ও আঁশ, যা হজমে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ঘি শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে এবং পুষ্টি শোষণে সহায়ক। হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং আদা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর উষ্ণ রাখে। খিচুড়িতে সবজি যোগ করলে আঁশের মাত্রা বাড়ে। গোলমরিচ ও জিরার মতো মসলা বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। এ ছাড়া সাবুদানার খিচুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া এটি তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে কার্যকর।

চাল ও মুগ ডালের মিশেলে তৈরি এই খিচুড়ি যেমন সহজপাচ্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর বিশেষত্বের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে মসলায়। একেবারে হলুদ, লবণ, জিরা অথবা ধনেগুঁড়ার মতো সাধারণ কিছু মসলা দিয়ে এটি রান্না করা হয়। এটা রান্নার সময় মুগ ডালের সঙ্গে চালও ভেজে নিতে পারেন। এতে মুগ ডালের একটা ভিন্ন গন্ধ পাওয়া যাবে। হলুদের পরিবর্তে এতে ব্যবহার করতে পারেন সবুজ মুগডাল।
উপকারিতা: শরীর উষ্ণ রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়।

গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু, টমেটো ইত্যাদি শীতের সবজি দিয়ে তৈরি রান্না করা সবজি খিচুড়ি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এর সঙ্গে শীতে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব শাক ও সবজি যোগ করতে হবে। সবজিগুলো ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
যে সবজিগুলো সেদ্ধ হতে বেশি সময় নেয়, সেগুলো আগে ভেজে নিন অথবা প্রেশার কুকারে দিন। এরপর তেল বা ঘিতে জিরা, তেজপাতা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ভাজার পর সবজিগুলো হালকা ভেজে নিন। ভেজে রাখা সবজি, চাল, ডাল ও পানি দিয়ে প্রেশার কুকারে বা হাঁড়িতে রান্না করুন। নরম খিচুড়ি চাইলে পানি বেশি দিতে পারেন। শেষ মুহূর্তে পালংসহ অন্য নরম শাক এতে যোগ করতে পারেন।
উপকারিতা: এটি অন্যান্য উপকারের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে।

ঠান্ডা পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে এই খিচুড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয়। চাল, মাষকলাইয়ের ডাল এবং তিল এর প্রধান উপকরণ। রান্নার আগে চাল ও ডাল ভিজিয়ে রাখা হয়। তিল হালকা ভেজে গুঁড়া করে নেওয়া হয়। তিল থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি ও খনিজ উপাদান শীতের দিনে শরীরের জন্য খুবই উপকারী। জিরা, হিং, হলুদ এবং লাল মরিচ গুঁড়ার সুগন্ধি মিশ্রণ এতে অনন্য স্বাদ যোগ করে। খাঁটি ঘি অথবা তেল-মসলার ফোড়ন দিয়ে এটি রান্না করা হয়। প্রোটিন, চর্বি এবং মিনারেলসমৃদ্ধ এই খাবার শীত জয়ের এক অমোঘ হাতিয়ার হতে পারে।
উপকারিতা: এটি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।

সচরাচর খাওয়া হয় এমন কোনো খিচুড়ি খেতে না চাইলে রান্না করতে পারেন আমলকী খিচুড়ি। এটি কোনো সাধারণ খাবার নয়। এ খিচুড়ি রান্না করা হয় চাল, খোসা ছাড়ানো কালো মাষকলাইয়ের ডাল এবং তাজা আমলকী দিয়ে। নরম ধরনের এ খিচুড়ির স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে রান্নায় জিরা, হিং, হলুদ ও লাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো এতে রাজকীয় স্বাদ যোগ করবে। সবশেষে ঘি বা তেলের সুগন্ধি ফোড়ন এই খিচুড়িকে করে তোলে আরও সুস্বাদু। কেউ চাইলে এই খিচুড়ির পুষ্টিমান আরও বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ঋতুভিত্তিক সবজি যোগ করতে পারেন। শীতের এই উৎসবের দিনগুলোতে শরীর সতেজ রাখতে এবং রসনা তৃপ্তিতে আমলকী খিচুড়ি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।
উপকারিতা: এটি শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি হজমশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া শরীর ডিটক্সে সহায়তা করে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, গ্যাস্ট্রিক কমায়, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।

শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি শরীরে বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়ক। শীতকালীন ক্লান্তি দূর করতে এবং ঋতু পরিবর্তনের অসুস্থতা থেকে বাঁচতে খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার। এটি সহজে হজম হয়।
পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, খিচুড়ির প্রতিটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা চাল থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত শর্করা ও শক্তি। ডাল জোগায় প্রোটিন ও আঁশ, যা হজমে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ঘি শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে এবং পুষ্টি শোষণে সহায়ক। হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং আদা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর উষ্ণ রাখে। খিচুড়িতে সবজি যোগ করলে আঁশের মাত্রা বাড়ে। গোলমরিচ ও জিরার মতো মসলা বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। এ ছাড়া সাবুদানার খিচুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া এটি তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে কার্যকর।

চাল ও মুগ ডালের মিশেলে তৈরি এই খিচুড়ি যেমন সহজপাচ্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর বিশেষত্বের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে মসলায়। একেবারে হলুদ, লবণ, জিরা অথবা ধনেগুঁড়ার মতো সাধারণ কিছু মসলা দিয়ে এটি রান্না করা হয়। এটা রান্নার সময় মুগ ডালের সঙ্গে চালও ভেজে নিতে পারেন। এতে মুগ ডালের একটা ভিন্ন গন্ধ পাওয়া যাবে। হলুদের পরিবর্তে এতে ব্যবহার করতে পারেন সবুজ মুগডাল।
উপকারিতা: শরীর উষ্ণ রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়।

গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু, টমেটো ইত্যাদি শীতের সবজি দিয়ে তৈরি রান্না করা সবজি খিচুড়ি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এর সঙ্গে শীতে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব শাক ও সবজি যোগ করতে হবে। সবজিগুলো ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে।
যে সবজিগুলো সেদ্ধ হতে বেশি সময় নেয়, সেগুলো আগে ভেজে নিন অথবা প্রেশার কুকারে দিন। এরপর তেল বা ঘিতে জিরা, তেজপাতা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ভাজার পর সবজিগুলো হালকা ভেজে নিন। ভেজে রাখা সবজি, চাল, ডাল ও পানি দিয়ে প্রেশার কুকারে বা হাঁড়িতে রান্না করুন। নরম খিচুড়ি চাইলে পানি বেশি দিতে পারেন। শেষ মুহূর্তে পালংসহ অন্য নরম শাক এতে যোগ করতে পারেন।
উপকারিতা: এটি অন্যান্য উপকারের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে।

ঠান্ডা পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে এই খিচুড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয়। চাল, মাষকলাইয়ের ডাল এবং তিল এর প্রধান উপকরণ। রান্নার আগে চাল ও ডাল ভিজিয়ে রাখা হয়। তিল হালকা ভেজে গুঁড়া করে নেওয়া হয়। তিল থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি ও খনিজ উপাদান শীতের দিনে শরীরের জন্য খুবই উপকারী। জিরা, হিং, হলুদ এবং লাল মরিচ গুঁড়ার সুগন্ধি মিশ্রণ এতে অনন্য স্বাদ যোগ করে। খাঁটি ঘি অথবা তেল-মসলার ফোড়ন দিয়ে এটি রান্না করা হয়। প্রোটিন, চর্বি এবং মিনারেলসমৃদ্ধ এই খাবার শীত জয়ের এক অমোঘ হাতিয়ার হতে পারে।
উপকারিতা: এটি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।

সচরাচর খাওয়া হয় এমন কোনো খিচুড়ি খেতে না চাইলে রান্না করতে পারেন আমলকী খিচুড়ি। এটি কোনো সাধারণ খাবার নয়। এ খিচুড়ি রান্না করা হয় চাল, খোসা ছাড়ানো কালো মাষকলাইয়ের ডাল এবং তাজা আমলকী দিয়ে। নরম ধরনের এ খিচুড়ির স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে রান্নায় জিরা, হিং, হলুদ ও লাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো এতে রাজকীয় স্বাদ যোগ করবে। সবশেষে ঘি বা তেলের সুগন্ধি ফোড়ন এই খিচুড়িকে করে তোলে আরও সুস্বাদু। কেউ চাইলে এই খিচুড়ির পুষ্টিমান আরও বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ঋতুভিত্তিক সবজি যোগ করতে পারেন। শীতের এই উৎসবের দিনগুলোতে শরীর সতেজ রাখতে এবং রসনা তৃপ্তিতে আমলকী খিচুড়ি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।
উপকারিতা: এটি শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি হজমশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া শরীর ডিটক্সে সহায়তা করে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, গ্যাস্ট্রিক কমায়, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।

দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত...
০৪ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছেন কিডনির শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশই করেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস...
২ দিন আগে
প্রথাগত চিকিৎসা বলতে এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেগুলোর উদ্ভব আধুনিক বায়োমেডিসিনের আগেই হয়েছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির ধরন নানাবিধ—ভেষজ চা থেকে শুরু করে ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত।
৪ দিন আগে
তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
৬ দিন আগেআলমগীর আলম

তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে: বদহজমের সমস্যায় ভুগলে তেজপাতা দারুণ মুক্তি দিতে পারে। অন্যদিকে, লবঙ্গ এনজাইম নিঃসরণ বাড়িয়ে হজমপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।
২. ব্যথা ও প্রদাহ উপশমে: আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের জন্য এই চা অত্যন্ত উপকারী। ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ বা ফোলা ভাব রোধে তেজপাতা ও লবঙ্গ লড়তে সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে: লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া
ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এর সঙ্গে তেজপাতা যুক্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়, যা বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লু মৌসুমে সুরক্ষা দেয়।
৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে: এই চা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফলে হৃদ্রোগ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে পায়।
৫. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়: লবঙ্গ তেল দাঁতের জন্য উপকারী হিসেবে স্বীকৃত। নিয়মিত লবঙ্গ চা পান করলে মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।
উপকরণ সংগ্রহ করা এবং এই চা তৈরি করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ—
উপকরণ: ৩-৪টি শুকনো তেজপাতা, ৫-৬টি আস্ত লবঙ্গ এবং ৪ কাপ পানি। স্বাদ বাড়াতে মধু বা লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তাতে তেজপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। ১৫ মিনিট মিশ্রণটি সেদ্ধ করার পর চুলা নিভিয়ে আরও ৫ মিনিট পাত্রটি ঢেকে রেখে দিন। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তেজপাতা ও লবঙ্গ ফেলে দিয়ে পানি আলাদা করে নিন। স্বাদ অনুযায়ী মধু কিংবা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
ভালো ফল পেতে প্রতিদিন এক কাপ এই চা-পান করা ভালো; বিশেষ করে খাবারের পর এটি পান করলে হজমশক্তি বাড়াতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
১. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে: বদহজমের সমস্যায় ভুগলে তেজপাতা দারুণ মুক্তি দিতে পারে। অন্যদিকে, লবঙ্গ এনজাইম নিঃসরণ বাড়িয়ে হজমপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।
২. ব্যথা ও প্রদাহ উপশমে: আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের জন্য এই চা অত্যন্ত উপকারী। ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ বা ফোলা ভাব রোধে তেজপাতা ও লবঙ্গ লড়তে সাহায্য করে।
৩. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে: লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া
ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এর সঙ্গে তেজপাতা যুক্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়, যা বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লু মৌসুমে সুরক্ষা দেয়।
৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে: এই চা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফলে হৃদ্রোগ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে পায়।
৫. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়: লবঙ্গ তেল দাঁতের জন্য উপকারী হিসেবে স্বীকৃত। নিয়মিত লবঙ্গ চা পান করলে মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।
উপকরণ সংগ্রহ করা এবং এই চা তৈরি করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ—
উপকরণ: ৩-৪টি শুকনো তেজপাতা, ৫-৬টি আস্ত লবঙ্গ এবং ৪ কাপ পানি। স্বাদ বাড়াতে মধু বা লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তাতে তেজপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। ১৫ মিনিট মিশ্রণটি সেদ্ধ করার পর চুলা নিভিয়ে আরও ৫ মিনিট পাত্রটি ঢেকে রেখে দিন। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তেজপাতা ও লবঙ্গ ফেলে দিয়ে পানি আলাদা করে নিন। স্বাদ অনুযায়ী মধু কিংবা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
ভালো ফল পেতে প্রতিদিন এক কাপ এই চা-পান করা ভালো; বিশেষ করে খাবারের পর এটি পান করলে হজমশক্তি বাড়াতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

দেশে প্রতিদিন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ নানাভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। কারও আঘাত মৃদু, কারও মাঝারি, আবার কারও আঘাত মারাত্মক হয়। মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৪০০ জন আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন, আর মারা যান আড়াই শতাধিক। আঘাতের কারণে যাঁরা মারা যান তাঁদের অর্ধেকেরই মৃত্যুর কারণ তিনটি অবহেলিত...
০৪ অক্টোবর ২০২৫
বাংলাদেশে যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন এখনো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেখানে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের শেষ ভরসা হয়ে উঠেছেন কিডনির শল্যচিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম। দেশে যত কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশই করেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস...
২ দিন আগে
প্রথাগত চিকিৎসা বলতে এমন স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেগুলোর উদ্ভব আধুনিক বায়োমেডিসিনের আগেই হয়েছে। এসব চিকিৎসা পদ্ধতির ধরন নানাবিধ—ভেষজ চা থেকে শুরু করে ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যন্ত।
৪ দিন আগে
শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
৬ দিন আগে