Ajker Patrika

উৎসবে স্বাদ হোক স্বাস্থ্যকর

আলমগীর আলম
উৎসবে স্বাদ হোক স্বাস্থ্যকর

ঈদের দিন সূর্য ওঠার আগেই বাড়ির উঠান ভরে যায় সেমাইয়ের মিষ্টি গন্ধে। মা ব্যস্ত হাতে নাড়ছেন গরম দুধে ভেজানো চিনি আর ঘন হয়ে আসা সেমাই। রান্নাঘরের কোণে চুলার ওপর ফোঁটা ফোঁটা ঘি গলে মিশে যাচ্ছে গরম পোলাওয়ে, যেন ঈদের আনন্দের প্রথম পাঠ শুরু হয়ে গেছে। বাড়িতে যদি বয়স্ক কেউ থাকেন, তাঁর হাতে তৈরি নরম রুটি, সঙ্গে শাহি কোরমার গাঢ় ঝোল। তাজা মাংস, সুগন্ধি গরম মসলা আর পাকা লেবু—সব মিলিয়ে রান্নার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।

ঈদের খাবার শুধু খাবার নয়, এ এক বন্ধনের গল্প। রান্নার হাঁড়ির ফোঁস ফোঁস শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে মায়ের আদর, বাবার যত্ন, দাদির অভিজ্ঞতা আর ভাইবোনের চঞ্চলতা। খাবারের এই মহোৎসব শুধু পেট নয়, হৃদয়ও ভরিয়ে দেয় ভালোবাসায়।

ঈদ আসে ঈদ যায়, কিন্তু রান্নাঘরের সেই সব গন্ধ, হাসি আর তৃপ্তির মুহূর্ত থেকে যায় চিরদিন।

এত আয়োজনে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলি আমরা। সেই ভুল আমাদের শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার সুযোগ আছে নিজের কাছেই।

অতিরিক্ত খাবারকে না

ঈদের দিন বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার থাকে। তাই আমরা পরিমাণের দিকে খেয়াল না রেখে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলি। এটি হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি এবং ওজন বাড়ার কারণ। ছোট প্লেটে খাবার নিন এবং ধীরে ধীরে খান। খাবার খাওয়ার পর পর্যাপ্ত বিরতি দিন।

অতিরিক্ত মিষ্টি না খাওয়া

ঈদে সেমাই, জর্দা, পায়েসসহ বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এসব খাবার বেশি খেলে। ঝুঁকি বাড়তে পারে ডায়াবেটিস ও স্থূলতার। দাঁতেরও ক্ষতি হতে পারে। পরিমিত মিষ্টি খান এবং প্রয়োজনে বিকল্প হিসেবে ফল খান। মিষ্টি খাওয়ার পর পানি পান করুন এবং দাঁত ব্রাশ করুন।

ভাজাপোড়া ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়া

কালাভুনা, রোস্ট, কাবাব, পরোটা, বিরিয়ানি ইত্যাদি তেলযুক্ত খাবার ঈদে বেশি খাওয়া হয়। এটি হজমের সমস্যা, বদহজম ও অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে। এগুলো কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গ্রিল বা সেদ্ধ করা খাবার বেছে নিন। বেশি পরিমাণে সালাদ রাখুন পাতে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

ঈদের দিন আমরা খাবারের প্রতি বেশি মনোযোগ দিই। কিন্তু পানি পান করতে ভুলে যাই। পানি কম খেলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, বিশেষ করে গরমকালে। কিডনির সমস্যা ও হজমের জটিলতা দেখা দিতে পারে। দিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন। কোমল পানীয়ের পরিবর্তে পানি বা লেবুর শরবত পান করুন।

খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে না যাওয়া

ঈদের দিনে দুপুরে খাওয়ার পর অনেকে ঘুমিয়ে পড়েন। এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং অ্যাসিড রিফ্ল্যাক্সের কারণ হতে পারে। এতে শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা বাড়ে। খাওয়ার পরপরই ঘুমানো এড়িয়ে চলুন। অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করুন।

কোমল পানীয় পান করবেন না

খাবারের আয়োজনে এখন কোমল পানীয় থাকবেই। তবে এগুলো না পান করাই ভালো। এগুলোতে উচ্চমাত্রার চিনি থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো ওজন বাড়ারও কারণ হতে পারে। কোমল পানীয়ের বদলে ডাবের পানি বা লেবুর শরবত পান করুন।

ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া

অনেক খাবার থাকা এবং সবকিছু একসঙ্গে খেতে চাওয়ার কারণে এ সময় আমরা দ্রুত খাবার খাই। এটি হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।

তাই ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবার খান। খাওয়ার সময় অন্য কাজে ব্যস্ত না থেকে খাবার উপভোগ করুন।

সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খান

সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার কম খান। ঈদের দিনে আমরা সাধারণত বেশি প্রোটিন (মাংস)

ও কার্বোহাইড্রেট (ভাত, রুটি) খাই। এগুলো হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে। খাবারের তালিকায় সবজি ও সালাদ রাখুন। ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

হালকা ব্যায়াম করুন

ঈদের দিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চা করুন।

পরামর্শ দিয়েছেন: আলমগীর আলম, খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত