Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /শাহবাগে প্রাথমিকের নারী শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা দাবিতে পুরোনো ছবি ভাইরাল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২: ৫৮
গতকাল শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা করার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবি। ছবি: স্ক্রিনশট
গতকাল শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা করার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবি। ছবি: স্ক্রিনশট

শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে গত সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই শাহবাগ মোড়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছিটিয়ে, লাঠিপেটা ও টিয়ার শেল নিক্ষেপের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ, ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে।

এরই মধ্যে সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছবিগুলো ছড়ানো হয়েছে। ছবিগুলোয় বাংলাদেশ পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তি কর্তৃক নারীদের শরীরের বিভিন্ন অংশের কাপড়ে ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া, ঠেলে গাড়িতে তোলা এবং একটি ছবিতে লাথি দিতে দেখা যায়।

এমবি কানিজ (MB Kaniz) নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রকাশিত পোস্টটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা, ‘ছবি গুলো ‍যদি জুলাইয়ের হতো, তবে মৌসুমী দেশপ্রেমিকদের আহাজারিতে সোশ‍্যাল মিডিয়াতে শুধু নয়, আশেপাশের গোরস্থান থেকেও মূর্দা লাশও জিন্দা হয়ে উঠতো। একটা স্থিতিশীল দেশকে চরম সংকটে ফেলে খুব দ্রুত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য পরিকল্পনা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে, সেই বিভ্রান্তি কেটেছে? নাকি এখনো বিশ্ব সেলিব্রেটির মোহে পড়ে আছে, তারা?

প্রাইমারি চাকরি তে তাদের নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাতিল করলেন কেন? এখন এরা আন্দোলন ডাকছে আপনারা তাদের সমাধানের কথা না বলে এমন বিশ্রী ভাবে নারী শিক্ষকদের গায়ে হাত দিয়ে নিজেদের কুকুরের সমতুল্য করছেন। ধিক শতধিক!’ (বানান অপরিবর্তিত)

মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত ওই পোস্টে ৪৪০টি রিয়্যাকশন পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ১১৪টি। পোস্টটিতে ১০৪টি কমেন্ট পড়েছে। পোস্টে অনেকে এই ছবিগুলো পুরোনো বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া অনেকে এটি গতকাল শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের হামলা উল্লেখ করে কমেন্ট করেছেন। রাহাত খান (Rahat Imran) নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ছবিগুলো দেখে সত্যি অনেক খারাপ লাগে একজন নারীকে সম্মান দিয়ে চলাটা প্রত্যেক পুরুষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য এভাবে একজন নারীর গায়ে হাত দেওয়া এভাবে জড়িয়ে জোরজবস্তি করা এটা ঠিক না এটা অন্যায় এগুলোর বিচার একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। সকল কারাবন্দীদের মুক্তি চাই’ (বানান অপরিবর্তিত)

Jahanggir Alam Nayeem, Osman Goni এবং Atika Binte Hossain নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় একই ক্যাপশনে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়েছে।

গতকাল শাহবাগে পুলিশ এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোয় মোট ৪টি ছবি আছে। ছবিগুলো আলাদা আলাদাভাবে যাচাই করার চেষ্টা করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

ছবি যাচাই: ০১

প্রথম ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ‘আঁলো আঁধারের গল্প’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছবিটি ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পোস্ট করা।

সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে আঁলো আঁধারের গল্প নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট
সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে আঁলো আঁধারের গল্প নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট

ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘ধর্ষক আর পুলিশের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

দুই জানোয়ারই নারীর ইজ্জতে হাত দেয়।

দেখুন বোরকা পরা হাতটি অসহায় নারীর কোন জায়গায় রেখেছে।

Presented By. “Thowhid Mirza” (বানান অপরিবর্তিত)

একই ছবিটি প্রায় একই ক্যাপশনে ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলে মামুন বিল্লাহ (Mamun Billah) নামে অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়।

এসব পোস্টে ছবিটি কোন ঘটনার ভিত্তিতে তোলা হয়েছিল, সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।

ছবি যাচাই: ০২

দ্বিতীয় ছবিটিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের লোগো লক্ষ্য করা যায়। এটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ‘Mma Taher’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর পোস্ট করা হয়।

সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে Mma Taher নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৩ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট
সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে Mma Taher নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৩ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট

ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘হরতাল সমর্থক এক ছাত্রীকে লাথি মারছে পুলিশ।’

এসব তথ্যসূত্রে গুগলে সার্চ করা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর, প্রথম আলোসহ একাধিক গণমাধ্যমে ২০১৩ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের সংবাদ পাওয়া যায়।

ছবি যাচাই: ০৩

তৃতীয় ছবিতেও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের লোগো দেখা যায়। ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ‘Ahsan Kamrul Mazumder’ নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট পোস্ট করা হয়।

সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে Ahsan Kamrul Mazumder নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট
সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে Ahsan Kamrul Mazumder নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০১৬ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট

ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘ধর্ষক আর পুলিশের মাঝে পার্থক্য কোথায়?’

এই পোস্টে সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে ছড়িয়ে আরও দুটি ছবি দেখা যায়। তবে পোস্টে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

ছবি যাচাই: ০৪

ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ব্লগস্পট ওয়েবসাইটের ‘Bongoj’ নামে অ্যাকাউন্টে ছবিটি পাওয়া যায়। ছবিটি ২০০৯ সালে পোস্ট করা হয়।

সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে Bongoj নামের ব্লগস্পট অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট
সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ছবির সঙ্গে Bongoj নামের ব্লগস্পট অ্যাকাউন্টে ২০০৯ সালে পোস্ট করা ছবির সাদৃশ্যতা। ছবি: স্ক্রিনশট

ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, ‘বাংলাদেশি পুলিশ।’

অর্থাৎ ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোর পেছনের ঘটনা সম্পর্কে না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত, এগুলো গতকাল সোমবার শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা করার ঘটনার নয়। ছবিগুলো অন্তত ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের লোগোসহ দুটি ছবির বিষয়ে জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমটির ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রধান মুস্তাফিজ মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে পোস্টটি শেয়ার করলে তিনি জানান, এই ছবিগুলোর একটিও গতকালের ঘটনার না। তবে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের লোগোসহ দুটি ছবি চিহ্নিত করতে পেরেছেন; তবে ছবিগুলোর প্রেক্ষাপট তিনি স্মরণ করতে পারেননি।

তবে শেষের ছবিটি (পুলিশ নারীকে জড়িয়ে ধরে আছে) তিনি চিহ্নিত করতে পেরেছেন। তিনি জানান, শেষবার যখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল, তখন এই ছবি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে তোলা হয়। ছবিটি আজিজুর রহিম পিউ তুলেছিলেন।

সুতরাং, শাহবাগে এনটিআরসিএ নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশী এবং সুপারিশপ্রাপ্ত প্রাথমিকের শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনরত নারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করেছে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো ১০ ফেব্রুয়ারির নয়। প্রকৃতপক্ষে, ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো ভিন্ন ঘটনার পুরোনো; যা গতকালের ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৫
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত