Ajker Patrika

উটকে কেন বিষধর সাপ খাওয়ানো হয়, সত্যিই কি এতে রোগ সারে

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১৪ মে ২০২৪, ০০: ৫২
উটকে কেন বিষধর সাপ খাওয়ানো হয়, সত্যিই কি এতে রোগ সারে

উটকে বলা হয় মরুর জাহাজ। ঊষর মরুভূমির বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার অনন্য ক্ষমতা আছে এই প্রাণীর। প্রাণীটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ৩ মিনিট ৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, পবিত্র কোরআনে উটের ‘হায়াম’ নামে এক রোগের বর্ণনা আছে। এই রোগ হলে উট খাওয়া–দাওয়া ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই ‘হায়াম’ রোগের প্রতিষেধক হচ্ছে উটকে জীবন্ত বিষধর সাপ খাইয়ে দেওয়া।

অনেক সময় উট নিজেই সাপ খেয়ে থাকে। সাপ গিলে ফেলার পর উটের তৃষ্ণা বাড়তে থাকে এবং প্রায় আট ঘণ্টা এ অবস্থায় থাকে। সে সময় উটের চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি ঝরতে থাকে। উটের চোখ থেকে ঝরা এ পানির নাম ‘তিরায়ক’। এই পানি অনেক মূল্যবান! এটি যেকোনো প্রাণীর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে। এই পানির অনেক উপকারিতা। তাই এটি চামড়ার পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

তরিকুল ইসলাম তুষার নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গত ২১ এপ্রিল ভিডিওটি ‘উটকে কেন বিষধর জীবিত সাপ খাওয়ানো হয়?’ শিরোনামে পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৬৩ হাজার বার দেখা হয়েছে। পোস্টটিতে রিয়েকশন পড়েছে ৩ হাজারের বেশি।

একই তথ্য বিগত বিভিন্ন সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। যেমন, ২০২২ সালে মুসলিম টিভি নামের একটি ফেসবুক পেজে মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান নাসরুল্লাহ নামে এক ইসলামি বক্তার ওয়াজ ভাইরাল হয়। ওয়াজে তিনি বলেন, কোরআনের সুরা আল–ওয়াকিয়ার ৫২ থেকে ৫৫ নম্বর আয়াতের মধ্যে উটের ‘হায়াম’ রোগের বর্ণনা আছে।

ভাইরাল এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

কোরআনে উট ও ‘হায়াম’ রোগের বর্ণনা
ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত বিভিন্ন ভুল ধারণা নিরসনে কাজ করে যুক্তরাজ্যে বেডফোর্ডে অবস্থিত আল–কুদওয়া ইনস্টিটিউট। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে কোরআনে বর্ণিত প্রাণীদের নিয়ে একটি আলোচনা পাওয়া যায়। এতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোরআনে মোট ১৫ বার উটের বর্ণনা এসেছে। কোরআনে উটকে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির শৈল্পিকতার উদাহরণ দেখিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ওয়েবসাইটটিতে উট নিয়ে কোরআনের আলোচনায় উটের ‘হায়াম’ নামের রোগ ও এর চিকিৎসায় সাপ খাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

দ্য লাস্ট ডায়লগ’ নামের ধর্মভিত্তিক একটি কনটেন্টের ওয়েবসাইটে কোরআনে উটের বর্ণনা সংবলতি ১৫টি আয়াত পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনবার এসেছে সুরা আল–আনআমে, একবার করে এসেছে— সুরা হুদ, সুরা ইউসূফ, সুরা বনি ইসরাইল, সুরা আশ–শুআ’রা, সুরা আল–কামার, সুরা আল–ওয়াকিয়া, সুরা আল হাশর, সুরা আল–মুরসালাত, সুরা আত–তাকভীর, সুরা আল–গাশিয়া এবং সুরা আশ–শামসে।

আয়াতগুলোতে উটের প্রসঙ্গ এসেছে বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনায়। কিন্তু আয়াতগুলো থেকে উটের ‘হায়াম’ নামের রোগ ও এর চিকিৎসায় সাপ খাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। 

তবে সুরা ওয়াকিয়ার ৫৫ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় উটের এক ধরনের অসুস্থতার কথা বলা হয়েছে। এ রোগে উট ঘন ঘন পানি পান করে কিন্তু পিপাসা নিবৃত্তি হয় না। এমন পিপাসার্ত উটদের বোঝাতে আয়াতটিতে ‘হিম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যার বহুবচন আহয়াম। সম্ভবত এই শব্দটির সূত্রেই অনেকেই হায়াম রোগের কথা কোরআনে বর্ণিত আছে বলে দাবি করেন।

কোরআনে উটের উপস্থাপন নিয়ে ইরানের সিরাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সায়েন্স ও ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজেস অ্যান্ড লিংগুয়াস্টিক্টস বিভাগের দুই গবেষক একটি কনফারেন্স পেপার তৈরি করেন। ২০১২ সালে ইরানে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল কংগ্রেস অব ক্যামেল ইন ইরান’ শীর্ষক কনফারেন্সে এটি উপস্থাপন করা হয়। এই কনফারেন্স পেপার থেকেও হায়াম রোগ ও এর নিরাময় হিসেবে বিষাক্ত সাপ খাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

উট কি সাপ খায়?
উট মূলত তৃণভোজী প্রাণী, বিভিন্ন উদ্ভিদই এদের প্রধান খাদ্য। তবে কেউ কেউ দাবি করেন, এরা কখনো সাপও খায়। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। কারও কারও দাবি, উট কখনোই সাপ খায় না। তবে যারা উট সাপ খায় বলে দাবি করেন তাঁদের মত হলো, প্রাণীটি কখনো কখনো মাংস খেয়ে থাকে। বিশেষ করে যখন খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত উদ্ভিদ পাওয়া যায় না।

‘হায়াম’ রোগের চিকিৎসায় উটকে সাপ খাওয়ানো
স্বেচ্ছায় বা খাদ্য সংকটে উট সাপ খায় কিনা সে নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, হায়াম রোগে আক্রান্ত উটকে সাপ খাওয়ানোর প্রচলন রয়েছে। প্রাণী ও প্রকৃতি বিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ওয়াইল্ড লাইফে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ‘হায়াম’ রোগের চিকিৎসায় উটকে সাপ খাওয়ানো সম্পর্কে বলা হয়, এটি প্রচলিত বিশ্বাস। এর সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই বরং এটি প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা।

উটকে অসুস্থতায় সাপ খাওয়ানোর দাবিটি মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত মিথ। ছবি: পেটকিন পশু বিশেষজ্ঞদের মতে, উটকে যে রোগের জন্য সাপ খাওয়ানো হয়, এটি মূলত ট্রাইপ্যানোসোমিয়াসিস টি. ইভানসি নামক আনুবীক্ষণিক পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট গুরুতর রোগ। এটি মাছির মাধ্যমে রক্তে সংক্রমিত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে উটের গর্ভপাত, বাচ্চা উটের উচ্চ মৃত্যুহার এবং অন্ডকোষের ক্ষতি হতে পারে।

এই রোগের লক্ষণের মধ্যে আছে— জ্বর, চোখ দিয়ে ঝরা, রক্তা স্বল্পতা, শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যাওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়া, দুর্বলতা, খাওয়ার রুচি থাকলেও শারীরিক অবস্থার অবনতি। যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হলে উটের ক্ষেত্রে এই রোগে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ।

এই রোগের চিকিৎসায় উটকে বিষধর সাপ খাওয়ানোর দাওয়া প্রচলিত থাকলেও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

সাপ খাওয়ার পর কি উটের ক্ষতি হয়?
সাপের বিষ বিভিন্ন দুর্বল বন্ধনের প্রোটিন দিয়ে তৈরি। সাপের বিষের প্রভাব শুরু হয় আক্রান্ত প্রাণীর রক্তের সঙ্গে মিশে যাওয়ার পর। বিষ রক্তের সঙ্গে মিশে সারা শরীর ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ অকার্যকর করে দেয়। কিন্তু উটকে সাপ খাওয়ালে সেটি সরাসরি পরিপাকতন্ত্রে চলে যায়। হজমক্রিয়ায় বিভিন্ন এনজাইমের প্রভাবে সেই সাপের বিষ অকার্যকর হয়ে পড়ে। তাই সাপ খেলে উটের শরীরে সেভাবে বিষক্রিয়া হয় না, বরং কিছু সময় অসুস্থ থাকতে পারে।

সাপ খাওয়ানোর পরে উট প্রচুর কান্না করে?
বিষাক্ত সাপ খাওয়ানোর পর দীর্ঘ সময় ধরে উটের দুই চোখ দিয়ে পানি ঝরে— এমন গল্প প্রচলিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রাণী বিষয়ক আরেকটি ওয়েবসাইট পেটকিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাপ খাওয়ানোর পর উট অঝোরে কান্না করে এবং সেই কান্না সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার দাবিকে সমর্থন করে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। এটি মূলত লোকমুখে প্রচলিত গল্প।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, উটের ‘হায়াম’ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে বিষধর সাপ খাওয়ানো এবং এর ফলে উটের চোখ থেকে ঝরা অশ্রু সাপের কামড়ের প্রতিষেধক হিসেবে মানুষের ব্যবহারের তথ্য পুরোটাই মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত বিশ্বাস ও সংস্কার। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। 

তবে উট থেকে তৈরি হয় অ্যান্টিভেনম
অ্যান্টভেনম তৈরির প্রচলিত পদ্ধতিতে সাধারণ ঘোড়া, ভেড়া বা উট ব্যবহার করা হয়। উটের দেহে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে সাপের বিষ প্রবেশ করানো হলে এটির দেহে এর প্রতিক্রিয়ায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করেই মানুষের জন্য সাপের কামড়ের প্রতিষেধক তৈরি করা হয়।

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, মরুভূমিতে রুক্ষ্ম পরিবেশে বসবাসের কারণে উট সাধারণত ঘোড়া এবং ভেড়ার চেয়ে ভালো অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারে। পাফ অ্যাডার, ধারালো আঁশযুক্ত ভাইপার বা ব্ল্যাক কোবরার মতো সাপ থেকে বিষ নিয়ে উটের শরীরে অল্প পরিমাণে প্রবেশ করিয়ে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়। উট থেকে তৈরি অ্যান্টিবডি তাপসহনীয়। তাই এটি সহজে সংরক্ষণ ও বহন করা যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত