Ajker Patrika

+99, +92 নম্বরযুক্ত কল রিসিভ করলেই ফোন হ্যাক হবে—তথ্যটি সঠিক নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪: ৩১
+99, +92 নম্বরযুক্ত কল রিসিভ করলেই ফোন হ্যাক হবে—তথ্যটি সঠিক নয়

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদমাধ্যমে একটি তথ্য প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, +99, +92 নম্বরযুক্ত ফোনকল রিসিভ করলেই মোবাইল ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যাক হয়ে যাবে। এমন দাবিতে বেসরকারি সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল ৭১ টিভির ফেসবুক পেজে গতকাল শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ৬ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, দুটি নম্বর থেকে যদি কারও ফোনে কল আসে এবং সেই কল রিসিভ করা হয় তাহলে ফোনের যাবতীয় তথ্য হ্যাকাররা জেনে যাবে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, তাঁর থানায় সম্প্রতি এমন অভিযোগ নিয়ে এক তরুণ এসেছিলেন। তবে এই পুলিশ কর্মকর্তা ভিডিওতে তাঁর দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র দেখাননি। 

একাত্তর টিভির ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি আজ শনিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ২৫ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটিতে রিয়েকশন পড়েছে ৯০ হাজারের বেশি। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম জাহাঙ্গীর আলম। টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত। তাঁর ২৬ লাখ ফলোয়ারের একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। পেজে তিনি জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্ট করে থাকেন। 

উল্লেখিত নম্বরযুক্ত ফোনকল নিয়ে তাঁর ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা আছে কি?

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেখা যায়, +92 নম্বরটি পাকিস্তানের জন্য নির্ধারিত আন্তর্জাতিক কান্ট্রি কোড। পাকিস্তানের ফোন নম্বরগুলো এই কান্ট্রি কোড দিয়ে শুরু হয়। যেমন, বাংলাদেশের কান্ট্রি কোড হচ্ছে +880। একইভাবে +99 সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এটি একাধিক দেশের কান্ট্রি কোডের প্রথম অংশ। যেমন, মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানের কান্ট্রি কোড শুরু হয় +998 দিয়েতাজিকিস্তানের কান্ট্রি কোড শুরু +992 দিয়ে। 

এসআই জাহাঙ্গীরের ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল আলম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, ‘এগুলো বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রচার করা হচ্ছে। আমরা এই দাবির পক্ষে কোনো সত্যতা পাইনি।’

অর্থাৎ, +99, +92 নম্বরযুক্ত ফোন নম্বর মানেই সেটি হ্যাকারদের কল না-ও হতে পারে। কারও আত্মীয়স্বজন এই দেশগুলোতে থাকলে বা এসব দেশের নম্বর ব্যবহারকারী কারও সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে এসব নম্বরযুক্ত কল আসতেই পারে। তাই +99, +92 নম্বর কোনো ফোন নম্বরের শুরুতে থাকলেই সেটি হ্যাকারদের কল—এমন দাবি বিভ্রান্তিকর। 

কল রিসিভের মাধ্যমে কি ফোন হ্যাক হতে পারে?
বহুজাতিক সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যাভাস্টের ওয়েবসাইটে ফোন হ্যাকিং সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরে জানানো হয়েছে, কোনো ফোনকল রিসিভ করার মাধ্যমে ফোন হ্যাক হওয়া অসম্ভব। তবে এর মানে এই নয় যে, আপনি পুরোপুরি নিরাপদ। কারণ, ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ অ্যাটাক করে প্রতারণামূলক ফোনকলের মাধ্যমে কারও পক্ষে ফোনের ডেটা চুরি করা সম্ভব। 

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশন (আইবিএম) ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাটাক’ সম্পর্কে জানায়, এটি এমন ধরনের আক্রমণ, যেখানে মানুষকে এমন তথ্য শেয়ার করতে প্ররোচিত করা হয়, যা তিনি সাধারণত শেয়ার করতে চান না। আবার এমন সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে বা এমন সব ওয়েবসাইট ভিজিট করতে প্রলুব্ধ করা হয়, যা সাধারণত তাঁরা করতে চান না, জানেনই না। কখনো কখনো অপরাধী চক্র টাকা পাঠাতে অথবা এমন কোনো কাজ করতে প্ররোচিত করে, যার ফলে ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়।

কাস্টমার কেয়ারের নামে ফোনকল করে কারিগরি সমস্যার কথা বলে বিকাশের পিন চাওয়া বা জিনের বাদশা—এ ধরনের অপরাধকেও সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাটাক বলা যেতে পারে।

হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হ্যাকের শিকার হওয়া যায় কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে অ্যাভাস্ট জানায়, কেউ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও হ্যাকিংয়ের শিকার হতে পারেন, যদি ওই ব্যক্তি হোয়াটসঅ্যাপে কারও দেওয়া কোনো সন্দেহজনক লিংক ওপেন করেন। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমেও তাত্ত্বিকভাবে ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করানোর মাধ্যমে ফোন হ্যাক করা সম্ভব। তাই অপরিচিত কোনো নম্বর থেকে কল এলে সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত। 

অনুসন্ধানে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে +92 নম্বরযুক্ত ফোন নম্বর দিয়ে প্রতারণার তথ্য পাওয়া গেছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেতে ২০২৩ সালের ২৫ জুলাইয়ে +92 নম্বরযুক্ত ফোন নম্বর নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই সময় ভারতীয় নাগরিকদের ফোনে এমন নম্বর থেকে কল দিয়ে আইফোনসহ অ্যাপলের অন্যান্য পণ্যের প্রলোভন দেখানো হচ্ছিল এবং টাকা, ব্যাংকের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছিল। একই বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে প্রতিবেদনগুলোতে ফোন রিসিভ করামাত্রই ডেটা চুরি হয়ে যাচ্ছে, এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

কোনো ফোনকল রিসিভ করার মাধ্যমে ফোন হ্যাক হওয়া অসম্ভবএসব প্রতিবেদনে বলা হয়, +92 নম্বরটি পাকিস্তানের কান্ট্রি কোড হলেও এসব কল সরাসরি পাকিস্তান থেকে আসেনি। কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে অন্য যেকোনো দেশ থেকেও এমন নম্বর প্রস্তুত করে প্রতারণা করা সম্ভব। তাই এসব নম্বরের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। 

ভারতীয় আরেকটি সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোলে ২০২৩ সালের ১০ মে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে ফোনকল দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে প্রতারকেরা। এসব নম্বরের মধ্যে আছে +251 (ইথিওপিয়া), +60 (মালয়েশিয়া), +62 (ইন্দোনেশিয়া), +254 (কেনিয়া), +84 (ভিয়েতনাম)। এই নম্বরগুলো বিভিন্ন দেশের কান্ট্রি কোড হলেও সংশ্লিষ্ট দেশ ছাড়াও অন্য যেকোনো দেশে বসে এসব কোড নম্বর যোগ করে ফোন কলের মাধ্যমে প্রতারণা করা সম্ভব। 

সাধারণত, উল্লেখিত ধরনের নম্বরগুলো থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল বা বার্তা পাঠিয়ে আকর্ষণীয় চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই এমন কোনো অপরিচিত নম্বর থেকে কল এলে সচেতনতা অবলম্বন জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশেও এই ধরনের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে কল আসার প্রবণতা বেড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৫
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত