Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ’ দাবিতে ভিডিও ভাইরাল, যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক  
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ১২: ১৭
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র বাহিনী বিচরণের দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র বাহিনী বিচরণের দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

পার্বত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ে একটি সশস্ত্র গ্রুপ ঘুরে বেড়াচ্ছে— এমন দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে। ভিডিওটি একই ক্যাপশনে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ এবং এক্স অ্যাকাউটেও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওটি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা। এতে পাহাড়ি এলাকার একটি সরু রাস্তায় সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের মতো পোশাকে আট জন সশস্ত্র ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। শারীরিক গঠন বিবেচনায় অন্তত দুজনকে নারী বলে মনে হচ্ছে।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক গণকণ্ঠের ফেসবুক পেজে গতকাল শুক্রবার (২ মে) রাত ৯টায় প্রকাশিত ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এরা কারা; কিভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

গতকাল শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং রিঅ্যাকশন পড়েছে ৪ হাজার ৪০০। পোস্টে ২৭০টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৮ হাজার ৩০০। এসব কমেন্টে ভিডিওটি অন্য দেশের উল্লেখ করে কেউ কেউ কমেন্ট করেছেন। আবার এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ভিডিও বলে অনেকে কমেন্ট করেছেন।

Ahmed Jakariya নামে অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড যেমন বাংলাদেশ ভারতের বিভিন্ন সিমান্ত পাহারা দিচ্ছে তেমনিভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের অঞ্চল গুলোতেও বর্ডার গার্ডের পাহারা আরো জোরদার করা জরুরি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Moahmmed Jashim Uddin লিখেছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গুষ্টি গুলি সক্রিয় হচ্ছে মনে হয় আমাদের সাবধান হওয়া খুবই দরকার।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Al-Amin RahmanSheikh Abdullah নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং Shahalam Sajeeb নামে এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।

ভিডিওটির কিছু কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Eshita Angom নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বরে প্রকাশিত ভিডিওতে একই দৃশ্য দেখা যায়। তবে এই ভিডিওটির দৈর্ঘ্য ৩ মিনিট ৪১ সেকেন্ড। এর ৩২ সেকেন্ড থেকে ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির মিল রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সংস্করণের এই ভিডিওর ৫০ সেকেন্ডের পরের দৃশ্যে আরও একজনকে যুক্ত হয়ে ৯ জন দেখা যায়। এর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে থাকা সশস্ত্র ব্যক্তি, তাঁদের পোশাক, পাহাড়ি এলাকার সাদৃশ্য রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর সঙ্গে Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

এই ভিডিওর শেষের অংশে পাহাড়ের চূড়ায় ১২–১৩ জনের একটি গ্রুপের অরবিটিং প্যারালেক্স ড্রোন শটের (কোনো সাবজেক্টকে কেন্দ্র করে চারপাশে ঘুরে দৃশ্য ধারণ) দৃশ্য দেখা যায়। এতে একটি ক্রুশের মতো একটি কাঠামো মাঝখানে রেখে সবাইকে অস্ত্র হাতে পোজ দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে একজনের ড্রোন কন্ট্রোলার দেখা যায়। দুইজন ছাড়া বাকিরা সবাই একই ধরনের পোশাক পরা। তাদের কেউ কেউ ড্রোনের দিকে অস্ত্র তাক করে পোজ দিচ্ছিলেন। এই দৃশ্যে উপস্থিত প্রায় সবার অস্ত্রের ওপরের দিকে লাল কাপড়ের ফিতা বাঁধা। ভিডিওর শেষে ইংরেজিতে ‘DIRECTED BY, Input Title’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট।
Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট।

ভিডিওর ক্যাপশনটি রোমান হরফে বিদেশি ভাষায় লেখা। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘Kuki Minai singsina taoribase meitei Eikhoina touramladi Action nanghouroi.’। ক্যাপশনটির ভাষা সম্পর্কে জানতে গুগল ট্রান্সলেটেরের ভাষা শনাক্তকারী টুলের সহায়তা নেওয়া হয়। এটি ককবরক ভাষায় লেখা বলে জানায় গুগল। এটিকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করে বোধগম্য কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। ককবরক হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের জাতীয় ভাষা।

গুগল ট্রান্সলেটরের সহায়তা নিয়েও ভাষা বোঝা না গেলেও এতে কিছু পরিচিত শব্দ পাওয়া যায়। যেমন, ‘Kuki’, ‘meitei’, ‘Action’।

এসব শব্দগুচ্ছ গুগলে সার্চ করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে ২০২৩ সালের ২০ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেইতেই ও কুকি ভারতের মণিপুর রাজ্যে দুটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী। মণিপুরের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মেইতেই জনগোষ্ঠীর। অন্যদিকে ৪৩ শতাংশ লোক কুকি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাস। মেইতেই গোষ্ঠীর অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং কুকিদের অধিকাংশ খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারী। ভূমির অধিকার ও স্থানীয় প্রভাব নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ২০২৩ সালের মে মাসে মেইতেই জনগোষ্ঠীর কিছু লোক কুকি জনগোষ্ঠীর একটি গ্রাম ধ্বংস করার পর সেখানকার দুই নারীকে নগ্ন করে কুচকাওয়াজ করায়। এই ঘটনার পর মণিপুরের সংঘাতময় পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পায়। ভারতের রাজ্যটিতে এখনো অশান্তি বিরাজ করছে।

মনিপুরে সর্বশেষ সংঘাতের কারণ ছিল মেইতেই গোষ্ঠীর লোকদের তফসিলী জাতির ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্ত। এর প্রতিবাদে কুকি জনগোষ্ঠী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ২০২৩ ৩ মে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যটিতে জাতিগত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সহিংসতায় ২৫৮ জন নিহত এবং ৬০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ৪ হাজার ৭৮৬টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মন্দির ও গির্জাসহ ৩৮৬টি ধর্মীয় কাঠামো ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে বেসরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত সংখ্যা আরও বেশি।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া দীর্ঘ ভিডিওর শেষ দিকের কিছু দৃশ্যের কি–ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে Ashwini Shrivastava নামে একটি এক্স অ্যাকাউন্টে ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বরে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিও ক্লিপটি Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট হওয়া ভিডিওর ৩ মিনিট ১১ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড পর্যন্ত রয়েছে।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে Ashwini Shrivastava নামে এক্স অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে Ashwini Shrivastava নামে এক্স অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, ‘মণিপুরে কুকি সন্ত্রাসীরা মেইতেই হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মেইতেই গ্রামগুলোর কাছে খ্রিস্টান ক্রুশ চিহ্নসহ ক্যাম্প স্থাপন করছে। এটি কোনো জাতিগত সংঘাত নয়, বরং গত ১৮ মাস ধরে কুকি সন্ত্রাসীরা মেইতেই গ্রামগুলোতে ধারাবাহিকভাবে পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে।’ (ইংরেজি থেকে বাংলায় অনূদিত)

একই তথ্যে ভিডিওটি ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অরগানাইজারের এক্স অ্যাকাউন্টে, একই বছরের ২২ ডিসেম্বর TheBlueHills নামে এক্স অ্যাকাউন্টে এবং Front Fact News নামে একটি লিংকড ইন অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়।

ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অরগানাইজার ও TheBlueHills নামে এক্স অ্যাকাউন্ট এবং Front Fact News নামে লিংকড ইন অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট। ছবি: স্ক্রিনশট
ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন অরগানাইজার ও TheBlueHills নামে এক্স অ্যাকাউন্ট এবং Front Fact News নামে লিংকড ইন অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট। ছবি: স্ক্রিনশট

এ ছাড়া ভারতের হিন্দি ভাষার জাতীয় দৈনিক ভাস্করের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই দৃশ্যের একটি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, পাকিস্তান থেকে জম্মু ও কাশ্মীর এবং পাঞ্জাব হয়ে ভারতের মনিপুরসহ ৫টি রাজ্যে অবৈধ অস্ত্রের চালান আসছে। ভারতের উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলোতে অস্থিতিশীলতার তৈরি চেষ্টা করছে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা।

এই দৃশ্যে অস্ত্রে লাল ফিতা বাঁধার বিষয়টি জানার চেষ্টা করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ।

কুকি ও মেইতেই জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখ রেখে প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড সার্চ করলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির ওয়েবসাইটে গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবিতে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে থাকা অস্ত্রে লাল ফিতা বাঁধা দেখা যায়। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা, মণিপুরের বিজেপি মুখপাত্র মাইকেল লামজাথাং হাওকিপকে হুমকি দিচ্ছে কুকি জঙ্গি। ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট।

Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে এনডিটিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
Eshita Angom নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্টের ভিডিওর সঙ্গে এনডিটিভির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সাদৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একই তথ্য ও ভিডিওসহ ভারতের মণিপুর রাজ্যের বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম এলিট টিভির ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও পাওয়া যায়।

সুতরাং, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিচরণ’ দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, ভিডিওটি ভারতের মণিপুর রাজ্যের কুকি বিদ্রোহীদের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৫
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত