Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /ইন্দুরকানীতে দেবর-ভাবিকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি কি রাজনৈতিক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, ১৭: ২৫
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চরবলেশ্বর এলাকায় ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদারকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চরবলেশ্বর এলাকায় ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদারকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে হত্যার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নে চরবলেশ্বর এলাকায় গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার ও তাঁর ভাবি মৌকলি বেগমকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কারণে বিএনপি-জামায়েতের নেতা-কর্মীরা তাঁদের হত্যা করেছে—দাবিতে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে।

‘মনে রেখো বাংলাদেশ’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শুক্রবার (২৭ জুন) দিবাগত রাত ৩টা ৫ মিনিটে পোস্ট করা ভিডিওটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম হাওলাদার এর আপন ছোট ভাই, ইন্দুরকানি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহবায়ক শহিদুল হাওলাদার এবং তার ভাবি মুকুল বেগমকে আজ রাতে নিজ বাড়িতে কু*পি*য়ে হ*ত্যা করেছে জামাত-বিএনপি’র স*ন্ত্রা*সী*রা। এ সময় স*ন্ত্রা*সী*দে*র ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শহিদুল হাওলাদারের স্ত্রী রেহানা বেগম গুরুতর আহত হয়ে মৃ*ত্যু*র সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আওয়ামী লীগ করার অপরাধে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মীদেরকে নির্মমভাবে হ*ত্যা এবং কু*পি*য়ে জ*খ*ম করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ (বানান অপরিবর্তিত)

আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি ১৪ লাখ বার দেখা হয়েছে এবং ২ হাজার ৯০০টি রিঅ্যাকশন পড়েছে। এতে ৬৫৬টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৮ হাজার ৫০০ বার।

ভিডিওটির কমেন্টে এই হত্যাকাণ্ড ভিন্ন কারণে ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। আবার অনেকে দাবিটি সত্য মনে করেও কমেন্ট করেছেন। Sumon Syed নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছেন, ‘আল্লাহ তুমি হেফাজত করো এবং এই জালিমদের হাত থেকে দেশ কে রক্ষা করো।’ (বানান অপরিবর্তিত) Surjo Adhikari লিখেছে, ‘এত হিংসা করতে পারে মানুষ। ক্ষমতা যাওয়ার জন্য। আহারে।’ (বানান অপরিবর্তিত)

নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানির ফেসবুক পেজ থেকেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। এ ছাড়া, Abdullah Al Faisal নামের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকেও একই দাবিতে ভিডিওটি ছড়িয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আজকের পত্রিকায় একই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি আজ শনিবার (২৮ জুন) প্রকাশিত। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের চরবলেশ্বর এলাকায় পারিবারিক বিরোধের জেরে ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার (৫০) ও তাঁর ভাবি মৌকলি বেগমকে (৪৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলামের স্ত্রী রেহানা বেগম (৪০) গুরুতর আহত হয়েছেন।

আজকের পত্রিকার প্রতিবেদন। ছবি: স্ক্রিনশট
আজকের পত্রিকার প্রতিবেদন। ছবি: স্ক্রিনশট

আহত রেহানা বেগম বলেন, ‘রাতে হঠাৎ ইউনুসসহ চার-পাঁচজন আমাদের বাড়িতে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। আমার স্বামী ও ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং আমাকেও হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে আহত করে। ইউনুসের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ ছিল।’

ঘটনাটির বিষয়ে অধিকতর জানতে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের পক্ষ থেকে আজকের পত্রিকার পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি মো. তামিম সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে এই ঘটনা রাজনৈতিক কোনো কোন্দলের কারণে ঘটেনি। এটি পরকীয়ার জেরে ঘটেছে। অভিযুক্ত ইউনুসের বোন বা পরিবারের একজন নারীর সঙ্গে শহিদুল ইসলামের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। সেই নারীকে শহিদুল ইসলামের বিয়ে করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি বিয়েটি করেননি। যার কারণে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতির সম্পৃক্ততা নেই।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেহানা বেগমের সঙ্গেও কথা বলেছেন তামিম সরদার। রেহানা বেগম তাঁকে বলেছেন, ‘পারিবারিক বিরোধের জেরে ইউনুস চার-পাঁচজন লোক নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’ আজকের পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি বলেন, ‘রেহানা জানাননি যে এটি রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে। আমি এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমেও খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এই ঘটনায় বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তা ছাড়া অভিযুক্ত ইউনুসেরও কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।’

এ বিষয়ে ইন্দুরকানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মারুফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী ছিলেন—এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। এখানে কিছুটা পরকীয়া ও কিছুটা স্থানীয় বিরোধের বিষয় রয়েছে। এর আগে ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম স্বামী বিদেশ থাকে এমন বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে পরকীয়া করেছেন। ইউপি সদস্য হওয়ার কারণে সালিস বিচারেও কাজ হয়নি। এ ঘটনায় যিনি প্রধান আসামি, ইউনুস, সৌদি আরবে ছিলেন। দেড় মাস আগে তিনি দেশে আসেন। এসে শহিদুলের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর পরকীয়ার সম্পর্ক জানতে পারেন। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিস বিচারও হয়েছিল। এ নিয়ে হয়তো তাঁর মধ্যে ক্ষোভ ছিল। এর আগেও শহিদুল যাঁদের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করেছিলেন, তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাঁকে দা-কোড়াল দিয়ে কোপান। তখন শহিদুলের স্ত্রী ও ভাবি যাঁরাই এসেছিলেন, তাঁদের কুপিয়েছেন। এতে অন্য কোনো ইস্যু নেই।’

দৈনিক যুগান্তর, যমুনা টিভি, ঢাকা পোস্টসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে একই বিষয়ে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এসব প্রতিবেদনেও ঘটনাটি পারিবারিক বিরোধ ও পরকীয়ার জেরে ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিএনপি বা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত—এমন কোনো তথ্যও এসব প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।

সুতরাং, পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নে চরবলেশ্বর এলাকায় গতকাল রাতে ইউপি সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম হাওলাদার ও তাঁর ভাবি মৌকলি বেগমকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনাটি রাজনৈতিক নয়, পারিবারিক বিরোধ ও পরকীয়ার জেরেই এই হত্যাকাণ্ড।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

অপারেশন সিঁদুরে নেতৃত্ব দেওয়া অফিসার হচ্ছেন ভারতের র-এর প্রধান

পিআর পদ্ধতিতে ভোটাররা জানবেন না কে তাঁর এমপি, এটি বাংলাদেশের জন্য অনুপযুক্ত: সালাহউদ্দিন

নীলফামারীতে 'আটক' কুমিল্লার দুই সাংবাদিক

ডেঙ্গুতে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তার মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত