Ajker Patrika

ফ্যাক্টচেক /পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে যৌন নিপীড়ন—ডনের নামে ভুয়া প্রচার

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ২০: ২০
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে জেলের ভেতরে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের ধর্ষণ করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে জেলের ভেতরে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের ধর্ষণ করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জেলের ভেতরে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন—এই দাবিতে দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের নামে পেপার কাটিংয়ের একটি স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেটি একই ক্যাপশনে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ এবং এক্স অ্যাকাউটেও পোস্ট করা হয়েছে। ওই স্ক্রিনশটে ডন-এর লোগো ও ইমরান খানের ছবি রয়েছে। প্রকাশের তারিখ ৩ মে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতনের’ অভিযোগকারী এনজিও কর্মকর্তা ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকার সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটে পোস্ট করা স্ক্রিনশটটি বেশি ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে লেখা, ‘পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ইমরান এইচ খানকে জেলের ভিতর এক আর্মি মেজর রেফ করেছে। এটা পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।

কি বিভৎস?’

আজ রোববার বেলা ২টা পর্যন্ত এই পোস্টে ১১৮টি কমেন্ট পড়েছে এবং শেয়ার হয়েছে ৫৮ বার। এই পোস্টের রিঅ্যাকশন কাউন্ট হাইড করা অর্থাৎ গোপন রাখা হয়েছে। কমেন্টে অনেকে স্ক্রিনশটের সংবাদটি ভুয়া উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে সত্য মনে করে কমেন্ট করেছেন। Mridul Bhattacharjee নামের এক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে, ‘রেপ করলো এই বুড়া ইমরানকে?। (বানান অপরিবর্তিত) ‘Sree Dipongkar Sarkar লিখেছে, ‘ইমরান খান জন্য ঠিক আছে এটা।’ (বানান অপরিবর্তিত)

Nath Sumon, Rudra Deb নামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ক্যাপশনে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করা হয়েছে।

এ ছাড়া একই দাবিতে পাক–আমিরাত মিলিটারি হাসপাতালের (পিইএমএইচ) একটি রিপোর্টের ছবিও ছড়িয়েছে।

ভাইরাল স্ক্রিনশটের বিষয়ে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ দ্য ডনের ওয়েবসাইটের সার্চ অপশনে গিয়ে ছড়িয়ে পড়া শিরোনাম লিখে সার্চ করলে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি ডনের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে খোঁজ করেও এই শিরোনাম বা তথ্যে কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি।

পাশাপাশি যে স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, তাতে কিছু অসংগতিও পাওয়া গেছে। যেমন শিরোনামে লেখা আছে, ‘Leaked Medical Report Confirms Sexual Assault on Imran Khan in Custody by a Army Major’। এই শিরোনামের বাক্যে ‘Army’ শব্দের আগে ‘a’ ব্যবহার করা হয়েছে। Army শব্দের A অক্ষর ইংরেজি ভাষার একটি ভাওয়েল এবং নিয়ম অনুযায়ী ভাওয়েলের আগে ‘An’ বসে।

ইমরান খানকে জেলের ভেতরে সেনাবাহিনীর একজন মেজর ধর্ষণ করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
ইমরান খানকে জেলের ভেতরে সেনাবাহিনীর একজন মেজর ধর্ষণ করার দাবিতে ফেসবুক পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

এ ছাড়া এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে পাকিস্তানের অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ইমরান খানের কারাগারের ভেতরে ধর্ষণ হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে আফগানিস্তানের একজন ফ্যাক্টচেকার এবং ইন্টেল ফোকাস নামের একটি ফ্যাক্টচেকিং ইনেশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা কায়েস আলমদারের একটি এক্স পোস্ট পাওয়া যায়। তিনি তাঁর এক্স পোস্টে জানান, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাগারে থাকাকালীন তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে—দাবিতে এক্সে ছড়ানো মেডিকেল রিপোর্টটি বানোয়াট। কারণ, রিপোর্ট ও পোস্টে উল্লেখিত দুই সময়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে। মেডিকেল রিপোর্টে ৩ মে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই দাবিতে ছড়ানো পোস্টটি করা হয়েছে তার আগের দিন, পাকিস্তান সময় ২ মে রাত ১১টা ৪৩ মিনিটে।

আফগানিস্তানের ফ্যাক্টচেকার কায়েস আলমদারের এক্স পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
আফগানিস্তানের ফ্যাক্টচেকার কায়েস আলমদারের এক্স পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

কায়েস আলমদার এক্স পোস্টের আরেকটি রিপ্লাইয়ে তিনি ছড়িয়ে পড়া পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের কথিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে জানান, এখানে একই দাবির ডন পত্রিকার ছবি ছড়িয়েছে। তবে এটিও ভুয়া। এটি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে একটি অপপ্রচার।

আফগানিস্তানের ফ্যাক্টচেকার কায়েস আলমদারের এক্স পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট
আফগানিস্তানের ফ্যাক্টচেকার কায়েস আলমদারের এক্স পোস্ট। ছবি: স্ক্রিনশট

সুতরাং, কারাগারের ভেতরে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের যৌন নিপীড়ন করার দাবিটি সত্য নয়। এই দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো দেশটির সংবাদমাধ্যমের ডন–এর প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটটিও ভুয়া।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত