Ajker Patrika

অতিরিক্ত গরমে ঠান্ডা পানি পান স্ট্রোকের কারণ! ভাইরাল পরামর্শটির ভিত্তি কী

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
অতিরিক্ত গরমে ঠান্ডা পানি পান স্ট্রোকের কারণ! ভাইরাল পরামর্শটির ভিত্তি কী

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে জনজীবন। একটু স্বস্তির আশায় মানুষ নানা উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ বাতলে দিচ্ছেন এই গরমে করণীয় ও বর্জনীয়। গত ২১ এপ্রিল ‘আলকেমি-Alchemy’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এমনই একটি সচেতনতামূলক পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটিতে বেশ কিছু করণীয় ও বর্জনীয় কাজের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছালে খুব ঠান্ডা পানি পান করতে নিষেধ করেন চিকিৎসকগণ। কারণ এতে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে হঠাৎ স্ট্রোক হতে পারে।’ যদিও ফেসবুক পেজের এই পোস্টে কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয়নি। 

আবার ‘Ashik Ahamed’ নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৭ এপ্রিল (শনিবার) একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়, ‘হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে হলে ঠান্ডা পানি পান করা যাবে না। এই গরমে হঠাৎ করে ঠান্ডা পানি পান করলে জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে। এই তীব্র গরমে দাবদাহের সময় কাউকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য ঠান্ডা পানি যথেষ্ট।’ ৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি আজ বুধবার (১ মে) বেলা ৩টা পর্যন্ত ৪৩ লাখ বার দেখা হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে ৫৬ হাজারের বেশি। 

ঠান্ডা পানি পানে কি আসলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে বা ঠান্ডা পানি পান কি হিট স্ট্রোকের কারণ? খুঁজে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

ঠান্ডা পানি পানে কি আসলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি আছে? 
এই প্রশ্নের উত্তরের খুঁজে দেখা যায়, তীব্র গরমে ‘করণীয় ও পরিত্যাজ্য’ দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল পোস্টগুলোতে থাকা পরামর্শগুলো ইতিপূর্বে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ভাষায় এবং বিভিন্ন দেশ যেমন, ফিলিপাইন, ভারত, শ্রীলঙ্কায় প্রচার হয়েছে। 

যেমন, ২০২৩ সালে ফিলিপাইনে প্রচলিত অন্যতম ভাষা ‘তাগালোগ’ ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রায় সমজাতীয় কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। এখানে দাবি করা হয়, ‘চিকিৎসকেরা বলছেন, যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে, তখনই খুব ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এমন তাপমাত্রায় ঠান্ডা পানি পানে দেহের ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলো ফেটে যেতে পারে।’ 

গরমে ঠান্ডা পানি পানের সঙ্গে স্ট্রোকের কোনো সম্পর্ক নেই। ছবি: এএফপি তবে ফিলিপাইন কলেজ অব ইমার্জেন্সি মেডিসিনের সভাপতি ডা. রিচার্ড স্যান্টোস বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, পোস্টটিতে কিছু তথ্য ঠিক থাকলেও এটি স্ট্রোক এবং গরম আবহাওয়ায় ঠান্ডা পানি খাওয়ার মধ্যে একটি ভুল সংযোগ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘পোস্টটিতে উল্লেখিত কিছু দাবি সঠিক। ঠান্ডা পানি রক্তনালিকে সরু করে দেয় এটাও সত্য। কারণ, ঠান্ডার সংস্পর্শে এলে ওই তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া শরীরের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া। তবে গরম থেকে এসে ঠান্ডা পানি পান করলে সরাসরি স্ট্রোক ঘটবে এমন কোনো তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ 

রিচার্ড স্যান্টোস আরও বলেন, আগে থেকেই শারীরিক জটিলতায় ভোগা মানুষদের জন্য ঠান্ডা পানি পান বিপজ্জনক হতে পারে। তবে এটি খুব বিরল! 

ফিলিপাইনের নিউরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. হোসে প্যাকিয়ানো রেয়েস দেশটির সংবাদমাধ্যম র‍্যাপলারকে বলেন, গরমে ঠান্ডা পানি পান বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা সাধারণত সুস্থ মানুষদের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং ঠান্ডা পানি পানের উপকারিতা রয়েছে: যেমন, শরীর ঠান্ডা করা, অতিরিক্ত তাপ প্রতিরোধ করা এবং জ্বালাপোড়া কমানো। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, হৃদরোগের মতো নির্দিষ্ট কিছু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উচ্চ-তাপমাত্রার পরিবেশ থেকে আসা মাত্রই ঠান্ডা পানি পান করা উচিত নয়। কারণ এতে তাদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। 

একই দাবি ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে ছড়ালে এই বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দ্য কুইন্ট এবং ফ্যাক্টলি। 
দ্য কুইন্ট ২০২৩ সালে একটি প্রতিবেদনে জানায়, খুব ঠান্ডা পানি পান করলে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে হঠাৎ স্ট্রোক হতে পারে—দাবিটি নতুন কিছু নয়। ২০১৯ সালেও একই দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়েছিল। দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে দ্য কুইন্ট ভারতের ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিনের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. সুরঞ্জিত চ্যাটার্জির বরাত দিয়ে জানায়, উচ্চ তাপমাত্রার পরিবেশ থেকে আসা মাত্রই ঠান্ডা পানি খাওয়া উচিত নয়। 

কারণ, হুট করে শরীর ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। শরীরের তাপমাত্রা এবং ঠান্ডা পানির তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে এবং ঠান্ডা পানি খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা ভালো। সর্বোপরি এটি বিপজ্জনক নয় এবং কোনো রক্তনালীও এতে ফেটে যাবে না বা সংকুচিত হবে না। 

ফ্যাক্টলি জানায়, গরম পরিবেশ থেকে এসে ঠান্ডা পানি পান বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করাতে রক্তনালি ফেটে বা সংকুচিত হয়ে স্ট্রোক বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত জটিল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। 

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ র মিডিয়া কনসালটেন্ট এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত আধেয় লেখক ডা. কার্লা রবিনসন দেশটির সংবাদমাধ্যম ডব্লিউসিএনসিকে বলেন, গরম সংক্রান্ত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে বা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কেউ আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদেরকে দ্রুত ঠান্ডা করার মাধ্যমে চিকিৎসা করি। আর এসব ক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি পান করানো বা ঠান্ডা পানির মাধ্যমে কারও শরীরের তাপমাত্রা কমানো হচ্ছে প্রতিষেধক। 

ওপরে উল্লেখিত বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, গরম থেকে এসে ঠান্ডা পানি করলেই রক্তনালি ফেটে বা সংকুচিত হয়ে হঠাৎ স্ট্রোক হবে-এমন দাবি বিভ্রান্তিকর। 

যখন শরীরের তাপমাত্রা আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না তখন হিট স্ট্রোক ঘটে। ছবি: সিডিসির ওয়েবসাইট থেকে স্ক্রিনশট হিট স্ট্রোক কেন হয়? 
‘Ashik Ahamed’ নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজটিতে দাবি করা হয়, হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে ঠান্ডা পানি পান করা যাবে না। 

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’র ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, হিট স্ট্রোক হচ্ছে গরমজনিত সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থতা। যখন শরীরের তাপমাত্রা আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না তখন হিট স্ট্রোক ঘটে। এই অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে থাকে, শরীর ঘাম তৈরি করার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং শরীর শীতল হতে পারে না। এই অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ওঠে যেতে পারে। 

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে সিডিসি জানায়, কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে প্রথম কাজ হচ্ছে ওই ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা কমানো। এ জন্য সম্ভব হলে তাঁকে ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে গোসল করানো, শরীরের ত্বক ভিজিয়ে দেওয়া, ত্বকে ভেজা কাপড় জড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করতে হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক চিকিৎসাকেন্দ্র মায়ো ক্লিনিক হিট স্ট্রোকের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, গরম আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘ সময় অবস্থান, কঠোর পরিশ্রমের কাজ, গরমে অতিরিক্ত পোশাক পরা, অ্যালকোহল পান এবং পানি শূন্যতায় ভোগাকে। দেশটির আরেকটি অলাভজনক চিকিৎসাকেন্দ্র ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে হিট স্ট্রোক সংক্রান্ত আলোচনায় এর সঙ্গে ঠান্ডা পানি পানের কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। 

অর্থাৎ হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে ঠান্ডা পানি পান করা যাবে না—দাবিটি ভিত্তিহীন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৫
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্যাক্টচেক /অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৫০
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত