Ajker Patrika

লোভ

সম্পাদকীয়
লোভ

অসহায়ত্ব আর লোভের সংমিশ্রণে যে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ঝিনাইদহের শৈলকুপায়, তা এককথায় মারাত্মক। নিজেদের অজ্ঞতা আর লোভ তাদের দিয়ে এমন একটি কাজ করিয়েনিয়েছে, যার পরিণাম কী হতে পারে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা ছিল না। ফলে নিজেদের অজান্তেই তারা ফেঁসে যাচ্ছে এমন এক অপরাধে, যে অপরাধ তারা করেনি। 
ব্যাপারটা গল্পের মতো। একদল লোক হঠাৎ করে খুলুমবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প আর পাশের সরদারপাড়ায় এসে বলল, তারা এলাকাবাসীর জন্য বিকাশের অ্যাকাউন্ট করে দেবে।

এটুকু বললে নিশ্চয়ই কারও আগ্রহ জাগত না। আগ্রহ জাগানোর জন্য মালমসলা জোগাড় করতে হলো। সেগুলো ছিল লোভনীয়। রটিয়ে দেওয়া হলো, সিম কিনে বিকাশ অ্যাকাউন্ট করলে এই গরিব মানুষের প্রত্যেকেই কয়েক হাজার টাকার মালিক হয়ে যাবে। ব্যস! এ যেন ক্ষুধার্ত পেটে ধোঁয়া ওঠা কাচ্চি বিরিয়ানি! কেউ ভাবল না, কী এমন কাণ্ড ঘটেছে যার জন্য তারা অ্যাকাউন্ট খুললে বিকাশ কর্তৃপক্ষ যারপরনাই খুশি হয়ে তাদের অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার টাকা দিয়ে দেবে!

কেউ ভাবল না, এই প্রতারকের দল সিম হাতে দিয়েই আবার কেন তা তৎক্ষণাৎ ফিরিয়ে নিয়ে গেল। তখনই কেবল টনক নড়ল, যখন বিপদ এসে নিজের ঘরের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করল। প্রতারকেরা এসব সিম দিয়ে নানাজনের বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যখন তদন্ত হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, এই এলাকার গরিব মানুষদের নামে খোলা অ্যাকাউন্ট থেকেই প্রতারণা করা হচ্ছে।

যেখানে নিরক্ষরতা, যুক্তিহীনতা আর অসহায়ত্ব নিজের পরিচয়কে ম্লান করে দেয়, সেখানে এ ধরনের প্রতারণা এড়ানোর কি কোনো উপায় আছে? সবাইকে না হয় সচেতন করা হলো, শুরুতে সবাই সচেতন হলো। কিন্তু যখন আর্থিক লোভ দেখানো হবে—বলা হবে, মুফতে ঘরে আসবে টাকা, তখন লোভ সংবরণ করা কি খুব সহজ কাজ? পেটে ভাত জোটে না যাদের, তাদের সামনে অর্থের মুলা ঝুলিয়ে রাখলে সেই মুলা খাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হওয়াটাই স্বাভাবিক।

প্রচলিত আইনে এই অসহায় মানুষেরা সংকটে পড়ল। তারা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবে কি না, সেটা অনেকটা নির্ভর করছে প্রতারকেরা ধরা পড়বে কি না, তার ওপর। প্রতারকেরা যদি লুকিয়ে থেকে অকর্ম অব্যাহত রেখে যেতে পারে, তাহলে এ বিপদ কাটবে না। একটা উপায় আছে, যারা কিছু আর্থিক সুবিধা পাওয়ার আশায় প্রতারকদের কাছ থেকে মোবাইলের সিম নিয়েছিল, তাদের তালিকা করে তাদের নামে থাকা সিমগুলো প্রত্যাহার করা যায় কি না, তা ভেবে দেখতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রতারকদের ধরুন। প্রতারণা করার অভিনব পথগুলোকেও শুরুতে বন্ধ করতে সচেষ্ট হোন। নইলে এই গরিব দেশে লোভ এড়ানো শক্ত বলে বারবার বিপদে পড়বে দরিদ্র মানুষ। বেঁচে থাকার সংগ্রামের কাছে যুক্তি টেকে না। আর্থিক পরিবেশের উন্নতি ছাড়া এ অবস্থা বদলাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

ডাকসু প্রার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের হুমকি, সমালোচনার ঝড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত