Ajker Patrika

লন্ডন ‘ক্রিকেটের বাঁশিওয়ালা’ বাংলাদেশের তানভীর

ওমর ফারুক, ঢাকা
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২২, ১১: ১৮
লন্ডন ‘ক্রিকেটের বাঁশিওয়ালা’ বাংলাদেশের তানভীর

জার্মানির হ্যামিলন শহরের বিখ্যাত সেই বাঁশিওয়ালার গল্প সবারই জানা। যে বাঁশিওয়ালা সুরের জাদুতে মোহনীয় করে শহরকে ইঁদুরের উৎপাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। পরে তাঁর বাঁশির সুরে মুগ্ধ শহরের শিশুরা কোথায় যেন হারিয়ে যায়।

হ্যামিলন শহরের সেই বাঁশিওয়ালার চেয়ে একটু ভিন্ন ‘লন্ডন টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব’-এর বাঙালি কোচ তানভীর আহমেদ। তাঁর কোচিংয়ের প্রতি শিশুদের মুগ্ধতা দেখে স্থানীয় লোকজন তাঁকে ডাকেন ‘ক্রিকেটের বাঁশিওয়ালা’। কীভাবে লন্ডনে হলেন ক্রিকেটের বাঁশিওয়ালা—গল্পটা দুই দিন আগে তানভীর আহমেদ আজকের পত্রিকাকে শোনালেন, ‘এখানে মাত্র তিনটি শিশুকে দিয়ে কোচিং শুরু করেছিলাম। এখন আমার এখানে ১৫০টি শিশু কোচিং করে। গড়ে প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার শিশুকে নিয়ে কাজ করা হয়। এ কারণে এখানকার একজন আমাকে এ উপাধি দিয়েছেন।’

বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্ম তানভীরের। দেশে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেই ২০০৯ সালে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটও চালিয়ে যান। যখন বুঝলেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া অসম্ভব, তখন কোচিং পেশায় চলে আসেন তিনি। ‘এখানকার বাঙালি কোচ শহীদুল আলম রতন (সাবেক ক্রিকেটার ও কোচ) স্যারের মাধ্যমে ক্যাপিটাল কিডস ক্রিকেট ক্লাবের স্কুল পর্যায়ে কোচিং শুরু করি। এরপর পদোন্নতি পেয়ে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পাই’—বলছিলেন তানভীর।

লন্ডনের স্কুল পর্যায়ে কোচিং শুরু করা তানভীর এখন ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের বয়সভিত্তিক পর্যায়ের ক্রিকেটারদেরও দেখভাল করেন। কাজ করেন ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার সাজিদ ইকবাল মাহমুদ ক্রিকেট ক্লাবেও। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে কোচিংয়ের লেভেল-থ্রি পর্যায়ের শেষ দিকে আছেন তিনি। কাউন্টির অনূর্ধ্ব-১২ থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যন্ত ক্রিকেটারদের নিয়েও কাজ করেন তিনি। তাঁর কাজে মুগ্ধ খোদ ইসিবিও। প্রথম বাংলাদেশি কোচ হিসেবে পেতে যাচ্ছেন মিডলসেক্স কোচিং অ্যাওয়ার্ড ‘কোচ অব দ্য ইয়ার’।

পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়াটাও খুব সহজ ছিল না তানভীরের। ইংল্যান্ডের মিডলসেক্সের ভেতরে থাকা সব কটি ক্লাবের কোচদের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। তৃণমূল পর্যায়ে যাঁরা ভালো কাজ করছেন, তাঁদের মধ্য থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই কোচকে বছরের সেরা কোচ হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা।

কাউন্টির শিশুদের সঙ্গে কাজ করতে করতে তৃণমূল পর্যায় থেকে ক্রিকেটারদের পরিচর্যা করার দক্ষতা জানা হয়েছে তানভীরের। সুযোগ পেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বয়সভিত্তিক পর্যায়ে কাজ করার আগ্রহও আছে তাঁর। তানভীর বলেছেন, ‘আমার বাংলাদেশে কাজ করার ইচ্ছা আছে। আমার বাবারও স্বপ্ন, আমি যেন ভালো মানের ক্রিকেটের ব্র্যান্ডিং করি। বাংলাদেশে যদি বয়সভিত্তিক ক্রিকেট নিয়ে কাজের সুযোগ পাই, তাহলে আসব।’

আগামী ৭ সেপ্টেম্বর বিখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে মিডলসেক্সের পক্ষ থেকে কোচ অব দ্য ইয়ার পুরস্কার দেওয়া হবে তানভীরকে। মিডলসেক্সের তৃণমূল পর্যায়ের ক্রিকেটকে এগিয়ে নেওয়ার সম্মাননা হিসেবে পেতে যাওয়া তানভীরের এই পুরস্কারে গর্বিত হতে পারে বাংলাদেশও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত