Ajker Patrika

আ.লীগ নেতার ভাটায় অভিযান

কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ১৭: ১৩
আ.লীগ নেতার ভাটায় অভিযান

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় সংরক্ষিত বনে ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিল এলাকার সংরক্ষিত বনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মালিকানাধীন জিএলবি নামের ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালানো হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীনের নেতৃত্বে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এ অভিযান চলে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ভাটাটি বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। অভিযানে ভাটাটির আংশিক ধ্বংস করা হয়েছে এবং ইট পোড়ানো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ফাঁসিয়াখালী বিটের সংরক্ষিত বনে ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী অবৈধভাবে ভাটাটি স্থাপন করেন। সে সময় বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের আপত্তি সত্ত্বেও তা তিনি মানেননি। এ নিয়ে বন বিভাগ মামলাও করে। ২০০৯ সালে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগে বন বিভাগের করা একটি মামলায় তাঁর ছয় মাসের সাজাও হয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ভাটাটি বন্ধে ২০০৯ সালে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আইনি নোটিশ দেয়। এরপর ২০১০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। প্রায় ১২ বছর ভাটাটি বন্ধে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর নানা তৎপরতা চালালেও প্রভাবশালী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী তা পাত্তা দেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকায় ভাটাটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ভাটাটি বন্ধে নোটিশও দেওয়া হয়েছে।

বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন। এতে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বনের ভেতরে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইটভাটাটি স্থাপন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকে বন বিভাগের তরফ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। কিন্তু কাজ হয়নি।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জানান, ভাটাটি স্থাপনের পর থেকে সংরক্ষিত বনের বেশ কিছু পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। ওই ভাটায় বনভূমির পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের প্রায় আট একর খাসজমিও রয়েছে। ওই খাসজমিতে উপজেলা প্রশাসন মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঘর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু জমি দখলমুক্ত করতে না পারায় তা স্থগিত রয়েছে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অভিষেক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম আলোচিত এই ইটভাটা নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ তোলেন। তিনি ওই দিন সেখানে উপস্থিত স্থানীয় ইউএনওকে ভাটাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

সাংসদ জাফর আলম বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন দলের নাম ভাঙিয়ে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে ইটভাটা করে বনের কাঠ পুড়ছে এবং পাহাড় নিধন করে পরিবেশের ক্ষতি করছে।’

এ ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর মোবাইল ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত