Ajker Patrika

বরকতের মামা

আবদুল মালেক
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫২
বরকতের মামা

আবদুল মালেককে এমনিতে চেনার কথা নয় কারও। পুরানা পল্টন লেনের বিষ্ণুপ্রিয় ভবনে থাকতেন। আবুল বরকতের মামা তিনি। ঢাকায় আসার পর এই মামার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করতেন বরকত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট আবদুল মালেক চাকরি করতেন ইন্ডিয়ান অডিট বিভাগে। দেশ ভাগ হলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং এজিপিতে অ্যাকাউন্টস অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মামির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বরকত বলেছিল, ‘আজ ইউনিভার্সিটিতে বড় ধরনের গোলমাল হতে পারে।’

মামি মোহসিনা খাতুন বলেছিলেন, ‘তবে যাচ্ছ কেন?’

বরকত বলেছিল, ‘বেশি গোলমাল হলে আমি লাইব্রেরিতে চলে যাব।’

সেই যে বেরিয়ে গেল বরকত, আর ফিরে এল না। বিকেল ৪টার দিকে বরকতের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর এল বাড়িতে। ৫টায় অফিস থেকে ফিরে আবদুল মালেক পেলেন সেই সংবাদ। তক্ষুনি তিনি মেডিকেলে ছুটে গেলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে বরকতের কাছে যেতে দেয়নি। বরকতের শরীরে অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডা. কর্নেল গিয়াস উদ্দিন। তিনি এসে আবদুল মালেককে জানান, ওকে বাঁচানো যায়নি। আবদুল মালেক পুলিশের কাছে গিয়ে বললেন, ‘লাশ নিয়ে যেতে চাই।’

পুলিশ বলল, ‘লাশ নেওয়া যাবে না।’ পুলিশ অফিসার ওবায়দুল্লাহ বললেন, ‘দাফনের সময় আত্মীয়রা থাকতে পারবে।’

আবদুল মালেক বললেন, ‘দাফনের ব্যবস্থা আমরা করব। বরকতকে খয়রাতি কাফনে দাফন করতে দেব না।’

পুলিশ কর্তৃপক্ষ সে দাবি মেনে নিয়েছিল। তখন আবদুল মালেকের কাছ থেকে কবর কেনার টাকা আর কাফনের খরচের টাকা গ্রহণ করে পুলিশ।

রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে দাফন হয়। লাশ মেডিকেল থেকে আজিমপুর কবরস্থানে নেওয়ার জন্য পুলিশ জিপের ব্যবস্থা করে। পরিবারের কয়েকজন সদস্য, ডা. কাশেম, মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ডা. হাবিব উদ্দিন ছিলেন দাফনের সময়।

যখন কবর দেওয়া শেষ হয়, তখন ফজরের আজানের আওয়াজ ভেসে আসছিল।

সূত্র: মোস্তফা কামাল, ভাষা আন্দোলন সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন, পৃষ্ঠা ২৯০-২৯২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত