Ajker Patrika

ওরা শিখর হিমাদ্রির

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮: ৫২
ওরা শিখর হিমাদ্রির

ম্যাচ শেষ হওয়ার খানিক আগেও কাঠমান্ডুর রঙ্গশালার দশরথ স্টেডিয়াম ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই থেমে গেল ১৬ হাজার দর্শকের কোলাহল। তৈরি হলো অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা। সুনসান নীরবতার মাঝে এক প্রান্ত থেকে শোনা গেল ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ চিৎকার!

দশরথ স্টেডিয়ামে গতকাল যাঁরা লাল-সবুজ পতাকা হাতে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সমর্থন জানাতে গিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই পর্যটকেরাই পরে হয়ে গেলেন লাল-সবুজের পক্ষে উচ্চ কণ্ঠস্বর। তাঁরাই সাক্ষী হলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবলের অনবদ্য এক ইতিহাসের। মেয়েদের সাফে নতুন চ্যাম্পিয়ন এখন বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এখন বাংলাদেশ।  

নেপালের বিপক্ষে ফাইনালের আগে ফেসবুকে এক আবেগঘন লেখা লিখেছিলেন বাংলাদেশ দলের উইঙ্গার সানজিদা আক্তার। লিখেছিলেন, মায়ের অলংকার বিক্রি করে, শেষ সম্বল বিকিয়ে দিয়ে অনেক নারী ফুটবলার এখন জীবনযুদ্ধের একেকজন বড় যোদ্ধা। নেপালের বিপক্ষে শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সানজিদা। চেয়েছিলেন জীবনযুদ্ধে ক্লান্ত প্রিয় মানুষদের মুখে হাসি ফোটাতে। হাজার মাইল দূর থেকে সানজিদারা হয়তো বুঝতে পাচ্ছেন, নেপালের বিপক্ষে তাঁদের ঐতিহাসিক ৩-১ গোলের জয়ে শুধু স্বজনেরা নয়, হাসছে পুরো বাংলাদেশ। সাফের ফাইনালে মেয়েদের স্মরণীয় এই জয়ে বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি সময়ের উন্মাদনা ফিরবে আবারও। ধন্যবাদ পেতেই পারেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা।

সর্বশেষ বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দল সাফ জিতেছিল ২০০৩ সালে। ছেলেদের ওই সাফল্যের পর আরেকটা সাফের শিরোপার অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত দেশের ফুটবল সমর্থকেরা যখন আশাই ছেড়ে দিয়েছেন, তখনই পথ দেখালেন মেয়েরা। সেই কাঠমান্ডু, যেখানে ২৩ বছর আগে প্রথম বড় সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল দল। ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতেই প্রথমবারের মতো সাফ গেমসের ফুটবলে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ।

গোলাম রব্বানী ছোটনের নির্দেশনায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টপকেছে ভারত বাধা। ১৬ হাজার সমর্থকদের সামনে টপকেছে হিমালয় সমান নেপালকেও। নিজেদের মাত্র দ্বিতীয় ফাইনালেই প্রথম সাফ জিতল বাংলাদেশ। আর পঞ্চম ফাইনালে রানার্সআপ হওয়ার তিক্ত স্বাদ পেল নেপাল। অথচ দুরন্ত এই বাংলাদেশকে ঠেকাতে যেন বড় বাধা তৈরি করে রেখেছিল কাঠমান্ডুর আবহাওয়া। ভারী বৃষ্টিতে দশরথের মাঠ হয়েছিল ভারী। স্বাগতিক দর্শকদের সামনে র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪৫ ধাপ এগিয়ে থাকা নেপালের মেয়েরা করে গেলেন টানা আক্রমণ। পুরো ম্যাচে বাংলাদেশ সুযোগ পেয়েছে হাতে গোনা ৪-৫টি। তাতেই ‘বুলস আই’। থেমে গেল বাংলাদেশের বিপক্ষে নেপালের জয়রথ।

গতকালের ফাইনালে বাংলাদেশের শুরু হোঁচট খেয়ে। আগের চার ম্যাচে চার গোল করা স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না মাত্র ১০ মিনিটে মাঠ ছাড়লেন পুরোনো চোট জেঁকে বসায়। মাঠে নামলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র, আগের চার ম্যাচে যিনি খুব বেশি সময় মাঠে নামার সুযোগ পাননি। নেমেই বাজিমাত শামসুন্নাহারের। ১৪ মিনিটে মণিকা চাকমার ক্রস থেকে ডান পায়ের দারুণ এক ভলিতে নেপালের জালে বল ‘সুপার সাবে’র।

পিছিয়ে পড়ে যখন নেপাল ম্যাচে ফেরার হুমকি দিচ্ছিল, দ্বিতীয়বারের মতো জবাব কৃষ্ণা রানি সরকারের। নেপালি ডিফেন্ডারদের ভুলের সুযোগে ৪২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে কৃষ্ণাকে বল বাড়ান টুর্নামেন্ট সেরা সাবিনা খাতুন। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে অরক্ষিত পেয়ে মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি কৃষ্ণা।

টানা আক্রমণে নেপাল হুমকি দিচ্ছিল যেকোনো সময় ম্যাচে ফেরার। ৬৯ মিনিটে সেই শঙ্কাটাই সত্যি হলো। বাংলাদেশের বক্সে ডান প্রান্ত দিয়ে কোনাকুনি শটে স্বাগতিকদের ম্যাচে ফেরান আনিতা বাসনেত। এরপরই দেখা গেল বদলে যাওয়া বাংলাদেশের আসল চেহারা। গোল খেয়ে ভেঙে না পড়ে পাল্টা আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ৭৭ মিনিটে তেমন এক প্রতি আক্রমণ থেকে মণিকা চাকমার পাস ধরে নেপালি গোলরক্ষককে আরেকবার পরাস্ত করেন কৃষ্ণা।

আর সেই গোলেই শৃঙ্গ জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে গেল পুরো বাংলাদেশে, লেখা হলো নতুন কাহিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় ঝামেলা বাড়বে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত