Ajker Patrika

সুমনের ১৩ ডিসেম্বর

সেলিনা পারভীন
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৩১
সুমনের ১৩ ডিসেম্বর

সুমনের বয়স তখন আট। ছোট্ট ছেলে। ছোট্ট হলে কী হবে, সে বয়সেই ওকে শুনতে হচ্ছে গুলির শব্দ, কামানের হুংকার।

মায়ের সঙ্গে সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডে থাকত সুমন। মা সেলিনা পারভীনের সংগ্রামী জীবন। তখন ‘শিলালিপি’ পত্রিকার সম্পাদক। আগে কাজ করেছেন ‘ললনায়’। তাঁর পত্রিকায় লিখতেন প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শীতের রাত। শীতকাতুরে সেলিনা পারভীন শীতের দিনে মোজা আর স্কার্ফ ব্যবহার করতেন। ১৩ ডিসেম্বরও তিনি শীতের মধ্যে মোজা আর স্কার্ফ পরেছিলেন।

সেদিন শীতের সকালে উজির মামার সঙ্গে সুমন বাড়ির ছাদে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সেলিনা পারভীন তেল মাখিয়ে দিলেন ছোট্ট সুমনের শরীরে। ছাদের রোদে একটু খেলবে সুমন। তারপর মা ওকে নিয়ে যাবেন গোসল করাতে। ঢাকা শহরে তখন কারফিউ। যুদ্ধ তখন শেষের পথে।

একটা গাড়ি অদূরে খান আতার বাড়ির সামনে দাঁড়াল। ফিয়াট মাইক্রোবাস। দেয়ালের ফাঁক দিয়ে তাঁরা তিনজন গাড়িখানা দেখলেন। তারপর সুমন মায়ের সঙ্গে গোসল করতে গেল।

এরপর আবার গাড়ির শব্দ। এবার গাড়ি থামল সেলিনা পারভীনদের বাড়ির সামনে। ছাদে দাঁড়িয়ে দেয়ালের ফাঁক দিয়ে তাঁরা দেখলেন, কয়েকজন একই রঙের পোশাক পরা ও রুমালে মুখ ঢাকা মানুষ তাঁদের বাড়ির কলাপসিবল গেটের কড়া নাড়ছে। পাশের ফ্ল্যাটের এক ভদ্রলোক দরজা খুলে দেন। ওরা তাঁকে জিজ্ঞেস করে, ‘সেলিনা পারভীন কোথায় থাকে?’

ভদ্রলোক সেলিনা পারভীনের ফ্ল্যাটটি দেখিয়ে দেন। কড়া নাড়লে সেলিনা পারভীন দরজা খুলে দেন। সুমন দাঁড়ায় মায়ের কোল ঘেঁষে। সেলিনাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে লোকগুলো। সেলিনার কোমরে একটা গামছা ছিল, সেটা দিয়ে ওরা তাঁর চোখ বাঁধল। তারপর নিয়ে গেল অজানার উদ্দেশ্যে।

ছোট সুমন বুঝতে পারল না, কী হয়েছে। শুধু বিজয়ের উল্লাস যখন সবার অবয়বে, তখন রায়েরবাজারে পাওয়া যায় সেলিনা পারভীনের লাশ, ১৮ ডিসেম্বরে। ওই মোজা আর স্কার্ফ দেখেই তাঁকে শনাক্ত করা হয়।

সূত্র: গুণীজনওআরজিডটবিডি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত