Ajker Patrika

বাসে সর্বনাশ

সম্পাদকীয়
বাসে সর্বনাশ

টিআইবির গবেষণাকে আমলে নেবেন কি নেবেন না, সে আপনার ব্যাপার। কিন্তু আমাদের দেশে পরিবহন খাতে যে ব্যাপক দুর্নীতি হয়, সে কথা আপনি জানেন না, এমন নয়। আপনি মোটেও অবাক হন না, যখন দেখেন এই চাঁদাবাজির সঙ্গে দেশের বহু কর্তৃপক্ষ, বহু রাজনৈতিক নেতার সংশ্লিষ্টতা আছে। আপনি মেনে নিয়েছেন, যস্মিন দেশে যদাচার। যদি ঘুষ কিংবা চাঁদাবাজিই হয়ে ওঠে কপালের লিখন, তখন সততার বুলি কপচে সেই বৈতরণি পার হওয়া যাবে না।

কী বলছে টিআইবির গবেষণা? বলছে, বাসে বছরে চাঁদাবাজি আর অনিয়মের মাধ্যমে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা আদায় করা হয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে এই টাকা আদায় করা হয়। আর এই টাকার নির্দিষ্ট ভাগ পান দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএর কর্মকর্তা ও কর্মচারী, মালিক-শ্রমিক সংগঠন, পৌর অথবা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, যাঁরা ন্যায় ও অন্যায়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন পরিবহনব্যবস্থা, তাঁদের প্রায় সবার উপস্থিতি আছে এই টাকা খাওয়া মানুষের তালিকায়। এখানে শুধু নেই যাত্রী, অর্থাৎ সেবা পাওয়া যার অধিকার। প্যাটার্নটাই এমনভাবে গড়ে উঠেছে যেন অবৈধ ভাগ-বাঁটোয়ারার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং এই খাত থেকে লোপাট হতে থাকে টাকা, যে টাকা আসলে বহু পরিশ্রম করে আয় করে সাধারণ যাত্রী। চাঁদা নিশ্চয় মালিক নিজের পকেট থেকে দেন না, চাঁদার টাকাটা উঠে আসে যাত্রীসেবার মান খারাপ করে, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে।

অদ্ভুতভাবে এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই সব মানুষ ও সংস্থা। দলীয় নেতার নাম ধরে যখন চাঁদাবাজি হয়, তখন ভয়ে কেউ কথা বলে না। দেওয়াটাই যেন নিয়ম। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা তক্কে তক্কে থাকেন পার্কিং সমস্যার জন্য। রাস্তায় পার্কিং করলেই তাঁরা চলে আসেন এবং টাকা দাবি করতে থাকেন। আর ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করা হলে মামলা না দেওয়ার কথা বলে একশ্রেণির ট্রাফিক পুলিশ সদস্য হাতিয়ে নেন পয়সা। গবেষণা বলছে, হাইওয়ে পুলিশ আর ট্রাফিক পুলিশ বছরে ৮৭ কোটি টাকা লোপাট করছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে যে চাঁদাবাজি চলে, তা থেকেও পরিত্রাণ নেই কারও।

দেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যখন বাস পরিবহনের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন, তখন সেখানে সদাচারের মূল্য থাকবে—এমনটা ভাবা বাতুলতা। বাসের মালিকপক্ষও ধোয়া তুলসীপাতা নয়। বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকে না, নিবন্ধন থাকে না, চালকদের লাইসেন্স থাকে না—সে এক বিতিকিচ্ছির ব্যাপার। যেহেতু ঘুষ দিলেই সবকিছু মসৃণভাবে চলে, তাই কেউ আর নিয়মকে সমীহ করে না। ঘুষ-দুর্নীতিই হয়ে ওঠে রক্ষাকবচ। আইনের রক্ষকেরা, সেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া রাজনীতিবিদেরা, সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবাধে জড়িয়ে পড়েন এই ঘৃণ্য ব্যবসায়।

এই অনিয়মকে ধাক্কা দিতে হলে যে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রয়োজন, সেই অঙ্গীকার আমাদের রাজনীতিতে ছিল না কখনো। কখনো আসবে কি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল আজ, যেভাবে দেখবেন

মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, দেখতেও খারাপ: ট্রাম্প

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত