Ajker Patrika

পর্যটকদের ঝোঁক চরে

সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাশন (ভোলা)
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫২
পর্যটকদের ঝোঁক চরে

বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত চর কুকরি-মুকরি। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় এই চরটি অবস্থিত। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার অন্তর্গত কুকরি-মুকরি ইউনিয়নটি। বিস্তীর্ণ শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল এবং প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের একটি সৈকত নিয়ে এ চর গঠিত।

এত সুন্দর মোহনাটা বর্ষাকালে উত্তাল হয়ে ওঠে। মেঘনার এই মোহনাতেই রয়েছে অনেক চর। এসব চরের মানুষের জীবন সব সময়ই সংগ্রামমুখর। মেঘনার সঙ্গে লড়াই করে মানুষ কখনো জেতে, কখনোবা আত্মসমর্পণ করে অসহায়ের মতো।

পর্যটক টানতে সরকারি-বেসরকারিভাবে চর কুকরি-মুকরিতে নানা সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেছে। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কোস্টাল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার কাম রেস্টহাউস। এ ছাড়া পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) বেশ কিছু প্রকল্পের আওতায় নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে কয়েকটি ‘হোম স্টে’ গড়ে তোলা হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চর কুকরি-মুকরিতে পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বেসরকারিভাবে ওয়াকওয়ে, জিপ ট্র্যাকিং, স্পাইডার ট্র্যাকিং ও ঝুলন্ত ব্রিজেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল ভূখণ্ড থেকে পুরো চর ঘুরে বেড়ানোর জন্য সরকারিভাবে বনের মধ্য দিয়ে দৃষ্টিনন্দন একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

এ শীতে ভ্রমণপিপাসুদের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু ভার্জিন বিচ তাড়ুয়া। এখানে যত দূর চোখ যায় দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রসৈকত। বঙ্গোপসাগরের ঢেউগুলো আছড়ে পড়ে তাড়ুয়ার বুকে। পর্যটকেরা অনেকেই এখানে তাঁবু খাঁটিয়েও থাকতে পারবেন। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান স্থানীয়রা। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ট্রলার ভাড়া করে দলবেঁধে ঘুরতে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। এ যেন ঈদের আমেজ। কেউবা স্পিডবোটে করেও ঘুরছেন। শনিবার সকালে এ চিত্র দেখা গেছে চর কুকরি-মুকরি দ্বীপে।

কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ভ্যালু চেইন প্রজেক্ট ম্যানেজার এরফান আলী বলেন, ‘অন্য দ্বীপ থেকে তাড়ুয়ায় আসার সুবিধার্থে পিকেএসএফের “চর কুকরি-মুকরিতে কমিউনিটিভিত্তিক ইকো টুরিজম উন্নয়ন” শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন উপপ্রকল্পের আওতায় সুন্দর একটি বাঁশের জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাড়ুয়া ছাড়াও চর কুকরি-মুকরিতে আসা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি পর্যটক স্পট হচ্ছে নারকেলবাগান। চর কুকরি-মুকরি থেকে ছোট নৌকা, স্পিডবোট ও ট্রলারে করে ম্যানগ্রোভ বনের ভেতর দিয়ে ভ্রমণপিপাসুরা চলে যেতে পারবেন নারকেলবাগানে। এখানে আসা পর্যটকেরা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনের সৌন্দর্যও দেখতে পাবেন। বিকেল কিংবা সন্ধ্যার দিকে বনের ধারে হরিণের দলের দেখা মিলবে।’

উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস বলেন, ‘তাড়ুয়ার মতোই সরকারি-বেসরকারিভাবে নারকেলবাগানেও পর্যটকদের বিনোদনের জন্য বেশ কিছু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে নারকেলবাগানের দোলনায় বসে নদীর জোয়ার-ভাটা উপভোগ করার দৃশ্য আজীবন মনে রাখার মতো। এখানে আরও আছে ছনের তৈরি বিশ্রামকেন্দ্র। বন বিভাগের উদ্যোগে এই চরে একটি পাকা ঘাট তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও বসার স্থান। ভাটার সময় নারকেলবাগানে মাছ ও পোকামাকড় খেতে উড়ে আসে বক, সিগালসহ নানা ধরনের পাখি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত