Ajker Patrika

বদমায়েশির চারণক্ষেত্র

সম্পাদকীয়
বদমায়েশির চারণক্ষেত্র

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা কি ভয় পান নাকি কমিশন পান? হতে পারে, প্রথমে ভয় পান, তারপর কমিশন খান। হয়তো প্রভাবশালীদের কথা না শুনলে তাঁদের নিগৃহীত হতে হবে! কে জানে! রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিংবা রক্তের প্রয়োজন হলে কেন তাঁরা নির্দিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে দেন, সেটা কি বোঝা কঠিন? আরও ভয়াবহ সংবাদ হলো, উচ্চমূল্যে এই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান দুটি থেকে পরীক্ষা না করালে কিংবা রক্ত না নিলে রোগীর বারোটা বাজবে। ডাক্তার সাহেব সে রিপোর্ট গ্রহণ করবেন না, সে রক্ত রোগীর শরীরে ঢুকবে না!

জীবন যে কখনো কখনো চলচ্চিত্রের চেয়েও নাটকীয়, সেটা এ ধরনের কিছু ঘটনায় বোঝা যায়। ভেবে দেখুন, খোদ ঢাকা মেডিকেল কলেজটাকেই বানিয়ে ফেলা হয়েছে বদমায়েশির চারণক্ষেত্র। এখানে ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারাও আছেন। আর তাঁদের পাইক-বরকন্দাজ হয়ে আছেন ওয়ার্ড বয়ের দল। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে রিপোর্ট বা রক্ত নিলে খবর আছে!

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, রোগীদের প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে যে রক্ত কিনতে হয়, তা থেকে প্রতিবারই কমিশন পান সংশ্লিষ্ট ওটির চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের কেউ কোনো দিন এই অব্যবস্থার জন্য প্রতিবাদ করেছেন—এমন খবর কখনো শুনেছি বলে মনে পড়ে না।

চিকিৎসা বহু আগে থেকেই বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে, সেটা না জানার কোনো কারণ নেই। এবং এই বাণিজ্য নিচু দরের বাণিজ্য নয়। যথেষ্ট ওজনদার বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের সংস্পর্শে আসতে হয় লাজ-লজ্জা ভুলে। এই বাণিজ্য করার প্রাথমিক শর্ত হলো বেহায়া, অমানবিক এবং নিষ্ঠুর হতে হবে। টাকা কামানোর ধান্ধাটাই হতে হবে প্রধান। চুলোয় যাক রোগীর স্বাস্থ্য, চুলোয় যাক সাশ্রয়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা। চুলোয় যাক রোগীর আর্থিক অবস্থা। সবকিছু ভুলে সবার আগে দরকার অথেনটিক আর অ্যাকটিভ নামের কসাইদের সংস্পর্শে আসা। নইলে ডিএমসিতে সেবা পাওয়ার ঠিকানা বহুৎ দূর হ্যায়!

এই দুই প্রতিষ্ঠানের তিনজন মানুষের নাম এসেছে সংবাদে। স্বাচিপের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ আফজালুল হক রানা, ছাত্রলীগ নেতা এবং সাবেক নেতা মারজুক এবং রাশেদ এই ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রভাবশালী এক চিকিৎসকের মাধ্যমে তাঁরা অন্য চিকিৎসকদের প্রভাবিত করেন।

বলে দেওয়ার দরকার পড়ে না, ক্ষমতার প্রভাবেই তাঁরা এই বদমায়েশি চালিয়ে যেতে পারছেন। ডিএমসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সহজে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার জন্য মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে আসে। সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, এই ভরসায় মানুষ আশায় আশায় থাকে।

কিন্তু ডিএমসির অস্ত্রোপচার কক্ষগুলো, কিংবা অন্তর্বিভাগ বা ইনডোর এলাকা যখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে নেয়, তখন বুঝতে হবে, এই হাসপাতালটিরই ভয়াবহ অসুখ হয়েছে। এই অসুখ থেকে নিস্তার পাওয়া সহজ নয়। বদমায়েশির এই চারণক্ষেত্র সমূলে উৎপাটন করতে হলে যা করা দরকার, তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানে। কিন্তু সে কাজটি কেন কর্তৃপক্ষ করে না, সেটাও কিন্তু সাধারণ মানুষের অজানা নয়! 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত