Ajker Patrika

ওষুধের কাঁচামাল নিয়ে উদ্বেগ

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ১০: ১৬
ওষুধের কাঁচামাল নিয়ে উদ্বেগ

দেশের ওষুধশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটে অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রেডিয়ান্ট (এপিআই) উৎপাদনে সব ধরনের শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে ব্যর্থ হলে সংকটে পড়বে দেশের ওষুধশিল্প।

জানা গেছে, দেশের চাহিদা পূরণে এখনো ৯৭ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধ তৈরির কাঁচামাল বিনা শুল্কে আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। ২০৩২ সাল পর্যন্ত এই সুযোগ থাকছে। কিন্তু ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে এলে বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুযোগ থাকছে না। ফলে দেশ কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে না পারলে শুল্ক পরিশোধ করেই কাঁচামাল আমদানি করতে হবে। তখন দেশে তৈরি ওষুধের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবে বলেছেন, এপিআই উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে সমুদয় মূল্য সংযোজন কর এবং উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি ও স্থানীয়ভাবে ক্রয়ের ক্ষেত্রে আগাম করসহ মূসক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কাঁচামাল উৎপাদনে শুল্ক ছাড়ের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম সফিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিল্প প্লট বুঝে পেলেও এখনো কেউ কাঁচামাল উৎপাদন শুরু করেনি। আগামী দেড়-দুই বছরের মধ্যেই ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, দেশে কাঁচামাল উৎপাদনের সক্ষমতার জন্য ২০০৮ সালে সরকার মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় ২০০ একর জমির ওপর একটি এপিআই শিল্প পার্কের কাজ হাতে নেয়। নানা জটিলতায় গত বছর এপিআই পার্কের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। এপিআই শিল্প পার্কে ৪২টি শিল্প প্লট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ২৭টি ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্লটগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে সেখানে এখনও উৎপাদন শুরু হয়নি। ফলে বিনা শুল্কে কাঁচামাল পাওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে।

বাজেটে এপিআই উৎপাদনে ব্যাপক ছাড় ও দেশে সক্ষমতা অর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মোক্তাদির বলেন, ‘আমরা ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারব। ট্রিপস সুবিধা থাকার সময়েই যাতে দেশে উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করা যায়, সেটি মাথায় রেখেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘বাণিজ্যসংক্রান্ত মেধাস্বত্ব’ (ট্রিপস) আইনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ৯৫ ভাগ ওষুধের কাঁচামালে পেটেন্ট ছাড় পেয়ে আসছিল। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটলে এই সুবিধা আর থাকবে না। তখন ওষুধ উৎপাদনে বিদেশি পেটেন্ট ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে রয়্যালটি বা ফি দিতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে নিজেদের কাঁচামাল তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হালিমুজ্জামান বলেন, ট্রিপস সুবিধা থাকাকালীন এপিআই উৎপাদনে তাঁরা জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

জানা গেছে, দেশে এক সময় ৯৮ শতাংশ ওষুধই আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হতো। ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতির কারণে উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি পণ্যটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত