Ajker Patrika

আড়ত ভরা রুপালি ইলিশ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ১১
আড়ত ভরা রুপালি ইলিশ

মা ইলিশ শিকার বন্ধে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে পদ্মায়। সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত শুক্রবার ভোর থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া মৎস্য আড়তে ছিল ইলিশে সয়লাব। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো আড়ত।

গত শুক্রবার সকালে মৎস্য আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই বাঁধভাঙা স্রোতের মতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্রেতারা ইলিশ কিনতে ভিড় করছেন এখানে। পদ্মার এই ইলিশের দাম ছিল বেশ চড়া। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু ছোট ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। দেড় কেজি ওজনের বড় ইলিশ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ৭০০ থেকে ৮০০ এবং ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মাত্র দুই ঘণ্টায় প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে বলে জানান আড়তদারেরা। মাওয়া মৎস্য আড়তের সদস্য ইলিশ বিক্রেতা জীবন দাস বলেন, শুক্রবার ভোর থেকে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি থাকায় বেশ ভালো দামে নির্ধারিত সময়ের আগেই সব মাছ বিক্রি হয়ে গেছে।

ঢাকা থেকে মাওয়া মৎস্য আড়তে ইলিশ কিনতে আসা এক ক্রেতা শামসুদ্দিন আলম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বাজারে কোনো ভালো ইলিশের দেখা মেলেনি এত দিন, তাই ঢাকা থেকে মাওয়া মৎস্য আড়তে ইলিশ কিনতে এসেছি। তবে বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ থাকলেও দাম আশানুরূপ নয়।’

মাওয়া মৎস্য আড়তের সাধারণ সম্পাদক মো. চাঁন মিয়া মাতবর বলেন, ভোর রাতে যেভাবে আড়তে ইলিশ এসেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে পদ্মা ইলিশে ভরপুর রয়েছে এ বছর। তাই রুপালি ইলিশে ভরে গেছে আড়ত। পাইকারদের পাশাপাশি শৌখিন ক্রেতারাও আসছেন এখানে ইলিশ কিনতে। অনেক ক্রেতা থাকায় দাম বেশি।

এদিকে ঐতিহ্যবাহী মাওয়া মৎস্য আড়তটি সরিয়ে নিতে হবে ৫ নভেম্বরের মধ্যে। পদ্মা সেতুর কাজের জন্য সেতু বিভাগ আড়তটি সরিয়ে নেওয়ার নোটিশ দেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আড়তদারেরা।

আড়তদার মো. আ. মজিদ শেখ ও হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে আড়তটি রয়েছে। আমরা সরকারের থেকে লিজ নিয়ে এখানে আড়তদারি করছি দীর্ঘদিন। হঠাৎ করে আমাদের ১৫ দিন সময় দিয়ে ৫ নভেম্বরের মধ্যে উঠে যেতে বলেছে। আমাদের এত বড় একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ১৫ দিনের মধ্যে আমরা কীভাবে উঠে যাব, তা বুঝতে পারছি না।’

গত বছর ১৪ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও এবার হয়েছে ৪ অক্টোবর থেকে। এতে এই বছর নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন সময়ে পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়নি এসব মা ইলিশ, তাই এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই।

এ বিষয়ে মাওয়া মৎস্য আড়তের সভাপতি শ্রী ছানা রঞ্জন দাস বলেন, বাজারে ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেড়েছে। মাওয়া মৎস্য আড়তে এখন পদ্মার ইলিশের পাশাপাশি দেখা মিলছে উপকূলীয় চাঁদপুরের ইলিশসহ সব ধরনের দেশি মাছের। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন যে পরিমাণ ডিমওয়ালা ইলিশ মিলছে পদ্মায়, তাতে এ বছর ইলিশের উৎপাদন অনেকটাই কমে যাবে বলে তিনি মনে করছেন।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, গেল মৌসুমে ১ হাজার ৯৭২ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে এ জেলায়। এ বছর আরও বেশি উৎপাদনের আশা করছেন তাঁরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বছর ২২ দিনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে সফলতা ৮০ ভাগের বেশি হবে। এ বছর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং ও মেঘনায় বেপরোয়াভাবে ইলিশ নিধন করা হয়েছে। তার পরও ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত