Ajker Patrika

বাড়তি ভাড়া য় চলছে বাস

কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২১, ১২: ৫৮
বাড়তি ভাড়া য় চলছে বাস

কুমিল্লায় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের আহ্বানে চলছে অঘোষিত বাস-ট্রাক ধর্মঘট। এর মধ্যে চৌদ্দগ্রামে গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা-ফেনী পথে চলাচল শুরু করেছে যমুনা পরিবহনের বাস। কিন্তু তারা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন।

এদিকে কুমিল্লা নগরীর তিনটি বাসটার্মিনাল জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা ও চকবাজার থেকে কোনো বাস ছেড়ে না গেলেও মহাসড়কে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে যাত্রী অনুপাতে বাসের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়ায় মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে যেতে হয় যাত্রীদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা পরিবহনে কুমিল্লা থেকে চৌদ্দগ্রাম ৪০ টাকা এবং ফেনী পর্যন্ত নেওয়া হতো ৮০ টাকা। কিন্তু শনিবার দুপুরের পর থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৭০ টাকা এবং ফেনী পর্যন্ত ৬০ টাকা বাড়িয়ে ১৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে যমুনা ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের অজান্তে চলছে বাস। সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাদের আওতাধীন পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমিল্লা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজারে আসা যাত্রী আবদুল কাদের বাবলু বলেন, এই বাসে আগে ভাড়া আদায় করে ট্রান্সপোর্টের নিজস্ব টিকিট দিত। কিন্তু গতকাল তাঁর কাছ থেকে জোর করে ৭০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে। নিজস্ব টিকিটের বদলে ‘বিরতিহীন’ নামক একটি টিকিট তাঁকে দেওয়া হয়েছে। ভাড়া দ্বিগুণের বিষয়ে জানতে চাইলে বাসের সহযোগী তাঁকে জানান, তেলের দাম বেড়েছে, তাই ভাড়াও বেড়েছে। কিন্তু এসব বাস ডিজেলে নয় বরং গ্যাসে চলে বলে জানা গেছে।

তোফায়েল নামক আরেক যাত্রী বলেন, ‘ফেনী থেকে কুমিল্লায় আসার সময় যমুনা পরিবহন তাঁর কাছ থেকে ১৪০ টাকা ভাড়া আদায় করেছে। আমি প্রতিবাদ করলে তাঁরা ডিজেলের দাম বাড়ার অজুহাত দেন।’

যমুনা পরিবহনের সোহেল নামে এক সহযোগী বলেন, মালিকদের নির্দেশেই ভাড়া বেশি আদায় করছেন তাঁরা। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

যমুনা ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক হারুন অর রশীদ মজুমদার বলেন, ‘আমরা ভাড়া বৃদ্ধি করি নাই। সড়কে এখন যাঁরা গাড়ি চালাচ্ছে এটা তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে চলছে।’

যমুনা ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী মনসুর ফারুক বলেন, ‘ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়নি। সরকারও আমাদের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়নি। আমি খোঁজ নিয়ে ওই সব বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে জেলা প্রতিনিধি জানান, মহাসড়কের পদুয়ার বাজার, ময়নামতি সেনানিবাস, আলেখার চরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে বেলা বাড়ার সঙ্গে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে।

লাকসাম থেকে আসা যাত্রী জহিরুল হক বলেন, অনেক ঝামেলা সামলে কুমিল্লা নগর পর্যন্ত এসেছেন। যাবেন ঢাকায়। তিনি দেশের অর্থনীতি রক্ষায় গণপরিবহন সচল করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

অপর যাত্রী মাসুদুর রহমান বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় যাবেন। পরিবহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। সড়কে বাস নেই। মাইক্রোবাসসহ যা চলছে তাতে আসনের তুলনায় যাত্রী অনেক বেশি তোলা হয়েছে।

নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ গণপরিবহন বন্ধের সুযোগে ছোট যানগুলো আকাশচুম্বী ভাড়া দাবি করছে।’

কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী নির্দেশের আগ পর্যন্ত আমরা বাস বন্ধ রাখব।’ মহাসড়কে কিছু বাস চলাচল করছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কিছু বাস চলতে দেখা যায়। এগুলো আমাদের টার্মিনালের নয়। অন্য জেলা থেকে এসে চালকেরা যাত্রী বহন করছেন।’

কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পরিবহন মালিকেরা। তাই লোকসান দিয়ে বাস চালাতে চাচ্ছেন না তাঁরা।’ তিনি আরও বলেন, আজ রোববার ঢাকায় বিআরটিএ সড়ক ও পরিবহন মালিক সমিতি ফেডারেশনসহ অন্যান্য নেতারা আলোচনায় বসবেন। এতে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত