Ajker Patrika

দখলে কমছে মাঠ শিশুরা হারাচ্ছে সোনালি শৈশব

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২২, ১৫: ২৩
দখলে কমছে মাঠ শিশুরা হারাচ্ছে সোনালি শৈশব

তখন আকাশটা আরেকটু নীল ছিল। ইট-কংক্রিটের এ শহরে আরেকটু খোলা বাতাস ছিল। দুরন্ত শৈশবের উচ্ছলতা ছিল ছোট-বড়, মাঝারি খেলার মাঠ ঘিরে। বাড়ির সামনের একচিলতে উঠানেও এলিয়ে দেওয়া যেত ধুলোমাখা গা। নব্বইয়ের দশকে ঢাকা শহরের সেই সুখস্মৃতিই মনে করতে থাকলেন মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা সবুর খান (৩৭)। তবে সবুর খানের আক্ষেপটা হচ্ছে, যে সোনালি শৈশব তিনি পার করে এসেছেন, পরবর্তী প্রজন্ম সেটা পাচ্ছে না।

আজকের পত্রিকাকে সবুর জানান, তাঁর শৈশবের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল মালিবাগ আবুল হোটেলসংলগ্ন খিলগাঁও শিশুপার্কে। কিন্তু ২০০০ সালের দিকে মাঠটি দখল হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে গাড়ির গ্যারেজ রয়েছে।

মোশাররফ হোসেনের (৪৮) জন্ম কলাবাগান এলাকায়। তাঁর শৈশব, কৈশোরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় এই মাঠে খেলাধুলা করেছি। সম্প্রতি এ মাঠে কলাবাগান থানার ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ নিউ মডেল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত হোসেন তুষার (১১) বলে, ‘মাঠে এখন কাঁটাতারের বেড়া। খেলতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। আমরা মাঠ ফেরত চাই।’ সম্প্রতি মাঠ দখলের এমন খবর আজকের পত্রিকাসহ বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মোট ২৩৫টি খেলার মাঠ রয়েছে। সেগুলোকে ধরন অনুসারে ৫ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সরকারি উন্মুক্ত, সরকারি দখলকৃত, প্রাতিষ্ঠানিক, কলোনি ও ঈদগা। যার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক খেলার মাঠ ৬০ শতাংশ। বিআইপির দাবি, রাজধানীর মাত্র ৩০ শতাংশ খেলার মাঠে সর্বসাধারণের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ মাঠই দখলে রয়েছে। অথচ ২০০০ সালে সরকারের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইনে বলা হয়েছে, ‘খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাবে না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন করে কিছু মাঠ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। তাতে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন রাইডস আছে। তা সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য কিছু মাঠ ইজারা দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে ৫-১০ টাকার বিনিময়ে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে। আর ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মাঠগুলো সব মানুষের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।’ এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজাকে কল করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নগর-পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন নীতিমালায় শিশুদের কথা ভেবে মাঠের কথা বলা হয়। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন; খেলার মাঠ ছাড়া শিশুর বিকাশ পূর্ণাঙ্গ হয় না।’

এই নগর-পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, গত কয়েক বছরে ঢাকা শহরের খেলার মাঠের মান উন্নয়নের জন্য কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে জেলখানার মতো খেলার মাঠের ডিজাইন করা হচ্ছে। মাঠ থেকে গণমানুষকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেখলা সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাঠে খেলার সুযোগবঞ্চিত হয়ে শিশুরা মোবাইল গেমসে আসক্ত হয়ে পড়ে। অনেক কিশোর নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। সুস্থ সমাজের জন্য খেলার মাঠের কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বাচ্চাদের ভালো খাবার আর ভালো স্কুলে পড়ালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তাদের মানসিক বিকাশে অবশ্যই খেলার মাঠ জরুরি।

সার্বিক বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুর বিকাশে খেলাধুলা ও শরীর চর্চা অত্যন্ত জরুরি। যদি সেটা না হয়, তাহলে শরীর ও মনের সুসমন্বিত বিকাশ ঘটে না। শিশুরা খেলার সুযোগ কম পেলে, তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকে। অবৈধভাবে খেলার মাঠ দখলের মধ্য দিয়ে শিশুদের শৈশব ও কৈশোরকে চুরি করা হচ্ছে। ইতিবাচক সমাজ গড়তে খেলার মাঠের বিষয়ে রাষ্ট্রের আরও মনোযোগ বাড়াতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতীয় বিমানবন্দরে ১১ দিন ধরে পড়ে আছে ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, ঘনাচ্ছে রহস্য

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

জোহরান মামদানি শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ, চেহারা বাজে ও বুদ্ধি কম: ট্রাম্প

সারজিস আলমের পোস্ট: সেই সাবরেজিস্ট্রারের অফিসে দুদকের অভিযান

সমীক্ষা-সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ২০ হাজার কোটির দুই প্রকল্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত