Ajker Patrika

ভালো ফলনেও মুখ মলিন কৃষকের

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১৫: ০১
ভালো ফলনেও মুখ মলিন কৃষকের

চলতি মৌসুমে রংপুরের কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনে ১০টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। তবে এই সুবিধার ভাগীদার হতে পারেননি তারাগঞ্জের চাষিরা। এ উপজেলা থেকে বিদেশে রপ্তানির জন্য কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনা হয়নি। সেই সঙ্গে হিমাগারে জায়গা না থাকায় ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তারাগঞ্জের পাঁচ ইউনিয়নে ৩ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন।

উপজেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য তিনটি হিমাগার আছে। যার ধারণ ক্ষমতা ১৪ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। ইতিমধ্যে হিমাগারগুলো ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী সংরক্ষণ শেষ করেছে। হিমাগারে কৃষকদের আলু না নিতে এলাকায় মাইকিং করছে কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো মাঠে অর্ধেকের বেশি আলু রয়েছে। এ অবস্থায় হিমাগারে সংরক্ষণ ও বিক্রি করতে না পেরে মাঠেই আলু নিয়ে রাত পার করছেন চাষিরা।

বিভিন্ন মাঠ ঘুরে অন্তত ৩০ চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন আলু উত্তোলনের মূল মৌসুম। যাঁরা আগে উত্তোলন করেছেন, তাঁরা মাঠে ভালো দামে বিক্রি ও হিমাগারে সংরক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছেন। এখন হিমাগারে সংরক্ষণ বন্ধ। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরাও আলু কেনা বন্ধ করেছেন। অল্প কয়েকজন ব্যবসায়ী আলু কিনলেও আগের থেকে অনেক দাম কম বলছেন। এ অবস্থায় কেউ কেউ ভবিষ্যতে দাম বৃদ্ধির আশায় দূরের অন্যান্য উপজেলার হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করছেন। এতে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইকরচালী ইউনিয়নের দোলাপাড়ায় দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ সারি করে দাঁড় করানো আলু ভর্তি চটের বস্তা। পাশের মাঠে কৃষকেরা বোরো ধান লাগাচ্ছেন। সেখানে কথা হয় মেনানগর গ্রামের কৃষক জিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার আলুর ফলন ভালো হইছে। তবে তুলতে একটু দেরি হচ্ছে। তিন একরের এক একর জমির আলু হিমাগারে দুই দিন অপেক্ষার পর সংরক্ষণ করেছি। দুই একর জমির আলু বস্তা করে মাঠে রেখেছি। মৌসুমের শুরুতে ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন সাড়ে ৯ থেকে ১০ টাকা দাম মিলছে।’

পাশের পাকারপুল মাঠে কথা হয় ফকিরপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আলু হিমাগারে রাখার জায়গা নাই। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা কম দাম করোছে। এখন না পারুছি লস করি বেচার, না পারুছি হিমাগারোত থুবার। ভালো ফলন হয়া লাভ কি হইল। তিন দিন ধরি বস্তা করি দোলাত আলু আগরুছু। জমি থাকি আলু নিগার না পাওয়ায় বোরো নাগাও দেরি হওছে।’

উত্তর হাজীপুর মাঠের চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘শুনুছি রংপুর থাকি আলু বিদেশ যাওছে। টিভিত কয়ছে একটা, দুইটা নোয়ায় ১০টা দেশের কথা। তা কোনঠে? হামার এলাকাত তো কায়ও বিদেশের আলু কিনার আইল না। গ্রামের ব্যবসায়ীরাও হিমাগারোত আলু থুবার জাগা নাই শুনি আলু কিনা বন্ধ করি দিছে। আলু নিয়া হামার মরণ যন্ত্রণা হইছে।’

আলু ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, চাহিদা অনুযায়ী আলু কেনা শেষ। এবার প্রচুর আলু চাষ হয়েছে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন চাষি আলু বিক্রির জন্য ফোন দেন। কিন্তু মহাজনেরা আলু নিতে চাচ্ছেন না। আলু নিয়ে কৃষকেরা সত্যি যন্ত্রণায় আছেন।

আরেক ব্যবসায়ী মিজান ইসলাম জানান, ১০ দিন আগেও ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখন আশপাশের হিমাগারগুলোতে আলু রাখার জায়গা নেই। অন্য উপজেলার হিমাগারগুলোতে যুদ্ধ করে আলু রাখতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। তা ছাড়া ঢাকার ব্যবসায়ীরা এখন আলু কিনতে চাচ্ছেন না। তাই বাজারে দাম কম যাচ্ছে।

এবার রংপুর থেকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, রাশিয়াসহ ১০ দেশে আলু রপ্তানি করা হচ্ছে। তারাগঞ্জে রপ্তানিযোগ্য আলু চাষ করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, ‘তারাগঞ্জে কৃষকদের কাছ থেকে রপ্তানির জন্য আলু কেনা হচ্ছে কি না তা জানা নেই। তবে রপ্তানিযোগ্য আলু চাষের জন্য ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এখানে উৎপাদনের তুলনায় সংরক্ষণের সুযোগ খুবই কম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ভালো ফলন হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার গলায় ‘জুতার মালা’ দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মোদির সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ

অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত, দাবি পুতিনের শীর্ষ সহযোগীর

মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে ‘খোররামশহর-৪’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত