Ajker Patrika

নির্দোষ প্রমাণে ৩১ বছর ক্ষয় কামালের

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
আপডেট : ২৯ জুন ২০২২, ২৩: ২৪
নির্দোষ প্রমাণে ৩১ বছর ক্ষয় কামালের

সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর করা মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি। ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে জামিনও দেন উচ্চ আদালত। এরপর মামলাটি আর এগোয়নি। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে ৩১ বছর পর বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে। আপিল নিষ্পত্তি করে আসামিকে খালাস দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য তিন দশক অপেক্ষা করা এই আসামির নাম কামাল উদ্দিন। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার জগন্নাথপুর গ্রামে। ছিলেন দুর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে যখন মামলা হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৪৫ বছর। এখন তাঁর বয়স ৮০। বয়সের ভারে কথাও বলতে পারেন না ঠিকমতো।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনে হেরে জহুর (তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী) প্রতিশোধ নিতে অভিযোগ করেছিলেন। কয়েক মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে। মামলার কারণে এলাকায় সুনাম নষ্ট হয়েছে। এত দিন পর খালাস পেয়ে ভালো লাগছে।’

তবে মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থার দাবি নেই তাঁর। তিনি বলেন, যা হবার হয়ে গেছে। এখন আর এসব নিয়ে আক্ষেপ নেই। আক্ষেপ কেবল মিথ্যা অভিযোগে কারাবাস করার জন্য।

জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কামাল উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান স্থানীয় জহুর আলী। পরে এর প্রতিশোধ নিতে কামালের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ ছিল, গোপালনগর ফেরিঘাটের ইজারার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান। পরে ইউএনও কার্যালয় থেকে বিষয়টি জেলা দুর্নীতি দমন কার্যালয়ে জানানো হয়। এরপর জেলা দুর্নীতি দমন কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক আব্দুল মান্নান ১৯৮৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

মামলায় ১৯৮৪ সালের ২৮ মার্চ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত দুর্লভপুর-গোপালনগর ফেরিঘাটের ইজারার ৬৩ হাজার ৭৭৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। বিচার শেষে ১৯৯১ সালের ১৫ জুলাই রায় দেন রাজশাহীর বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। রায়ে চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও আত্মসাৎ করা টাকা জরিমানা করা হয়। তবে ওই বছরই বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন কামাল উদ্দিন। হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তাঁকে জামিন দেন। এর পর থেকে আর এই মামলা শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটি বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। মামলায় পক্ষভুক্ত হয় দুর্নীতি দমন কমিশনও। শুনানি শেষে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় কামাল উদ্দিনকে খালাস দেন উচ্চ আদালত।

বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী শাহীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এই মামলায় পক্ষভুক্ত ছিলাম না। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পুরোনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে আমরা এই মামলায় পক্ষভুক্ত হই। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। এটা বিচারপ্রার্থীর সাংবিধানিক অধিকার। যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত