Ajker Patrika

একটি মৃত্যু ও কয়েকজন

আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৫৩
একটি মৃত্যু ও কয়েকজন

নটী বিনোদিনী নামেই তাঁর পরিচয়। দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়ে বিনোদিনী দাসী নিজেকে রঙ্গালয়ের পথে প্রস্তুত করেছিলেন। তাঁরই শৈশবের একটি ঘটনা বলছি।

ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি বিনোদিনীকে ধাক্কা দিয়েছিল। তখন তাঁদের অর্থকড়ি ছিল না কিছু। ছেলেকে নিয়ে মা আর নানি ছুটেছেন দাতব্য চিকিৎসালয়ে। বিনোদিনী আর তাঁর বোন তখন থাকতেন বাড়িতে। এক পড়শি ছিলেন, তিনি এ সময় এই ক্ষুদ্র দুই বালিকার খাওয়া-দাওয়া দেখভাল করতেন। খাবার বেঁধে নিতেন মা আর নানির জন্যও। কখনো কখনো মা আর নানিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতেন খাওয়ার জন্য। তখন বিনোদিনীর ভাইয়ের সঙ্গে তিনি বসে থাকতেন।

এই দাতব্য চিকিৎসালয়েই বিনোদিনীর ভাইয়ের মৃত্যু হয়। বিনোদিনী বুঝতেই পারছিলেন না, ভাই আর ফিরে আসবে না। কেউ মরে গেলে আর ফিরে আসে না, সে কথা বোঝার মতো ক্ষমতাও তাঁর হয়নি।

এদিকে নানি শুনেছিলেন, হাসপাতালে মৃত্যু হলে ডাক্তাররা মড়া কাটে, পরিবারের কাছে সৎকারের জন্য দেয় না। তাই আতঙ্কে তিনি মৃত বাচ্চাটিকে নিয়ে তিনতলার ওপর থেকে তরতর করে নেমে গঙ্গার দিকে ছুটলেন। বিনোদিনী আর তাঁর বোন কাঁদতে কাঁদতে মায়ের হাত ধরে চলল নানির পেছন পেছন।

চিকিৎসকেরা এসে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন, ‘ব্যস্ত হবেন না। আমরা এই মড়া ধরে রাখব না।’

কিন্তু কে শোনে কার কথা! নানি মাঝে মাঝে পাগলের মতো হেসে উঠছিলেন।

এরপর সৎকার হলে হঠাৎ বিনোদিনী দেখলেন, তাঁর মা নদীতে নেমে যাচ্ছেন। বিনোদিনী তাঁর কাপড় ধরে টেনে রাখলেন আর চিৎকার করতে লাগলেন। মা কাঁদলেন না।

এরপর অনেক দিন অর্ধ-উন্মাদ অবস্থায় ছিলেন বিনোদিনীর মা। একদিন রাতে সবাই যখন শুয়ে পড়েছে, তখন শোনা গেল মায়ের কান্না, ‘ওরে বাবারে, কোথায় গেলিরে!’

সেই কান্না শুনে দিদিমা বললেন, ‘আহ! বাঁচলেম!’

সূত্র: বিনোদিনী দাসী, আমার কথা ও অন্যান্য রচনা, 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত