Ajker Patrika

দ্বিপদী বলদ কামরুল

কামরুল হাসান
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯: ৫৭
দ্বিপদী বলদ কামরুল

সে সময় কিষণগঞ্জ ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর সীমানা পার হয়ে বিহারের পূর্ণিয়া জেলার একটি মহকুমা শহর। পটুয়া কামরুল হাসানদের বহু আত্মীয়-স্বজন কিষণগঞ্জেই স্থিত হয়েছিলেন। কামরুল হাসানের বাবার বড় ভাইও ছিলেন সেখানে। মজার ব্যাপার, সেই পরিবারের পুরুষেরা বলত উর্দু আর মেয়েরা বলত বাংলা। ১৯৩৫ সালে পূজার ছুটিতে বড় বুবুর বিয়ে উপলক্ষে কামরুল হাসান গিয়েছিলেন কিষণগঞ্জে। এরপর গেছেন বহুবার।

কলকাতা থেকে কিষণগঞ্জ গেলে চাচাতো ভাই-বোনেরা যেন হাতে চাঁদ পেতেন; বিশেষ করে মেয়েরা। কারণ, কিছু দিন স্কুলে পড়াশোনা করে তাঁদের পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মুসলিম মেয়েদের বেশি দূর পড়ানো হতো না, তাই তাঁরা তখন অবরোধবাসিনী। সে সময় তাঁদের হিন্দু বান্ধবীদের মাধ্যমে ছায়াছবির খবর পেতেন তাঁরা। অশোক কুমার, দেবিকা রানীসহ সবার নাম শুনতেন আর ভাবতেন সিনেমা দেখতে যাবেন।

কামরুল কিষণগঞ্জে থাকতেই ‘ঝুলা’ সিনেমাটি এল সেখানে। দুই চাচাতো বোন আর এক খালাতো বোন কামরুলকে ধরে বসলেন সিনেমা দেখাতে হবে। ঠিক হলো লুকিয়ে নাইট শোতে যাওয়া হবে। বাড়িতে ছিল একটা ঘোড়ার গাড়ি, একটা গরুর গাড়ি। গরুর গাড়োয়ানকে এক টাকা দিয়ে বলা হলো, রাতে নির্দিষ্ট এক জায়গায় যেন সে গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কুয়োতলার কাছে কামরুলরা নিয়ে এলেন গরুবিহীন গাড়ি। রাতে যখন চারদিক সুনসান, তখন রাত আটটার পর টুপ করে সে গাড়িতে বসে পড়লেন এক বোন। তারপর আরেক বোন। এবার কামরুল আর এক ভাই জোয়াল তুলে নিলেন কাঁধে। আরও এক বোনকে ওঠালেন। তারপর এগিয়ে চললেন এমনভাবে যেন গরু জোতা হয়েছে গাড়িতে।

কিছুটা দূরেই চতুষ্পদী দুই বলদ নিয়ে অপেক্ষা করছিল গাড়োয়ান। কামরুলরা বলদের ভূমিকা থেকে উদ্ধার পেলেন। এবার সিনেমা হলের দিকে এগিয়ে চলল গরুর গাড়ি। ফেরার পথে আবারও একই রকমভাবে দ্বিপদী বলদের ভূমিকা নিতে হলো কামরুলকে। 

সূত্র: কামরুল হাসান, বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা, পৃষ্ঠা ১৮৫-১৮৭ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত