আবু তাহের খান

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন্তাবিদদের পক্ষ থেকেই হয়েছে তা-ই নয়, খোদ পুঁজিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অর্থনীতিবিদেরাও মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণের ধারণাকে ভ্রান্তিপূর্ণ বলে মনে করেছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে মানব উন্নয়ন সূচকের (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটর—এইচডিআই) প্রবর্তন করে, যে ধারণার মূল উদ্ভাবক হচ্ছেন পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক।
উল্লিখিত এইচডিআইয়ের আওতাধীন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সর্বজনস্বীকৃত পাঁচটি অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক চাহিদারই অংশ। কিন্তু অতিদুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও চরম মানহীন জরাজীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার দিকে মনোযোগ না দিয়ে রাষ্ট্র কেবলই প্রচারণা চালাচ্ছে গুরুত্বহীন মাথাপিছু আয় নিয়ে, যার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের কোনোই সম্পর্ক নেই। এতে মানুষ যে শুধু বিরক্তই হচ্ছে তা-ই নয়, সরকারের চিন্তার অগ্রগামিতা ও গণমুখীনতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
তদুপরি এরূপ ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণাকে উন্নয়নের সূচক হিসেবে রাজনৈতিকভাবে প্রচার করতে গিয়ে বস্তুত এটিকে তাঁরা রাষ্ট্রের নীতি হিসেবেও গ্রহণ করে ফেলছেন, যার ফলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন-কৌশল ও কর্মসূচিতে জনস্বার্থের বিষয়টি ক্রমেই উপেক্ষিত হয়ে পড়ছে এবং এর বিপরীতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিত্তবানের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি। আর শেষোক্ত ওই কাজটি শ্রেণিস্বার্থ রক্ষার তাগিদ থেকে ঘটলেও প্রকারান্তরে তার পেছনে রয়েছে ক্ষমতা সুরক্ষার আকাঙ্ক্ষাও। কিন্তু রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকেরা সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন যে রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোর সুবিধা নিয়ে কার্যহাসিলের পর ক্ষমতা সুরক্ষার বাস্তব প্রয়োজনের সময় ওই চতুর বিত্তবানদের আর কাউকেই কখনো খুঁজে পাওয়া যাবে না, অতীতেও পাওয়া যায়নি।
সে যা হোক, উন্নয়নকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুগামী করে তুলতে হলে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের পাশাপাশি এইচডিআইয়ের অন্যতম দুই সূচক আয়ুষ্কাল (স্বাস্থ্য) ও শিক্ষাকেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। আর বৃহত্তর জনগণের স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনা করেই বস্তুত নির্ধারণ করতে হবে বর্তমানে আমরা উন্নয়নের কোন স্তরে বসবাস করছি, সে বিষয়টি। খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন তার চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ের উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে, যার মূল কৃতিত্ব এ দেশের পরিশ্রমী ও উদ্ভাবনাময় কৃষকের এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা সেখানে খুবই নগণ্য।
তা, সেটি যার অবদানেই ঘটে থাকুক না কেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এর সুফল দেশের সব নাগরিকের জন্য যুক্তিসংগত হারে নিশ্চিত করা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পরিমাণের খাদ্য উৎপাদন করার পরও দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ এখনো পুষ্টিকর খাদ্য কেনার সামর্থ্য রাখে না। আর প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ বসবাস করছে দারিদ্র্যসীমার নিচে (এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রকৃত তথ্য এর কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে)। তাহলে পাঁচ দশকের ব্যবধানে খাদ্যোৎপাদন যে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেল, তার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তির পরিসংখ্যানটি কি মিলল? যদি না মেলে, তাহলে মাথাপিছু আয় দিয়ে এর বিচার করা যাবে কীভাবে?
একইভাবে বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও মাঘের শীতে উত্তরের জনপদে কিংবা রাজধানীসহ অন্যান্য বড় শহরের বস্তিতে যে লাখ লাখ মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে ভোগে, উন্নয়নের স্তর নির্ধারণে সে বিষয়টিকেও বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ, উচ্চমাত্রার শৈত্যপ্রবাহের সেসব রাতে কষ্টে জবুথবু হয়ে পড়া সেখানকার প্রসূতি মা কিংবা অপুষ্ট শিশুর কাছে মাথাপিছু ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার আয়ের ওই গল্প কেবলই অর্থহীন স্লোগান। আর তার চেয়েও বড় কথা, সে তো জানেই না যে ব্যাংকের ঋণের অর্থ লোপাট করে, কর-শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, ভাগ-বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে কয়েক গুণ বেশি ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, করোনাকালে প্রণোদনার নাম করে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিংবা টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি ও সংগ্রহের নামে লোপাট করে গড়ে উঠেছে মাথাপিছু আয়ের ওই উল্লম্ফিত হিসাব।

স্বাধীনতার গোড়ায় ১৯৭২ সালে দেশে খাসজমির পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ একর, যার সিংহভাগই পরে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মসাৎ হয়েছে ভূমিদস্যু ও অন্যান্য লুটেরার দ্বারা। এরূপ লুণ্ঠনমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রের আওতায় একটি যৌক্তিক বণ্টনব্যবস্থা প্রবর্তন করা গেলে এমনটি কখনোই ঘটত না এবং ভূমিহীনদের মধ্যে আজ যে নতুন করে ঘর বা খাসজমি বণ্টন করা হচ্ছে, তারও প্রয়োজন হতো না। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ধনিকশ্রেণির বিত্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন ভূমিহীনের কিংবা ভূমিতে অধিকতর প্রান্তিক হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কারণ, নব্য বিত্তবানেরা স্বল্পবিত্ত মানুষের ভূমিকে এখন লোলুপ হায়েনার মতো চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে খাচ্ছে। আর এ খাওয়াকে অধিকতর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ভূমিদস্যুদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে তাদের পক্ষে পাওয়ার জন্য নিয়তই নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছে এবং বহু ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা যে কতটা নাজুক, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক করোনার সময়। মানুষ তখন চরম হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করেছে, দীর্ঘ ৫০ বছরে এ দেশের স্বাস্থ্য খাত যে পরিসরে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার জন্ম দিয়েছে, তা সত্যি বিস্ময়কর এবং এসব দেখে এ সময়ে সবার কাছেই এটি স্পষ্ট হয়েছে যে এ রকম একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে সর্বশেষ জনজরিপ অনুযায়ী প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ কিছুতেই চলতে পারে না—মধ্যম আয়ের দেশ-উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা তো অনেক পরের কথা। আর সে কারণেই রাজাপক্ষে ভ্রাতাদের পরিবারতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালন কৌশলের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসার পরও এখনো এটাই সত্য যে সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে মাথাপিছু আয়ের বড়াই এ ক্ষেত্রে একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়ছে নাকি?
পরিশেষে শিক্ষার কথা। নানা ত্রুটিবিচ্যুতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা ইত্যাদি সত্ত্বেও গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সব খাতেই কম-বেশি কিছু না কিছু উন্নতি ঘটেছে। ব্যতিক্রম শুধু শিক্ষা খাত, যেখানে গুণগত মানের কোনোরূপ উন্নতি ঘটা তো দূরের কথা, ক্রমাগতভাবে তা আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। অথচ উন্নয়নের স্তর বোঝাতে শিক্ষা সেই মধ্যযুগ থেকেই উন্নয়নের অন্যতম নির্ণায়কের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার শিক্ষার মানটিকে স্বাধীনতা-পূর্বকালের পর্যায়েও টিকিয়ে রাখতে পারল না। আর মানহীন এই শিক্ষার কারণেই জাতিগতভাবে আমাদের কোনো উদ্ভাবনা নেই, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি নেই, নতুন সাহিত্য নেই, নতুন গ্রন্থ নেই, এমনকি সংস্কৃতিরও কোনো বিকাশ নেই। আমরা কেবলই হয়ে উঠছি অন্যের উদ্ভাবনা ও সৃজিত জ্ঞানের একচ্ছত্র ভোক্তা, যে ভোক্তাবাজার আকারে বড় হলেও মর্যাদায় একেবারেই প্রান্তিক কিংবা মর্যাদাবিবর্জিত।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন লুটেরা বিত্তবানের আয়ের সঙ্গে চা-শ্রমিকের আয়কে গড় করে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণ শুধু ভ্রান্তিপূর্ণই নয়, চরম বিভ্রান্তিকরও। এই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিত্তবানেরা শুধু ঘোলা পানিতে মাছ শিকারই করে যাবে, আর অসহায় সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের সোনার কাঠি হয়ে থাকবে কেবলই মরীচিকা। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা তো ছিল এই যে বাংলাদেশ হবে খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। তাহলে সে চেতনার সঙ্গে লুণ্ঠনকারীর আয়ের কল্যাণে সাধারণের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়াভিত্তিক উন্নয়নের ধারণা কি গ্রহণযোগ্য? আর ব্যক্তির আয়কে যদি উন্নয়নের নির্ণায়ক করতেই হয়, তাহলে সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে নাগরিকের সর্বনিম্ন আয়ের পরিমাণ কত সেটি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন্তাবিদদের পক্ষ থেকেই হয়েছে তা-ই নয়, খোদ পুঁজিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অর্থনীতিবিদেরাও মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণের ধারণাকে ভ্রান্তিপূর্ণ বলে মনে করেছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে মানব উন্নয়ন সূচকের (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটর—এইচডিআই) প্রবর্তন করে, যে ধারণার মূল উদ্ভাবক হচ্ছেন পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক।
উল্লিখিত এইচডিআইয়ের আওতাধীন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সর্বজনস্বীকৃত পাঁচটি অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক চাহিদারই অংশ। কিন্তু অতিদুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও চরম মানহীন জরাজীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার দিকে মনোযোগ না দিয়ে রাষ্ট্র কেবলই প্রচারণা চালাচ্ছে গুরুত্বহীন মাথাপিছু আয় নিয়ে, যার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের কোনোই সম্পর্ক নেই। এতে মানুষ যে শুধু বিরক্তই হচ্ছে তা-ই নয়, সরকারের চিন্তার অগ্রগামিতা ও গণমুখীনতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
তদুপরি এরূপ ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণাকে উন্নয়নের সূচক হিসেবে রাজনৈতিকভাবে প্রচার করতে গিয়ে বস্তুত এটিকে তাঁরা রাষ্ট্রের নীতি হিসেবেও গ্রহণ করে ফেলছেন, যার ফলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন-কৌশল ও কর্মসূচিতে জনস্বার্থের বিষয়টি ক্রমেই উপেক্ষিত হয়ে পড়ছে এবং এর বিপরীতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিত্তবানের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি। আর শেষোক্ত ওই কাজটি শ্রেণিস্বার্থ রক্ষার তাগিদ থেকে ঘটলেও প্রকারান্তরে তার পেছনে রয়েছে ক্ষমতা সুরক্ষার আকাঙ্ক্ষাও। কিন্তু রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকেরা সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন যে রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোর সুবিধা নিয়ে কার্যহাসিলের পর ক্ষমতা সুরক্ষার বাস্তব প্রয়োজনের সময় ওই চতুর বিত্তবানদের আর কাউকেই কখনো খুঁজে পাওয়া যাবে না, অতীতেও পাওয়া যায়নি।
সে যা হোক, উন্নয়নকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুগামী করে তুলতে হলে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের পাশাপাশি এইচডিআইয়ের অন্যতম দুই সূচক আয়ুষ্কাল (স্বাস্থ্য) ও শিক্ষাকেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। আর বৃহত্তর জনগণের স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনা করেই বস্তুত নির্ধারণ করতে হবে বর্তমানে আমরা উন্নয়নের কোন স্তরে বসবাস করছি, সে বিষয়টি। খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন তার চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ের উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে, যার মূল কৃতিত্ব এ দেশের পরিশ্রমী ও উদ্ভাবনাময় কৃষকের এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা সেখানে খুবই নগণ্য।
তা, সেটি যার অবদানেই ঘটে থাকুক না কেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এর সুফল দেশের সব নাগরিকের জন্য যুক্তিসংগত হারে নিশ্চিত করা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পরিমাণের খাদ্য উৎপাদন করার পরও দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ এখনো পুষ্টিকর খাদ্য কেনার সামর্থ্য রাখে না। আর প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ বসবাস করছে দারিদ্র্যসীমার নিচে (এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রকৃত তথ্য এর কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে)। তাহলে পাঁচ দশকের ব্যবধানে খাদ্যোৎপাদন যে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেল, তার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তির পরিসংখ্যানটি কি মিলল? যদি না মেলে, তাহলে মাথাপিছু আয় দিয়ে এর বিচার করা যাবে কীভাবে?
একইভাবে বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও মাঘের শীতে উত্তরের জনপদে কিংবা রাজধানীসহ অন্যান্য বড় শহরের বস্তিতে যে লাখ লাখ মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে ভোগে, উন্নয়নের স্তর নির্ধারণে সে বিষয়টিকেও বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ, উচ্চমাত্রার শৈত্যপ্রবাহের সেসব রাতে কষ্টে জবুথবু হয়ে পড়া সেখানকার প্রসূতি মা কিংবা অপুষ্ট শিশুর কাছে মাথাপিছু ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার আয়ের ওই গল্প কেবলই অর্থহীন স্লোগান। আর তার চেয়েও বড় কথা, সে তো জানেই না যে ব্যাংকের ঋণের অর্থ লোপাট করে, কর-শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, ভাগ-বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে কয়েক গুণ বেশি ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, করোনাকালে প্রণোদনার নাম করে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিংবা টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি ও সংগ্রহের নামে লোপাট করে গড়ে উঠেছে মাথাপিছু আয়ের ওই উল্লম্ফিত হিসাব।

স্বাধীনতার গোড়ায় ১৯৭২ সালে দেশে খাসজমির পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ একর, যার সিংহভাগই পরে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মসাৎ হয়েছে ভূমিদস্যু ও অন্যান্য লুটেরার দ্বারা। এরূপ লুণ্ঠনমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রের আওতায় একটি যৌক্তিক বণ্টনব্যবস্থা প্রবর্তন করা গেলে এমনটি কখনোই ঘটত না এবং ভূমিহীনদের মধ্যে আজ যে নতুন করে ঘর বা খাসজমি বণ্টন করা হচ্ছে, তারও প্রয়োজন হতো না। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ধনিকশ্রেণির বিত্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন ভূমিহীনের কিংবা ভূমিতে অধিকতর প্রান্তিক হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কারণ, নব্য বিত্তবানেরা স্বল্পবিত্ত মানুষের ভূমিকে এখন লোলুপ হায়েনার মতো চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে খাচ্ছে। আর এ খাওয়াকে অধিকতর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ভূমিদস্যুদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে তাদের পক্ষে পাওয়ার জন্য নিয়তই নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছে এবং বহু ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা যে কতটা নাজুক, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক করোনার সময়। মানুষ তখন চরম হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করেছে, দীর্ঘ ৫০ বছরে এ দেশের স্বাস্থ্য খাত যে পরিসরে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার জন্ম দিয়েছে, তা সত্যি বিস্ময়কর এবং এসব দেখে এ সময়ে সবার কাছেই এটি স্পষ্ট হয়েছে যে এ রকম একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে সর্বশেষ জনজরিপ অনুযায়ী প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ কিছুতেই চলতে পারে না—মধ্যম আয়ের দেশ-উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা তো অনেক পরের কথা। আর সে কারণেই রাজাপক্ষে ভ্রাতাদের পরিবারতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালন কৌশলের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসার পরও এখনো এটাই সত্য যে সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে মাথাপিছু আয়ের বড়াই এ ক্ষেত্রে একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়ছে নাকি?
পরিশেষে শিক্ষার কথা। নানা ত্রুটিবিচ্যুতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা ইত্যাদি সত্ত্বেও গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সব খাতেই কম-বেশি কিছু না কিছু উন্নতি ঘটেছে। ব্যতিক্রম শুধু শিক্ষা খাত, যেখানে গুণগত মানের কোনোরূপ উন্নতি ঘটা তো দূরের কথা, ক্রমাগতভাবে তা আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। অথচ উন্নয়নের স্তর বোঝাতে শিক্ষা সেই মধ্যযুগ থেকেই উন্নয়নের অন্যতম নির্ণায়কের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার শিক্ষার মানটিকে স্বাধীনতা-পূর্বকালের পর্যায়েও টিকিয়ে রাখতে পারল না। আর মানহীন এই শিক্ষার কারণেই জাতিগতভাবে আমাদের কোনো উদ্ভাবনা নেই, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি নেই, নতুন সাহিত্য নেই, নতুন গ্রন্থ নেই, এমনকি সংস্কৃতিরও কোনো বিকাশ নেই। আমরা কেবলই হয়ে উঠছি অন্যের উদ্ভাবনা ও সৃজিত জ্ঞানের একচ্ছত্র ভোক্তা, যে ভোক্তাবাজার আকারে বড় হলেও মর্যাদায় একেবারেই প্রান্তিক কিংবা মর্যাদাবিবর্জিত।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন লুটেরা বিত্তবানের আয়ের সঙ্গে চা-শ্রমিকের আয়কে গড় করে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণ শুধু ভ্রান্তিপূর্ণই নয়, চরম বিভ্রান্তিকরও। এই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিত্তবানেরা শুধু ঘোলা পানিতে মাছ শিকারই করে যাবে, আর অসহায় সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের সোনার কাঠি হয়ে থাকবে কেবলই মরীচিকা। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা তো ছিল এই যে বাংলাদেশ হবে খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। তাহলে সে চেতনার সঙ্গে লুণ্ঠনকারীর আয়ের কল্যাণে সাধারণের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়াভিত্তিক উন্নয়নের ধারণা কি গ্রহণযোগ্য? আর ব্যক্তির আয়কে যদি উন্নয়নের নির্ণায়ক করতেই হয়, তাহলে সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে নাগরিকের সর্বনিম্ন আয়ের পরিমাণ কত সেটি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
আবু তাহের খান

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন্তাবিদদের পক্ষ থেকেই হয়েছে তা-ই নয়, খোদ পুঁজিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অর্থনীতিবিদেরাও মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণের ধারণাকে ভ্রান্তিপূর্ণ বলে মনে করেছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে মানব উন্নয়ন সূচকের (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটর—এইচডিআই) প্রবর্তন করে, যে ধারণার মূল উদ্ভাবক হচ্ছেন পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক।
উল্লিখিত এইচডিআইয়ের আওতাধীন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সর্বজনস্বীকৃত পাঁচটি অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক চাহিদারই অংশ। কিন্তু অতিদুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও চরম মানহীন জরাজীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার দিকে মনোযোগ না দিয়ে রাষ্ট্র কেবলই প্রচারণা চালাচ্ছে গুরুত্বহীন মাথাপিছু আয় নিয়ে, যার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের কোনোই সম্পর্ক নেই। এতে মানুষ যে শুধু বিরক্তই হচ্ছে তা-ই নয়, সরকারের চিন্তার অগ্রগামিতা ও গণমুখীনতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
তদুপরি এরূপ ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণাকে উন্নয়নের সূচক হিসেবে রাজনৈতিকভাবে প্রচার করতে গিয়ে বস্তুত এটিকে তাঁরা রাষ্ট্রের নীতি হিসেবেও গ্রহণ করে ফেলছেন, যার ফলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন-কৌশল ও কর্মসূচিতে জনস্বার্থের বিষয়টি ক্রমেই উপেক্ষিত হয়ে পড়ছে এবং এর বিপরীতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিত্তবানের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি। আর শেষোক্ত ওই কাজটি শ্রেণিস্বার্থ রক্ষার তাগিদ থেকে ঘটলেও প্রকারান্তরে তার পেছনে রয়েছে ক্ষমতা সুরক্ষার আকাঙ্ক্ষাও। কিন্তু রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকেরা সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন যে রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোর সুবিধা নিয়ে কার্যহাসিলের পর ক্ষমতা সুরক্ষার বাস্তব প্রয়োজনের সময় ওই চতুর বিত্তবানদের আর কাউকেই কখনো খুঁজে পাওয়া যাবে না, অতীতেও পাওয়া যায়নি।
সে যা হোক, উন্নয়নকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুগামী করে তুলতে হলে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের পাশাপাশি এইচডিআইয়ের অন্যতম দুই সূচক আয়ুষ্কাল (স্বাস্থ্য) ও শিক্ষাকেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। আর বৃহত্তর জনগণের স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনা করেই বস্তুত নির্ধারণ করতে হবে বর্তমানে আমরা উন্নয়নের কোন স্তরে বসবাস করছি, সে বিষয়টি। খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন তার চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ের উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে, যার মূল কৃতিত্ব এ দেশের পরিশ্রমী ও উদ্ভাবনাময় কৃষকের এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা সেখানে খুবই নগণ্য।
তা, সেটি যার অবদানেই ঘটে থাকুক না কেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এর সুফল দেশের সব নাগরিকের জন্য যুক্তিসংগত হারে নিশ্চিত করা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পরিমাণের খাদ্য উৎপাদন করার পরও দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ এখনো পুষ্টিকর খাদ্য কেনার সামর্থ্য রাখে না। আর প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ বসবাস করছে দারিদ্র্যসীমার নিচে (এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রকৃত তথ্য এর কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে)। তাহলে পাঁচ দশকের ব্যবধানে খাদ্যোৎপাদন যে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেল, তার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তির পরিসংখ্যানটি কি মিলল? যদি না মেলে, তাহলে মাথাপিছু আয় দিয়ে এর বিচার করা যাবে কীভাবে?
একইভাবে বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও মাঘের শীতে উত্তরের জনপদে কিংবা রাজধানীসহ অন্যান্য বড় শহরের বস্তিতে যে লাখ লাখ মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে ভোগে, উন্নয়নের স্তর নির্ধারণে সে বিষয়টিকেও বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ, উচ্চমাত্রার শৈত্যপ্রবাহের সেসব রাতে কষ্টে জবুথবু হয়ে পড়া সেখানকার প্রসূতি মা কিংবা অপুষ্ট শিশুর কাছে মাথাপিছু ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার আয়ের ওই গল্প কেবলই অর্থহীন স্লোগান। আর তার চেয়েও বড় কথা, সে তো জানেই না যে ব্যাংকের ঋণের অর্থ লোপাট করে, কর-শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, ভাগ-বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে কয়েক গুণ বেশি ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, করোনাকালে প্রণোদনার নাম করে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিংবা টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি ও সংগ্রহের নামে লোপাট করে গড়ে উঠেছে মাথাপিছু আয়ের ওই উল্লম্ফিত হিসাব।

স্বাধীনতার গোড়ায় ১৯৭২ সালে দেশে খাসজমির পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ একর, যার সিংহভাগই পরে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মসাৎ হয়েছে ভূমিদস্যু ও অন্যান্য লুটেরার দ্বারা। এরূপ লুণ্ঠনমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রের আওতায় একটি যৌক্তিক বণ্টনব্যবস্থা প্রবর্তন করা গেলে এমনটি কখনোই ঘটত না এবং ভূমিহীনদের মধ্যে আজ যে নতুন করে ঘর বা খাসজমি বণ্টন করা হচ্ছে, তারও প্রয়োজন হতো না। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ধনিকশ্রেণির বিত্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন ভূমিহীনের কিংবা ভূমিতে অধিকতর প্রান্তিক হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কারণ, নব্য বিত্তবানেরা স্বল্পবিত্ত মানুষের ভূমিকে এখন লোলুপ হায়েনার মতো চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে খাচ্ছে। আর এ খাওয়াকে অধিকতর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ভূমিদস্যুদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে তাদের পক্ষে পাওয়ার জন্য নিয়তই নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছে এবং বহু ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা যে কতটা নাজুক, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক করোনার সময়। মানুষ তখন চরম হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করেছে, দীর্ঘ ৫০ বছরে এ দেশের স্বাস্থ্য খাত যে পরিসরে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার জন্ম দিয়েছে, তা সত্যি বিস্ময়কর এবং এসব দেখে এ সময়ে সবার কাছেই এটি স্পষ্ট হয়েছে যে এ রকম একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে সর্বশেষ জনজরিপ অনুযায়ী প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ কিছুতেই চলতে পারে না—মধ্যম আয়ের দেশ-উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা তো অনেক পরের কথা। আর সে কারণেই রাজাপক্ষে ভ্রাতাদের পরিবারতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালন কৌশলের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসার পরও এখনো এটাই সত্য যে সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে মাথাপিছু আয়ের বড়াই এ ক্ষেত্রে একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়ছে নাকি?
পরিশেষে শিক্ষার কথা। নানা ত্রুটিবিচ্যুতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা ইত্যাদি সত্ত্বেও গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সব খাতেই কম-বেশি কিছু না কিছু উন্নতি ঘটেছে। ব্যতিক্রম শুধু শিক্ষা খাত, যেখানে গুণগত মানের কোনোরূপ উন্নতি ঘটা তো দূরের কথা, ক্রমাগতভাবে তা আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। অথচ উন্নয়নের স্তর বোঝাতে শিক্ষা সেই মধ্যযুগ থেকেই উন্নয়নের অন্যতম নির্ণায়কের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার শিক্ষার মানটিকে স্বাধীনতা-পূর্বকালের পর্যায়েও টিকিয়ে রাখতে পারল না। আর মানহীন এই শিক্ষার কারণেই জাতিগতভাবে আমাদের কোনো উদ্ভাবনা নেই, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি নেই, নতুন সাহিত্য নেই, নতুন গ্রন্থ নেই, এমনকি সংস্কৃতিরও কোনো বিকাশ নেই। আমরা কেবলই হয়ে উঠছি অন্যের উদ্ভাবনা ও সৃজিত জ্ঞানের একচ্ছত্র ভোক্তা, যে ভোক্তাবাজার আকারে বড় হলেও মর্যাদায় একেবারেই প্রান্তিক কিংবা মর্যাদাবিবর্জিত।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন লুটেরা বিত্তবানের আয়ের সঙ্গে চা-শ্রমিকের আয়কে গড় করে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণ শুধু ভ্রান্তিপূর্ণই নয়, চরম বিভ্রান্তিকরও। এই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিত্তবানেরা শুধু ঘোলা পানিতে মাছ শিকারই করে যাবে, আর অসহায় সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের সোনার কাঠি হয়ে থাকবে কেবলই মরীচিকা। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা তো ছিল এই যে বাংলাদেশ হবে খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। তাহলে সে চেতনার সঙ্গে লুণ্ঠনকারীর আয়ের কল্যাণে সাধারণের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়াভিত্তিক উন্নয়নের ধারণা কি গ্রহণযোগ্য? আর ব্যক্তির আয়কে যদি উন্নয়নের নির্ণায়ক করতেই হয়, তাহলে সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে নাগরিকের সর্বনিম্ন আয়ের পরিমাণ কত সেটি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন্তাবিদদের পক্ষ থেকেই হয়েছে তা-ই নয়, খোদ পুঁজিবাদী আদর্শে বিশ্বাসী অর্থনীতিবিদেরাও মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণের ধারণাকে ভ্রান্তিপূর্ণ বলে মনে করেছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সাল থেকে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে মানব উন্নয়ন সূচকের (হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটর—এইচডিআই) প্রবর্তন করে, যে ধারণার মূল উদ্ভাবক হচ্ছেন পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল হক।
উল্লিখিত এইচডিআইয়ের আওতাধীন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর অন্যতম হচ্ছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সর্বজনস্বীকৃত পাঁচটি অত্যাবশ্যকীয় মৌলিক চাহিদারই অংশ। কিন্তু অতিদুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও চরম মানহীন জরাজীর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার দিকে মনোযোগ না দিয়ে রাষ্ট্র কেবলই প্রচারণা চালাচ্ছে গুরুত্বহীন মাথাপিছু আয় নিয়ে, যার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের কোনোই সম্পর্ক নেই। এতে মানুষ যে শুধু বিরক্তই হচ্ছে তা-ই নয়, সরকারের চিন্তার অগ্রগামিতা ও গণমুখীনতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
তদুপরি এরূপ ভ্রান্তিপূর্ণ ধারণাকে উন্নয়নের সূচক হিসেবে রাজনৈতিকভাবে প্রচার করতে গিয়ে বস্তুত এটিকে তাঁরা রাষ্ট্রের নীতি হিসেবেও গ্রহণ করে ফেলছেন, যার ফলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন-কৌশল ও কর্মসূচিতে জনস্বার্থের বিষয়টি ক্রমেই উপেক্ষিত হয়ে পড়ছে এবং এর বিপরীতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে বিত্তবানের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি। আর শেষোক্ত ওই কাজটি শ্রেণিস্বার্থ রক্ষার তাগিদ থেকে ঘটলেও প্রকারান্তরে তার পেছনে রয়েছে ক্ষমতা সুরক্ষার আকাঙ্ক্ষাও। কিন্তু রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকেরা সম্ভবত ভুলে যাচ্ছেন যে রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোর সুবিধা নিয়ে কার্যহাসিলের পর ক্ষমতা সুরক্ষার বাস্তব প্রয়োজনের সময় ওই চতুর বিত্তবানদের আর কাউকেই কখনো খুঁজে পাওয়া যাবে না, অতীতেও পাওয়া যায়নি।
সে যা হোক, উন্নয়নকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুগামী করে তুলতে হলে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের পাশাপাশি এইচডিআইয়ের অন্যতম দুই সূচক আয়ুষ্কাল (স্বাস্থ্য) ও শিক্ষাকেও সমান গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। আর বৃহত্তর জনগণের স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়গুলোকে বিবেচনা করেই বস্তুত নির্ধারণ করতে হবে বর্তমানে আমরা উন্নয়নের কোন স্তরে বসবাস করছি, সে বিষয়টি। খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন তার চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ের উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে, যার মূল কৃতিত্ব এ দেশের পরিশ্রমী ও উদ্ভাবনাময় কৃষকের এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা সেখানে খুবই নগণ্য।
তা, সেটি যার অবদানেই ঘটে থাকুক না কেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে এর সুফল দেশের সব নাগরিকের জন্য যুক্তিসংগত হারে নিশ্চিত করা। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, চাহিদার প্রায় কাছাকাছি পরিমাণের খাদ্য উৎপাদন করার পরও দেশের ৮৩ শতাংশ মানুষ এখনো পুষ্টিকর খাদ্য কেনার সামর্থ্য রাখে না। আর প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ বসবাস করছে দারিদ্র্যসীমার নিচে (এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রকৃত তথ্য এর কাছাকাছি হবে বলেই ধারণা করা চলে)। তাহলে পাঁচ দশকের ব্যবধানে খাদ্যোৎপাদন যে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেল, তার সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের খাদ্যপ্রাপ্তির পরিসংখ্যানটি কি মিলল? যদি না মেলে, তাহলে মাথাপিছু আয় দিয়ে এর বিচার করা যাবে কীভাবে?
একইভাবে বস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও মাঘের শীতে উত্তরের জনপদে কিংবা রাজধানীসহ অন্যান্য বড় শহরের বস্তিতে যে লাখ লাখ মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে ভোগে, উন্নয়নের স্তর নির্ধারণে সে বিষয়টিকেও বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ, উচ্চমাত্রার শৈত্যপ্রবাহের সেসব রাতে কষ্টে জবুথবু হয়ে পড়া সেখানকার প্রসূতি মা কিংবা অপুষ্ট শিশুর কাছে মাথাপিছু ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার আয়ের ওই গল্প কেবলই অর্থহীন স্লোগান। আর তার চেয়েও বড় কথা, সে তো জানেই না যে ব্যাংকের ঋণের অর্থ লোপাট করে, কর-শুল্ক ফাঁকি দিয়ে, ভাগ-বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে কয়েক গুণ বেশি ব্যয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, করোনাকালে প্রণোদনার নাম করে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিংবা টিকা ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী আমদানি ও সংগ্রহের নামে লোপাট করে গড়ে উঠেছে মাথাপিছু আয়ের ওই উল্লম্ফিত হিসাব।

স্বাধীনতার গোড়ায় ১৯৭২ সালে দেশে খাসজমির পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ একর, যার সিংহভাগই পরে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মসাৎ হয়েছে ভূমিদস্যু ও অন্যান্য লুটেরার দ্বারা। এরূপ লুণ্ঠনমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রের আওতায় একটি যৌক্তিক বণ্টনব্যবস্থা প্রবর্তন করা গেলে এমনটি কখনোই ঘটত না এবং ভূমিহীনদের মধ্যে আজ যে নতুন করে ঘর বা খাসজমি বণ্টন করা হচ্ছে, তারও প্রয়োজন হতো না। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ধনিকশ্রেণির বিত্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন ভূমিহীনের কিংবা ভূমিতে অধিকতর প্রান্তিক হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কারণ, নব্য বিত্তবানেরা স্বল্পবিত্ত মানুষের ভূমিকে এখন লোলুপ হায়েনার মতো চতুর্দিক থেকে গ্রাস করে খাচ্ছে। আর এ খাওয়াকে অধিকতর নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ভূমিদস্যুদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলো রাষ্ট্রকে তাদের পক্ষে পাওয়ার জন্য নিয়তই নানা ফন্দি-ফিকির আঁটছে এবং বহু ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে।
স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা যে কতটা নাজুক, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে সাম্প্রতিক করোনার সময়। মানুষ তখন চরম হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ করেছে, দীর্ঘ ৫০ বছরে এ দেশের স্বাস্থ্য খাত যে পরিসরে দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার জন্ম দিয়েছে, তা সত্যি বিস্ময়কর এবং এসব দেখে এ সময়ে সবার কাছেই এটি স্পষ্ট হয়েছে যে এ রকম একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে সর্বশেষ জনজরিপ অনুযায়ী প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ কিছুতেই চলতে পারে না—মধ্যম আয়ের দেশ-উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা তো অনেক পরের কথা। আর সে কারণেই রাজাপক্ষে ভ্রাতাদের পরিবারতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালন কৌশলের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসার পরও এখনো এটাই সত্য যে সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে মাথাপিছু আয়ের বড়াই এ ক্ষেত্রে একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়ছে নাকি?
পরিশেষে শিক্ষার কথা। নানা ত্রুটিবিচ্যুতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, অদক্ষতা ইত্যাদি সত্ত্বেও গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সব খাতেই কম-বেশি কিছু না কিছু উন্নতি ঘটেছে। ব্যতিক্রম শুধু শিক্ষা খাত, যেখানে গুণগত মানের কোনোরূপ উন্নতি ঘটা তো দূরের কথা, ক্রমাগতভাবে তা আরও নিম্নমুখী হয়ে পড়ছে। অথচ উন্নয়নের স্তর বোঝাতে শিক্ষা সেই মধ্যযুগ থেকেই উন্নয়নের অন্যতম নির্ণায়কের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশ তার শিক্ষার মানটিকে স্বাধীনতা-পূর্বকালের পর্যায়েও টিকিয়ে রাখতে পারল না। আর মানহীন এই শিক্ষার কারণেই জাতিগতভাবে আমাদের কোনো উদ্ভাবনা নেই, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি নেই, নতুন সাহিত্য নেই, নতুন গ্রন্থ নেই, এমনকি সংস্কৃতিরও কোনো বিকাশ নেই। আমরা কেবলই হয়ে উঠছি অন্যের উদ্ভাবনা ও সৃজিত জ্ঞানের একচ্ছত্র ভোক্তা, যে ভোক্তাবাজার আকারে বড় হলেও মর্যাদায় একেবারেই প্রান্তিক কিংবা মর্যাদাবিবর্জিত।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন লুটেরা বিত্তবানের আয়ের সঙ্গে চা-শ্রমিকের আয়কে গড় করে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে উন্নয়নের স্তর নির্ধারণ শুধু ভ্রান্তিপূর্ণই নয়, চরম বিভ্রান্তিকরও। এই বিভ্রান্তি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বিত্তবানেরা শুধু ঘোলা পানিতে মাছ শিকারই করে যাবে, আর অসহায় সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়নের সোনার কাঠি হয়ে থাকবে কেবলই মরীচিকা। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা তো ছিল এই যে বাংলাদেশ হবে খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। তাহলে সে চেতনার সঙ্গে লুণ্ঠনকারীর আয়ের কল্যাণে সাধারণের মাথাপিছু আয় বেড়ে যাওয়াভিত্তিক উন্নয়নের ধারণা কি গ্রহণযোগ্য? আর ব্যক্তির আয়কে যদি উন্নয়নের নির্ণায়ক করতেই হয়, তাহলে সর্বাগ্রে বিবেচনা করতে হবে নাগরিকের সর্বনিম্ন আয়ের পরিমাণ কত সেটি।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

মাথাপিছু আয় দিয়ে উন্নয়নের স্তর বোঝানোর চেষ্টা ও এর অনর্গল প্রচারণায় মানুষ এখন মহাবিরক্ত। অবশ্য বাংলাদেশে এই বিরক্তিকর প্রচারণা শুরু হওয়ার বহু আগেই বিশ্বের অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবীরা উন্নয়নের পরিমাপক হিসেবে এ ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সেই প্রত্যাখ্যান শুধু যে সাম্যবাদী চিন
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫