Ajker Patrika

নানামুখী সংকটে ঝরে পড়া শিশুশিক্ষা কার্যক্রম

সনি আজাদ, চারঘাট 
আপডেট : ১৯ মে ২০২২, ১৬: ২১
নানামুখী সংকটে ঝরে পড়া শিশুশিক্ষা কার্যক্রম

স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে রাজশাহীর চারঘাটে সরকারিভাবে চালু করা ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’-এর শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। উপজেলায় ২ হাজার ১০০ জন ঝরে পড়া শিশুর তালিকা করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও। ওই শিশুদের জন্য ৭০টি স্কুল করা হয়। কাগজে-কলমে প্রতিটি স্কুলে দেখানো হয় ৩০ জন শিক্ষার্থী। এদের জন্য শিক্ষক একজন করে। যদিও প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ বলছে, উপজেলায় ঝরে পড়া শিশু আছে মাত্র ১৬০ জন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। কর্মসূচির আওতায় চারঘাটে ৭০টি শিক্ষণকেন্দ্র (স্কুল) চালু করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি ৪) অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) মাধ্যমে কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইএসডিওর সহযোগী হিসেবে চারঘাটে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘স্বেচ্ছাসেবী বহুমুখী মহিলা সমাজ কল্যাণ সমিতি’। এই প্রকল্পের স্থাপিত প্রতিটি স্কুলের শিক্ষকের মাসিক বেতন ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে এনজিও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চারঘাট উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জরিপ চালানো হয়। জরিপে ২ হাজার ১০০ জন ঝরে পড়া শিশু বাছাই করা হয়। বাছাই করা শিশুদের তালিকা যাচাইয়ের জন্য গত বছরের জুনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের কাছে পাঠান জেলার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর তৎকালীন সহকারী পরিচালক।

এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে উপজেলার সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে তালিকাটি যাচাই করে। এনজিওর জরিপে ২ হাজার ১০০ জন ঝরে পড়া শিশু থাকলেও সত্যতা পাওয়া যায় ১৬০ জনের।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জরিপ যাচাই প্রতিবেদনে বলা হয়, এনজিও যাদের ঝরে পড়া বলছে, তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

এরপরও গত ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে চারঘাট উপজেলায় এই শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। ৭০টি প্রতিষ্ঠানে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়া ৭০ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগ, স্কুল ড্রেস, মাসিক ১২০ টাকা উপবৃত্তি ও খাতা-কলম দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে কিছুই দেওয়া হয়নি ৷

সরেজমিন স্কুলগুলো পরিদর্শন গেলে অধিকাংশ স্কুলের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সরেজমিন গেলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উপজেলার পরানপুর এলাকায় স্থাপিত স্কুলের শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, ‘স্কুলের জন্য আলাদা কোনো ঘর নেই। আমার বাড়িই স্কুলের ঠিকানা দেওয়া আছে। স্কুল চালুর চার মাস হয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের কোনো উপকরণ কিংবা মাসিক উপবৃত্তি দেওয়া হয়নি। এ জন্য গত ঈদের আগে থেকে স্কুল বন্ধ।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঝরে পড়া শিশুদের যে তালিকা দিয়েছিল, তা যাচাই করে মাত্র ১৬০ জন ঝরে পড়া শিশু পেয়েছি। ওই তালিকার অধিকাংশ শিশুই আমাদের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।’ এমনকি পরবর্তীকালে কীভাবে ৭০টি স্কুল স্থাপন করা হয়েছে, কিংবা কীভাবে তাদের কার্যক্রম চলছে, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না বলেও উল্লেখ করেন।

যদিও স্বেচ্ছাসেবী বহুমুখী মহিলা সমাজ কল্যাণ সমিতির পরিচালক কাজী ফিরোজ আহমেদ লনি বলেন, সঠিকভাবেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়েছে। স্কুলগুলোর কার্যক্রম ঠিকমতোই চলছে, কোনো স্কুলই বন্ধ নেই।

রাজশাহী জেলার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক মো. জালালুম বাঈদ বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও জরিপ করার পর স্কুলগুলো স্থাপন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছে থেকে অঙ্গীকারনামাও নেওয়া হয়েছে। কিছু বিষয় তদন্তাধীন থাকায় স্কুলে সব উপকরণ ও উপবৃত্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্কুলের কার্যক্রম সঠিকভাবে চলমান আছে বলে দাবি করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত