Ajker Patrika

ব্যাখ্যাহীন ঘটনা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪৬
ব্যাখ্যাহীন ঘটনা

বিহারে যখন ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন বনফুল পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন ভাগলপুরে। স্ত্রী, মেয়ে আর ছেলেকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট সংসার। পেশায় চিকিৎসক তিনি। বাড়ির সামনের ঘরে ছিল ল্যাবরেটরি, পেছনে পরিজন নিয়ে থাকতেন।

দুপুরবেলা শুরু হয়েছিল প্রচণ্ড ভূকম্পন। বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিলেন খোলা মাঠে। সেখানেও দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। সবাই মাটি আঁকড়ে পড়ে রইলেন মাঠে।

ভূমিকম্প শেষ হলে বাড়ি ফিরে দেখেন, সেটা এক ধ্বংসস্তূপ। ল্যাবরেটরির কোনো চিহ্ন নেই। ভাগলপুর শহরটাই লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। এক পরিচিত বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে বনফুল ছুটলেন কুলির সন্ধানে। বাড়ি থেকে কী কী উদ্ধার করা যায়, সেটা দেখতে হবে।

পকেটে মাত্র দুই টাকা। কুলিরা ল্যাবরেটরির রক্ত পরীক্ষার যন্ত্র, মাইক্রোস্কোপ, কোলোরিমিটার অক্ষত উদ্ধার করল। কিন্তু মলমূত্র পরীক্ষার যন্ত্রটা একেবারে ভেঙে গেছে।

এ সময় সেই হাড়কাঁপানো শীতে প্রায় বস্ত্রহীন এক মাতাল এসে বনফুলকে বলল, ‘তুমহারা জেব মে দোঠো রুপাইয়া হ্যায়, মুঝকো দেও।’

বনফুল বললেন, ‘হ্যাঁ, দুই টাকা আছে। কিন্তু তা কুলিদের দিতে হবে।’

মাতাল বলল, ‘অভি তুমকো বত্তিশ রুপাইয়া মিল যায় গা। তব মুঝকো দো রুপাইয়া জরুর দেনা পড়ে গা। হাম শরাব পিউঙ্গা।’

আজব কথা! এ সময় কোত্থেকে ৩২ টাকা আসবে!

অথচ একটু পরই স্টেশনের রাস্তা দিয়ে একটা ঘোড়ার গাড়ি এগিয়ে এল। কটিহারবাসী এক পরিচিত রোগীর ছেলে ও পুত্রবধূ। তাঁদের ট্রেন ভাগলপুরে আটকা পড়েছে। এ সুযোগে তাঁরা রক্ত আর ইউরিন পরীক্ষা করিয়ে নিতে চান। দুজনেই ডায়াবেটিসের রোগী।

বনফুল বললেন, ‘যন্ত্রপাতি তো ভেঙে চৌচির!’

তাঁরা বললেন, ‘এখনই রিপোর্ট দিতে হবে না। শুধু রক্ত নিয়ে রাখুন। মাসখানেকের মধ্যে রেজাল্ট পেলেই হবে।’

রক্ত নেওয়া হলো। তাঁরা ৩২ টাকা ফি দিয়ে চলে গেলেন। সেই মাতালকে আর খুঁজে পাননি বনফুল।

সূত্র: সাগরময় ঘোষ, সম্পাদকের বৈঠকে, পৃষ্ঠা: ১০২-১০৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত