Ajker Patrika

অবৈধ ভাটায় পুড়ছে বনের গাছ

বেলাল হোসাইন, রামগড় (খাগড়াছড়ি) 
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১২: ১৪
অবৈধ ভাটায় পুড়ছে বনের গাছ

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১০টি ইটভাটা। একটিতেও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত বনের গাছ। এতে পাহাড় ন্যাড়া হচ্ছে। ধোঁয়া স্থানীয় বাসিন্দারা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এদিকে ভারী যানবাহনে মাটি, কাঠ ও ইট বহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে সড়ক।

জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে একটি ইটভাটায় গড়ে দেড় লাখ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। এ হিসাব অনুযায়ী, ১০টি ইটভাটায় অন্তত ১৫ লাখ মণ কাঠ পোড়ে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কাঠ সংগ্রহ করা হচ্ছে আশপাশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেই। এতে উজাড় হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী পৌর এলাকার অভ্যন্তরে ও কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আইনে এসব এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের জন্য কোনো লাইসেন্স না দেওয়ার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব নিয়ম লঙ্ঘন করেই ইটভাটার কার্যক্রম চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রামগড় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড সোনাইপুলেই রয়েছে ৪টি অবৈধ ইটভাটা। আধা কিলোমিটারের ব্যবধানে প্রায় ৮০ কানি জায়গাজুড়ে নুরজাহান ব্রিকস, হাজেরা ব্রিকস, মোস্তফা রাইটার্স ব্রিকস ও এন আই এম ব্রিকস নামের ইটভাটা রয়েছে।

এদিকে রামগড় ২ নম্বর পাতাছড়া ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দাঁতারাম পাড়ায় একসঙ্গে (মেঘনা ব্রিকস ১, মেঘনা ব্রিকস ২, আপন ব্রিকস ১, আপন ব্রিকস ২ ও এমএসপি ব্রিকস) ৫টি অনুমোদনহীন ইটভাটার কার্যক্রম চলছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, এসব ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য জমা করা হচ্ছে হাজারো গাছ। এ ছাড়া ডাম্পার ও মিনিট্রাক ব্যবহার করে মাটি, কাঠ ও ইট পরিবহন করায় সড়কগুলোতে বড় আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রামগড়-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে দাঁতারাম পাড়া পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটিতে ধুলা উড়ছে।

দাঁতারাম পাড়া এলাকার বাসিন্দা কমল কান্তি বলেন, এ সব ইটভাটায় কাঠ, মাটি ও ইট কেনা-বেচায় ভারী যানবাহন ব্যবহার করার ফলে রাস্তাটি বেহাল হয়েছে। ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইটভাটা মালিক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো ইটভাটার অনুমোদন নেই। ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে তাঁরা ভাটা চালাচ্ছেন।

হাজেরা ব্রিকসের মালিক নোমান ভূঁইয়া বলেন, কয়লার দাম বেশি। এতে তাঁদের খরচ বেড়ে যায়। এ জন্য ইট পোড়াতে চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করেন। বিষয়টি সবাই জানেন। তিনি আরও বলেন, তবে এসব গাছ তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কেনেন।

রামগড় পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এসব অবৈধ ইটভাটার ধোঁয়ায় শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখে ভোগেন। এ ছাড়া সড়ক সংস্কার করলেও সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

পরিবেশবিদ শ্যামল রুদ্র বলেন, ইটভাটাগুলোতে বনের কাঠ পোড়ানোয় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। হুমকির মুখে জৈব বৈচিত্র্য। পাহাড় থেকে গাছ কাটায় পাহাড়গুলো ন্যাড়া হচ্ছে।

রামগড় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সুলতানুল আজিম বলেন, বন থেকে গাছ কাটা ও চুল্লিতে কাঠ পোড়ানো নিষিদ্ধ। কয়লা দিয়ে চুল্লিতে ইট পোড়াতে হয়। সংরক্ষিত বনের কাঠ ইটভাটায় পোড়ানো হলে উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা মজুমদার জানান, আইন অমান্য করার সুযোগ নেই। খুব শিগগির ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে: ৬৮ মানবাধিকার সংগঠন

মানিকগঞ্জে সালিসে বিএনপি নেতার নির্দেশে পাঁচ ভাইকে জুতাপেটা

রাখাইনে মানবিক করিডর: জান্তার আপত্তিতে সরকারে দ্বিধা

ভারতের ব্ল্যাকআউট মহড়া, সীমান্তে আটার মজুত বাড়াচ্ছে পাকিস্তান, যুদ্ধ কি লেগে যাচ্ছে

মানবিক করিডরে বাংলাদেশের ফায়দা কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত