Ajker Patrika

একটি করুণ মৃত্যু এবং বিলম্বিত বোধোদয়

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২৩: ৩৫
একটি করুণ মৃত্যু এবং বিলম্বিত বোধোদয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল গত মঙ্গলবার রাতে ট্রাকচাপায় মারা গেছেন। বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলসংলগ্ন রাস্তায় একটি মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। বন্ধু রায়হান প্রামাণিক রিমেল আহত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

হিমেলের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়া ট্রাকটি নির্মাণসামগ্রী বহন করছিল। জায়গাটি অন্ধকার ছিল। হিমেল পাথরবোঝাই ট্রাকটিকে সাইড দিয়ে রাস্তার পাশে নেমে গেলেও ট্রাকচালক আশপাশে না দেখে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেন বলে সহযাত্রী রিমেল জানিয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ড বলছেন। আর হত্যাকাণ্ডের জন্য ট্রাকচালক ও তাঁর সহযোগীকে দায়ী করার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অবহেলার বিষয়টিও সামনে এনেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ভারী যানবাহন চলাচলের জায়গা নয়। অথচ তিনটি নতুন ভবনের নির্মাণকাজের জন্য সেখানে নিয়মিত ট্রাক চলাচল করছে। এই কাজও জরুরি। তাই যান চলাচলের একটি নীতিমালা আগেই তৈরি করা দরকার ছিল। নির্মাণযন্ত্র ব্যবহারের শব্দ এবং মালামাল পরিবহনের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার বিষয়টি কেন কারও মাথায় আসেনি, সেটা একটি বড় প্রশ্ন।

সহপাঠীকে হারিয়ে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলো সামনে আনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছে। ঘটনার জন্য মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পাস এলাকায় ভারী যানবাহন চলাচলের সময় রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা করা হবে। চারুকলা অনুষদে যাওয়ার রাস্তা সংস্কারের কথাও বলা হয়েছে। এই বিলম্বিত বোধোদয় মন্দের ভালো।

এর আগে হিমেলের বাবা ও দাদি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। এবার গেলেন হিমেল। তাঁর মায়ের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। অভাব এবং কষ্টের মধ্যেও হিমেল ছিলেন মায়ের আশা ও স্বপ্ন। তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি মাকেও নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। নিজের চিত্রকর্ম বিক্রি করেই তিনি নিজের খরচ চালাতেন। এখন তাঁর মৃত্যু সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে।

হিমেলের মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁর মায়ের সব আর্থিক দায়দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। আপাতত তাঁকে ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করার কথা জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ২০ তলা একাডেমিক ভবনের নামকরণ করা হবে হিমেলের নামে।

মৃত্যুর কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। তারপরও হিমেলের মায়ের ভবিষ্যৎ দুশ্চিন্তামুক্ত করা হলে সেটা কিছুটা স্বস্তির বিষয় হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত