Ajker Patrika

জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে

রহমান মৃধা
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ৪৮
জন্ম ও মৃত্যুর মাঝখানে

জাতিসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশের সংখ্যা ১৯৬। এ ছাড়া রয়েছে অনেক দেশ, যারা সংগ্রাম করে চলেছে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। মানবজাতি হাজারো বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর সর্বত্র; ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ছাড়া। তাই একটি দেশে বিভিন্ন দেশের লোক আমরা দেখতে পাই। কিন্তু আজ বর্ণনা করব একটি ছোট্ট শহরের কথা, যেই শহর স্টকহোম সিটি থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরে এবং খুবই ছোট্ট অথচ সারা বিশ্বের লোকের বাস সেখানে।

শুধু ১৯৬টি দেশের নয়, তারও বেশি দেশের মানুষের ছোঁয়া রয়েছে এই শহরে। শহরের নাম রিনকেবি। কিছুদিন আগে গিয়েছিলাম সেখানে, আমার গাড়ি ধোয়াতে। সারা জীবন মেশিন দিয়ে গাড়ি ধুই। হঠাৎ এক বন্ধু বলল যে রিনকেবিতে গাড়ির ভেতরে ও বাইরে ধোয়ানো যায় মাত্র ৩০০ ক্রোনারে, যা মেশিনে পরিষ্কার করতে ১ হাজার ৫০০ ক্রোনার লাগে। সঙ্গে গাড়ি রেখে আসতে হয় এবং পরদিন গিয়ে আনতে হয়।

বুকিং ছাড়াই চলে গেলাম রিনকেবিতে। ঢুকতেই তারা আমার গাড়ি নিয়ে গেল এবং চারজনে মিলে ধোয়ামোছার কাজ শুরু করল। চারজনের মধ্যে রয়েছে আফগান, মেক্সিকান, আফ্রিকান ও উজবেক। বেশ আগ্রহী হয়ে পড়লাম। এত বছর স্টকহোমে আছি অথচ দেখা বা জানা হয়নি চক্ষু মেলিয়া কী জাদু রয়েছে এই রিনকেবিতে। সব দেশের লোকের বসবাস এখানে! এখানে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে সবকিছু তুলনামূলক সস্তা এবং ঘরবাড়িও আধুনিক নয়। বিভিন্ন দেশের দোকানপাট এখানে অবস্থিত। যেমন বাংলাদেশি শাকসবজি বা ফ্রোজেন মাছ এখানে পাওয়া যায়।

এখানে ধর্ম ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে আলাদা আলাদাভাবে। এখানে সবাই একসঙ্গে বসবাস করে চলেছে কোনো রকম সমস্যা ছাড়া। এখানকার সবাই রিনকেবি সুইডিশ ভাষায় কথা বলে। সে আবার কোন ভাষা? শতভাগ সুইডিশ উচ্চারণ নয় বিধায় বোঝা যায়। বিদেশি মিশ্রণ এর জন্য দায়ী।

সেখানে গিয়ে হঠাৎ নজরে পড়ে গেল এক মজার দৃশ্য! স্কুলবাস এসে হাজির। ছেলেরা আগে বাসে উঠল। পরে মেয়েরা। শুধু কী তাই? মেয়েরা বাসের পেছনে গিয়ে বসল। আমি তো অবাক! জিজ্ঞেস করতেই তারা বলে, এখানে ‘স্পেশাল স্কুল’ রয়েছে, যেখানে ধর্মীয় কারণে আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এখানে প্রত্যেকেই যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি শক্ত করে ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। যার কারণে অতি কাছে বসবাস করা সত্ত্বেও একে অপরের থেকে দূরে বসবাস করছে মনের রাজ্যে।

ছোট্ট একটি শহর রিনকেবি, যেখানে দুই শতাধিক দেশের লোকের বাস সত্ত্বেও মনে হলো ২০০ ভিন্ন ভিন্ন দেশ। নানা কারণে এসব লোক স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে সুইডেনে। মনে হচ্ছে সবাই অর্থের কারণে এখানে পাড়ি জমিয়েছে। এরা এখানে নিজেদের দেশের সবকিছু তো ভোগ করতে পারছেই না, সুইডেনেরও না। তবে অর্থনৈতিকভাবে সব সুযোগ-সুবিধা আছে তাদের। টাকাপয়সা রোজগার করতে করতে হঠাৎ জীবনের সময় শেষ হয়ে যাবে। অর্থের বড়লোক হতে পারে তারা, জানি না মনের বড়লোক কতখানি!

সব দেখে মনে হলো—আশা আছে ভাষা নেই, সুখ আছে শান্তি নেই; ওয়ান্স আ ফরেনার অলওয়েজ আ ফরেনার। দেখেছি এমনটি লন্ডনের মতো শহরে, নিউইয়র্কে, মধ্যপ্রাচ্যে, ইতালিতে, প্যারিসে, স্পেনে, আরও অনেক শহরে। আমার ভাবনা থেকে একটি কথাই বলতে ইচ্ছে হয়, জীবনের মূল্য কী? কিসের জন্য বেঁচে থাকা? কেনইবা সব ছেড়ে এই দূর পরবাসে নির্জনতায় ঘর বাঁধা?  আমাদের নিশ্বাস নিতে, বিশ্বাস, দর্শন, স্পন্দন পেতে যদি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মতো সংগ্রাম করতে হতো, তাহলে কী হতো আমাদের জীবনের?

তখন কি সামর্থ্য হতো এমনটি করে বেঁচে থাকার? সামান্য অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের সংগ্রামে ভালোবাসার স্বদেশ বিসর্জন দিয়ে আজ এত দূরে, বহু দূরে! স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ মানবজাতির জন্মে ও মৃত্যুতে নেই কোনো ভেদাভেদ। তবে কেন মাঝখানের সময়ের মধ্যে এত ব্যবধান? আর কবেই বা হবে এর সমাধান? 

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত