Ajker Patrika

পোস্টার

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১৪: ০৬
পোস্টার

কলকাতা, হুগলি হয়ে ঢাকায় এলেন মুস্তাফা মনোয়ার। ভর্তি হলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। যে সময় ক্লাস ফাইভের ছাত্র, তখন ঢাকায় এলেন পাকিস্তানের ঝান্ডা-বরদার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। রেসকোর্স ময়দানে বক্তৃতা করলেন তিনি। বিশাল সমাবেশ। সেখানে তিনি বললেন, ‘উর্দু শ্যাল বি দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য পাকিস্তান।’ সমাবেশের এক কোণ থেকে কয়েকটি কণ্ঠে উচ্চারিত হতে শোনা গেল, ‘নো নো।’

মুস্তাফা মনোয়ার তখনো বুঝতে পারছেন না, যাঁকে জাতির পিতা অভিধায় অভিষিক্ত করা হয়েছে, তাঁর কথার প্রতিবাদ করা হচ্ছে কেন! রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গটি এভাবেই জানতে পারলেন। সেটা ১৯৪৮ সাল।

মেজো বোন নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। মুস্তাফা মনোয়ার চলে আসেন সেখানে। নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুলে ভর্তি হন ১৯৫২ সালে। তখনই একদিন শুনলেন ঢাকার রাজপথে গুলি চলেছে। অনেকেই পোস্টার হাতে মিছিল করছে। মুস্তাফা মনোয়ারের আঁকার হাত ছিল ভালো। তিনি পোস্টারের ছবি আঁকতে শুরু করলেন। বন্ধুবান্ধব মিলে তা লাগিয়ে দিলেন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায়। একটা ছবি ছিল এমন: এক মায়ের গলাকে অনেকগুলো হাত এসে চেপে ধরেছে, একটা বিষাক্ত ছোবল—এ ধরনের ছবি। আরও ছিল মায়ের মুখে-ঠোঁটে তালা দেওয়া ছবি। মরগ্যান স্কুলের মেয়েদের মিছিলে ছিলেন মনোয়ারের মেজো বোনও। সেই মিছিলের পোস্টারগুলোর ছবিও এঁকেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার। গর্ব হচ্ছিল এ জন্য।

মরগ্যান স্কুলের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কিন্তু তাঁকে কিছুতেই থানায় নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। স্কুল-কলেজের ছাত্রনেতারা ঝাঁপিয়ে পড়ল তাঁকে রক্ষা করতে। চাষাঢ়া পুলিশ ফাঁড়িতে নেওয়ার আগেই শুরু হলো পাথর-বৃষ্টি। গাছ কেটে তৈরি করা হলো প্রতিবন্ধকতা। ঢাকা থেকে পুলিশ এনে সেই প্রতিবন্ধকতা সরাতে হয়েছিল। এরপর পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালাল। ধরা পড়লেন নবম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাফা মনোয়ারও।

সূত্র: বিধানচন্দ্র পাল, সেতুবন্ধন, কতিপয় প্রাজ্ঞজনের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের আত্মকথন, পৃষ্ঠা ১৩৬-১৩৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত