Ajker Patrika

অপ্রতিরোধ্য স্বাধিকার সংগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধিকার সংগ্রাম

‘জনগণের স্বাধিকার আন্দোলন এমন একপর্যায়ে পৌঁছিয়াছে, যেখান হইতে আর প্রত্যাবর্তন নাই। তাহারা আগাইয়া চলিবেই এবং গণ-আজাদী ও অধিকার ছিনাইয়া আনিবেই। সংকল্পবদ্ধ এই সংগ্রামী জনতাকে স্তব্ধ করিয়া দিবার ক্ষমতা পৃথিবীতে কাহারও নাই, যদি না...কোন ভ্রান্ত পদক্ষেপ দ্বারা আমরা নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ করিয়া বসি।’ ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের ১১ তারিখে এমন মন্তব্য করা হয়েছিল তখনকার অন্যতম প্রধান দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদকীয় কলামে। এর শিরোনাম ছিল ‘স্বাধিকার সংগ্রাম ও দায়িত্ব’।

এদিন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, জনতার আন্দোলন অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটা সম্ভব হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জারি করা সকল নির্দেশনা প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ বলয়ের মধ্য থেকে ধারণ ও পালন করাকে পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছে।’ করাচি থেকে প্রকাশিত ডন পত্রিকা বিবৃতিটি প্রকাশ করেছিল ‘বাংলাদেশের নামে অর্থনীতিকে পুরোপুরি সচল রাখুন: তাজউদ্দীন’ শিরোনামে।

তাজউদ্দীন আহমদের ১১ মার্চের বিবৃতি নিয়ে ‘চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষা করিতে হইবে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকে ছাপা হয় প্রধান শিরোনামের নিচে। খবরটিতে জানানো হয়, হরতালের ক্ষেত্রে অব্যাহতির আওতা সম্প্রসারিত হয়েছে। দৈনিক সংবাদ ১২ মার্চ তাজউদ্দীনের বিবৃতিটিকেই প্রধান প্রতিবেদন করে। এর শিরোনাম ছিল ‘সংগ্রামের সঙ্গে অর্থনীতিকে সক্রিয় রাখার আহ্বান’।

পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমরাস্ত্র নিয়ে আসা একটি জাহাজ আগের দিন নোঙর করেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। ওই সমরাস্ত্র আনার প্রতিবাদ জানিয়ে ১১ মার্চ ‘স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ’-এর চার ছাত্রনেতা জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এদিন ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী বাহিনীর নিয়মিত কুচকাওয়াজ কর্মসূচির তৃতীয় দিন ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ওই কুচকাওয়াজের দুটি ছবিসহ খবর পরদিন প্রকাশ করে দৈনিক সংবাদ।

স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে সব ধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখেন। সংগ্রামী জনতা সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এক সভায় মুক্তিসংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আবেদন জানানো হয়েছিল। পরদিন দৈনিক সংবাদে প্রথম পাতায় ডানদিকে এ-সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা হয় ‘বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রাম সমর্থন করুন’ শিরোনামে।

অবস্থা বেগতিক দেখে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো ১১ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা আওয়ামী লীগপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারবার্তা পাঠান। ওই তারবার্তায় গত কয়েক দিনের নিপীড়ন-নির্যাতনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সমঝোতার প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে পরদিন দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান শিরোনাম ছিল, ‘ভুট্টোর প্রাণ কাঁদিতেছে তবু—’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলার শোকসন্তপ্ত পরিবারের জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর ‘প্রাণ কাঁদিলেও’ শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাঠানো তারবার্তায় অবস্থার কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি। জাতীয় পরিষদে যোগদানের প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু যে চার দফা সুস্পষ্ট দাবি জানিয়েছেন, সে-সম্পর্কে ভুট্টো পূর্ণ নীরবতা পালন করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরে মাহফুজকে হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে: নাহিদ

সেই ফাইয়াজের ভাই জাকসুর জিএস

পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম

জাকসুর ভিপি হলেন আব্দুর রশিদ জিতু, জিএস মাজহারুল ইসলাম

‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেকটি প্রক্সি মওদুদীবাদী দলের দরকার নেই’, কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত